অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ১২ || বজ্জাত বস রোমান্টিক হাজবেন্ড

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ১২
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

অন্তরা রেগে আগুন হয়ে বসে আছে। ওর পাশে হৃদয় ও বসে আছে অন্তরা উঠতে চাইছিলো ছেলেটা জোর
করে বসিয়ে রেখেছে।
উঠতে গেলেই হাত শক্ত করে টেনে আবার বসিয়ে দেয়। এজন্য উঠতে ও পারছে না‌।
একটু আগে ওনার ফোন নিয়ে স্নেহাকে কল করেছিলাম স্নেহা ফোন রিসিভ করে নি‌। তিন বার কল করেছি
তারপর থেকে এখানেই বসে আছি। আর উঠতেও পারছি না পেছনে একটা ম্যাম বসে আছি। তাই কিছু বলতে
পারি না।

ওনার দিকে রেগে তাকালে দাঁত বের করে হাসে সেই হাসি প্রথম ভালো লাগলেও এখন আমার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে
এই হাসি দেখে। হনুমান একটা, কেমন পেছনে পরে আছে।
“অন্তরা”
হঠাৎ কারো মুখে নিজের নামে ডাক শুনে ঘার ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো….
তাকিয়ে দেখি রাহাত ভাইয়া আমার দিকে আসছে। সামনে এসে দাড়িয়ে হেসে উঠলো আমি একটা হাসি দিয়ে
জিজ্ঞেস করলাম,

“হাই ভাইয়া কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“অন্তরা তোমাকে একা দেখছি স্নেহা আসে নাই। ওকে দেখছি না‌!”
“ও তো আসে নাই। কতো করে বললাম তবুও এলো না। কাল এতো করে রাজি করিয়েছি
আর এখন দেখেন আসেই নাই‌। ফোন দিচ্ছি রিসিভ ও করছে না।”
মনটা খারাপ করে বলল …
“কিন্তু ভাইয়া আপনাকে দেখলাম না তো কালকে ভার্সিটিতে। আসছিলেন না নাকি।”
“কাল একটু বিজি ছিলাম এজন্য আসি নাই।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“ওহ আচ্ছা। আপনি কি কোন দরকারে স্নেহাকে খুঁজছেন?”
কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো….
“না না তেমন না আসলে তোমাকে দেখলাম ওকে দেখলাম না তাই। আচ্ছা আসি।”
“ভাইয়া একটা কথা ছিলো।”
“হ্যাঁ বলো।”
অন্তরা আদ্রর পাশে দাঁড়ানোর একটা মেয়ে কে দেখিয়ে বলল,,
“ওই মেয়েটা কে ? আসলে আগে আপনাদের সাথে দেখি নাই তো তাই‌।”
“আয়রা আমাদের ফ্রেন্ড। কিছু দিন ভার্সিটিতে আসে নাই এজন্য দেখো নি।
আচ্ছা আসি ভালো থেকো।”
অন্তরা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাহাত চলে গেল।

“কিরে কোথায় গেছিলি‌?”
মাইশা কথাটা বলল রাহাতকে,,,,
“এইখানেই।”
“তোকে দেখলাম ওই স্টুপিট মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিস। কি কথা বললি?”
“হোয়াট, স্টুপিট মেয়েটা আবার কে?”
“কে আবার ওই যে কি যেন নাম ,, কিছু ক্ষন ভেবে,
স্নেহা ইয়েস স্নেহা ওই মেয়েটা কে তো দেখলাম না আসে নাই।”
“নাহ। কিন্তু তুই কি সব বলছিস ওকে। ”
“বেশ করেছি ওই মেয়েটাকে আমার একদম সহ্য হয় না। ভালোই হয়েছে আসে নাই।”

মুখ বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে কথা বলতে লাগলো সাথে সবাই শুধু চুপ করে আছে আয়রা ও কিছু বুঝতে পারছেনা‌।
আর রাহাত চুপ করে আছে ও বলে ও এদের থামাতে পারবে না তার থেকে চুপ থাকাটাই বেটার। রাহাতের
চোখ যায় আদ্রর দিকে আদ্র চলে যাচ্ছে।
রাহাত ওর পেছনে যেতে যাবে পেছনে থেকে কেউ ওর হাত ধরে নিয়েছে।
তীক্ষ্ণ চোখে পেছনে তাকায়…
“কোথায় যাসছিস?”
“হাত ছার আয়রা। এসব কিন্তু আমি পছন্দ করি না।”.

.

