অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ২০ || সম্পর্কের মায়াজাল ২

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ২০
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

সেই একদিন ফোনের কল আর মেসেজের হুমকিতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু অবাক করা বিষয় সারা
দিন আর আসে নাই ফোন।
ফোন নিয়ে ভয়ে ভয়ে ছিলাম এই বুঝি ফোন আসবে আর আমাকে চিৎকার করে বকাবকি করবে‌।
কিন্তু সারাদিন কল এলো না। কল না আসায় একটু নিশ্চিত হলাম। এমন ও হতে পারে কেউ রং নাম্বারে ফোন
মেসেজ দিয়েছিল পরে বুঝতে পারছে এটা রং নাম্বারে এজন্য আর ফোন দেয় নাই।
বড় একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম,,

মাথাটা ধরে আছে জন্য আগেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখি দুই বার মিসকল।
সাত সকালে আবার কে ফোন দিল নাম্বারটা দেখে আঁতকে ওঠলাম। এটা তো সেই রং নাম্বার। এ আবার ফোন
দিয়েছিল কেন?
ফোনটা দেখে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। ফোনে টাকাও নাই যে আমি কল ব্যাক করব। থাকলে হয়তো
করে উঠতে পারতাম না।এমন হুমকি-ধমকি দিয়ে দিয়েছে। তারমানে রং নাম্বারে ফোন দিয়েছিল না আমাকে
চেনে নাকি। ফোনটা রিসিভ করতে পারলে একটা সুরাহা মিলত।

না না চিন্তা মাঝে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে হালকা রান্না করে। ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে গেলাম।
আজকে আগেই যেতে হবে ভার্সিটিতে লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে পড়তে হবে। আগে ভার্সিটিতে পৌছালাম
মাঠের বাম পাশে তাকালাম না আজকে কেউ নাই। আমি সোজা লাইব্রেরীতে চলে গেলাম।
লাইব্রেরীতে তেমন কেউ নেই একদম ফাঁকা। আর ভার্সিটিতেও তেমন নেই কয়েকজন ছাড়া। এক ঘন্টা আগে
এসেছি‌।কেউ থাকবে বা কি করে সবাই তো আধা ঘণ্টায় আগে আসে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

স্নেহা বই খুঁজছে। কিন্তু ইম্পর্টেন্ট বইটার পাচ্ছি না। বইএকদম দক্ষিণ দিকে চলে গেলাম। ওই খানে না থাকলে
নাই। এখানে এসে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো কারণ বইটা পেয়ে গেছি কিন্তু অনেক উঁচুতে। লাফিয়ে
লাফিয়ে বইটা নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি এত সহজে ওটা নিতে পারছি না।
থেমে হাপাচ্ছি বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি অস্থির হয়ে গেছি লাফিয়ে। হঠাৎ মনে হল আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে
আছে। শুধু পেছনে বললে ভুল হবে সে একদম আমার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। তার নিশ্বাস আমার কানের
কাছে বাড়ি খাচ্ছে। আচমকা এমনটা হ‌ওয়ায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল মনে হয়
মুহূর্তে।পেছনে তাকাতে পারছিনা সে আমাকে পেছন ফিরতে দিচ্ছে না। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,,,

“কে?”
“ফোন ধরনি কেন?”
কথা নেই বার্তা নেই ফোন ধরার কথা বলাতে স্নেহা কিছুটা থমকে গেল। কিসের ফোন ধরার কথা বলছে।
কিসের ফোন ধরি নাই? হঠাৎ দুদিন ধরে রং নাম্বারে কথা মনে পড়ল। তাহলে কি আমার পিছনের লোকটা
আমাকে ফোন দিয়েছিল।
ওইভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম,সে আমার সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে অসুস্থি ফিল হচ্ছে হাত পা
ঠান্ডা হয়ে আসছে তবুও বললাম,
“কিসের ফোন কিসের ফোনের কথা বলছেন? আর কে আপনি এভাবে গা ঘেষে দাড়িয়ে আছেন কেন সরে
দাঁড়ান?”

.

“দুদিন ধরে ফোন দিছি আর এখন বলছে কিসের ফোন। আজকে যদি ফোন না ধরছো তাহলে তোমার কি হাল
করবো নিজেও কল্পনা করতে পারবে না।”
“কে আপনি?”
এতক্ষণ সে একদম আমার সাথে ঘেঁষে ছিলো এবার তার উপস্থিতি আমি পাচ্ছি না মনে হচ্ছে কিছুটা দূরে তাই
আমি তাড়াতাড়ি সামনে ফিরলাম।
সামনে ফিরে লোকটাকে দেখে আমি ৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম মনে হয়। আপনা আপনি আমার মুখ থেকে
বেরিয়ে এলো,,,
আপনি!

