অচেনা শহর পর্ব ২১
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
একধ্যানে গেটের দিকে তাকিয়ে আছে আদ্র। যার জন্য তাকিয়ে থাকা তার আসার নাম গন্ধ নাই। বিরক্ত হয়ে
কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে আছে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকাতেই সামনে
এসে দাঁড়ায় মাইশা।
হুট করে সামনে আশাতে কিছুটা রাগ হয় আদ্রর তবুও রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে কি?
এতেই মাইশা একটা বিরাট বড় হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে।
“আদ্র আমরা সবাই মিলে তো আর কিছুদিন পর ভার্সিটি থেকে চলে যাচ্ছি। এ জন্য ভাবছি তার আগে সবাই
মিলে একবার বেড়াতে যাব। তুই কি বলিস কোথায় যাওয়া যায় বলতো।”
বেড়াতে যাওয়ার মতো কথা উঠে গেল আর আমি কিছু জানি না। খানিকটা রেগে আশিকের দিকে তাকালো,,
“আমাকে রেখেই তোরা ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে ফেলেছিস।”
আশিক আদ্রর রাগী কন্ঠ শুনে থতমত খেয়ে যায়। আদ্র রেগে গেলে আশিক ও কে খুব ভয় পায়।
মাইশা আবার বলে, “তোকে রেখে কোথায় প্ল্যান করলাম কখন থেকেই তো বলছি তুই শুনিস নি। তোর
সামনেই তো বলছি।”
আশিকো বলে, “হ্যাঁ তাইতো।”
ওদের কথা শুনে আদ্র নিজেই বোকা বনে যায়। আদ্রর এতক্ষণ স্নেহাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করছিল কিভাবে
ওকে শায়েস্তা করা যায়।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
আজকে আগেই ভার্সিটিতে এসেছে আদ্রর। আর এসে থেকেই প্রহর গুনছে স্নেহার।উচিত শিক্ষা না দিলে হবে
না এত করে বলার পর ও ফোন ধরেনি। ফোনটা ভেঙে ফেলেছে ওর জন্য। সেই ফোন ভাঙ্গা নিয়ে কত
কৈফত দিতে হয়েছে বাসায় ভার্সিটিতে এসে ফ্রেন্ডের কাছেও।
ভাবতে এদিকের কোন কথায় ওর কানে পৌছায় নাই।
নিজেই রাগ দেখাচ্ছিলাম আর এখন নিজে শুনিনি এটা ওদের বলা যায়না।
নিশ্চুপ রইলাম কাউকে আর কিছু বললাম না। স্যাররা নাকি বলেছিল ট্রিপের কথা।ক্লাস তো করি না
অনেকদিন হলো তাই জানা হয় নাই। ইদানিং কথাও হয় না স্যারদের সাথে।
কেউই তেমন ক্লাস করেনা রাইসা আয়রা ক্লাস করে। ওরা নাকি এসে বলেছে কালকে ক্লাসে নাকি বলেছিল
ট্রিপের কথা।
ক্লাস ঘন্টা পরতেই আদ্র মাঠে দিকে তাকালো।
ও যা বুঝার বুঝে গেছে তার মানে স্নেহা আজকে ভার্সিটিতে আজকে আসবে না। কতটা ভীতু হলে এমন একটা
কাজ করতে পারে। তা আদ্র বুঝে উঠতে পারছে না।
এইখানে না পেলাম তোমাকে তো আজকে আমি ধরেই ছাড়বো মিস স্নেহা। আজকে তুমি আমার হাত থেকে
রক্ষা পাবে না।লুকিয়ে যেখানে থাকো তোমাকে আমি খুজে বের করবই।
.
