অচেনা শহর পর্ব ১০
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। স্নেহা চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে। আর কিছু দিন পর মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী।
মায়ের কথা ভেবে স্নেহার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
চোখের কোনে পানি চলে এলো। দেখতে দেখতে তিন বছর হয়ে গেল। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে চিৎকার করে
কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কাঁদছে না স্নেহা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কান্না আটকালো স্নেহা। চোখের পানি গড়িয়ে পরতে থামানো গেলো না তা গাল বেয়ে
পড়লো। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে স্নেহা পানি মুছে নিলো।
সামনে অন্ধকার রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। নতুন একটা জায়গা এখানে গ্ৰামের কোন পরিবেশ নাই। ঘরিতে
দশটার উপরে বাজে অথচ বাইরে কতো মানুষের আনাগোনা। আর গ্ৰামে এই সময়ে সবাই ঘুমিয়ে পরে সব
কিছু নিস্তব্ধ সময়ে নানা কথা ভাবছিলো হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো,,
স্কিনে তাকিয়ে দেখি অন্তরার ফোন।
“হ্যালো।”
“কতো গুলো কল দিয়েছি। এখন তোর রিসিভ করার সময় হলো।”
“কই কতো গুলো। ফোন বাজতেই তো ধরলাম।”
” ফোন বাজতেই ধরলি ভালো করে দেখ কতোবার দিয়েছি।”
ওর জন্য ফোন কানে থেকে নামিয়ে দেখলাম সত্যি তো তিনটা মিসকল।
কিন্তু আমি তো শুনিই নাই। ভাবনায় বেশি মুশগুল ছিলাম এ জন্য টের পাইনি।
“ওই হ্যালো তুই আছিস নাকি স্নেহা।”
“হ্যাঁ বল। কি জন্য ফোন দিছিলি।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
” দেখছিস কতো বার দিয়েছি। তোকূ কখনো একবারে পাওয়া যায় না,অসহ্য। শুন মে জন্য ফোন দিছিলাম।
প্লিজ স্নেহা, শাড়ি পড়ে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যা না । আমি একা শাড়ি পরলে কেমন খারাপ লাগবে। ”
“আমি যাবই না।”
“কিহ যাবি না কেন?”
“এমনি।”
“তুই না গেলে আমার ও যেয়ে একটু ও ভালো লাগবে না। তুই আর সুজাতা ছাড়া আমি কারো সাথে কথা বলি না
জানিস তো। আর সুজাতা আসবে না তুই জানিস ই আবার এখন তুই ও যদি না যাস । প্লিজ আমার জন্য চল।”
অন্তরা এক নাগাড়ে কথা বলে স্নেহাকে রাজি করা নোর জন্য স্নেহা না করেই যাচ্ছে অবশেষে স্নেহা বলে
দিলো ওর শাড়ি নেই।
” উফ এই জন্য তুই যাবি না বলছিলি। আমি আছি না আমার দুইটা শাড়ি আছে একটা তোকে দেবো নি সেটাই
পরিস। পেটিকোট, ব্লাউজ আছে তো।
” না। আমি আগে কখনো পরি নাই শাড়ি।”
” আচ্ছা সমস্যা নাই। তুমি আর আমি তো একরকম ই একটু ডিফারেন্স হালকা টাইট হতে পারে তোর।”
” তুই আমার থেকে চিকন। তোরটা আমার হবে না। আমি যাবই না ঝামেলা করতে জাইস না।”
” চুপ আমি আগে তোর মতোই ছিলাম। এখন একটু বেশি শুকিয়ে গেছি আমার আগের ব্লাউজ তোর হবে
দেখিস কাল ভার্সিটিতে নিয়ে আসবো নি।”
“কিন্তু।”
অন্তরা স্নেহার কোন কথা না শুনে ফোন রেখে দিল। স্নেহা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেতে চাইছে
না কিন্তু অন্তরার জন্য না ও করতে পারলো না। না করলাম শুনলো না ওর কথা ফেলতে ও খারাপ লাগছে
অন্তরা একমাএ সঙ্গি আমার ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে আমার সাথে আছে। আমার জন্য আর কারো সাথে
মিশে না ও ওর কথা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক বুঝিয়ে মনকে রাজি করালাম নিজের জন্য না হলেও
অন্তরার জন্য যেতে হবে।
.
পরদিন…….!
ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি অন্তরা আগেই এসেছে সাথে সুজাতা ও আছে আমি ওদের কাছে গেলাম। ক্লাসের বেশি
সময় নেই। কিন্তু ওরা ক্লাসে যাচ্ছে না। আজকে নাকি ক্লাস হবে না। আশেপাশে তাকিয়ে স্টেজ সাজানোর
জায়গা দেখছে। আদ্রকে দেখলাম কাজ করছে মনোযোগ দিয়ে। একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম লোকটা
দেখতে ইচ্ছে করে না।
তবুও আরেকবার চোখ গেল সাথে সাথে আমার ভ্রু কুঁচকে উঠলো আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে পাশের ছেলের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে লাগলো।
“আজকে ক্লাস হবে না আমাকে কাল ফোনে বললি না কেন? তাহলে আর কষ্ট করে আজকে আসতো হতো
না।”
“ইচ্ছে করেই বলি নাই। বললে তো আসতি না।”
“অসভ্য মেয়ে।”
“তোর শাড়ি ও নিয়ে এসেছি। তুই কি বাসায় ফিরবি নাকি আমার সাথে পার্লারে রাবি।”
“না না এসব জায়গায় যাব না। আমি বাসার ই পারবো ।”
“আচ্ছা। চল ঐদিকটাই যাই। ওনাদের কাজ দেখে আসি।”
“না আমি এদিকে যাব।”
অন্তরা আদ্রদের কাছে যাওয়ার কথা বলছে। আদ্ররা স্টেজ সাজাচ্ছে সব স্টুডেন্ট রা সেখানেই আছে।
আমার যাওয়ার ইচ্ছা নেই কিন্তু ওরা আমার কথা নি শুনেই টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
“ওরা কেমন তুই তো জানিস। তাও ওদের কাছে যাচ্ছি।”
“ওরা আমাদের সাথে খারাপ বিহেভ করেছে কিন্তু সেটা ভেবে বসে থাকলে তো হবে না। সবার সাথে মিলে
মিশে থাকতে হবে তাদের জন্য ভয় পেয়ে আমরা কেন আনন্দ করা থেকে পিছিয়ে থাকবো। সবাই আছে
আমরা ও মাই প্লিজ।”
আর কিছু বললাম না। চুপচাপ ওদের সাথে খেলাম।
.
