অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ১১ || ইস্ক মোবারাক || SA Diary

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ১১
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

বাসায় আশার পর থেকে একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা আদ্র আজ এমন করল কেন? কিছু তো
বুঝতে পারলাম না সেদিন ওনার জন্য আমার এতো বড় ক্ষতি হতে যাচ্ছিল সেটা নিয়ে কোন ভ্রক্ষেপ ও
দেখলাম না উল্টা আমাকে অবাক করলো।
টান মেরে ওরনা খাটে ছুরে মারলাম ,, আদ্রর ছোঁয়া আছে এতে, ছিঃ!
নাক মুখে বিরক্তি এনে ওরনার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। আমার যদি অনেক গুলো ওরনা থাকতো
তাহলে এইটা এখনি ফেলে দিতাম।

অসভ্য ছেলে একটা। কিন্তু ফেলে দেওয়া যাবে না। এটা ফেলে দিলে একটা ওরনা থাকবে তাতে দিয়ে চলা যাবে
না‌। গোসল করে আরেক টা কোথায় পাবো । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওরনা হাতে নিলাম তারপর আদ্ররকে ইচ্ছে
মতো বকতে লাগলাম।
ওরনা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। তারপর পানিতে ভিজিয়ে রেখে এলাম।
এটা ধুয়ে দেবো‌। ছিঃ নিজের ঘাম আমার ওরনা দিয়ে মুছেছে।
সকালে

বিছানার উপরে বসে আছি। হাতে অন্তরার দেওয়া শাড়ি ব্লাউজ । শাড়িটা টকটকে লাল রঙের হালকা ডিজাইন
আছে ক্রিম কালারের। লাল ব্লাউজ, লাল পেটিকোট সব কিছু দিয়েছে। নিজের অনিচ্ছায় শর্তে ও অন্তরার
জন্য রাজি হয়েছিলাম কিন্তু এখন সেটা ও রাখতে পারবো না মনে হয়।
চিন্তিত হয়ে ব্লাউজটার দিকে তাকিয়ে আছি‌। একটু আগে এটা পরতে গেছিলাম লাগে কিনা দেখার জন্য।
এটা আমার একটু ও হলো না এটা পরা অসম্ভব।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অন্তরা আর আমার সাইজ একদম আলাদা। আগেই বলেছিলাম শুনলো না।জোর করে দিলো ঘরিতে দশটা
বাজে নয়টা থেকে এভাবেই বসে আছি।
অন্তরাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়। ফোন হাতে নিলাম কিন্তু ভাগ্য খারাপ আমার ফোনে ব্যালেন্স নাই।
অফিস থেকে ও আনা যাবে না আগেই সে টাকা এনে শেষ করে ফেলেছি।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি অন্তরাকে এখন জানাবো কিভাবে?
ও তো আমার উপর রাগ করবে। নিজের শাড়ি সব কিছু দিয়ে গেল বাসায় ও এসে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু
পার্লারে সাজবে আর এখানে আসতে গেলে ঘুরে আসতে হবে সময় বেশি লাগবে তাই না করেছি‌। আর ও
বারবার করে বলছিল যেন যাইই।
এখন আমি যাবো কি করে?

এদিকে
অন্তরা খুব সুন্দর করে সেজেছে আজ। পার্লার থেকে সেজে এগারোটা দিকে ভার্সিটিতে আসে। চুল গুলো
খোঁপা করে মাথায় গাজরা ফুল দিয়েছে। লাল জর্জেট শাড়ী পরছে কানে বড় ঝুমকা, গলায় ছোট হার, ঠোঁটে
লাল লিপস্টিক, চোখে গাড় কালো কাজল। হাত ভর্তি চুড়ি এক হাতে কুচি ধরে অটো থেকে নেমে দাড়ালো
অন্তরা। অন্তরাকে আজ কোন পরীর থেকে কম লাগছে না। ভাড়া মিটিয়ে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে চারপাশে
দেখতে লাগে কি সুন্দর করে সাজিয়েছে গেট থেকে শুরু করে।

আশেপাশে তাকিয়ে লজ্জা পায় হালকা সবাই কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। ওর দেখে সবাইকেই সুন্দর
লাগছে সবাইই অনেক সেজে এসেছে সবার সাথে অন্তরা ও । তবুও ওর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়েছে
এজন্য একটু লজ্জাও পেল।
সবাইকে অগায্য করে অন্তরা ভেতরে ঢুকে গেল স্নেহকে খুজতে। পুরো মাঠে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার
অন্তরা না স্নেহা নাই‌। সবাই সবার মতো আড্ডা দিচ্ছে। সবাই শাড়ি পড়ে আসে নাই যারা পরে এসেছে সবাই
ফাস্ট ইয়ারের।

.

“হাই!”
চারপাশে স্নেহাকে খুঁজে হয়রান হয়ে অন্তরা একপাশে দাঁড়িয়েছিল। চোখ দিয়ে একজনকে খুঁজে যাচ্ছে হঠাৎ
কারো আওয়াজে চমকে পেছনে ঘুরে দেখে একটা ছেলে ওর দিকে হেঁসে তাকিয়ে আছে। ও তাকাতেই মিষ্টি
করে হাসে খুব সুন্দর তার হাসি।
পরনে নীল শার্ট। গায়ের রং শ্যামলা, চোখে চশমা, ছেলেটা হাত বাড়িয়ে আছে। আমি তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা
করছি একে চিনি কিনা। কিন্তু না তিনি না কখনো দেখেছি বলে ও মনে হচ্ছে না।

