অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ২২ || শেষ পাতায় তুমি(Revenge story)

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ২২
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

স্নেহা সিটকে দূরে সরে দাড়ালো। এতক্ষণ কি করছিল ভেবেই ওর মাথা কাটা যাচ্ছে। ছিঃ লজ্জায় মাথা উঁচু
করতে পারছে না ভয় এতটাই পেয়েছিল যে কি করছিল নিজেই বুঝতে পারে নাই। নিজের ওপরই নিজে রাগ
উঠছে।
আমি ওনাকে কিভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলাম।
উনি আমাকে কি ভাবছে নিশ্চয়ই গায়ে পরা মেয়ে ভাবছে। কিন্তু আমি তো সত্যি খুব বেশি ভয় পেয়েছিলাম।
ভয়ে কি করেছি বুঝতে পারি নাই।
আড়চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি আদ্র বিরক্ত নিয়ে ফোনে কথা বলছে।
কথা শেষ হতেই আমার দিকে রাগে চোখে তাকালো।

আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,” সরি আসলে আমার ভূতে খুব ভয়। একটু আগে একটা ভূত আমার
পেছনে ছিল খুব ভয় পেয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ আপনাকে দেখি আমি কি করেছি নিজেই বুঝতে পারিনি।
আপনি আমাকে খারাপ ভাববেন না প্লিজ।”
“হোয়াট ? ভূত!আর ইউ ম্যাড, ভূত বলতে কিছু আছে নাকি। এসব কেউ বিশ্বাস করে মাথামোটা একটা।”
“দেখুন একদম আমাকে অপমান করবেন না। আমি সত্যি ভূত দেখেছি।আমার জায়গায় আপনি থাকলে বুঝতে পারতেন কতটা ভয়ঙ্কর সে।”
“ভয়ঙ্কর! আচ্ছা কেমন ভয়ঙ্কর তুমি তাকে দেখেছ?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

‘হ্যাঁ দেখেছি সে একদম কুচকুচে কালো দাগগুলো বাষড় বড় সাদা চুল লম্বা তারপর চোখগুলো ইয়া বড় বড়
তারপর,,,
“হোয়াট?’
চিৎকার করে কথাটা বলে,
স্নেহার কথা শুনে আদ্র রেগে ওর সামনে এসে দাড়ালো।
আদ্র চিৎকার শুনে স্নেহা ভয় পেয়ে গেল। কথা ও থেমে গেল। আচমকা সামনে আসতেই দুই পা পিছিয়ে গেল।
“কি বললে তুমি?”
“কি বললাম?”
আচমকা প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল স্নেহা।এমন করছে কেন?

“আমি কাজ করছি কাল আমার দাঁত গুলো বড় বড় সাদা আর কী যেন বললে?”
“এমা কি বলছেন আমি আপনাকে এসব কখন বললাম আমি তো ওই ভূত টার কথা বলছি। যে আমার পিছনে
আসছিল।”
“স্টপ ইট! তোমার পিছনে আমি ছিলাম। তুমি আমাকে এসব বললা। কোন দিক দিয়ে আমি ওরকম তুমি যে
আমার এরকম একটা বর্ণনা দিলে।”
“কি আপনি আমার পিছনে ছিলেন?”
“হ্যাঁ।”
রাগের মাথায় আদ্র সব সত্যি কথা বলে দেয়। সব শুনে তো স্নেহা রাগে ফেটে পরে। সব বলার পরে আদ্র
নিজেই বোকা বনে যায়। স্নেহা ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“তারমানে আপনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন। ইচ্ছে করে?”
আদ্র চুপ করে আছে।

.

“আপনি জানেন আমি কত ভয় পেয়েছিলাম। এইভাবে আপনি আমাকে ভয় দেখালেন কেন?”
“আমার কথা অমান্য করার শাস্তি। ভয়ে তো ভার্সিটিতে যাও নাই কিন্তু আমার হাত থেকে তো বাচতে পারলে
না। সে আমার সামনে পরলে। তার আগে বল তুমি যে ভূতের বর্ণনাটা দিচ্ছিলে সেটা কোথায় থেকে দিলে।”
“কোথায় থেকে আবার দেবো আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি।”
“বানিয়ে বানিয়ে বলছ!”

