অচেনা শহর পর্ব ১৫
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
খুব মনোযোগ দিয়ে বই এর দিকে তাকিয়ে আছে স্নেহা।
লাইব্রেরীতে বসে কিছু মনোযোগ দিয়ে পড়ছে আর নোট করে নিচ্ছে। সামনে বসে আছি অন্তরা ফোনে কারো
সাথে তর্ক করে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে অন্তরার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল কার সাথে এইভাবে কথা বলছে।
অন্তরা বলল হৃদয় নামের সেই ছেলেটা। সে নাকি কোথায় থেকে ওর নাম্বার নিয়ে ছে তারপর কাল থেকে
ডিস্টার্ব করে যাচ্ছে। আর তার সাথে ফোনে ঝগরা করে যাচ্ছে।
“ওফ অন্তরা দেখতে, তুই কিন্তু খুব জ্বালাচ্ছিস। এত বিরক্ত লাগলে ফোনটা কানে ধরে রেখেছিস
কেন ফোন কেটে দিয়ে।”
“না বকে ফোন কেটে দেবো। কোথায় থেকে নাম্বার পেয়েছি সেটা আমার জানতে হবে না।”
“হ্যাঁ এতো জানার ইচ্ছে। তাহলে আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে ঝগড়া কর। জানার চেষ্টা কর।
চিল্লিয়ে মাথা খেয়ে ফেললি আমার।”
প্রচন্ড বিরক্তির সাথে কথাটা বললাম।আমার বিরক্ত হওয়া চাহনি দেখে অন্তরা আস্তে আস্তে কথা বলতে
লাগলো। আমি আর কিছু বললাম না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
আমার তো বই নেই।এজন্য লাইব্রেরী থেকে বা অন্তরার বই নিয়ে পড়া কালেক্ট করতে হয় খাতা লিখে নিয়ে
গিয়ে বাসায় গিয়ে পড়তে হয়।
আজ ও তাই করছি। প্রথম ক্লাস করে লাইব্রেরীতে এসেছি দ্বিতীয় ক্লাস আমাদের নাই।
40 মিনিট ক্লাস ততক্ষণ এখানেই থাকবো। বইয়ের ভেতর গভীর মনোযোগ দিয়ে আছি।
হঠাৎ কারও কণ্ঠস্বর শুনে চমকে মাথা উঁচু পারলাম।
“ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শপিং করতে যাওয়া। আবার শপিংয়ে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ইন্টারেস্টিং কাহিনী তাই না।
আচ্ছা সত্যি কি হারিয়ে গিয়েছিলে নাকি এক্টিং করেছে আমাদের সামনে।”
ব্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আদ্র কথাটা বলে উঠলো। আমি চোখ ছোট ছোট করে উনার
দিকে তাকিয়ে ছিলাম। উনার কথা শুনে প্রচন্ড রাগ উঠলে,
সাথে সাথে কালকের খারাপ ব্যবহারের কথাটা মনে পড়ে গেল। কতবার রিকোয়েস্ট করার পরও কেউ তো
হেল্প করলো না। উল্টা সবাই মিলে আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে দিয়েছিল। কি ভাবে হাসছিল মনে হয় আমি
সাহায্য চাইছি না সর্কাস দেখাচ্ছি।
.
পড়ে নিজেরই নিজের ওপর রাগ উঠেছিল। উনি কতো টা খারাপ সেটা খুব ভাল করেই জানি তবুও কেন
ওনার কাছেই গেলাম। আমার তাকে চেনা উচিত ছিল। উনি আমাকে হেল্প করবে না। কারণ হেল্প করার মত
মানুষ উনি না। উনি বিপদে ফেলতে পারে সাহায্য করে না।
চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে আর গভীর চিন্তা করছি।
“ও হ্যালো, বললেনাতো! আর এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?”
বলেই কি যেন বলে আদ্র বাঁকা হাসলো।
“আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর আর ভার্সিটি সব মেয়েরা এজন্য আমার জন্য পাগল। তুমিও আমার উপর
ফিদা সেটা আমি খুব ভাল করেই জানি। কিন্তু এখন সেটা দেখাতে হবে না যেটা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর
দাও।”
আদ্রর এমন টিটকারি মারা কথা শুনে রাগে আমার শরীর কাপতে লাগলো। আর উনি হেসে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। আর এইরকম বাজে কথা বলছে।
“একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি মোটে আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলাম না আমি তো,
হঠাৎ অন্তরা কথা মাথায় এলো। ও ত আমার সাথে বসেছিল অন্তরা কোথায় গেল?
.