“আচ্ছা ছারছি। এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? আমার দিকে তো তাকাচ্ছস‌ই না দেখ আমি শাড়ি পরছি কেমন
লাগছে আমাকে বলতো।”
রাহাত কিছু বলল না।
“ওই কিছু বলিস না কেন? আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে। ”
বলেই মুখ কালো করে ফেলল….
“জানিনা।”
আর দাঁড়ালো না দ্রুত পায়ে চলে গেল।
আয়রা ওর দিকে তাকিয়ে আছে ওর চোখ ছলছল করছে। গাল বেয়ে পরার অপেক্ষা।
তুই আমাকে কখনো বুঝলি না রাহাত। একটু ও কি ভালোবাসা যায় না আমাকে।
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। মাইশাদের পাশে দাঁড়িয়ে র‌ইল।
আয়রা রাহাত কে ভালোবাসে তিন বছর ধরে কিন্তু রাহাত সেটা বুঝতে চায় না। সব সময় ইগনোর করে।

রান্না শেষ করে ঘেমে গেছে স্নেহা বাবাকে খাবার দিয়ে গোসল করতে চলে যায়।
গোসল করার সময় ফোনের রিংটোন বেজে উঠে কিন্তু এখন রিসিভ করা সম্ভব না। তারাতারি করে গোসল
শেষ করে এসে ও শেষ রক্ষা করা গেল না। কল কেটে গেছে তিনবার মিস কল আননোন নাম্বার।
আবার আসে কিনা তার জন্য ফোন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিন্তু আর আসলো না খিদে লেগেছে খেতে
হবে এখন আলু ভাজা দিয়ে ভাত খেলাম। আব্বু কে ডিম ভেজে দিছিলাম। ঘরে বাজার ও নাই কাল ভার্সিটি
থেকে আসার সময় কিছু কিনতে হবে।

দুটো বাজে অন্তরা নিশ্চয়ই আমার উপর খুব রেগে আছে কিন্তু আমি কি করবো যেতে পারলে তো যেতাম ই।
কাল ই তো এক তারিখ কাল থেকে টিউশনি তে যেতে হবে।
সন্ধ্যায় অন্তরার ফোন এলো। ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলাম ঔপরপাশ থেকে ঝাঁজালো কন্ঠস্বরে কানে এলো
অন্তরা বটেই যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বকা হজম করলাম।
নিজে নিজে বকে ঠান্ডা হয়ে গেল এবার আমি কিছু বলবো তার আগেই খট করে ফোনটা কেটে গেল। আমি
কিছু বলার সুযোগ ই পেলাম না।
ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রচন্ড খেপেছে আমার উপর। এটি স্বাভাবিক কিন্তু এখন কিছু করতে পারবোনা
কাল গিয়ে তা করার করতে হবে। সব খুলে বলতে হবে।

.

পরদিন
ভার্সিটিতে আসতেই মুখোমুখি হয় আদ্রর সাথে সে আমার দিকে একটা কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
একবার আড়চোখে তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম।
ক্লাসে ঢুকে দেখি অন্তরা আগেই এসেছে আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
কিন্তু ও একবার আমার দিকে তাকিয়ে ইগনোর করে মুখ ঘুরিয়ে ফোন টিপতে লাগলো।
“সরি রাগ করিস না প্লিজ।”
অন্তরা ফিরে ও তাকালো না । আমি ওর কাঁধে হাত রেখে আমার দিকে ঘুরিয়ে আবার সরি বললাম…

“সরি তো আমি ইচ্ছে করে আসি না এমন না আস্তে চাইছিলাম। কিন্তু তোর ব্লাউজ আমার হয়
নাই আর ফোনে টাকা ও নাই তাই ফোন দিতে পারি নি।”
মুখ গোমড়া করে বললাম। অন্তরা এবার আমার দিকে তাকালো।
” তাই কি শাড়ি না পরতি অন্য ড্রেস পরে আসতি।”
“আসলে সবাইকে শাড়ি পরতে বলেছিল আমি একা অন্য ড্রেস পরলে যদি কেউ কিছু বলে তাই।
“তুই জানিস কাল কি হয়েছে ?”
“না বললে জানবো কিভাবে?”
অন্তরা হৃদয়ের ব্যাপারে সব বলল..

