অচেনা শহর পর্ব ২৩
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
সকালে অন্তরা আমাদের বাসায় এসেছে।
ও এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল আমাকে নাকি অনেক সুন্দর লাগছে।সাজলে নাকি আমাকে সুন্দর লাগে।
সাজ বলতে পাওডার আর পিন কালারের হালকা একটু লিপস্টিক। আমি দিতে চাইছিলাম না কিন্তু আপুর জন্য
দিতে হয়েছে একপ্রকার জোর করেই দিয়ে দিয়েছে।
হঠাৎ অন্তরা বলল কিছু নাকি মিস বলেই ওর ব্যাগ থেকে একটা কাজল বের করে দিতে বলল।
কিন্তু দেব না বললাম। অনেক বলে ও রাজি হলাম না। অনেক দিন পর সাজছি এজন্য লজ্জ্বা লাগছে আমার
সাধারণ ই ভালো লাগে না না সাজতে সাজতে সাজার ইচ্ছে নেই।
আমি আর অন্তরা একসাথে ভার্সিটিতে এসে নামলাম। দুজনে একসাথে বাসে উঠলাম। তিনটা বাস যাবে।
একটা ফাস্ট আর সেকেন্ড ইয়ার আরেকটা থার্ড ইয়ার আর একটা ফোর্থ ইয়ার। এভাবে সেট করা আমি আর
অন্তরা আমাদের টায় ঢুকলাম কিন্তু আমার আর অন্তরার লিস্ট নাই। দুজনেই তো বড় বড় চোখ করে দুজনের
দিকে তাকিয়ে আছি টাকা দিলাম এখন আমাদের সিটই নাই আমরা যাব কিভাবে?
দুজনে চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ একটা মেয়ে বলল, ওর নাম কনিকা।
“তোমাদের সিট নাই।”
“নাহ।”
দুজনে একসাথে বললাম।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
“শুনলাম এই বাসে দুজনের সিট হয় নাই তাদের একজন কে ফাইনাল ইয়ারের বাসে ও একজন কে থার্ড
ইয়ারের বাসে দেওয়া হয়েছে। তোমরা গিয়ে দেখো সেখানেই হয়তো তোমাদের সিট আছে।”
কনিকার কথা শুনে দুজনেই বাস থেকে নেমে গেলাম।
দ্বিতীয় বাসে ওঠালাম সেখানের তৃতীয় সিটে অন্তরার সিট পেলাম। তার মানে আমার সিট পরের টাই।
মুখ কালো করে ফেললাম একা একটা বাসে যেতে হবে আমাকে তাই আমি অন্তরাকে বললাম তুই চলে যা
আমি যাব না।তোর সাথে সিট পরলে একটা কথা ছিলো এমনিতেই কারো সাথে আমার তেমন সম্পর্ক নাই
সবাই একটু বেশিই ইগনোর করে আমাকে অন্তরা আমাকে কিছু তেই যেতে দেবে না।
ওর সাথে পারা গেল না থাকতেই হলো।
অন্তরার সাথে তৃতীয় বাসে উঠলাম প্রথম থেকে সব সিট দেখছি কয়েকজন বসে আছে মেয়েরা। আমাদের
দিকে একবার তাকিয়ে নিজেদের ফোন সাজ করতে লাগলো।
একেকজন আয়না ধরে সাজছে লিপস্টিক দিচ্ছে।
সব সিট ঘুরে একদম লাস্টে চলে এলাম দুজনের মুখটা কালো সিট পাচ্ছি না এজন্য।
অবশেষে সিট পেলাম লাস্টের দুই সিট আগে।
দুজনের মুখে হাসি ফুটলো আর ও পনোরো মিনিট আছে বাস ছাড়তে এজন্য বাস খালি বেশি।আমার সিট
জানালার পাশেই তাই খুশি হয়ে ই বসলাম।
কিন্তু পাশের সিটে ফাঁকা এখানে কে বসেছে কে জানে।
অন্তরা কিছু ক্ষন থেকে চলে গেল ও থাকাকালীন ভালোই লাগছিলো কিন্তু ও যাওয়ার পর খারাপ লাগতে শুরু
হলো।
ফোনে আজ 30 টাকা ভরেছি।
বাবার খোঁজ নিতৈ হবে এজন্য।
.