“আপনি এখানে কি করছেন ? এখানে তো অন্তরা ছিল।”
“কে ছিল সেসব তো আমি জানি না। এখন আমি আছি।”
“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। আপনি আছেন।”
বলে স্নেহা অন্তরা কে খোঁজার জন্য আশেপাশে তাকালো। আর পেয়েও গেল। ফোনে কথা বলছে আর
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
এই ম্যাইয়া ঐ খানে গেল কখন আবার ও , না এখানে আমার সামনে বসেছিল।
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“এমনভাবে জিজ্ঞেস করছ যেন আমি এখানে আসতে পারব না। আর তোমার মাথায় রাখা
উচিত এটা লাইব্রেরী এখানে যে কেউ আসতে পারে।”
“হ্যাঁ তা আসতে পারেন। কিন্তু আমার সামনে বসেছেন কেন? এখানে তো আরো অনেক সিট
আছে অন্য কোথাও গিয়ে বসেন।”
“আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি এখানে বসে আছি তোমার কোন প্রবলেম।”
“আপনার মতো অসভ্য লোক আমি জীবনে আর দুইটা দেখি নাই।”
“কি বললে তুমি আমি অসভ্য। তা আমি কি অসভ্যতামি তোমার সাথে করেছি।”
“একদম ফালতু কথা বলবে না। কালকেও আপনি আমার কে নিয়ে যথেষ্ট মজা করেছেন।
আবার আজকে এসে আগ বাড়িয়ে ঝগরা করছেন?”
.
“কি বললে আমি ফালতু কথা বলি?আমি আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করছি । এখানে ঝগড়ার কি হল
আমি তো সামান্য একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি।”দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলল।
“জিজ্ঞেস করবেন কেন? কাল কি ব্যবহার করেছেন আমার সাথে মনে নেয়। কতবার বললাম একটু হেল্প
করেন। আপনারা সবাই মিলে আমাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করলেন সাহায্য তো করলেন না ওটা হাসির পাত্র
বানিয়ে দিলেন।”
“হাসির মতো কথা বললে যে কেউ হাসবে।
এতে এত আফসেট হওয়ার কি আছে।তুমি কি চেনো না নাকি না চিনেই কি তুমি শপিং মল চলে গেছো।
যে হারিয়ে যাবে আবার সেটা আমাদের বলতে এসেছ।”
“আপনি কি বলতে চাইছেন আমি আপনাকে মিথ্যা বলছি।”
“সে তুমি বলতেই পারো আমি কিভাবে জানবো।”
শয়তানি হাসি দিয়ে।
“আপনি কিন্তু অতিরিক্ত করছেন।”
আদ্রর এই হাসি আর ওর কথা বলার ধরন দেইখে স্নেহার মনে চাইছে ওর মাথা বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে দিতে।
“কি অতিরিক্ত করলাম?”
এমন ভাবে কথা বলল, যেন এতক্ষণ কিছু বলেই নি নিষ্পাপ শিশু একটা।
.
রাগীভাবে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছু বলতে চেয়েও বললাম না
এর সাথে কথা বলা মানে কথা বাড়ানো। এর থেকে কথা না বড়ানোই ভালো।
“এই যে চুপ হয়ে গেলে যে, কি অতিরিক্ত করলাম বল?”
কিছুই বললাম না চুপ করে রইলাম
“কি হল মুখ বন্ধ হয়ে গেল কেন? নাকি কথা আর খুঁজে পাচ্ছো না।”
এর মাঝে অন্তরা চলে এলো। আমাকে আর আদ্রকে এক সাথে বসে থাকতে দেখে
ও অবাক হলো। অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ওকে দেখে আমি বললাম,
“এই তুই কোথায় গিয়েছিলি?”
“এইতো এইখান ছিলাম। কিন্তু তোরা একসাথে বসে কি করছিস? আচ্ছা ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন?”
আদ্রকে একদমই দেখতে পারেনা অন্তরা সেদিনই আদ্রর জন্য কাঁদছিল। এই লোকটাকে ভয় ও পায় এজন্য
ভাইয়া বলে সম্বন্ধে করল। না হলে একে ভাইয়া বলতো না।হঠাৎ তার মনে হতে লাগল লোকটা এত সুন্দর
হ্যান্ডসাম যেমন দেখতে তেমন সুন্দর। কিন্তু এতো পাজি না হলেও পারতো।
মুখটা কালো করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়।
আদ্রর এবার মুখ খুলল,
.