“বানিয়ে ই তো বললো।যখন আমি বুঝতে পারলাম আমার পেছনে কেউ আসছে আর আমি তার ছাড়া দেখলাম
তখন আমি বুঝতে পারলাম এটা কোন একটা ভূত হবে। আমি কল্পনা করে নিলাম ভূতটা দেখতে কেমন
হবে।”স্নেহার কথা শুনে আদ্র হতবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো এভাবে চুপ হয়ে গেলেন যে। আর আপনি জানলেন কিভাবে আমি এখানে আছি।”
“ম্যাজিক।”
“কিসের ম্যাজিক?”
ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো স্নেহা।

“তা তোমার জানতে হবে না। আমার কাজটা শেষ আসি আমি কেমন। বাই!”
বলেই আদ্রর এগোতে লাগলো‌।
আদ্রকে যেতে দেখে স্নেহা ওর সাথে হাঁটতে লাগে।
“প্লিজ আমাকে একা রেখে যাবেন না এখানে।আমার খুব ভয় করছে আমি জানি ভূতটা আপনি ছিলেন কিন্তু
তবুও ভয় পাচ্ছি। অন্ধকারে ভয় পায় এমনিতে।”
“সো হোয়াট!”
“আপনি যদি আমার সাথে যেতেন। সামনে আলো দেখা যাচ্ছে ওই পর্যন্ত গেলেই হবে।”
“আমি তোমাকে হেল্প করতে যাব কেন? হোয়াই?”
“প্লিজ আপনি তো আমার বড় ভাইয়ের মত ছোট বোন ভেবে একটু হেল্প করুন।”
বড় ভাইয়ের মত কথাটা শুনে আদ্রর ফুঁসে উঠলো,,
“কি বললে তুমি আমি তোমার বড় ভাইয়ের মতো?”
রেগে চিৎকার করে কথাটা বলল আদ্র।

.

চিৎকার করে কথা বলা শুনে ভয় পেয়ে গেল স্নেহা। এই লোকটাকেও কখনোই পছন্দ করেনা।প্রথম দিন
থেকে সব সময় ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। আজকেও এর জন্য আমি কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম। সেসব নিয়ে
এখন ঝগড়া করলে হিতে বিপরীত হবে এমনিতে জায়গাটা ভয়ঙ্কর।প্রথমবার না হয় সে ভূত হয়ে এসেছিল
এবার যদি সত্যি সত্যি ভূত আসে তাহলে কি হবে?
ভাবতেই স্নেহার সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠলো ভয়ে।

“কি হলো চিৎকার করছেন কেন? আমি তো খারাপ কিছু বলি নাই। ভালো কথাই তো বললাম।”
“আরেকটা কথা বললে তোমাকে কিন্তু আমি খুন করে ফেলবো। আর কোনদিন আমাকে ভাই বলবে না ক্লিয়ার
আমি তোমার ভাই না আর ভাই হতেও চায় না।”
তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে স্নেহা আদ্রর দিকে।আদ্র রাগের কারণটা বুঝতে পারছে না। সামান্য ভাই বলাতে
এত রাগের কি আছে ?
“আপনাকে আমার ভাই বলতে বয়েই গেছে।না বললাম ভাই আপনি তো এটা হনুমান আপনি আমার ভাই হতে
যাবেন কেন?”
“ইউ,”

“দেখুন প্লিজ আর ঝগড়া করবেন না। কত রাত হয়ে গেল বাসায় ফিরতে হবে।”
আদ্র একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে সোজা হাটা ধরল। আমিও তার সাথে সাথে হাটতে লাগলাম। আলোর
কাছে আসতে নিশ্চিন্ত হলাম। কিন্তু দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না আবার যদি সামনে অন্ধকার থাকে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্নেহা হাটতে লাগল।
আদ্রর বাইক সামনে ছিল ওর বাইকের কাছে গেল। একটু পরে আদ্র বাইক নিয়ে আমার সামনে থামল।
আমি ব্রু কুচকে আদ্র দিকে তাকিয়ে আছে।
আদ্র যাচ্ছে না আমি যেতে পারছিনা। আমার সামনে দাড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে।
কিছু বলতে যাব তার আগে আদ্র বিরক্ত মাখা মুখ করে চেয়ে বলল,

.

