অচেনা শহর পর্ব ১৮
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
“একটা সত্যি কথা বলেন তো আপনি?”
আচমকা স্নেহার কণ্ঠস্বর শুনে চমকে পেছনে ঘুরে তাকাল আদ্রর। আদ্র বাইকের উপর বসে ফোনে বাড়িতে
কথা বলছিলো।
এইসময় হঠাত স্নেহার কন্ঠ কানে আসে।
তাকিয়ে দেখে স্নেহা ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ও সামনে তাকিয়ে ফোন নিয়ে কিছু একটা বলে ফোন কেটে পকেটে রেখে ।
স্নেহার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় বাইকে থেকে নেবে।
সোজাসুজি স্নেহার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করে,
“কি কথা?”
স্নেহা এমন প্রশ্নের জন্য রেডি ছিল। জিজ্ঞেস করতেই বলতে লাগে,
“কালকে আপনি ওইখানে কি করছিলেন? আর আপনি জানলেন কিভাবে বাবা অসুস্থ আমি ফার্মেসিতে যাব।”
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আদ্রর মুখের দিকে। সারারাত এই একটা কথায় স্নেহ মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে।
আদ্রর বাসা কোনদিকে সেটা জানে না আদ্রর। আর আদ্র কোথায় থেকে বোর সামনে চলে এলো আর মামা যে
অসুস্থ আমি তার জন্য ফার্মেসিতে যাচ্ছি সেটা আবার কিভাবে জানলো।
ওর মাথায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কোন উত্তর পাচ্ছে না। তারপর আমাকে এই বা এতো হেল্প করলো কেন?
কালকে আবার অটো রেখে এসেছিল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
আদ্র কিছুই বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মানে আমার প্রশ্নের থেকে চুপ করে
দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু নিজের ফোন আবার করে নিয়েছে।
প্রচন্ড রাগ হল আমার ফোনটা তো কেটে এসেছিলি কথা শোনার জন্য । এখন উত্তর না দিয়ে আবার ফোন
কানে নিয়েছিস কেন?
তবু চুপ করে রইলাম,
ফোন কাটতেই আবার জিজ্ঞেস করলাম….
“কি হলো বলেন? আপনি কাল সকালে আমার সামনে কিভাবে গেলেন। আর আপনি জানেন কিভাবে আমি
ওইখানে আছি। আপনি কি আমাকে ফলো করছেন।”
কথাটা শুনেই আদ্র হা হা করে হেসে উঠলো। তীক্ষ্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি হাসার
কি বললাম এভাবে গলা ফাটিয়ে হাসছে কেন?
“কি হলো আপনি হাসছেন কেন? আমিতো আপনাকে একটা সিম্পল কোশ্চেন করেছি।”
“লাইভ সিরিয়াসলি! আমি তোমাকে ফলো করব কেন? কে তুমি? তোমাকে আমি ফলো করতে যাব কোন
দুঃখে? এমন ভাবনা তোমার মাথায় আসলো বা কি করে?”
বলে আবার হাসতে লাগল।
আদ্র কথায় আমি নিজে হতদম্ব হয়ে গেলাম। প্রতিটা কথা আমাকে প্রচন্ড ভাবে অপমান করল।আমি কি এমন
বলেছি এটা তো স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন করেছি? এমন সাত সকালে সবাই নিজের বাসায় থাকব আর সে বাসা
ছেড়ে আমার সামনে এলো এটা যার সাথে হবে সেই এমনটা ভাববে। এই একটা প্রশ্ন করার জন্য এভাবে কেউ
অপমান করে। ভালোভাবে বললেও তো হতো আসলেই এই ছেলেটা শয়তান, হনুমান , বাঁদর একটা। নিজের
মনের কথাটা ভাবলাম রাগী ফুসফুস করতে লাগলাম। কিন্তু সামনে কিছু বলতে পারলাম না।
.