স্নেহা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডী হয়েছিল। বের হওয়ার সময় আদ্রর কথা মনে পড়ে আর ওর থ্রেট সেগুলো
মনে পড়ে স্নেহার গলা শুকিয়ে আসে।
কালকে তো খুব সাহসী মনে ফোন না ধরে বসে ছিলাম। কিন্তু আজকে কি করব। ভার্সিটি তে গেলেই তো
আদ্রর মুখোমুখি হতে হবে।
আর ও যেভাবে কথা বলেছিল কালকে আমার সাথে কি করবে আল্লাহ জানে।ভয় এতটাই পেল যে স্নেহা
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো আজকে ভার্সিটিতে যাবে না।
তাহলে আর আদ্রর মুখোমুখি হতে হবে না ও আমাকে শাস্তি দিতে পারবেনা। একদিন ভার্সিটিতে না গেলে
কিছুই হবে না। কালকে অন্তর থেকে নোট নিয়ে নেব তাহলে হবে।
আজকে অনেকদিন পর স্নেহা রায়াদের বাসায় ঢুকলো।
প্রায় 4 দিন পর।রানী আসার পরে রায়া কে খুব একটা রাখতে হয় না রানী আসে যায় আমার আর আসা হয়না।
কলিংবেল চাপতেই রানি সে দরজা খুলে আমাকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
সাথে সাথে রায়ান দৌড়ে আসলো।আমাকে দেখে কোলে চড়ার জন্য লাফালাফি করল। ওকে কুলে নিয়ে
ভেতরে গেলাম দেখি আপু রান্না করছে। আপুর পাশে গিয়ে দাঁড়াতৈই আপু জিজ্ঞেস করলো,,,
“কিরে স্নেহা আজকে ভার্সিটিতে যাবি না এই সময় এখানে।”
“না আপু আজকে যাব না ভাবছি।”
“ও তুই তো খুব একটা মিস দিস না। আজকে হঠাৎ যাবি না কেন? শরীর ভালো আছে তো। আঙ্কেল ঠিক
আছে।”
“বাবা সুস্থ আছে। আমি ঠিক আছে আল্লা রহমতে। এমনিতেই যাব না ভাবছি। তোমার রান্না এত দেরি হল কেন
ভাইয়া খেয়ে যায় নাই নাকি।”
“না সে তো না খেয়ে যায় বেশি।”
.
“ভাইয়া কি খুব লেট করে আসে নাকি কখনো দেখা হয় না ভাই এর সাথে। সকালেও দেখি না কয়েকদিন
পেছন থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছি।”
“ওর আর শুক্রবার নাই। প্রতিদিনই অফিস যেতে হয়। আসে রাত 10:00, 10:30 আবার এদিকে ভোর ছয়টায়
বেরিয়ে যায়।”
“ও হ। তার মানে আগে তুমি একাই থাকতে সবসময়।”
“ওই আর কি একাই থাকবো।আশে পাশের ফ্লাটের লোকদের সাথে গল্প টল্প করতাম একটু দিনে রাতে একা
থাকতে হয়। রানী কে এনে তো আমার উপকার করেছিস ওর সাথে সময় কেটে যায়।”
“রানী তোমার সব কথা শুনে তো।”
“খুব শুনে কাজও করতে আসে। কিন্তু আমি করতে দেয় না। ছোট মানুষ বলি খালি রায়ের সাথে গল্প করবি।
ও ঠাণ্ডা থাকলে আমার কাজ করতে কোন সমস্যা নাই।”
কথা বলতে বলতে আপুর রান্না শেষ হয়ে গেল। আপু রান্না করতে করতে কথা বলছিল আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে
ছিলাম রায়াকে কোলে নিয়ে।রান্না শেষ হতেই আপু আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। আমার চোখে পরে আপুর বাম
গালে।
স্পষ্ট পাঁচ আঙুলের দাগ ফুটে আছে লাল হয়ে।
চমকে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
“আপু তোমার গালে কি হয়েছে?”
আতঙ্কিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল স্নেহা!
.