স্নেহা সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আর অন্তরা রেগে রেগে কথা গুলো বলছে।
স্যার রুমে আসতেই সবাই দাঁড়িয়ে পরলো।
স্যার একটা না সাথে আদ্র ও তার দুজন ফ্রেড আছে। এরা এখন এখানে কি করছে?
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বসে পরলাম কিন্তু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলাম না।
চট করে আবার উঠে দাঁড়াতে হলো ভয়ে আমার আত্মা কাঁপছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি একা কিনা দেখার জন্য একবার মাথা উঁচু করে ক্লাসে চোখ বুলিয়ে নিলাম না একা না
আমি বাদেও আর ও চার জন আছে দুইটা মেয়ে একটা ছেলে ।
আমাদের দাঁড়ানোর কারণ কাল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি নি তাই।

.

আদ্রর দাঁড়িয়ে স্যারের সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেল যাওয়ার আগে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে ছিলো।
“তোমরা কাল অনুষ্ঠানে আসো নি এজন্য তোমাদের জন্য শাস্তি আছে। এখন সেটাই পাবে ফাইনাল ইয়ারের
স্টুডেন্টেরা তোমাদের জন্য কষ্ট করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কিন্তু তোমরা না এসে তাদের অপমান
করেছো।সবার আসা টা বাধ্যতা মূলক ছিলো এবার তোমরা যাও আজ ক্লাস করতে হবে না।”
স্যার বলেই যেতে বলল আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম এ কোন মসিবত রে বাবা এখন কি হবে?
এই সব কিছু ওই অসভ্য ছেলে টা করেছে আমি সিউর। স্যারকে কি যেন বুঝিয়ে গেল অসভ্য
এখন তো যেতেই হবে কিছু করার নাই স্যার বলেছে।
“এভাবে তাকিয়ে না থেকে কাজে লেগে পরুন ম্যাডাম। ”

বলেই আদ্র চেয়ারে উপর বসে পরলো হাতে ফোন সেটা চাপছে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
স্নেহা তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে।
“আপনি ইচ্ছে করে এসব করাচ্ছেন তাইনা।”
“তুমি এখন ও এখানে দাঁড়িয়ে আছো সবাই কাজ করছে দেখতে পারছো না ।যাও কাজ করো।”
স্নেহাদের কালকের অনুষ্ঠানের জন্য যে স্টেজ সাজানোর হয়েছিল সেগুলো খুলতে বলা হয়েছে স্নেহাকে
দিয়েছে ফুল বিভিন্ন দিয়ে যে সাজানো সেসব পর্দা খুলতে।

এসব ডেকোরেটরে লোকরাই করে কিন্তু ওদের শাস্তি দেওয়ার জন্য এসব করা হয়েছে।
কিছু ক্ষন রেগে আদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে কাজে লেগে পরে স্নেহা আদ্রর বলছে কাজ
ঠিক মতো না করলে অন্য কিছু ভাবতে হবে এজন্য ঠিক মতোই করতে হবে।
কাজ করছে আর রেগে আদ্রর দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছি‌। খাটাশ একটা এভাবে
কেউ কাজ করায়। নিজে কেমন লাখসাহেবের মতো বসে আছে মন চাইছে মাথা ফাটিয়ে দেয়।
মনে মনে ইচ্ছে মতো বকছে আদ্রকে কিন্তু সেটা একমাত্র স্নেহা জানে আর কেউ না।
স্যার না বললে কখনো এই খচ্চরটার কথা শুনতাম না‌।

অচেনা শহর পর্ব ১১

“আমাকে না বকে কাজ শেষ করুন ম্যাডাম এভাবে দাড়িয়ে থাকলে আমার অন্য কিছু ভাবতে হবে। সেটা
কিন্তু আর ও কঠিন কিছু হবে।”
আচমকা কানের কাছে আদ্রর কন্ঠস্বর আসতেই থমকে গেলাম। একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালাম আসলেই আমি
দাঁড়িয়ে আড়চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করছিলাম কিন্তু আদ্র শুনলো কি ভাবে আদ্র দূরে বসা
ছিলো।
“আপনি এখানে কেন? আর আমি আপনাকে বকতে যাব কেন?
কিছু টা তোতলাতে তোতলাতে বললো,

“তুমি আমাকে বকছিলানা বলছো। ওকে গুড গার্ল। আর আমি কি করছিলাম তোমাকে বলতে বাধ্য
না নিজের কাজ করো।”
বলেই আবার নিজের জায়গায় চলে গেল। রেগে তার দিকে তাকিয়ে কাজে মন দিলাম।
রেগে কাজ করছি আড় চোখে বার কয়েক না চাইতেও তাকিয়েছি। তারপর কাজে
মনোযোগ দিয়েছি ভালো করে।
এখন শীতের সময় তবুও আমার গরম লাগছে কাজ করলে তো গরম‌ই লাগবে।

অচেনা শহর পর্ব ১৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.