“কি হলো উঠছো না কেনো সারাদিন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি বাসায় যাবে না।এই না তোমার বাসায়
তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার।”
প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলল তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে।
“হ্যাঁ কিন্তু
“উঠলেও উঠো না হলে চলে গেলাম। সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না।”
“দরকার নাই আমি যেতে পারবো।”

“সামনে কিন্তু আরও অন্ধকার রাস্তা আছে সব জায়গায় তো তোমার জন্য আলো জ্বালিয়ে রাখে নাই রাস্তায়।
তখন সত্যি ভূত আসলেও আসতে পারে আমি তো আর সব সময় তোমার সাথে মজা করতে আসবো না।”
আদ্রর কথা শুনে স্নেহার গলা শুকিয়ে এলো।সাহস করে যে বলবে কিছু তার আগে কুকুরটা ডাক কানে এলো
স্নেহা আরো ভয় পেয়ে গেল । সব সাহস শূন্য হয়ে গেল। আর কিছু না বলে আদ্র ওর পেছনে উঠে বসলো।
স্নেহার উপস্থিতি টের পেয়ে আদ্রর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। ও জানতো ও আবার এই কথা বললে স্নেহা
ভয় পাওয়া শুরু করবে আর এই কাজটা করবে।

“কি হলো উঠে এলে যে তুমি না বললে দরকার নাই একাই যেতে পারবে।”
“হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু এখন মনে হলো রাতে একা না যাওয়াটাই ভালো আপনি যেহেতু তো আছেন।
আপনার সাথেই যাই।”
“প্রথমে ভাব না ধরলে তখন তোমার ভাল লাগেনা । সেই কাজটা করবে কিন্তু গুড়িয়ে পেঁচিয়ে।”
দাঁতে দাঁত চেপে স্নেহা আদ্রর কথা সহ্য করছে।
বাসায় আসতে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল স্নেহা।কত লেট হয়ে গেছে বাসায় এসে রুমে রানি কে পেলাম
চাবিটা রুনা আপুর কাছে দিয়ে গেছিলাম দরকার হয় এসে দেখে যায়।

.

আমার লেট হয়েছে বলে রানিকে পাঠিয়ে দিয়েছে।আপু আছে বলে নিশ্চিন্তে বাইরে থাকা যায়
না থাকলে কি হত।
রুমে আসতেই ফোন বেজে উঠল জানি কে ফোন দিয়েছে।বাইক থেকে নামতেই আদ্রর
চিৎকার করে বলেছে এখনই ফোন দিবে। ফোন রিসিভ না করলে নাকি রুমে চলে আসবে।
সাহসিকতা দেখাতেই গেলাম না করে খট ফোন রিসিভ করলাম।
সত্যি যদি চলে আসে।
গুড ভেরি গুড। আচ্ছা কি করছো?
এইটা জিজ্ঞেস করার জন্য ফোন দিয়েছেন?
হ্যাঁ এনি প্রবলেম।

অবশ্যই প্রবলেম।এখন আমি কি করতে পারি কেবল রুমে আসলাম দাঁড়াতেও পারি নাই আপনার ফোন চলে
এসেছে।বলুন কি বলবেন নিশ্চয়ই কোন দরকারি কথা বলবেন যার জন্য ফোন ধরা নিয়ে এত নাচানাচি করেছেন।
অবশ্যই তো দরকারি কথা জিজ্ঞেস করলাম কি করছো এটা কি তোমার কাছে কম ইম্পর্টেন্ট মনে হচ্ছে।
আপনি আসলে একটা পাগল আপনার মাথায় প্রবলেম হয়েছে বুঝছেন মাথার ডাক্তার দেখান।
আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসো তারপরে কথা বলি কেমন বাই।
অসম্ভব আর কথা বলব না ফোন দিবেন না আর।
তা বললে তো হবে না ফোন অবশ্যই দেবো আরেকটু পরেই দেব রাখি।
এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম আমার সাথে এমন করছে কেন আদ্র।
উফ যন্ত্রণা।

.

ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার গরম করলাম দুপুরে রান্না করে গেছিলাম।গরম করে বাবাকে খাইয়া ওষুধ খাইয়ে
দিলাম। রানী চলে গেছে আমি আসার সাথে সাথে।
রুমে এসে দেখলাম দশটা বেজে গেছে। ফোন হাতে নিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া বিশ মিসকল সবগুলো
আদ্র নাম্বার থেকে।
40 মিনিটে কেউ এতবার ফোন দেয়।
সাথে সাথে আবার ফোন বাজলো তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে কানে নিলাম।
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কি হয়েছে এত বার ফোন দিচ্ছেন কেন?”
“কোথায় ছিলে তুমি তুমি জাননা ফোন দিব।”

“তো আমি কি করবো? আপনি ফোন দিবেন বলে কি আমি খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে ফোন নিয়ে বসে
থাকবো।”
“দরকার হলে থাকবে আচ্ছা তুমি কি খেতে গিয়েছিলে?”
“ইশ শখ কত কে আপনি আপনার ফোনের জন্য বসে থাকবো। সত্যি করে বলেন তো ফোন দিছেন কেন
ক্লিয়ার করে সব বলুন।”
“কেউ না কিন্তু হতে কতক্ষণ! কি বলব আমি তো এমনি ফোন দিছি।”
“হোয়াট এমনি কেউ এতবার ফোন দেয়।”
“কেউ দেয় না আমি দেয়।”
“আপনার কি হয়েছে বলুন তো?”

.

‘আচ্ছা গুড নাইট। ঘুমা ও তাতাড়ি অনেক রাত হয়েছে।”
“আরে বলোন না তোমার কেন ফোন দিলে আরে শুনেন না।”
“কাজ হলো না ফোন কেটে গেছে।”
ঘুম থেকে আমি এমনিতেই সব সময় সকাল উঠি। কিন্তু আজ কে ফোনের শব্দে উঠলাম।
এই সাত সকালে আবার কে ফোন দিল ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে ভাবলাম হয়ত অন্তরা।
“হ্যাঁ অন্তরা বল তো সকালে ফোন দিছিস কেন?”
“আমি অন্তরায় নয় কথা ঠিকভাবে বল।”

কন্ঠ শুনে আমার ঘুম ছুটে গেল তাড়াতাড়ি নাম্বার দিকে তাকিয়ে দেখে আদ্রর নাম্বার আবার সকাল
বেলা ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করা শুরু করেছে।
এ আমারে পাগল করে ছাড়বে।
“আপনার কি মতলব বলুন তো আপনি কি আমারে ফোন দিয়া পাগল করার চিন্তা-ভাবনা করছেন নাকি?”
“করছিলাম না কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেইটাই করতে হবে।”
“হোয়াট?”
“গুড মর্নিং এটা বলার জন্য ফোন দিছিলাম।”

“আপনার গুড মর্নিং এর গুষ্টি কিলায় আপনি আমাকে আর ফোন দিবেন না।”
“সেটা পরে দেখা যাবে। এখন ওঠো তাড়াতাড়ি। আজকে ভার্সিটিতে আগে এস।”
“কেন আগে আসবে কেন আজকে আবার কি?”
‘কিছুই না কালকে আসো নাই এজন্য আগে আসতে বললাম।”
দুরছাই মাথ আমার আইলো গেল কোথায় থেকে কোথায় যান আপনি।

.

ভার্সিটি এসে আদ্র খুঁজছি। কাল রাত থেকে ফোন দিয়ে আমাকে পাগল করে ছেড়েছে। ভেবেছিলাম ফোনে
কিছু জরুরী কথা বলবে। কিন্তু তারা তো কিছু বললিনা উল্টো ‌উল্টাপাল্টা কি সব বলে আর ফোন করে ফোন
কেটে দেয়। কিছুই বুঝতে পারি না।
কিন্তু তার পাত্তা পেলে তো যতবারই তার সামনে গিয়েছি সে কোন না কোন ভাবে আমাকে কাটিয়ে চলে গেছে
আবার ক্লাসরুমে আরেক শক খেলাম।
পিকনিকে যেতে হবে। পিকনিকে যাওয়ার কথা হচ্ছে

সবারই নাকি যেতে হবে বাধ্যতামূলক এসবে কেউ বাধ্যতামূলক দেয় এ কোন ভার্সিটিতে এসে পড়লাম সব
উল্টাপাল্টা কাজে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ঘুরতে যাওয়া আমারও পছন্দ কিন্তু আমার সেই কপাল নেই
বাবাকে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না তারওপর টাকা বাড়তি টাকা আমার নাই।কিন্তু স্যারের শেষ কথাটা শুনে আমি
থমকে গেলাম। না গেলেও টাকা দিতে হবে টাকা দিতেই হবে। যারা যাবে না তাদের টাকা পরে কেটে নেওয়া
হবে। আর টাকা না দিলে সামনে যে আমাদের প্রিটেস্ট পরীক্ষা সেখানথেকে নাম্বার কেটে নেওয়া হবে।