আমার কথা শুনে আপুর হাসি মুখটা কালো হয়ে গেল। আমার কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে। এটা তো মারে দাগ
আপুকে আবার কে মারলো ভাইয়া কিন্তু কেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আপুর দিকে।
আপুর মুখে মেকি হাসি এনে মুখে হাত দিয়ে বলল,,
” ওই রায়া আঙুল দিয়ে খেমচি দিছে। কি পাজি হয়েছে মেয়েটা। সকালে আয়না দেখি নাই তো তাই খেয়াল
করি নাই।
আপু কথাটা আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। খেমচি এমন হওয়ার কথা নয় এটাতে স্পষ্ট থাপ্পরের
দাগ।আমার সন্দেহ রয়েই গেল কিন্তু আপুকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। আপু হয়তো এই বিষয়ে কিছু
বলতে চায় না।
কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলে এলাম আপুর বাসা থেকে। একবার ভাবলাম রানী কে জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু রানী কে
জিজ্ঞেস করার সুযোগই পেলাম না বাসায় আসলে জিজ্ঞেস করবো।
যথাসময় টিউশনিতে চলে এলাম।
কিন্তু ঝামেলা বাধলো টিউশনিতে এসে।
আমার স্টুডেন্ট এর এক্সাম। এজন্য নাকি তাদের বেশি পড়াতে হবে এক ঘন্টা। শত বলেও কাজ হলোনা তার
এক কথা পড়ালে বেশি পারাতে হবে না হলে মাইনে কেটে রাখবে। কি মুশকিল টাকাগুলো আমার দরকার
এখন যদি টাকা থেকে কেটে নেয় মাস চলছে হিমশিম খেয়ে যাব। তারপর আমি একটা মেয়ে মানুষ কিভাবে
সন্ধার পর রাস্তায় চলাফেরা করব।এমনিতেই তো সন্ধ্যার একটু আগে কোনো মতো বাসায় পৌছায়। এখন যদি
এক ঘন্টা বেশি পরাই তাহলে তো আমার যেতে যেতেই সাতটা বেজে যাবে। তাহলে বাসায় পৌঁছাতে আরো
দেরী। তার উপর আমি আবার বাড়তি টাকা নিয়ে আসি নি ভাবছী সময় হেঁটে চলে যাব।
.
প্রতিদিন আমি এই কাজটাই করি না হেঁটে না গেলে হয়তো সন্ধ্যার অনেক আগেই বাসায় পৌঁছাতে পারতাম
কিন্তু আমি হেটে যাই। কারণ সময় থাকে।
আসার সময় গাড়িতে চলে আসি কারণ একটু লেট হল উনিই বকাবকি করে। কালকে যদি বলি দিতো তাহলে
আজকে আসার সময় হেটে আসতাম আর যাওয়ার সময় গাড়িতে যেতাম।
দুশ্চিন্তা নেই পড়াতে লাগলাম কারণ উনি আমাকে কিছুতেই ছাড়বে না কালকে ইংরেজি পরীক্ষা।পড়লাম
সাঁতটা বাজতেই বিদায় নিয়ে বের হলাম।
গেটের বাইরে এসে ভয়ের নিশ্বাস ছাড়লাম। ঢাকায় এসেছি আজ দুই মাস হল। কিন্তু রাতে খুব কমই বের
হয়েছি। হয়নি বলেই চলে। রাতে বের হওয়ার দরকারই পড়ে নাই।
এখন কিভাবে বাসায় পৌঁছাব সেই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।এখানে লাইট আছে তাই রাস্তাটার অন্ধকার নয়
কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে হাটতে লাগলাম এরকম আলো থাকলে হেঁটে চলে যাওয়া যাবে।
তবুও অজানা ভয়ে বুক কাঁপছে।
মনে সাহস যুগিয়ে হাঁটা শুরু করলাম মনে মনে আল্লাহকে ডাক ছি। একটা দুইটা গাড়ি শো শো করে চলে
যাচ্ছে। কিন্তু রাস্তার মানুষ নেই হাটার মধ্যে মনে হয় আমি একাই হাঁটছি। এখন তো খুব রাতে না কেবল 7:05
বাঁচে। কিছুদূর আসতে ভয় পেয়ে গেলাম আল্লাহ এখানে তো একদম অন্ধকার। ওইখানে লাইট ছিল তাই ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ভয় কম পেয়েছে হাঁটতে
এমন অন্ধকারে হাঁটবো কিভাবে আমার ফোনের লাইট অত ভালো মতো জলে না তবে ফোনের লাইট জ্বালিয়ে
হাঁটছি। শীতের কাল বলে সন্ধ্যায় অন্ধকার না হলে আরেকটু আলো থাকতো।
.