আর দশ মিনিট আছে একে একে বাসে সবাই উঠতে লাগলো। এদের মাঝে আদ্রর সাঙ্গপাঙ্গরা ও আছে।ওনারা
আসতেই আদ্রর কথা মনে পরলো ওনিও তো তাহলে এই বাসেই আছে আল্লাহ উনার কথা তো ভুলেই গেছিলাম। কাল রাতে ফোন করেনি আমাকে শান্তি দে ঘুমিয়ে ছিলাম সকালেও ওনার কথা মনে পরেনি মে
ওখানে ওনার মুখোমুখি হতে হবে।
ওনার সিট যেন আমার আশে পাশে নি থাকে।
তাহলেই জালিয়ে খাবে।অযথা ফোন করে ডিস্টাব করে।
সামনে তাকিয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ করে মারিয়ার উপর চোখ পরলো খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু ড্রেসটা ভালো
লাগলো না শর্ট টপস পরেছে গলাটা বেশিই ভারি। দেখতে ভালো লাগছে না এতো সুন্দর মেয়ে এমন অসভ্য
ড্রেস পরেছে কেন?
মন খারাপ করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম সে সামনেই বসেছে সাথে রাইসা মেয়েটা।
তার পেছনের রাহাত ভাইয়া আসলো সে আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে কেমন আছি জিজ্ঞেস করলো।
একটু কথা বললাম উনি আমার এক সিট পেছনে বসেছে।
সব সিটের মানুষ এসে গেছে আমার পাশে সিটটা খালি।
এদিকে আদ্রকেও তো আসতে দেখলাম না।
সময় হয়ে গেছে এখন বাস ছাড়বে সবাই ভেতরে যারা সিটে বসে পড়েছে।
ঘার ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম হঠাৎই মনে হলো আদ্রকে দেখলাম বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা
বলছিল কারো সাথে। আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি আদ্র আমার দিকে এক সাইট করে দাঁড়িয়ে আছে।
আজকে পড়েছে খয়রি টি-শার্ট হাতে জ্যাকেট ফুলহাতা হাতের কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছে। বাহ হাতের
আঙ্গুলে সানগ্লাস দুলিয়ে দুলিয়ে কথা বলছে। খয়রি কালারের বেশ মানিয়েছে আদ্রকে।আমি আদ্রকে স্ক্যান
করতে লাগলাম হঠাৎ কথা শেষ করে সানগ্লাস চোখে দিয়ে আমার দিকে তাকাল আমি এতটা ভয় পেলাম যে
সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে বাসের ভেতরে তাকালাম আল্লা আমার তো মনেই ছিল না উনি আমাকে দেখে ফেলে
সর্বনাশ হবে।
.
হঠাৎ সামনে থেকে দেখি আদ্র বাসের ভেতরে।
আমি শকের উপর শক এখন না জানি দেখে ফেলে। মাথার ওরনাটা দিয়ে ভালো করে মুখটা ঢেকে নিলাম।
যাতে আদ্র আমাকে না দেখতে পায়।
আদ্র এদিকে আসছে আমি মাথা নীচু করে বসে আছি। আদ্রর আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই আমি মাথা
উঁচু করে বসলাম। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এখন আমার হাত-পা কাঁপছে খুব ভয় পেয়েছি।
মুখ ঢাকা থেকে খুলে ফেললাম।তারপর জানালা দিয়ে তাকাতে লাগলাম বাস চলতে শুরু করেছে।ফোন বের
করে রুনা আপুকে কল করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতেই বাবার খোঁজ নিলাম।
ফোন কেটে দিতেই মনে হল কেউ আমার পাশে দড়াম করে বসে পড়ল। নিশ্চয়ই আমার পাশের জন এসে
পড়েছে।যে মেয়ে বসবে তার সাথে একটু ভালোভাবে কথা বলবো না হলে সারা রাস্তা বোরিং ভাবে যেতে হবে।
মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ই আমার চোখ কপালে উঠে গেল।
আল্লাহ আমি কি ঠিক দেখতেছি নাকি ভুল দেখলাম চোখ ভরে আবার সামনে তাকালাম। এতে সত্যি আমার
পাশে বসেছে।
আমি বড় বড় চোখ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি আর ও নিশ্চিত আমার পাশে বসে আছে।
আমি হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না উনি এখানে কেন বসলো।আমি
কিছু বলতে যাব হঠাৎ উনি আমার দিকে ঘুরে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।
তারপর ভ্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল কি?