আদ্র পকেট এ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি আমার দিকে। হাজার পরনের সাদা টিশার্ট কালো প্যান্ট। ঠোঁটে
বাঁকা হাসি। দেখতে বরাবরের মতই সুন্দর লাগছে।কিন্তু আমার তো সেদিকে খেয়াল নেই আমি তো আদ্র কথা
বলা আমার সাথে এতো গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝেই থমকে আছি।
“কি হল ভয় পেয়ে গেলে নাকি?”
“তারমানে আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। ম্যাসেজে ধমক দিয়েছিলেন।”
“তোমার কি মনে হয়?”
“আমার যাই মনে হোক। আপনি বলুন।”
“যদি বলি আমি তাহলে কি করবে?”

“আপনি!আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন কেন? আর আপনি নাম্বার কোথায় পেলেন? আপনি জানেন
তিনদিন ধরে আমি এক মিনিটের জন্য ঘুমাতে পারি নাই ভয়ে। কে না কে ফোন দিছে ভেবে ভয়ে ছিলাম।”
“আচ্ছা। তা তুমি এতো ভীতু কেন?”
“কি বললেন আমি ভীতু?”
হালকা রেগে কথাটা বলল স্নেহা।
“অফ কোর্স ভীতু। ভীতু না হলে কি কেউ সামান্য ফোন দেখে ভয় পায়।”
“দেখুন একদম ভীতু বলবেন না আমাকে। আর যেভাবে মেসেজ করেছিলেন এটা যে কেউ দেখলে ভয়
পাবে।”

.

“আচ্ছা তুমি আমাকে ভয় পাও তাই না।”
“অসম্ভব। আমি আপনাকে ভয় পাবো কেন?”
“রিয়েলি ভয় পাও না।”
“একদমই না।”
স্নেহা সত্যি ভয় পায় কিন্তু স্বীকার করছে না। আর করবেও না নিজের দুর্বলতা কেউ স্বীকার করে নাকি। কিন্তু
আদ্রর এগিয়ে আসা দেখে ওর ভয় কলিজা শুকিয়ে যায়।
আদ্র কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। স্নেহার কথা শুনে ওর দিকে এগিয়ে আসে।
“কি ব্যাপার আপনি এগিয়ে আসছেন কেন? দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন?”

আদ্র কথা বলছো না। এগিয়ে আসছে স্নেহার দিকে। স্নেহা ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে। আদ্র ঠোঁট কামড়ে
আরেক পা আসতেই স্নেহা পেছনে বুকশেলফে মাথায় বাড়ি খায়। সাথে সাথে আহ করে ওঠে,,, চোখমুখ
কুঁচকে মাথায় হাত দেয়।
আদ্র তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর মাথা ধরে।
“হোয়াটস হ্যাপেন্ড আবার কি হলো? এভাবে কেউ পিছনে যায়। খেলে তো মাথায় ব্যথা কেয়ারলেস একটা।”
কিছুটা চিৎকার করে কথাটা বলে স্নেহার মাথায় ডলে দিতে লাগে। আদ্রর অস্থিরতা দেখে স্নেহা নিজের হাত
নামিয়ে ফেলে। অবাক হইয়া তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এতক্ষণ আদ্রর চোখেমুখে দুষ্টুমি ছিল। কিন্তু এখন অস্থিরতা কার জন্য এত অস্থিরতা আমার জন্য।
অবাক হয়ে আদ্র দিকে তাকিয়ে আছি।
আদ্রর চোখ হঠাৎ স্নেহার দিকে পড়ে। ও দেখে স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে চোখে অনেক প্রশ্ন।
এটা দেখে আদ্র স্নেহাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।
বিস্ময় চোখে স্নেহা তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে।
“একটা সত্যি কথা বলেন তো?”
আদ্র ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
“আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন।”

.

