অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ১৬ || কতোটা চাই তোকে

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ১৬
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

হাতের দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে মনে চাইছে এটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে।
এর জন্য আমাকে চোখে পরলো লোকটার অসহ্য।
স্নেহার হাতে আদ্রর বাইকের চাবি।
কিছুক্ষণ আগে ভার্সিটিতে ঢোকার সময় হঠাৎ একটা লোককে ডেকে ওঠে পেছনে দেখে একটা ছেলে।
সেই ওকে জিজ্ঞেস করে,
“আপু আপনি কি এই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন?”

স্নেহা মাথা নেড়ে হ্যা জানায়। লোকটা সাথে সাথে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে।
তারপর পকেট থেকে একটা চাবি বের করে বলে ফাইনাল ইয়ারের আদ্র কে চিনি কিনা।
আদ্রর নাম বলতে আমি চিনে যাই। ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
“আপনি কে? এসব আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

“আসলে আপু আমি আদ্রর ফ্রেন্ড জামিলের বড় ভাই। জামেলা বাইকটা কালকে নিয়ে গিয়েছিল আজকে
জামিল একটা কাজে ঢাকার বাইরে গেছে এজন্য আমাকে বলেছিল যে বাইক টা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
অনেকক্ষণ ধরে এখানে তোকে খুজছি কিন্তু পাচ্ছি না। বাইকটা এখানে পার্ক করে রেখেছি কিন্তু চাবিটা।
কার কাছে দেবো বুঝতে পারতেছি না‌।”
“তো এখন আমাকে ডাকলেন কেন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“আসলে আপু আমি আপনার কাছে দিবো ভাবছিলাম। আপনি যদি একটু কষ্ট আদ্রকের চাবিটা দিয়ে দেন খুব
উপকার হত। আসলে আমার কাজ আছে এখানে বেশী সময় নষ্ট করা আমার জন্য প্রবলেম। আপনি প্লিজ
একটু আদ্রকে দিয়ে দিবেন আপু।”
কি আর বলবো এমন ভাবে লোকটা বলছিল আমি না করতে পারলাম না। তিনি আমার হাতে চাবি ধরিয়ে দিয়ে
চলে গেল। আমি হা করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে র‌ইলাম।

তারপর থেকে আদ্র কে খুঁজতে লাগলাম। আদ্র ও ভার্সিটিতে নাই আর ওর সাথের সাঙ্গোপাঙ্গ গুলো ও নাই।
ভার্সিটিতে দেখছি না কেউই আসেনাই। আর আসবেই বা কেন এতো সকালে। আমি তো আজকে অনেক
সকালে এসেছি। লাইব্রেরীতে যেতে হবে এভাবে খুঁজে লাভ নাই। তার থেকে বরং লাইব্রেরীতে গিয়ে আমি
আমার কাজ শেষ করি। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে দিয়ে দেবো নি।
স্নেহা লাইব্রেরীতে চলে গেল।
ক্লাসের 10 মিনিট আগে বের হয়ে গেল।

অন্তরা মনে হয় চলে এসেছে। যায় ওকে নিয়ে আদ্র কে খুঁজবো। ক্লাস রুমে গিয়ে অন্তরা কে খুজতে লাগলাম।
কিন্তু অন্তরা ক্লাসে নাই। অন্তরা কি আসে নাই নাকি। ক্লাসের সময় তো হয়ে গেছে এখনো আসে নাই। ওকে
আজকে আসবে না?
গ্রিলের উপর হাত রেখে নিচে তাকাতেই আদ্রর দিকে চোখে পড়লো।
আদ্রর বাইক টা নিচে পার্ক করা ছিল। আর চাবিটা আমার কাছে ছিল। আদ্র ও তার সকল ফ্রেন্ডরা একসাথে
বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে কি যেন আলোচনা করছে।

.

ওদেরকে দেখে স্নেহার মুখে হাসি ফুটল।এই আদ্র কে পেয়েছি ওনার চাবি ওনাকে ফিরিয়ে দেয়া যাবে এখন।
ভেবে তাড়াতাড়ি নিচে নামতে লাগলো। আদ্রর সামনে বিন্দুমাত্র যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও এখন যেতে হবে।
ভেবে রাগ উঠলে ও রাগ সংযত করে এগিয়ে যেতে লাগলো।
কাছাকাছি আসতে মাইশার প্রশ্ন করতে লাগলো,
“হে ইউ তুমি এখানে কি করছ?”

তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে প্রচন্ড বিরক্ত আমাকে এখানে দেখে আমি তাকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যেতে
লাগলাম আদ্রর দিকে। এবার মেয়েটা চিৎকার করে উঠলো, হয়ত আমার এই ইগনোর মেনে নিতে পারে নাই।
কিন্তু এর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা আমার নেই। প্রথম থেকে এই আমাকে সহ্য করতে পারে না।
মাইশার চিৎকারের উপস্থিত সবাই সব মনোযোগ ভঙ্গ করে আমাদের দিকে তাকালো।এভাবে সবার
তাকানোতে কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করলাম সাথে মাইশার চিৎকারে খানিকটা কেপে উঠলাম,
“ইউ তুই আমার কথা ইগ্নোর করছিস?”

.

কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা এত জোর কেউ চিৎকার করে ভয় পেয়ে গেছে গা। ভয়ে কথা বলতে পারছিনা।
হঠাৎ কোথা থেকে রাহাত ভাই এসে জিজ্ঞেস করল,
“আরে স্নেহাকে তুমি এখানে কিছু বলবা নাকি।”
এবার আস্তে আস্তে বললাম,”আসলে ভাইয়া আমার একটা দরকারি জিনিস দেওয়ার ছিলো।”
আঙ্গুলের ইশারা করে আদ্রকে দেখিয়ে বললাম,” ওনাকে”
আমার কথাটা শুনে কেউ হজম করতে পারে নাই হয়তো। সবাই বড় বড় চোখ করে
তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আবার কি দেবো তোকে। ওটাই হয়তো ভাবছি সবাই।
আদ্র নিজেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ভাইয়া বলল “আচ্ছা যাও দিয়ে আসো।”

আমি একটু সাহস নিয়ে সবার থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রর দিকে যেতে লাগবো এমন সময় সামনে
এসে দাড়ালো মাইশা।
এমনভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে।
বুঝতে পারতেছি না উনি এত রেগে গেলে কেন? কিছুক্ষণ আগে বিরক্ত হয়ে কথা
বলছে এখন তো রেগে আগুন হয়ে আছে।
আমি একটা ঢোক গিললাম ওনার রাগ দেখে।
“আদ্রকে কিসে দিবি মানে। আদ্রকে তুই আবার কি দিবি।”
রেগে কথাটা বলল,
“আসলে এই যে এইটা দেওয়ার জন্য এসেছিলাম।”
বলেই হাতের চাবিটা উঁচু করে দেখালাম।

.

মাইশা তো আমার হাতে আদ্রর বাইকের চাবি দেখে বড় গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
এই চাবিটা আমার হাতে একদমই আশা করে নাই ।
আদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে চাবিটা আমার হাতে কি করে এলো?আমাকে হাতে
চাবিটা দেখে মাইশাটা টান দিয়ে আমার হাত থেকে চাবিটা নিয়ে নিল।
“আদ্রর বাইকের চাবি তোর কাছে কি করে এলো?”
আমি কিছু বলতে যাবো আবার মাইশায় বলে উঠলো,
“আদ্র আমরা তো ভেবেছিলাম চাবি চুরি হয়ে গেছে। এই দেখ চুর নিজে এসে ধরা দিয়েছে।এই মেয়ে তুমি
বাইকে যাবি চুরি করে ছিলে তাইনা।”

হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মাইশার দিকে। শয়তান মেয়ে আমাকে চোর বলছে।
“কি সব বলছেন আপনি আমি চুরি করতে যাব কেন?”
“চুরি না করলে তোমার কাছে চাবি কিভাবে গেল!”
“যেভাবে বাইকটা এখানে আসছে ওই ভাবেই চাবিটা আমার কাছে গেছে।”
“সত্যি করে বল।”
সবকিছু খুলে বললাম।তারপর আর কেউ কিছু বলল না আর চাবিটা যেহেতু মাইশা নিয়েছে আর আদ্র সেটা
দেখেছে। তাই আমি আর কিছু বললাম না সব বলে চলে আসলাম।
আর মনে মনে সবকটার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম। বিশেষ মাইশা শাকচুন্নিটার।

.

বকতে বকতে এলোমেলো পায়ে হেঁটে আসছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে রাহাত ভাই ডেকে উঠলো,
সে আমার পাশে এসে দাঁড়াল।
“ভাইয়া কিছু বলবেন?”
“হ্যাঁ আসলে স্নেহা কেমন আছো?”
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এমনি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে আসলাম।আসলছ তোমার
সম্পর্কে তো তেমন কিছুই জানি না। এতদিন ধরে পরিচিত হলাম তাই আরকি।”
“আচ্ছা বলেন কী জানতে চান?”
“তোমার পরিবারে কে কে আছে?”
“আমি আর বাবা।”
“তুমি আর বাবা তোমার মা কোথায়?”