এবার আমার মুখ দিয়ে কথা বের হল আমি হতভম্ব থেকে হালকা স্বাভাবিক হলাম।
“আপনি এখানে বসেছেন কেন?”
“হোয়াট? এটাকেমন প্রশ্ন আমার স কে আমি বসবো না তো কে বসবে!”
ছোট ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল।
“কি এটা আপনার সীট ?”
.
কথাটা শুনে আমি চরম অবাক হলাম।উনার সাথে তাহলে আমাকে কেন বসিয়েছে আমাকে তো কোন
মেয়ের সাথে বসানো উচিত ছিল।
“অফকোর্স এই যে সিট নাম্বার। কিন্তু তুমি এখানে কেন? এটাতো ফাইনাল ইয়ারে পাস তুমি ফার্স্ট ইয়ার থেকে
এখানে বসে আছো কেন?”
“আমার সিট এখানে পড়েছে তাই আমি এখানে বসে আছি।’
“ও তাহলে বসে থাকো আমার মাথা খাচ্ছ কেন?”
“কি বললেন আপনি আমি আপনার মাথা খাচ্ছি?দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না আপনি আমার তো
এখন মনে হচ্ছে আপনি এখানে আমার সিট ইচ্ছে করে ফেলেছেন। যাতে আমাকে সারা রাস্তা
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার’ করতে পারেন।”
“হোয়াট আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই। তোমার সিট আমার সাথে ফেলতে যাবো।আর তুমি কে হ্যা যে
তোমার সিট আমার পাশে রাখতে যাব। আমি নিজেই তো তোমাকে এখান থেকে চরম অবাক হয়েছি।”
“আমার আপনার কথা একদম বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি সত্যি করে বলেন আমি কিভাবে ফার্স্ট ইয়ারে থেকেই
এই বাসে চলে এলাম তাও আবার একা।”
“সেটা আমি কি করে জানবো সেটা তো তুমি জানো কারন তুমি আমার আগে এখানে বসে আছো।”
“তারমানে আপনি সত্যিই কিছু জানেন না।”
“অবশ্যই না।”
“ওয়েট আপনি যদি আমাকে দেখে অবাক হয়ে থাকেন
তাহলে প্রথমে আমাকে দেখে কিছু বললেন না কেন।কিছু না বলে কেন শান্তভাবে বসেছিলেন কেন?”
আমি চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে আমার তার একটা কথা ও বিশ্বাস হচ্ছে না
নিশ্চয় ইচ্ছে করে কাজটা করেছে।
.
“তুমি নিজেকে কি মনে করো? আমি তোমার পেছনে ঘুরঘুর করি।দুইদিন তোমাকে ফোন দিয়েছি বলে
ভেবোনা যে তোমাকে আমি লাইক করি বা অন্য কিছু।এমনিতেই তোমাকে জালানোর জন্য ফোন দিয়েছি
ওকে।আর একটা কথা এখানে তোমার সিটের বিষয়ে আমি সত্যিই জানতাম না আর তুমি যে বললে তোমাকে
দেখে প্রথমে কেন অবাক হই নাই। আসলে না আমি তোমাকে আমি চিনতে পারি নাই। আর চিনবো কীভাবে
বল তুমি এমন ভাবে ওড়না টেনে মুখ ঢেকে বসে ছিলে। তাতে না তোমার মত হয়ে গেছে আর না অন্য কিছু।।
আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার পাশে কারো গার্জেন যাচ্ছে কারণ এখানে কেউ তো তোমার মত এতো ওড়না
টেনে খালাম্মা সেজে বসে রায় নাই।”
আদ্র কথা শেষ করে সামনের দিকে তাকাল স্নেহা হা করে এখনো আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।
এতক্ষণ আদ্রর কথা বিশ্বাস না হলে ও এখন তার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল ভেবেছিলাম।
“কি হল এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?”
আমি যে আদ্রর দিকে হা করে তাকিয়ে ভাবনায় বিভোর হয়ে ছিলাম সেটা মনে ছিল না। আদ্রর কথায় চমকে
জানালার দিকে তাকালাম। সিসিসি কিভাবে তাকিয়েছিলাম কি ভাবছ আমাকে নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি একটা
নির্লজ্জ মেয়ে।
.