আমার উত্তর তো নাই না কিন্তু এত কিছু শোনার পরে আমি টেনশনে পড়ে গেলাম কি করব আমি। যাব কিভাবে আমার তো যাওয়া কোনভাবে সম্ভব না
একেতে টাকা কোথায় পাব তার ওপর বাবাকে কি করে এটা রেখে যাব। টেনশন আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে
আসছে।
অন্তরা কে সব বললাম
ও নিজেও টেনশন করছে ও বলছে টাকা না হয় আমি দিয়ে দেবো কিন্তু আঙ্কেলকে কে দেখে রাখবে। ওর ও
চিন্তা হচ্ছে।
দুজনেই সারা ক্লাস টেনশন করতে করতে কেটে গেল।

.

ক্লাস শেষে দুজনেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলাম। অন্তরা হৃদয়ের সাথে কথা বলতে চলে গেল। আমি একাই সিঁড়ি
দিয়ে নামতে লাগলাম। হঠাৎ আমার সামনে এসে দাড়ালো আদ্র আমার সামনে এসে একটা শয়তানী হাসি
দিল। সেই হাসির মানে বোঝার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখালাম না।সকাল থেকে আদ্রর পেছনে যেভাবে ছুটেছি
হয়তো মনটা ভালো থাকলেই আমি এখন আদ্র সাথে তুমুল ঝগড়া শুরু করে দিতাম।কিন্তু এত টেনশন এ
আমার ঝগড়া আসছে না আমি তাকে এড়িয়ে চলে যেতেন এলে লাগলাম।

আদ্র হয়তো এতে অবাক হয়েছে খুব। ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে আটকায়।
আমি পিছন ঘুরে আগে হাতের দিকে তাকিয়ে আদ্রর মুখের দিকে তাকায়।
সাথে সাথে আদ্র হাত ছেড়ে দাড়ায়।
“কি ব্যাপার এমন লাগছে কেন দেখতে মন খারাপ।সকাল থেকে না আমার সাথে কথা বলার জন্য পেছনে
পেছনে ছুটছো। আর এখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছি কথা বলছো না কেন?”
“ইচ্ছে করছে না তাই আর তখন ইচ্ছে হয়েছিল তাই পেছনে ছুটে ছিলাম।”
বলে চলে গেলাম। আদ্র আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

ঘুরতে যাবে সাজেক।বুধবার আজকে বৃহস্পতিবার সামনের সপ্তাহে র বুধবারে যাবে দুদিন থাকবে।একদিন
যাবে মাঝখানে একদিন থেকে তার পরদিন সকালেই চলে আসবে।
সবকিছু ভুলে বিকেলে প্রাইভেটে গেলাম এক ঘণ্টা আগে। কারণ রাতে আর আসা সম্ভব না একদিনে যা
হয়েছিল।এক ঘণ্টা বেশি যেহেতু পড়াতে হবে ঘণ্টা আগে গিয়ে পরাবো এর জন্য টাকা বেশি দেবে বলেছে। সোমবার ওদের পরীক্ষা শেষ হল এখন আমি শান্তি পেলাম। ফোন দিয়ে জানালো নানাবাড়ি বেড়াতে যাবে
ওরা তাই শুক্রবার পর্যন্ত টিউশনি বন্ধ দিল।

.