কথাটা শুনে স্নেহার মুখটা মলিন হয়ে গেল। মায়ের কথা মনে পড়ে গেল মা তো আর এই পৃথিবীতে নাই।
স্নেহার মলিন মুখ দেখে কিছুটা অবাক হল রাহাত। মায়ের কথা জিজ্ঞেস করাতে মুখ গোমরা করল কেন?
বোঝার চেষ্টা করছে।
“এনি প্রবলেম স্নেহা।”
স্নেহা একটা বড় শ্বাস ফেলে বলল,,,” না, আমার মা বেঁচে নাই।”
ছোট করে কথাটা বলল, রাহাতের খুব মায়া হলো কথাটা শুনে। অজান্তেই মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম,
সাথে সাথে রাহাত বলল,” সরি সরি এক্সট্রিমলি সরি আমি জানতাম না। আর তোমাকে আমি কষ্ট দিতে চাই নি।

.

তবু অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেললাম কিছু মনে না।”
“ইটস ওকে, ভাইয়া এত সরি বলতে হবে না।”
একে একে আমার সবকিছু জিজ্ঞেস করল কিছু কিছু বললাম কিছু বললাম না গ্রাম থেকে এসেছি সেটা বললাম
বাবার আমি ছাড়া আর কেউ নাই সেটা বললাম। কথা বলতে বলতে সিড়ির কাছে চলে এলাম ভাইয়া আমার
কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল আমি উপরে চলে গেলাম।
ক্লাসে গিয়ে অন্তরা কে পেলাম। একটা আগে ও তো ছিল না এখন কোথা থেকে এলো।
“এই তুই কোথা থেকে এলি?”
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন বাসায় থেকে এলাম।”

“কিন্তু একটু আগে তো তোকে ক্লাসে দেখলাম না। আমি পাঁচ মিনিট আগে নিচে গিয়েছি পাঁচ মিনিট তুই চলে
এলি।”
“আমি অনেকক্ষণ আগে এসেছি। তোকে পাইনি দেখে লাইভ্রেরীতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুই তো সেখানে ছিলি
না উল্টা আমার বিপদ হয়েছিল।”
“বিপদ হয়েছিল মানে?”

.

“আর বলিস না ওখানে গিয়ে ওই হৃদয় সাথে দেখা হয়েছিল। এত ছেসরা কেন ছেলেটা বলতো। সারাদিন ফোন
দিয়ে আমাকে পাগল করে খায়। ফোন না ধরলে আমাকে থ্রেট দেয়। বাসায় আসবে আর আব্বু আম্মুকে নাকি
বলবে তার আর আমার রিলেশন চলছে। কি এক জামেলা বলতো। ছেলেটা আমার বাসাও চিনে নিয়েছে।”
অন্তরা কথা শুনে সত্যি চিন্তা হতে লাগলো। খারা বেয়াদব তো ছেলেটা।
“আমি কি করবো দোস্ত। একটা সাজেশন দে একে উচিত শিক্ষা দেওয়ার।”
“আমি কি সাজেশন দিব।”
ভাবুক হয়ে কথাটা বলল আমার মাথায় কিছুই আসেনা। অন্তরা আমার কথা শুনে রেগে তাকিয়ে আছে।
স্যার চলে আসায় কথার সমাপ্তি হলো আর ক্লাসে মন দিলাম।

স্নেহা ওয়াশরুমে গেছে অন্তরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাকলো কন্ঠটা শুনে অন্তরা রেগে উঠলো,
হৃদয় দাঁত কেলিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে। অন্তরা রেগে পেছনে তাকাতেই রাগ উবে হয়ে গেল। হৃদয়ের
দিকে চোখ আটকে গেল। নীল কালারের টিশার্টের অপূর্ব লাগছে দেখতে। অন্তরা রেগে থাকলেও দেখাতে
পারছে না ও হাঁ করে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে কেন জানি।

.

ওর তাকানোর মাঝে ধ্যান ভঙ্গ করলো হৃদয়ের কথায়। হৃদয় যে কথাটা বলছি সেটা শুনে
রাগ ওর মাথায় উঠে গেল।
“সুইট হার্ট আমাকে কি খুব সুন্দর লাগছে আজকে যে এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছ।”
ওর কথা শুনে আমার মন চাইছে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে দিতে।
“কি হল আমার দেখে রেগে বেলুন হয়ে গেলে কেন?”
“আপনি আসলেই একটা শয়তানের হাড্ডি। আপনাকে বলছিনা আপনি আমার আশেপাশে
আসবেন না এত বেহায়া কেন আপনি?”