“কিছুই বুঝতে পারলাম না তোমরা দুজনে আমার সাথে এমন করছো কেন? এমন করে বলছো যেন আমি
লাইব্রেরীতে এসে বড় কোন অপরাধ করে ফেলেছি। দুজনের একই প্রশ্ন করছো?আমার যখন ইচ্ছা আমি
লাইব্রেরীতে আসতে পারি । আর শুধু লাইব্রেরী কেন আমি ভার্সিটি যেকোন স্থানের যেকোন সময় যেতে
পারি এর জন্য কার কাছে আমি কৈফত দিতে বাধ্য নই।”
আদ্র কথাটার রেগে চিৎকার করে বলল ওর কথা শুনে অন্তরা স্নেহা দুজনে কেঁপে উঠলো। দুজনে দুজনের
মুখোমুখি চেয়ে ভয় পেয়ে কোনরকম ছুটে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে এলো।
বাইরে এসে দুইজনে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।
“বড় জোর বেঁচে গেছি। অসভ্য, বান্দর ছেলে কেমন কারলো। না জানি কি করে বসতো? বড় জোর বেঁচে
গেছি আর এর সামনে ভুলেও যাবনা।”
স্নেহা এমনিতেই আর্দ্র কে ভয় পায়। তবুও বাজে বিহেভ দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল না রেখে কয়েকটা কথা বলে
ফেলে । কিন্তু ভয় ও ভালো পায়। এখনো ভয় পেয়েছে।তাইতো এভাবে ছুটে পালিয়ে এসেছে। নাহলে লাইব্রেরী
সবার সামনে হেনস্থা হতে হবে তার থেকে এর সামনে না থাকাই ভালো সব সময় এরিয়ে চলতে হবে।
.
আদ্র প্রচন্ড রাগ উঠে গেছিল। এমনিতে স্নেহা তারপর আবার অন্তরার কথা শুনে আর নিজেকে ধরে রাখতে
পারিনি চিৎকার করে কথাগুলো বলে। সামনে তাকিয়ে দেখে দুজনে হাওয়া তারা দুজনেই দৌড়ে বেরিয়ে
যাচ্ছে। হতভম্ব হয়ে দুজনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আদ্র। লাইব্রেরীর সবাই আদ্র দিকে হা করে তাকিয়ে
আছে। কারন আদ্রর চিৎকারের শব্দে সবাই ওর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। আদ্র সেটা খেয়াল করে কিছুটা
লজ্জা পায়। সবাই ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবুও সবাইকে অগ্রাহ্য করে বেরিয়েছি লাইব্রেরী
থেকে।
“সত্যি করে একটা কথা বলবি।”
“কি কথা?”
আয়রার কথা শুনে রাহাত দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে তাকাল। আয়রা ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।
“তুই কি আমাকে একটু ভালোবাসিস না।”
ওই ভাবে তাকিয়ে থেকে কথাটা বলল আয়রা। ওর এই চোখে মুখে আতঙ্ক।
রাহাত কিছু বলছ না চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তাই আয়রা আবার নিজে থেকে আবার বলল,
“কি হল বল?”
“বাসি তো।একজন ফ্রেন্ডকে যতটুক ভালোবাসা দরকার ততটুকু বাসি।”
.
কথাটা বলে মুচকি হাসি দিল রাহাত। কিন্তু ওর উত্তর শুনে আয়রা চমকে উঠল ওতো এতোটুকু ভালোবাসা চায়
না এর থেকে বেশি ভালোবাসা চায়।
“কিন্তু আমি তো তোর থেকে আরো বেশি কিছু চায়।তুই কি সেটা বুঝতে পারিস না। নাকি বুঝতে চাস না।কেন
এমন করছ আমার সাথে। আমার কষ্টটা কি তোর চোখে পড়ে না।”
“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
“কিছু বলার নাই তো কিছু বলছি না।”
এবার আয়রা রেগে উঠলো,
রাহাতের কলার চেপে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলতে লাগলো,
“কেন তোর কিছু বলার নাই।বল কেন তোর কিছু বলার নাই। তুই তো জানিস আমি তোকে ভালোবাসি কিন্তু
কেন তুই আমাকে ভালবাসতে পারছিস না। আমি কি দেখতে অসুন্দর। আমাকে কি ভালো বাসা যায় না।”
“আয়রা কলার ছার।”
“না ছারব না। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”
“কিসের উত্তর দেবো। বলছি না আমি তাকে ভালোবাসি না বারবার কেন এক কথা বলিস।”
“কেন ভালোবাসিস না কেন?”
চিৎকার করে বলেই রাহাতের কলার ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
রাহাত এক নজর তাকিয়ে বেরিয়ে এলো রুমে থেকে।
.