“এভাবে হাসার কি আছে? একদম আমাকে অপমান করে কথা বলবেন না। আমি কি এমন বলেছি। সত্য
বলেছি। আপনি আমাকে ফলো না করলে জানলেন কিভাবে আমি তখন ওই রাস্তায় ছিলাম।”
“তোমাকে ফলো করব কি জন্য?আর তুমি ভাবছো আমি তোমার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম এটা নিছকই
তোমার ভুল ধারণা।আমি তোমার জন্য না নিজের দরকারে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ রাস্তায়
তোমাকে ওরকম পাগলের মত বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে তোমার সামনে গিয়ে ছিলাম।”
পাগলের মত বসে থাকতে কথাটা শুনে আমি রেগে উঠলাম,,,
‘কি বললেন আপনি আমি পাগলের মত বসে ছিলাম?”
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললাম… আমার কথা শুনে শয়তান রূপটা বললা..
“অবশ্যই ওভাবে রাস্তায় বসে থাকতে দেখলে যে কেউ পাগলই ভাববে।আমিতো প্রথমে পাগলই ভাবছিলাম।
পরে যখন মুখটা চেনা চেনা লাগলো তখন কৌতুহল নিয়ে জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম।”
“একদম আমাকে পাগল বলবেন না। আমি নিজের ইচ্ছায় এভাবে বসে ছিলাম না।আমি তো পড়ে গিয়েছিলাম।
কতটা ব্যথা পেয়েছি জানেন। আর আপনি কি না আমাকে পাগল বলছেন?”
“আমার যা মনে হয়েছে আমি তাই বললাম।”
“আচ্ছা সেসব না হয় বুঝলাম এখন বলেন? আপনি তাহলে আমাকে সাহায্য করলেন কেন?ফার্মাসিতে নিয়ে
গেলেন ও আচ্ছা আপনি জানেন কিভাবে আমি ফার্মেসিতে যাব?”
কথাটা বলেই ভ্রু কুঁচকে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“কি হলো বলেন?”
আদ্রর মুখটা কেমন জানি থমথমে লাগছে।প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর তো দ্রুতগতিতে দিয়ে দিছিলো এখন একটু
নিশ্চুপ।
আমি কিছু বলতে যাব তখনই আদ্র বলল….
“সে আমি তোমার মুখ দেখে বলেছি।”
“আমার মুখ দেখে।”
চমকে কথাটা বললাম।
“হ্যাঁ।”
.
“আমাকে পাগল পেয়েছেন। আমার মুখ দেখে আপনি কিভাবে বুঝবেন আমি কোথায় যাব না যাব। সত্যি করে
বলুন?”
“সত্যি কথা আবার কি বলবো? তুমি যেভাবে চোট পেয়েছিলে তাতেই বোঝা গেছিল তোমার ফার্মেসিতে
যাওয়ার দরকার এজন্য তো ফার্মাসিতে নিয়ে গেলাম।”
“এ্যা”
কথাটা শুনে স্নেহা এতোটায় অবাক হল যে ওর মুখ হা হয়ে গেছে। হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন
প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।ওর এই কথাটা একবারের জন্য মাথায় আসেনি।
“কি হলো এমন হা হয়ে গেলে যে?”
“না মানে আসলে,
“তোমার না মানে আসলে তোমার কাছে রাখো । আই এম বিজি। তোমার ফালতু কথা ফালতু প্রশ্নের উত্তর
দেওয়ার জন্য আমি বসে থাকতে পারবো না।তুমি ভেবেছিলাম তোমাকে ফলো করছি তোমার মত মেয়েকে
আমি ফলো করবো এটা ভাবাও হাস্যকর ব্যাপার।”
বলে বুকের কাছ থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে দিয়ে গট গট করে চলে গেলে। আমি হতবম্ভ হয়ে সেখানে
দাঁড়িয়ে রইলাম।
“কিরে এমন চুপচাপ বসে আছিস কেন?”
“এমনি তুই কখন এলি?”
“এইতো, এখনই কাল আসিস নি কেন?”