“ভালবাসলে তো একটু বেহায়া হতেই হবে তাইনা।”
“ভালোবাসা মাই ফুট আপনি আমার চোখের সামনে কখন আসবেন না। ভুলেও আমাকে ফোন দিবেন না।
বুজছেন আপনাকে আমার সহ্য হয় না বুঝতে পারেন না।”
“এটা তোমার রাগের কথা‌। তুমি ওআমাকে ভালোবাসো সেটা আমি খুব ভাল করেই জানি কিন্তু স্বীকার করছ
না।”
একথা শুনে অন্তরা বোকা বনে গেলো। ছেলে বলে কি আমি নাকি ভালোবাসি ওনাকে‌ কখন কবে
ভালোবাসলাম আমি নিজেই জানিনা উনি জেনে গেছে। যত্তসব আজাইরা উটকো ঝামেলা।

“ফালতু কথা আপনি সব সময় বলেন।এখন আবার আরেক কথা বলছেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি
আসলেই আপনি একটা পাগল। আপনাকে আমি সহ্য করতে পারি না আর আপনি বলছেন আমি
আপনাকে ভালোবাসি।”
বলেই তাচ্ছিল্য মার্কা একটা হাসি দিল অন্তরা।
“স্বীকার করছ না তো করবে করবে খুব শীঘ্রই নিজে এসে আমাকে বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

.

“পাগল আমি এই কথা আমি জীবনে বলবো না।আপনার এই পাগলামো কথা আপনার নিজের কাছে রাখুন
আর ফটুন তো এখান থেকে।”
“আজকে বেশী সময় নাই। তাই চলে যাচ্ছি ভালো থেকো সুইট হার্ট। বাই।”
বলে হৃদয় দুলতে দুলতে চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটলাম।

ঘুমের ঘুরে হালকা আর্তনাদ শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসলো স্নেহা। এমন আর্তনাদ কোথায় থেকে আসছে ভাবতে
বাবার কথা মনে পরে। দৌড়ে বাবা রুমে আসি।
বাবা বিছানায় হাঁসফাঁস করছে।বাবাকে ধরতে আমার হাত গরম হয়ে ওঠে। এত গরম শরীর। বাবা কি জ্বর
হয়েছে কিন্তু রাতে খাওয়ার সময় তো ঠিকই ছিল।
“বাব তুমি ঠিক আছো কি হয়েছে তোমার ?কথায় কষ্ট হচ্ছে বলো।”

.

ভয় তোতলাতে তোতলাতে কথাটা বল স্নেহা।বাবার কি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে নাকি বুঝতে পারছ না। স্নেহার
বাবা অস্পষ্ট সুরে পানি বলে উঠলো,
স্নেহা তাড়াতাড়ি বোতলের দিকে নজর দিলো না একটু পানি নাই বোতলের কিভাবে করলাম বোতল একটু
পানি রাখে নাই।
তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে পানি এনে বাবাকে পানি খাইয়ে দিলাম। কিন্তু বেশি পানি খেতে পারল না। তবুও কেমন
জানি করছে? কথা বলতে পারছে না। ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কি করবো এখন বুঝতে পারছি
না?মাথা কাজ করছে না। বাবাকে নানা কিছু জিজ্ঞেস করছি কথা বলছে না।চোখ বন্ধ করে আছে। এতে আমি
আরও ভয় পেয়ে যাই।
এখন রাত দুটোর কাছাকাছি।

এই সময় তো ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে না। একটা প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারলে ভালো হতো। কোথায়
পাবো এই সময় দোকান পাট ও খোলা থাকবে না।
চিন্তিত হয়ে বাবার পাশে বসে আছি। আশার আলো ফুটলো ছোটবেলায় আমারও যখন জ্বর হত । মাথা তখন মা
জলপট্টি দিতো। আমিতো এই কাজটা করতে পারি উঠে বাথরুমে থেকে ছোট বাটিতে পানি ও একটা
কাপড়ের টুকরো নিয়ে আসলাম। তারপর বাবার মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলাম।

.