আয়রা কাদতে কাদতে ওখানে বসে পরল। চিৎকার করে কাঁদছে আয়রা। আর ভাবছে কেন রাহাত ওকে
ভালোবাসে না কেন?২ বছর আগে থেকে ওকে ভালোবাসে কতবার ওকে বলেছে তত বারি ও সবসময় কষ্ট
দিয়েছে না করেছে।
আচ্ছা ওর কি অন্য কাউকে পছন্দ। এটা তো কখনো ভেবে দেখিনি। আর যাকে পছন্দ হয়ে থাকুক না কেন ও
শুধু আমার। কথা বল ভেবে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালাম।
তিনদিন পর
স্নেহা টিউশনি শেষ করে বাসায় সামনে গাড়ি থেকে নামল। এখন ছয়টা বাজে।
গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে গেট দিয়ে ঢুকবে। হঠাত ওর চোখ যায় রাস্তার বাম পাশে একটা মেয়ের দিকে।
ভেতরে ঢোকা বাদ দিয়ে পেছন ফিরে মেয়েটার দিকে তাকায়।
তিনদিন ধরে খেয়াল করছি এই মেয়েটা এখানে এভাবে বসে আছে। মুখটা কেমন বিষন্ন দেখা যাচ্ছে শুকনো
মনে হয় খাওয়া পারেনি পেটে। শুকনো মুখ করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটার। খুব কৌতুহল হল
স্নেহার মেয়েটার বিষয়ে জানার।
.
এই ড্রেস পরে এইভাবে বসে আছে এর কি বাড়ি ঘর নাই নাকি। মেয়েটার বয়স ১১কিংবা ১২ হবে। স্নেহা
মেয়েটা সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
আমাকে দেখে মেয়েটা মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকালো। মুখটা দেখে খুব মায়া হল,
“তুমি এখানে বসে আছো কেন তোমার বাসা নাই। কয়দিন ধরে দেখছি এখানে বসে আছো।”
মেয়েটা কিছু বলে না চুপ করে রইলো।
আমি ছারার পাত্রী নই। আজ এর বিষয়ে সব কিছু জেনে ছাড়ব।
আমি মেয়েটার পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলাম।একবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ফিরিয়ে নেওয়ার
আগে আমি জিজ্ঞেস করলাম,,
“বলো, তোমাকে কয়দিন ধরে দেখছি এখানে বসে আছ। সবসময়ই বসে থাকতে দেখছি। তোমার বাবা-মা
কাউকে দেখি না। কোথায় উনারা। তোমার কি বাড়ি বাড়িঘর নাই। এখানে বসে আছো কেন? মুখটা তো
শুকনা লাগছে মনে হচ্ছে দুদিন ধরে খাবার ও পেটে পড়ে নাই।”
প্রচুর শয়তান মেয়ে তো তাও কথা বলে না চুপ করেই আছে।মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার। তবুও
নিজেকে শান্ত রেখে কথা বলেই যাচ্ছি। এর মুখ থেকে কথা বের করেই ছাড়বো আজকে।
.
“কি হল বল আমাকে বলতে পারো বড় বোন মনে করে। আমি তোমাকে সাহায্য করবো।”
তবু কিছু বলল না আরো কিছু কথা বললাম তাও কাজটা ও হলো না। নিরাশ হয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে হঠাৎ
আবার বসে পারলাম। পাইছি তোমার মুখ দিয়ে কথা এবার বের করবই।
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্ষুধার্ত তুমি। তুমি কি খেতে চাও তাহলে আমি তোমাকে খাবার দিতে পারি।”
কথাটা শুনেই মেয়েটা চট করে আমার দিকে তাকালো। মুখটা ঝলমল করছে খুশিতে। কাজে লেগেছে তাহলে।
“কি হলো খাবে?”
সাথে সাথে মাথা নেড়ে হ্যা জানালো।
কি আর করা যাবে খাবার কথা যখন বলেছি তাহলে তো খেতে দেওয়া লাগবে। বাড়তি টাকা খরচ করে বাইরের
খাওয়াতে পারব না । তাই এই বাসা থেকে খাবার এনে দেই।
খাবার গুলো দেখি মেয়েটা গাপুস গুপুস করে খাবার শেষ করে ফেলে।প্রচন্ড ক্ষুধা লেগে ছিল যে খাবার খাওয়া
দেখে বোঝা গেল । এর যদি আমি এখন এক ডিশ ও খাবার দেয় তাহলেও মনে হয় শেষ করতে পারবে।
খাওয়া শেষ করে মেয়েটা নিজে থেকে বলতে লাগলো,
.