“নাম্বার পাওয়া কি খুব কঠিন কাজ। অফিস গেলে তো তোমার নাম্বার পাওয়া যায়।শুধু তোমায় কেন যে কারো
নাম্বারে পাওয়া যাবে।”
আসলেই তো আমার নাম্বার তো অফিস রুমে ওর দেওয়া আছে। একদম ভুলে গেছিলাম।
“আর আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন ই বা কেন?”
এবার আদ্র ওর মুখটা থমথমে হয়ে গেল।আদ্রর থমথমে মুখ দেখে স্নেহা সন্দেহ চোখে তাকিয়ে থাকে।
“কি হলো বলেন আমাকে কেন ফোন দিয়েছিলেন? আমার যদি আপনার কাজ কি?”
“দেখো তুমি আবার ভেবোনা আমি তোমার সাথে প্রেমালাপ করার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। আমিতো ফোন
দিয়েছিলাম….

“কি জন্য দিয়েছিলে সেটা তো জিজ্ঞেস করছি।আমি বলি নাই আপনি আমার সাথে প্রেমালাপ এজন্য ফোন
দিছেন।”
“আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি দিয়েছি।এনি প্রবলেম।”
“অবশ্য প্রবলেম। আমাকে ফোন দিবেন অবশ্যই তাতে আমার প্রবলেম আছে। আপনার ইচ্ছে তে আপনি যা
ইচ্ছা তাই করুন ।আমাকে ফোন কেন দিবেন?”
“আজকে ফোন দেবো ফোনটা রিসিভ করো।”
“ইম্পসিবল আমি আপনার ফোন রিসিভ করব না।”
“করবে। দশটায় ফোন দিব। রিসিভ না করলে তোমার জন্য সেটা ভালো হবে না।”

.

কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না পেছনে ঘুরে চলে গেল। আমি হা করে তার যাওয়ার পানে
তাকিয়ে র‌ইলাম। আবার হুমকি দিয়ে গেল। যা ভেবেছিলাম রিসিভ করে জানার চেষ্টা করব কে?আজকে
এখন তো জেনে গেলাম। অন্য কেউ হলে তাও রিসিভ করার কথা ছিল।কিন্তু এই অসভ্য লোকটা ফোন
আমি কিছুতেই রিসিভ করব না। পেয়েছি এটা কি আমাকে ।আমাকে হুমকি দিয়ে নিজের ইচ্ছামত চালাবে।
কিভাবে বলে গেল যেন আমি তার গার্লফ্রেন্ড। ছি ছি কি ভাবছি আমি তার গার্লফ্রেন্ড হতে যাবো কেনো।
নিজের কথায় নিজেই রাগ উঠছে। কিন্তু একটা কথা মাথায় আসছে না আমাকে কেন ফোন দিল। আবার না
ধরার জন্য ধমকে গেল।

ফোন ধরার ইচ্ছা নাই তবুও রাত দশটায় ফোন হাতে বসে রইলাম। কেন বসে রইলাম জানি না। আমি জানি
আমি ফোন ধরবো না। বিশেষ করে আদ্রর ফোন জানার পরে তো আরো না।সত্যি সত্যি দশটিয় ফোন এক
মিনিট পরেও না এক মিনিট আগেও না। ফোন হাতে বসে আছি কিন্তু ধরছি না কারণ আমি ভেবে রেখেছি
ফোন ধরবো না।
এদিকে আদ্র ক্লাবে থেকে সোজা বাসায় আসো 9:30। আদ্র নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে টাউজার আর গেঞ্জি
পড়ে নেয়। সবকিছু করতে করতে 25 মিনিট চলে যায়।

.

করিম চাচার বাসার কাজের লোক। তাকে এক কাপ কফি দিতে বলে। 5 মিনিটের মধ্যেই কফি দিয়ে যায়।আদ্র
কফির কাপ নিয়ে আরেক হাতে ফোন টিপতে টিপতে বারান্দায় গিয়ে দোলনায় বসে। শীতকাল হ‌ওয়ায় ঠান্ডা
ভালোই।
গায়ে পাতলা গেঞ্জি নিয়ে বসে থাকে ঠান্ডা বাতাস ব‌ইছে। গরম কফি এক চুমু দিয়ে ফোনের দিকে তাকায়। ঠিক
দশটা বাজতেই স্নেহার নাম্বারে কল করে। শীতের মাঝে গরম কফি দারুন লাগছে আদ্রর।প্রতিদিন এই কাজটা
করে আদ্র। ঘুমানোর আগে এক কাপ কফির না হলে চলে না ওর। আগে বাসায় আসতে আসতে এগারো টা
বাজতো। কিন্তু তিন চারদিন ধরে আদ্রর রুটিন চেঞ্জ।