দূরে ল্যাম্পপোস্টের আলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অনেক দূরে সেটা। হালকা হালকা আলো আসছে অন্ধকারে
একটা ছায়ামূর্তি আমার পাশে পাশে হাঁটছে দেখে ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। ছোটবেলায় অনেক
ভূতের গল্প শুনেছি।অন্ধকারের ছায়া দেখে আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।ছায়াটা আমার সাথে সাথে চলছে
আমি পেছনে ঘুরার সাহস পাচ্ছিনা।মনে হচ্ছে কেউ আমাকে শক্ত করে সামনের দিকে ধরে রেখেছে পেছনে
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে পারবো না। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না মনে হয় আমি বোবা হয়ে গেছি। এ অন্ধকারে কে আমার পেছনে নিশ্চয়ই ভূত।ভূত কথাটা মনে হতেই আমার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো গলা
শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
আমি আর এগোতে পারছি না থেমে গেছি ছায়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সেও থেমে গেছে। আবার হাটতে লাগলাম
এবার ছায়াটা হাটতে লাগল। এই ভূত আমার পিছু নিয়েছে। এখন আমার কি হবে?পেছনে তাকালে আমার
মনে হচ্ছে সে আমার ঘাড় মটকাবো। কাঁপা কাঁপা গলায় ভূত ভূত বলতে বলতে আমি লুটিয়ে পড়লাম রাস্তায়।
অলি একটা বড় ঢেকুর তোলে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলো। অন্তরা ওর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বকতে
বকতে পার্স টেবিলেরওপর রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওড়না খুলতে লাগল।
“আপুরে ছেলেটা কিন্তু সেই ভালো মাঝে মাঝে ওটাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে হবে।”
অলির কথা শুনে উনার পিন খোলা বাদ দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল অন্তরা ওর দিকে।
“কিরে অমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
.
দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,”কি বললি তুই মাঝে মাঝে খাবি মানে। তোকের জীবনে কোনদিন রেস্টুরেন্ট দূরের
কথা রেস্টুরেন্ট এর আশেপাশে নিয়ে যাবে না।”
“তোকে নিয়ে যেতে বলেছে। আমি তো ওই ভাইয়াটা কি দিয়ে যেতে বলবো?”
ভাইয়া ও তোর ভাইয়া হলো কিভাবে?আর তোর কি লজ্জা শরম কিছুই নাই রাক্ষসের মত গিল্লি। আল্লাহ এতো
মানুষ খায় ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুই আমার মান সম্মান সব ডুবালি।
একটু খেয়েছি তাই তুই এভাবে বলতে পারলে আপু। আর আজকে না হয় একটু বেশি খেয়েছি ভালো-মন্দ
পেলে কি কেউ কম খায়। তাই জন্য তুই এভাবে কোটা দিলি এটা তুই দিতে পারিস না। কারণ তুই আমাকে
খাওয়াস নি খাইয়েছে তো ভাইয়াটা।
অসভ্য ইতর আর কোনদিন বলিস। ছিঃ শুধু তোর জন্য আমি তার সামনে মুখ দেখাতে পারবো না।সে আমাকে
কি ভাববে ভাববে আমরা রাক্ষসী কিভাবে খেলি।
আর জীবনে যদি তুই আমাকে এভাবে ব্ল্যাকমেল করিসনা সেদিন তোর একদিন কি আমার একটি বড় বোনের
সাথে এই ব্যবহার।
বলে অন্তরা রাগে গজগজ করতে করতে বাথরুমে চলে গেল। আজকে অন্তরা ভার্সিটিতে যায় নাই আজকে
অলির আবদার পূরণ করতে গিয়েছিল। অনেক টাকা খরচ করেছে হোলি মে যারা হৃদয়।এটা একদম ঠিক
হয়নাই। আমার তার কিছু টাকা ফেরত দেওয়া উচিত।
.