যা শুনে বুঝলাম মেয়েটার বাবা নেই মা ছিল মাকে নিয়ে মেয়েটা রাস্তায় ভিক্ষা করতো। ওইভাবেই যেখানে
রাত সেখানেই ঘুমিয়ে যেতে। নিজস্ব কোন বাড়িঘর নেই। দুদিন আগে একটা ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট লেগে
ওর মা ও মারা যায়। তখন থেকেই এখান এইভাবে বসে আছে যাওয়ার কোন জায়গা নাই। কোথায় যাবে তাই
এখানে বসেই ভিক্ষা করে। কেউ কিছু দিয়েছে না হয় নাই। আর মার দুঃখে কাতর হয়ে এই ভাবে দিন
কাটাচ্ছে।মার কথা বলে মেয়েটা রান্না করতে লাগলো। ওর কান্না শুনে আমার ও চোখের কোনে জল চলে
এলো ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালাম।
বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালাম। মেয়েটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে কিন্তু একে নিয়েই বা কি করবো
আমার ও যে অভাবের সংসার। নিজেরাই কোন ভাবে দিন কাটাচ্ছে বাবাকে নিয়ে। কিন্তু মেয়েটাকে এখানে
রেখে যেতেও মন চাইছে না একটুকু সময় মধ্যেই যেন মনে একটা জায়গা দখল করে নিয়েছে।রাত হয়েছে
বলে আরো মায়া লাগলো এই রাতের বেলায় মেয়েটা এখানে থাকবে আরো দুদিন হতে এখানে থেকেছে
নিশ্চয়ই ভয় করেছে কিভাবে থেকেছে?
.
আমি ভেবেছিলাম আমিই হয়তো সবচেয়ে দুঃখী। কিন্তু এ তো আমার থেকেও দুঃখি আমার তো বাবা আছে
কোন ভাবে আমি চলছি ভালোই তো আছি খাচ্ছি দাচ্ছি চলে যাচ্ছে। কিন্তু ওর নিজের সব শেষ বাবা-মা কেউই
নাই। গভীরভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালাম আজান পড়ে গেছে। বাসায় গিয়ে নামাজ পড়তে
হবে বাবার কি অবস্থা দুপুরের পরে দেখতে পারি নাই। কষ্ট লাগলেও কিছু করার নাই উঠে চলে যেতে
লাগলাম।মেয়েটার নাম রানি।
হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েটা আপা বলে ডেকে উঠলো,
থমকে দাঁড়ালাম।
পেছনের ঘরে বললাম” কিছু বলবা?”
“আপা আমনে খুব ভালা।”
শুকনো একটা হাসি দিয়ে চলে এলাম উপরে। কিন্তু ভালো লাগছেনা পরে এসে বাবার সাথে দেখা করলাম
নামাজ শেষ করে। বারান্দায় দাঁড়াতেই চোখ পরল রানির দিকে ওইখানে ভাবে বসে আছে রানি।
দেখি আমার বুকটা ধ্বক করে উঠলো প্রচন্ড খারাপ লাগতে লাগলো। কিছু করতে না পারি রাতটুকু তো ওকে
আশ্রয় দিতেই পারি শীতে কাঁপছে মেয়েটা দূরে থেকেই দেখতে পাচ্ছি। যে কোন বিপদ হতে পারে যেকোনো
সময়। খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো।
কি যেন ভেবে নিচে নেমে এলো স্নেহা
অচেনা শহর পর্ব ১৪
দারোয়ান আমাকে বের হতে দেবে না অনেক বলে বেরিয়ে এলাম রানি আমাকে দেখে বল আমনে এইহানে।
কিছু না বলে ওকে নিয়ে বাসার ভেতরে চলে এলাম।
রাতটাও আমার কাছে থাকল। সকালে ভাবছি কি করা যায়। হঠাৎ রুনা আপুর কথা মনে পড়লো আপু
বলেছিলো রায়ার জন্য একটা আয়া রাখবে।
আচ্ছা রানি কে যদি রাখে তাহলে খুব ভালো হবে।ওর একটা আশ্রয় স্থল হবে।ভেবে মুখে হাসি ফুটিয়ে রুনার
কাছে গেল আর সব তাকে খুলে বলল।
রুনা আপু তো সেই খুশি রাজি ও হয়ে গেল।
আমি জানতাম আপু রাজি হবে।
ভার্সিটিতে এসে আদ্রকে খুঁজতে লাগলাম। আদ্রকে খুজার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার ছিলো না কিন্তু
এখন তাকে আমরা দরকার। তাই যার সামনে যেতে চাই না তাকেই খুঁজতে হচ্ছে।
সব সময় তো চোখের সামনেই থাকে কিন্তু আজকে পাচ্ছি না।