“বাবা অসুস্থ আজকে জ্বর আছে তবুও ওই ভাবে রেখে এসেছি। দুইটা ক্লাস করে চলে যাব।”
“আঙ্কেল অসুস্থ তা হলে তার সাথে যাবনি আঙ্কেলকে দেখে যাব।”
“তার দরকার নাই। তুই সবগুলো ক্লাস করিস তোর কাছ থেকে নিতে হবে নোট।
আব্বু এখন অনেকটা সুস্থ কালকে বেশি ছিল আজকে একটু কম।”
“আচ্ছা তাহলে কালকে সকালে ভার্সিটিতে আসার আগে যাবনি।”
“আচ্ছা।”
.
ভার্সিটির শেষ করে বাসায় আসলাম।আগে চলে এসেছি সবগুলাই ক্লাস করিনি বাসায় এসে রান্না করে খাইলাম।
বাবাকে খাইয়া ওষুধ খাইয়ে দিলাম। জ্বরটা আবার বেরেছে। কিন্তু বাবার কাছে থাকতে পারছিনা এখন টিউশনে
যেতে হবে। কালকে যেতে পারি নাই বাবার অবস্থা বেশি খারাপ ছিল।
সময় হতে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রওনা হলাম ।তার আগে চাবিটা দিয়ে গেলাম রুনা আপু কে যাতে একটু পরে
বাবাকে একটু দেখে আসতে পারে।
টিউশনি তে এসে একটু কটু কথা শুনতে হলো। কাল আসোনি মাত্র এক সপ্তাহ পরেই একদিন মিস করেছি।
সে নিয়ে নানা কথা শোনালো চুপচাপ তার কথা শুনলাম। খারাপ লাগলেও কিছু বলতে পারলাম না।
কথাগুলো হজম করে পড়াতে মন বসালাম।
পড়ানো শেষ হতেই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলাম।
চারদিন বাবা রইল।চারদিন খুব দুশ্চিন্তায় কেঁটেছে অবশেষে বাবার জ্বর ছেড়েছে।
আজকে ব্যাংকে থেকে 2000 টাকা উঠিয়েছি। বাবার ঔষধ আনতে হবে নিয়মিত ওষুধ না খেলে অসুস্থ হয়ে
পড়ে। টিউশনির টাকা তো এখনই পাবো না কেবল মাত্র 14 দিন পরানো হল। এই মাসটা টাকা উঠিয়ে
চলতে হবে।ব্যাংকে বেশি টাকা নাই 10000 মতো আছে টাকাগুলো বাবার ওষুধ এ খালি খরচ করি।
ফার্মেসি তে গিয়ে ওষুধ কিনে আনলাম। তারপর সোজা বাসা। বাসায় আসতেই রানী রায়া কে কোলে নিয়ে
আমার রুমে ঢুকলো । উপরের ওর সাথে দেখা।
রানী কে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম,,
কি ব্যাপার রানি মুখে। খুব হাসি খুব ভালো আছে দেখছি।
“হ আপা আমি তো খুব ভালা আছি। সব আপনের লিগা হয়ছে।”
“আমার জন্য কিছু হয়নি রানী। তোমার ভাগ্যে ছিল বিধায় তুমি এখানে আসতে পেরেছো।”
“আপনে সেদিন না আনলে তো রাস্তায় না খেয়ে মরতাম।”
“এসব কথা আর বলবা না। রুনা আপু কি করছে?”
“আপা তো দুধ জাল দিতাছে।”
.