সবে শয়তান অলিটার জন্য হয়েছে কিনা কি ভাবছে? আমার মান সম্মান সব শেষ।
কিন্তু হৃদয় ছেলেটা একটু বিরক্ত বোধ করে নাই সব হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। এতদিন তার সম্পর্কে সব খারাপ
ধারণা আমার মনে হয় একদিনে কেটে গিয়েছে। আজকের জন্য আমি তারপর অনেক মুগ্ধ হয়েছি।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে অলি অনেক খাবার অর্ডার দিয়েছিল সবই একটু একটু সব খাবার খেয়েছে। এত খাবার
মানুষ খায় বিল অনেক হয়েছে।আবার কসমেটিক কিনতে গিয়ে বেশি বেশি কিনেছেন শত বলে আমি ওকে
থামাতে পারলাম না। শয়তানী একটা। মন চাইছিল ওকে রাস্তায় ধরে পরপর 20 টা থাপ্পর মারি।ফ্রেশ হয়ে
বেরিয়ে এসে দেখল অলি ঘুমাচ্ছে। জন্মের খাওয়া খাইয়া এখন আমার ঘুম।
বিরক্ত হয় হঠাত হৃদয়ের সাথে কথা বলে ক্ষমা চাইতে মন চায়লো সে নিশ্চয়ই আমাদের ছোটলোক ভাবছে।
ফোনটা নিয়ে হৃদয়ের নাম্বারে কল করলাম দুইবার রিং হতেই রিসিভ হলো। অন্যদিন কথা বলতে আমার
কোন রকম লাগে না একটানা বকতে থাকি। কিন্তু আজকে খুব আনইজি লাগছে। লজ্জা করছে কথা বলতে
পারতাম তাহলে হ্যালো বললাম।
“হ্যালো, কেমন আছো?”
আমি ভেবেছিলাম আমার সাথে হয়তো খারাপ ব্যবহার করবে। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে সুন্দর
ভাবে কথা বলতে দেখি আর অবাক হলাম।
মনে ভেবে নিয়েছি কোন কথা নই আগে ছরি বলবো।
“সরি।”
.
আচমকা সরি শুনে হৃদয় কিছুটা হতভম্ব হয়ে।
“হোয়াট?”
“আই এ্যাম, এক্সট্রিমলি সরি! আমি সত্যিই দুঃখিত আমার বোনের ব্যবহার। ও বাচ্চা আসলে একটু বেশি
চঞ্চল।আমি আপনার টাকা ফেরত দেবো কিন্তু এখন আমার কাছে টাকা নাই এজন্য দিতে পারছি না। কিছুদিন
পরে দিয়ে দেবো। প্লিজ আমাদের খারাপ ভাববেন না।আমি আপনার সাথে ঝগড়া করেছি কিন্তু আপনার
টাকা নষ্ট করতে চায়না ই।”
“আরে কুল কুল আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি। আর টাকা খরচ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আর তোমার
কাছে আমি টাকা চায়নি। সো টাকা দেওয়ার কথা বলবে না। আর আমার একটা মাত্র ছোট শালির তার পেছনে
এটুকু টাকা খরচ করতেই পারি। নো প্রবলেম আমি কিছু মনে করিনি।”
“শালী কথাটা শুনে অন্তরা থমকে গেল। এরে আমি বলি আর এ আমায় বলে কি?কিন্তু অদ্ভুত বিষয় আজকে
আমার রাগ হচ্ছে না। উল্টো লজ্জা পাচ্ছি।”
“কি হলো ম্যাডাম কিছু বলেন?আবার রেগে গেলেন নাকি আমাকে কি বলছ ঝাড়বেন সেগুলো ভাবছেন
নাকি?”
কথাটা বলে হৃদয় হা হা করে হাসতে লাগলো।
“না আজকে আর ঝগড়া করবো না।”
“রিয়েল।”
অন্তরা চুপ করে রইলো।
.