আদ্রর মা তামান্না বাবা আতিক চৌধুরী। ছোট বোন, আলো। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আদ্র এর যৌথ
ফ্যামিলি। দাদা নাই।দাদি আছে। দুই চাচা বড় চাচা বিদেশ থাকে ফ্যামিলি সহ আর ছোট চাচা আদ্রদের সাথে
থাকেন। তার 2 মেয়ে 1 ছেলে।
আদ্রর বাবা আতিক চৌধুরীর এলাকার এমপি। সাথে বিজনেস ও করে। এমপি হ‌ওয়ায় শত্রুর অভাব নেই
এজন্য সব সময় রিক্স থাকে।আদ্রকে নিয়ে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা। আদ্র নিজের সাথে গার্ড রাখেনা। তার
একমাত্র ছেলে আদ্র। তার শত্রুরা না জানি কবে আদ্রর কোন ক্ষতি করে বসে।

.

রিং হয় ফোন কেটে গেছে। আদ্ব ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে রাগের কপালের রগ ফুলে উঠেছে। এত করে
বলে আসার পর ফোন রিসিভ করল না। আবার ফোন করলো নিজের রাগ সংযত করে।একই কাহিনী করল
ফোন রিং হয়ে কেটে গেল কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। রাগে ওর চোখ লাল হয়ে গেছে। এত রাগ উঠেছে যে
ফোন একা আছাড়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছে।
চোখমুখের তৃব্য রাগ নিয়ে ভাঙ্গা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। কাজটা তুমি ঠিক করলে না স্নেহা আমার কথা
অমান্য করা। এত করে বলার পরও ফোন রিসিভ করলে না। কাল তোমার কি হাল করি শুধু সেইটা দেখবে।
সারারাত আদ্রর ঘুম হলো না।

ফাস্ট অনুভূতি ফার্স্ট কোনো মেয়ের জন্য ওর মনে নতুন অনুভূতি তৈরি হয়েছে। আর সে কিনা ওকে এভাবে
কষ্ট দিলো ও কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। ছোট থেকে আদ্রর রাগ জেদ প্রচুর।

আধার মনের কোঠায় কোনদিন কোন মেয়ে প্রবেশ করতে পারে নাই।অনেক মেয়ে প্রপোজাল পেয়েছে
জীবনে। কিন্তু কখনো কারো প্রতি আলাদা টান অনুভব করেনি। সব সময় সবার থেকে দূরে থেকেছে।
স্নেহাকে প্রথমদিন দেখে ওর মনে কোন অনুভূতির জন্ম হয়নি সাধারণ সভার মতোই লেগেছে। ওর প্রতি যে
আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হবে সেটা কখনও কল্পনা করিনি। না স্নেহা দেখতে বাড়তি সুন্দরী, না দেখতেই স্মার্ট
মর্ডান কোন টাই নয়।কিন্তু তবুও ওর জন্য আমার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে। সেটা সেই দিন যেদিন
আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল।প্রথম ওর ওপর এত রাগ হয়েছিল মন চাইছিল ওকে খুন করে ফেলি। আমি হয়তো
সেটা করে ফেলতাম যদি না সেদিন আব্বা অসুস্থ হতো।

.

তবুও সেদিন ভালোবাসাটা বুঝিনি।সেদিন থেকে ওর কথা সারাক্ষণ মনে পড়তো বাসায় এসে আমি একটা কথাই সারাক্ষণ ভেবেছিলাম আমি একটা জিনিসই ভাবছিলাম একটা মেয়ে আমাকে ভার্সিটি সবার সামনে থাপ্পড় মেরে গেল আমি কিছুই বললাম না। তারপর যেদিন ওর মুখে ধোঁয়া দিয়েছিলাম। সেদিন যখন পানিতে পড়ে গেছিল ফাস্ট আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।এতটাই ভয় পেয়েছিলাম পাগলের মত পানি থেকে উদ্ধার করি।ওর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম সেদিন আমি ওই মুখের আলাদা একটা মায়া খুঁজে পায়।

আর সেই মায়াবী মুখ আটকা পড়েছিল। এতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম মনে হচ্ছিল আমার খুব প্রিয় কেউ আমার
থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।সামান্য একটা মেয়ের জন্য সেদিন আমি পাগলামো করছিলাম। চিৎকার করে
করছিলাম। আমার ফ্রেন্ডরা সবাই অবাক হয়েছিল আমার ব্যবহারে হসপিটালে নিয়ে যখন শুনলাম। ওর
সিগারেটের ধোঁয়াঢ় সমস্যা তখন নিচে খুব খারাপ লাগছিল। ওর নিষ্পাপ মায়া ভরা মুখের দিকে তাকাই
সেদিন ভেবেছিলাম আর কখনো সামনে সিগারেট খাব না।