ওরা সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছে আমি একটু সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্রর সামনে যাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে
করে না সেদিন পর তো আর ও না।
ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টেজ। আমি তার সাইটে দাঁড়িয়ে আছি। সেখানে আটকে রাখা ফুলের দিকে
তাকিয়ে আছি এগুলো লাগানো হয়েছে। খুব সুন্দর আমি হাত বাড়িয়ে ফুল টা টাচ করবো এমন সময়
মনে হলো কেউ আমার উরনা টেনে ধরেছে । চমকে পেছনে তাকিয়ে থমকে গেলাম।
—আপনি….
আদ্র নিজের মত করে আমার উরনার একপাশ দিয়ে নিজের মুখ মুছে নিচ্ছে। আমি চোখ বড় বড় করে
তাকিয়ে আছি তার দিকে। কতো বড় সর্পধা আমার উরনা নিয়েছে নিজের ঘাম মুছার জন্য এটাকি গামছা
নাকি রেগে টান মেরে উরনা নিয়ে নিলাম ।
“আপনার তো সাহস কম না। আপনি আমার ওরনা দিয়ে মুখ মুচ্ছেন।”
“আমার সাহস সম্পর্কে আপনার ধারণা নাই ম্যাডাম। কিন্তু এভাবে কেউ …”
“দেখুন আপনি বাড়াবাড়ি করছেন।”
“ওরনা টা দাও আমার কাজ শেষ হয় নাই।”
হতবাক হয়ে আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। এমন ভাবে চাইছে যেন এটা ওনার নিজেস্ব সম্পদ ।
“কি হলো হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন? দাও আমার কাজ আছে এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে
পারবো না।”
” আপনি পাগল আমি কি আপনাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলছি। ”
“বড্ড বেশি কথা বলো।”
বলে আদ্র স্নেহার দিকে এগুতে লাগলো।ভয় পেয়ে স্নেহা পিছিয়ে গিয়ে বলে,,
“কি হলো গুচ্ছেন কেন? দেখুন আপনি কিন্তু…
আদ্র ততক্ষণে স্নেহার কাছে চলে এসেছে। ওরনা দিয়ে মুখ মুছে পিছিয়ে যায়।
অচেনা শহর পর্ব ৯
আদ্র পিছন ঘুরে চলে যেতে থাকে আমি করে তার যাওয়া দেখছি। কি থেকে কি হলো সব আমার মাথার উপর
দিয়ে গেল।আমি এক ধ্যানে আদ্রর যাওয়া দেখছি কিছু দূর গিয়ে হঠাৎ পেছনে তাকায় দেখে স্নেহা ওর দিকে
তাকিয়ে আছে। স্নেহা আদ্রর দিকেই তাকিয়ে ছিল। আদ্রর পিছনে ঘুরেই চোখ মারে। স্নেহা এটা দেখেই স্তব্ধ
হয়ে যায় ওর চোখ দুটো মার্বেলের মতো গোল হয়ে গেছে ।
আদ্র স্নেহার এমন ভীতু মুখ দেখে বাঁকা হাসে । হাত দিয়ে চুল গুলো নারতে নারতে চলে যায়।
স্নেহা স্টেজের বাম কোনায় দাঁড়িয়ে আছে এই পাশে কেউ নেই ফাঁকা স্থানটা। এজন্য কেউ ওদের দেখে নি।
অন্তরা স্নেহাকে খুঁজতে খুঁজতে বাম পাশে এসে স্নেহাকে পায় স্নেহা হা করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
“ওই কি হয়েছে তোর এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কতো সময় ধরে তোকে খুঁজছি জানিস।”
স্নেহার সারা নেই।
অন্তরা ওকে ধাক্কা দিতেই ধ্যান ভাঙলো। চমকে ধাক্কা দেওয়া মানুষ টার দিকে তাকিয়ে
স্তস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“হ্যাঁ বল।”
“কিরে কি হয়েছে তোর । এমন স্টাটুর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন।”
“না মানে।”
কি বলবে বুঝতে পারছে না। ও নিজেই হতবাক আদ্রর কাছে।
“আবার ভাবনায় পরলি।”
“না কিছু না চল তো।”
অন্তরার কথা শেষ করতে দিলো না ও হাঁটতে লাগলো। মাথা ঘুরছে আদ্র এমন করলো কেন? আচ্ছা এসব কি
সত্যি ঘটেছে নাকি মিথ্যা। আকাশ পাতাল ভেবে হাঁটছে।
পেছনে থেকে অন্তরা ডেকে ও থামাতে পারলো না বাধ্য হয়ে দৌড়ে গিয়ে ওর সাথে হাঁটতে লাগলো।