আদ্র বিকেল থেকে স্নেহার বের হওয়ার অপেক্ষা করছে কিন্তু স্নেহা যে টাইমে বের হলঝ না। আমি হলো তার
এক ঘন্টা পর সাতটার দিকে।
আদ্র দূর থেকে স্নেহাকে লক্ষ্য করছিলো।স্নেহা কি করে না করে। ওর ভয় মাখা মুখ দেখে ওর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি
খেলে। তখনই বাইক পার্ক করে রেখে ও স্নেহা পেছনে হাঁটতে লাগে।
উদ্দেশ্য স্নেহাকে ভয় দেখাবে। লাইটের অন্ধকারে স্নেহা ভয়ে আর ভীতু মুখ দেখে মিটি মিটি হাসে আদ্র।স্নেহাকে ভয়ে কাঁপতে দেখে ওর হা হা করে হাসতে ইচ্ছে করেছিল।কিন্তু হাত দিয়ে মুখ চেপে নিজেকে
কন্ট্রোল করে। না হলে ধরা পড়ে যাবে।
হঠাৎ স্নেহা ভূত ভূত বলে লুটিয়ে পড়তে নেই রাস্তায়।এতটা হবে আদ্র ভাবেনি ভেবেছিল হালকা ভয় দেখাবে।
একদম ভয় অঙান। আদ্র ছুটে স্নেহাকে ধরে পড়ার হাত থেকে বাঁচায়।
সত্যি স্নেহার চোখ বন্ধ।
স্নেহাকে অজ্ঞান হতে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। ডোজটা বেশি হয়ে গেছে। এখন যদি স্নেহার কোন ক্ষতি
হয়। কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে স্নেহাকে ডাকতে লাগে কিন্তু সাড়া নেই।
ভয় আরো চড়াও হয়।
আরও কিছুক্ষণ ঢেকে স্নেহা ওঠে না। যে স্নেহাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে ভাবে কুলে নিতে যাবে ওমনি স্নেহা
ভূত ভূত বলে চেচিয়ে ওঠে,,
.
চোখ মেলেই স্নেহা দেখতে পায় কেউ কে ধরে রেখেছে।আবছা আলোয় মুখটা দেখতে পেয়ে কিছুটা সাহস পায়
এ তো আদ্র। আদ্র কে দেখে ওর কি হয় ও নিজেও জানে না আদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
এখন আর ওর ঘাড় মটকাতে পারবে না ওর ভূতটা।
ভয়ে এখনো শরীর কাঁপছে স্নেহার। ভুতে প্রচুর ভয় ওর।
কাঁপতে কাঁপতে আদ্র ঢুকে মাথা রেখে বলতে লাগে,,,,”প্লিজ আমাকে বাঁচান এইখানে ভূত আছে। আমাকে
একটু বাসায় পৌঁছে দিন প্লিজ প্লিজ। ওই ভূত আমার গার মটকাইয়া রক্ত খেয়ে ফেলবে আমাকে মেরে
ফেলবে।”
বলে স্নেহা ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদতে লাগে।করতে আদ্রর কানের তো স্নেহার কোন কথায় যাচ্ছে না। ওত
হতভম্ব হয়ে বসে আছি আছে। পৃথিবীর কোন কথার কারণে এখন যাবে না।স্নেহার এত কাছে আছে এভাবে শক্ত
করে জড়িয়ে আছে। সবকিছু ওর মনে কাছে স্বপ্ন দেখছে। ভালোবাসারমানুষ এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে তার
ভেতরে কেমন অনুভূতি হতে পারে।অদ্ভুত অনুভূতি অদ্ভুত ভালো লাগা। আদ্র পাথরের মত বসে
আছে।সমস্ত আবেগ-অনুভূতি মনে হয় ওকে ঘিরে ধরে আছে আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে কিছু একটা ঘটিয়ে
ফেলবে।
“ছাড় আমাকে।”
অচেনা শহর পর্ব ২০
গম্ভীর খানিকটা চিৎকার করে কথাটা বলেছে আদ্র নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারছে না।যাকে ভালোবাসে সে
এতো কাছে থাকলে নিজের অনুভূতি লুকাতে পারবেনা।
আর এখনই স্নেহাকে কিছু জানাতে চায় না আগে জানতে চায়।স্নেহার মনে ওর জন্য কোন অনুভূতি আছে
কিনা।
“না প্লিজ আপনি আগে দেখেন এখানে কোন ভূত আছে কিনা। আমি ভূতে খুব ভয় পায়।”
ভয় সব জ্ঞান লোপ পেয়েছে স্নেহার ও মে একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছে ও বুঝতে পারছে না।
“তোমার লজ্জা করে না একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো। ছাড়ো বলছি আমাকে। আর কিসের ভূত
ভূত করছো এখানে কোন ভূত নেই। আর ভূত বলতে কিছু হয়না এইটুকু কমন সেন্স তোমার নেই ইডিয়েট
একটা।”