বিকেলের মন খারাপ করে ছাদে বসে আছি। সামনে রুনা আপু রানী আর রায়া দৌড়াদৌড়ি করছে।
আপু আমার মন খারাপ হলে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে রে স্নেহা এমন মুখটা মলিন করে বসে আছিস কেন?”
আপুকে সবকিছু খুলে বললাম।
“এই জন্য মন খারাপ পাগলী।আমি আছি না তুই কোন চিন্তা করিস না আঙ্কেলের সব দায়িত্ব আমার তুই
গিয়ে ঘুরে আয়।
এই জন্য কেউ মন খারাপ করে।”

“তুমি না হয় দিনে গিয়ে দেখে সে রাতে কি হবে?এভাবে আব্বুকে রেখে কোথাও যাওয়া ইম্পসিবল।এমনিতেই
শরীর ভালো না তার যেকোনো সময় যা কিছু হতে পারে একা তো রাখা যায়না বল।”
” আমি কি তোকে বলেছি রাত একা রাখবো।তোদে্য বাসায় শিফট করবো রাতে থাকবো নি দুদিন।”
“কি সব বলছ রাতে থাকবে মানে ভাইয়া আসবে না। সে তোমাকে থাকতে দেবে। উল্টো আমার জন্য তোমাদের মধ্যে ঝামেলা হবে।”

“আর তোর ভাইয়া তো কাল বাসায় আসে নাই ফোন দিয়ে বলল দুই দিন আসবে না কি কাজ নাকি পড়েছে।”
“কিন্তু তবুও আব্বুকে রেখে আমি কোথাও যায় না আমার খুব ভয় করে। আমার একমাত্র আব্বু আছে আর
কেউ নেই আপন বলতে।”
“তুই কি আমাকে একটু ভরসা করতে পারিস না স্নেহা।”
মুখ কালো করে কথাটা বললো আপু।
“এসব কি বলছ আপু তোমাকে আমি অনেক বিশ্বাস করি।এইখানে আসার পর একমাত্র তোমাকে আমি
সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস ও ভরসা করি।”
“তাহলে এই আপুর কাছে বিশ্বাস করে তোর বাবাকে দেখে যেতে পারবি না।”
“সে পারব কিন্তু আমি তো

অচেনা শহর পর্ব ২১

আপু অনেক বলে আমাকে রাজি করালো যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। আপু থাকবে ভাইয়া ও নাই জন্য আমিও
রাজি হয়ে গেলাম।
রাতে ফোন করে অন্তরাকে খবর টা দিলাম ও তো সেই খুশি। বুধবার সকালে রুনা আপা আমাদের রুমে
একদিন আগেই আপুকে বলে এখানে থাকতে বলেছি।
কালো সূতির থ্রি পিস পরলাম ওইটা আগে পড়ি নাই। আরেক সেট জামা ব্যাগে ভরে নিলাম। বাসার জামা তো
আর নেওয়া যায় না।যে ড্রেস পড়েছি এটা নতুন কিন্তু আরেকটা নিয়েছি এটা পুরাতন হয়ে গেছে।এটা নিতে
হবে বাসার গুলো ছিড়ে গেছে তাছাড়া নেওয়ার মতো কিছু নেই এটা তো প্রতিদিনই প্রায় ভার্সিটিতে পড়ে যাওয়া
হয়।

ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ড্রেসটা ব্যাগে ভরলাম। আর নেওয়ার মতো কিছুই নাই ফোনটা ব্যাগে ভরে 200
টাকা নিলাম।
সাজ বলতে চুলটা খোপায় করে আগের মতো মাথায় ওড়না দিয়ে পিন করলাম। স্নো পাউডার বলতে কিছুই
আমার কাছে নাই। শেষ কবে ইউজ করেছিলাম তাও মনে নাই। এগুলোর কেনার টাকাও নাই‌। আর কেনার
ইচ্ছা নাই।
সিম্পল ভাবে বের হতে পারলাম না আপু জোর করে ধরে তার পাউডার দিল আমাকে দেওয়ার জন্য।আমি না
করলে শুনলোনা জড়াজড়িতে না পেরে একটু নিয়ে পুরো মুখে দিলাম।

পাউডার দেওয়াতে মুখের তেলতেলে ভাবটা মুছে গেল একটু ফর্সা ফর্সা লাগলো। আয়নার সামনে অনেকক্ষণ
দাঁড়িয়ে নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খুব একটা আয়না দেখা হয়না আর আয়না থাকলে তা দেখা
হবে। একটা আয়না ছিলো এখানে আস সময় পড়ে ভেঙে গেছে।
তারপর আর কেনা হয় নাই।
আপু জোর করে চুল বিনুনি করে দিল।এর মাঝে অন্তরা চলে আসলো।রুনা আপুকে বাবার খেয়াল
রাখতে বলে বাই বলে চলে আসলাম।

অচেনা শহর পর্ব ২৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.