“আচ্ছা তুমি আসো ভেতরে আসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
“আইচ্ছা।”
ফ্রেশ হয়ে এসে বাবার সাথে একটু দেখা করে। রায়া কে একটু কুলে নিলাম। তারপর রান্না ঘরে গেলাম আমার
সাথে রানী এলো।
দেখতে দেখতে এক মাস চলে গেল। সময়টা মোটামুটি ভালই যাচ্ছে টিউশনির বেতন ও পেয়েছি।
ঠিকমতো ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করি। যারা আমাকে দেখতে পারে না তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখি।
ক্লাস টাইমে ভার্সিটিতে ক্লাস করি অন্তরের সাথে হালকা আড্ডা আবার ক্লাস শেষ হলেই সোজা টিউশনিতে
চলে যায় তারপরে বাসা।
এভাবে আমার রুটিন চলছে। এর আর আদ্রর সাথে তর্ক বিতর্ক হয় নাই।নিজে থেকে তাকে সবসময় এরিয়ে
চলেছি দূর থেকে দেখেছি সে আমার সাথে আর কথা বলতে আসে নাই।
আজকে দু’দিন হলো আমি ভার্সিটিতে যাইনা টিউশনিতে যেতে পারি নাই। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে উপায় নাই।
কারণ সকাল থেকে মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা হয়েছিল সেখান থেকেই খাট পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে বিছানায় পড়ে
আছি। রুনা আপু খাবার দিয়ে যায়। রানি এখন আমার সাথে থাকে। দেখাশোনা করার জন্য রুনা আপু থাকতে
বলেছে। অন্তরা আসছিল আজকে বিকেলে দেখা করতে।
রাত 11 টা মতো বাজে।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি।
হঠাৎ রিংটোন বেজে উঠল। এত রাতে ফোন বাজতে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। সচরাচর আমার ফোনে ফোন
আসে না খুব একটা। রাতে আটটার অন্তরার ফোন ও ছাড়া আমাকে আর ফোন দেয়ার মত কেউ নাই।
গ্রাম থেকে এক ফ্রেন্ড সপ্তাহ মাসের একটা-দুইটা ফোন দেয়।
অচেনা শহর পর্ব ১৭
কিন্তু এখন কে ফোন দিচ্ছে ভয়ে আমি ফোন হাতে নিছি না। অনবরত ফোন বেজে যাচ্ছে তাই ভয় ডর ভুলে
ফোন হাতে নিল।যদি কেউ দরকারে ফোন দিয়ে থাকি। বিশেষ করে অন্তত দিতে পারে কোন দরকারে।
নাম্বার দেখে বিরক্ত হলে একটা অচেনা নাম্বার এটা আবার কার নাম্বার। কিছুটা ভয় পেল।
ধরার সাহস হলো না ফোনটা ধরলে না। ফোনটা কেটে গেল। ফোন কাটতে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
মনে হয় বড় কোন বিপদ নিজের সরিয়ে দিল।
অনেকদিন আগে ওর ফোনে উল্টাপাল্টা নাম্বার থেকে ফোন আসতো। তারা বাজে কথা বলতে ফোন দিয়ে
আবার রং নাম্বার বলে কেটে দিত। আজকে কি বাজে কথা বলবে। এরকম রং নাম্বারে ফোন না ধরার ভালো।
ফোন রেখে দিলাম দেখলাম তিনবার ফোন এসেছে। আমার ভাবনার মাঝে তিনবার ফোন কখন চলে এলো।
কিছুই বুঝতে পারলাম না থাক বাঁচা গেছে।
নিশ্চিন্ত হয়ে চোখ বন্ধ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।কিন্তু আমার কপাল খারাপ ঘুমাতে দিল না আবার টোন
করে শব্দ হলো।
কিন্তু এটা ফোনে শব্দ না মেসেজের শব্দ। মেসেজটা না দেখি ফোনটা সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে।
ফোন হাতে নিলাম কয়টা বাজে দেখার জন্য। ফোন হাতে নিয়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। ফোনে না
হলেও 20 টা কল দশটা মেসেজ।
হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসলাম।
আল্লাহ এতো ফোন কে দিল আমাকে সেটা দেখার জন্য কল লিস্টে গিয়ে দেখি। সেই অচেনা রং নাম্বার
থেকে।আর প্রতিটা মেসেজের একটা কথাই ফোন না ধরলে খবর আছে, ফোন ধরো ফোন, ধরতে বলছি।