শরীর অতিরিক্ত গরম মনে হয় অনেক জ্বর এসেছে। বাবার মাথায় জলপট্টি দিয়েছে আর আমার চোখ দিয়ে
অনবরত পানি পরছে। বাবাকে হারানোর একটা ভয় পাচ্ছি।
সাথে সাথে আমার হাত চলা বন্ধ হয়ে গেল আমি আর জলপট্টি দিতে পারছিনা।বাবার কিছু হলে আমি কি নিয়ে
বাঁচব। পৃথিবীতে তো এই একমাত্র একজনই আছে যে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ওই ভাই
বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফোটাতে লাগলাম।

আল্লাহ তুমি এত নির্দয় হয় না বাবা কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না।
ছোট থেকে একটু তেল আমি একটু বেশি ভয় পাই।
হঠাৎ মাথায় বাবার হাতের ছোঁয়া পেয়ে মাথা চোখের বাবার দিকে তাকালাম বাবা তাকিয়ে আছে।
বাবা কষ্ট করে তাকিয়ে আছে। তার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তাকিয়ে থাকতে পারছিনা। কথা বলতে পারছেনা।
আমি বাবার হাতে মাথায় চেপে ধরে বাবা বাবা বলে ডাকতে লাগলাম। তারপর আবার জলপট্টি দিতে লাগলাম
ও ভাবেই বাবা ঘুমিয়ে পড়ল।

.

জলপট্টি দিতে দিতে সকাল হয়ে গেল। সকালের দিকে বাবার মাথায় হাত রাখলাম একটু হালকা জ্বর কমে
এসেছে। কিন্তু বেশি কমেনি ওষুধ আনতে হবে দিনের আলো ফুটতে আমি টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ওষুধ
কেনার জন্য।
বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটলে একটা ওষুধের দোকান আছে। সেখানে যাওয়ার জন্য হাঁটতে লাগলাম কিন্তু
সেখানে এসে নিরাশ হলাম। দোকান বন্ধ বেশি সকাল দেখে মনে হয় দোকান খুলিনি।

বাবা কে বাসায় একা রেখে বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যাবে না ।তাড়াতাড়ি ওষুধ নিয়ে ফিরতে হবে।কিন্তু এখন
ওষুধ কিভাবে নেব। দোকান‌ই তো বন্ধ আরেকটা দরকার আছে সেটা অনেক দূর অনেকদূর হেঁটে যেতে
হবে। অনেক সময় চলে যাবে।
যত সময়ই লাগুক যেতে হবে। টাকা যা আছে তা দিয়ে ওষুধ হবে। গাড়ি ভাড়া তো নেই। বাধ্য হয়ে হাঁটতে
লাগলাম।

অচেনা শহর পর্ব ১৬

স্নেহা হাঁটতে লাগলো দ্রুত গতীতে । এখন যদিওর পাখা থাকতো উড়ে উড়ে চলে যেত। মন চাইছে পাখা থাকা
দরকার ছিল কিন্তু সেটা তো সম্ভব না এখন পায়ে হেঁটে যেতে হবে। তারাতারির জন্য স্নেহা নিচের দিকে খেয়াল
না করে এক মনে হেঁটে যাচ্ছে হঠাৎ পায়ের সাথে কিছু বেজে মুখ থুবড়ে পড়তে নিলো,
পরেও গেল পরে একটা চিৎকার করে উঠলো, পায়ের গোড়ালিতে ও হাত ছুলে রক্ত বের হয়ে গেছে। প্রচন্ড
ব্যথা পেয়েছি মনে হয় আমার হাত আর পা ভেঙে গেছে। পরে উঠার শক্তিটুকু পাচ্ছিনা ওই ভাবেই বসে
রইলাম।

চোখ বন্ধ করে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু কমছে না উল্টা আরো বেড়ে যাচ্ছে মনে হয়।
যন্ত্রণায় গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগল।
মাথা উঁচু করে দেখলাম আশেপাশে তেমন কেউ নেই। একজন দুইজন যাচ্ছে তারা আমার দিকে হা করে
তাকিয়ে আছে। তাদের তাকানোতে হালকা লজ্জা পেলাম এত বড় মেয়ে হয়ে ভাবে পড়ে গেছি। ভাবতেই ব্যথা
আর লজ্জ্বা দুইটা আমাকে আঁকড়ে ধরল।

ওইভাবে উঠার চেষ্টা করলাম কিন্তু উঠতে পারছি না। পা মনে হয় ভেঙে গেছে। হঠাৎ আমার সামনে একটা
বাইক এসে থামল, মাথা উঁচু করে বাইকের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। উনি এখানে কি করছে?

অচেনা শহর পর্ব ১৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.