প্রতিদিন লুকিয়ে দেখতাম।প্রতিদিন ভার্সিটিতে আগে এআসতাম ওকে দেখার জন্য। গেটের দিকে তাকিয়ে
থাকতাম। যে আমি সবার শেষে ভার্সিটিতে আসতাম সেই আমি ওর জন্য শুধুমাত্র একবার দেখার জন্য সবার
আগে ছুটে আসতাম।

.

একদিন দেখতে না পারলে আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসতো। একে অনুভূতি আমি তখনো বুঝিনি একে
ভালোবাসা বলে। নবীন বরণের দিন আমি ইচ্ছে করে শাড়ির কথা বলেছিলাম আসলে আমার ও কে শাড়িতে
দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। সাজা অবস্তা দেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু পোড়া কপাল আমার সেদিন এলেনা।ওকে কখনো
আমি সেজেগুজে আসতে দেখিনি।সবসময় সিম্পল ভাবে এত সিম্পল ভাবে আসে দেখে আমার খুব ইচ্ছে
হয়েছিল ওর সাজুগুজু মুখটা দেখা লগে কেমন লাগবে। চোখে গারো মোটা কাজল কপালে টিপ ঠোটে
লিপস্টিক চুলগুলো ছেড়ে আসবে। আচ্ছা ওর চুল কত বড় এখন ও তো চুল দেখি নাই‌।

এজন্য বাড়ির কথা বলেছিলাম কিন্তু আমার আশায় জল ঢেলে দিয়ে আসলো না।প্রচুর রাগ উঠেছিল।
অনুষ্ঠানের সবসময় আমি ওর অপেক্ষা করছি চারদিকে তাকিয়ে ওকে খুঁজেছি। যখন রাহাত খবর এনে দিল ও
আসে নাই। রাগে আমার চেয়ার শক্ত হয়ে গেছিলো। এর জন্য পরদিন ইচ্ছে করে ওকে দিয়ে কাজ করিয়েছি।
সব সময় ওকে ফলো করি কোথায় যাই কি করে না করে। আমার বাসার দারোয়ানকে আমি টাকা খাইয়ে
রেখেছে।যদি ওর কোন দরকার হয় বিপদ হয়। আমাকে যেন সঙ্গী সঙ্গী কল করে। ওরে বাবা অসুস্থ। ও আর
ওর বাবা ছাড়া আর কেউ নেই।

অচেনা শহর পর্ব ১৯

ওইদিন সকালে ঘুমের মাঝেই ফোনটা বেজে ওঠে ফোন ধরতে জানতে পারি স্নেহা সাত সকালে বাসা থেকে
বেরিয়ে গেছে।খবরটা আমাকে দারোয়ান দেয় সে বলে স্নেহার বাবা নাকি অসুস্থ তাই ওষুধ আনতে যাবে।কিন্তু
এত সকালে ঔষুধের দোকান খোলা পাবে নিষা সেটা আমি খুব ভাল করেই জানি ।এজন্য আমি হন্তদন্ত হয়ে
বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।সাতসকালে যদি কোন বিপদ হয়।

দুইদিন ভার্সিটিতে আসেনা স্নেহা। রাহাতকে দিয়ে অন্তরার থেকে জানতি পারি স্নেহা অসুস্থ। স্নেহা অসুস্থ
শুনতেই আমার অস্থিরতা বেড়ে যায় এক নজর দেখার জন্য অস্থির হয়ে ওঠি।কিন্তু দেখা করা সম্ভব না।আমি
চাইলে ওইখানে গিয়ে দেখা করে আসতে পারি। কিন্তু আশে পাশের এতে ওর সম্পর্কে লোকে খারাপ বলবে
তাই ওর নাম্বার জোগাড় করি কথা বলার জন্য। আমি সারারাত ছটফট করি ওর সাথে একবার কথা বলতে ওর
কন্ঠ শুনার জন্য।কিন্তু ফোনটা ধরে না।সব সময় আমাকে কষ্ট দেয় না আজকে ফোনটা ধরল না।

অচেনা শহর পর্ব ২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.