“এই যে মিস!”
আবার ও তার কন্ঠস্বরে পেয়ে হুশ ফিরলো …
“জি জি বলুন।”
“কি এতো ভাবছিলেন?”
“কে আপনি?”
” হৃদয় আমার নাম, আপনার?”
বলেই হৃদয় হাত গুটিয়ে নিলো। কারন অন্তরা হাত মিলায় নি সে হৃদয়
কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্কান করছে চিনে কিনা।
” এভাবে দেখার কিছু নাই‌ আপনি আমাকে চিনবেন না?”
হৃদয়ের কথা শুনে অন্তরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,

“কে আপনি?”
“কেবল না নাম বললাম। আপনার নাম তো বললেন না।”
“আমার নাম দিয়ে কি করবেন? আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না আগে কখনো দেখেছি আপনাকে!”
“আপনি কি ফাস্ট ইয়ারে।”
“জি কেন?”
“এমনি নাম টা কিন্তু বললেন না।”
“বলবো না।”
“আচ্ছা না বললেন। আপনাকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।”
“কি কথা?”
অন্তরা চোখ ছোট ছোট করে জিগ্যেস করলো,,
“আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

.

আচমকা কথায় অন্তরার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। বড় বড় চোখ করে হৃদয়ের দিকে তাকালো।
“মানে।”
“বাংলায়‌ই তো বললাম বুঝেন নাই। বলেছি আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে।
আর আপনার চোখটা অনেক সুন্দর তাকালেই ঘোর লেগে যায়। আর…
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ হৃদয় বলে ডেকে উঠল…
কথা থামিয়ে ছেলেটা পিছনে তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে,,
“আচ্ছা পরে কথা বলি।”
বলেই দৌড়ে চলে গেল। অন্তরা যাওয়ার পানে তাকিয়ে র‌ইল।

ছেলেটা কথা গুলো শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে। ছেলেটা ওকে সুন্দর লাগছে বলার জন্য এসেছিলো।
ভাবতেই আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করলো অন্তরার মাঝে সাথে লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো।
কথাগুলো শুনার সময় লজ্জা লাগেনি তখন তো আমি বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে গেছিলাম এখন লজ্জা লাগছে।
কি বলে গেল আমার চোখ সুন্দর। নিজের চোখে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে সত্যি কি তাই‌। কিন্তু দেখা
হলো না এখন এখানে আয়না নাই আর ফোনটাও তো নাই। ভুলে রেখে এসেছি এজন্য স্নেহাকে
ও কল করতে পারছিনা।

লাজ লজ্জা ভুলে স্টেজের সামনে পিছনে গিয়ে বসলাম পা ব্যাথা করছে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে অনেক
ক্ষন স্নেহাকি আসবে না ও তো বলেছিলো আসবে তাহলে আসতাছেনা কেন?
অনুষ্ঠান দেখছি আর একটু পর পর আশেপাশে কাউকে খুজতে থাকি।
হঠাৎ আদ্র দের দিকে চোখ যায় ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বুঝতে চাইছি আমার দিকে তাকিয়ে
আছে কেন? কারণ বুঝতে পারলাম না তাই সামনে তাকিয়ে র‌ইলাম। আমার পাশে একটা ওর সাথে একটু কথা
বললাম আমাদের ক্লাস এর‌ই।

অচেনা শহর পর্ব ১০

আচমকা হৃদয়ের কথা মনে পরলো‌ কেন জানি খুঁজতে মন চাইলো চোখ ঘুরিয়ে খুঁজলাম কেন এমন ইচ্ছে
হলো তাও জানিনা কিন্তু একটু দেখতে মন চাইলো। তাঁকে ও দেখলাম না তখন দৌড়ে কোথায় গেল।
ধূর আমি তার কথা ভাবছি কেন মন থেকে ঝেড়ে ফেলে অনুষ্ঠানে মনোযোগ দিলাম সাথে স্নেহার উপর
রাগলাম অনেক এতো বলার পর ও আসলো না।
“হে ম্যাম কাউকে খুঁজছেন নাকি।”
সেই কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম।
“একি ভয় পেলেন নাকি।”

আসলেই ভয় পেয়ে গেছি কিন্তু সেটা বলা যাবে না। মুখে রাগী ভাব এনে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
“আপনি আবার… এখানে কি করছেন? আমার পিছনে পরেছেন কেন?”
“আমি আপনার পেছনে কোথায় সামনে দাঁড়িয়ে আছি দেখেন।”
অন্তরার সামনে হৃদয় দাঁড়িয়ে কথা বলছে ।
অন্তরা কটমট করে তাকিয়ে আছে হৃদয়ের দিকে…
“আপনাকে কিন্তু রাগলেও সুন্দর লাগে।”
রাগ নিমিষেই ওধাও হয়ে লজ্জা পরিণত হলো অন্তরার।

হঠাৎ বলা অদ্ভুত কথায় অন্তরা লজ্জা পাচ্ছে নিজেই নিজেকে নিয়ে বিরক্ত হলো।
“আপনি এমন করছেন কেন? কি চান আমার কাছে?”
“যদি বলি আপনাকে চাই।”
“হোয়াটটটট?”
“কিছু না।”
“আপনার ফোন টা একটু দেওয়া যাবে।”

অন্তরার স্নেহাকে ফোন দিতে ফোন টা চেয়েছে চেয়ে নিজেই অবাক হচ্ছে ছেলেটা
এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন।
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
“আপনি তো দেখা যায় আমার থেকে ও চালু। সরাসরি ফোন নাম্বারে চলে গেছেন।”
“মানে।’
“ফোনে কথা বলার জন্য নাম্বার চাইছেন এটা..”
অন্তরার চোখ কপালে উঠে গেল, ও বলে কি আর এ ছেলে বুঝে কি? অসহ্য মার্কা ছেলে।

অচেনা শহর পর্ব ১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.