নিজে নিজেকে বকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলাম।
আদ্র আড়চোখে স্নেহাকে দেখে স্নেহা বিরবিড় করছে।
আদ্র তা দেখে ঠোট নাড়িয়ে হেসে ওঠে আওয়াজ বিহীন। তারপর ফোন টিপতে লাগে আর চোখ একটু পরপর
স্নেহা দিকে তাকায়।কিন্তু স্নেহা আর একবারও তাকাচ্ছেনা ও জালানার দিকে তাকিয়ে আছে।
এখানে বসার সমস্ত প্লেয়ার আদ্র নিজেই করেছে এর জন্য ওকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয় নি।
ফাইনালি কাজটা করতে পেরেছে এতে আদ্রর খুশি দেখে কে। অনেক টা সময় ওকে কাছ থেকে দেখতে
পারবে এই বা কম কিসের? এইজন্যই তো এত কিছু করা।
আজকে স্নেহাকে একদম অন্যরকম সুন্দর লাগছে সবসময় সাদাসিধে ভাবি দেখেছে।কিন্তু আজকে স্নেহার
ঠোঁটে লিপস্টিক আরো বেশি সুন্দর লাগছে কিন্তু চোখে কাজল থাকলে আরো বেশি বেটার লাগতো।
কালো ড্রেস এ ওকে আজ অপরূপ লাগছে
এই ড্রেসটা আগে পরতে দেখিনি একটা হলুদ আর সাদা মধ্যে গোলাপি রঙের দুইটা সবসময় পড়তো।
হলুদ ওর পছন্দ না থাকলে ও স্নেহার গিয়ে কালারটা দেখতে দেখতে পছন্দ হয়ে গেছে।
.
আদ্র তাকিয়ে থাকতেই স্নেহা হুট করে ওর দিকে তাকাল। আর সাথে সাথে দুজনের চোখাচোখি হয়ে
গেল।স্নেহার আদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে ও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে স্নেহার রাগ মাথায় উঠে যায়
একটু তাকিয়ে ছিল বলে কিভাবে বলেছি ওকে আর এখন নিজে তাকিয়ে আছে।
“কি ব্যাপার আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?”
স্নেহার কথায় আদ্র থতমত খেয়ে গেল।
“কই তাকিয়েছিলাম আমি তো”
“একদম মিথ্যা বলবেন না আমি নিজে দেখেছি আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।”
“হোয়াট আর ইউ,আমি তোমার দিকে তাকাতে যাব কেন তুমি কি নিজেকে বিশ্বসুন্দরী ভাব নাকি সুন্দর
থাকলে একটা কথা ছিল তাহলে নাহয় তোমার দিকে তাকালো তাকানো যেত। আমি তোমার দিকে না ওই যে
চারতলা বিল্ডিং টা দেখছিলাম ওই রংটা আমার পছন্দ হয়েছে।”
স্নেহা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল বাড়িটা। বাড়িটা রং করা হয়েছে লাল টকটকে আর ভালো লাগে হালকা
কিন্তু এটা একদম দেখতে বাজে দেখতে খারাপ লাগছে। আমি তাকে নাক মুখ কুঁচকে বললাম,, ”
ছিঃ কি বাজে চয়েজ।”
কথাটা আদ্রর কানে এলো, “কি বললে তুমি আমার চয়েজ বাজে।”
“হ্যাঁ আপনার চয়েজ জঘন্য।”
“ইউ স্টুপিড তুমি আমার চয়েজ জঘন্য বলতে পারলা আমি সবসময় বেস্ট জিনিস চয়েজ করি ওকে।”
“তাতো দেখতেই পারলাম কেমন বেস্ট চয়েজ।”
দেখো এটা আমার পছন্দ হয়নি আমি তো,,
কথাটা শুনে স্নেহা অবাক হয়ে বললাম…. “মানে তারমানে আপনি মিথ্যা বলছেন?”
“আসলে তুমি একটা বাঁচাল। আরেকটা কথা বলবেনা মাথা ধরিয়ে ফেলেছ।”
“আমার ঠেকা পড়েছে আপনার সাথে কথা বলতে।”
বলে জানলার দিকে ফিরে বসলাম।
.
আদ্র চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে অর ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে স্নেহা সেগুলো শুনছে। এতক্ষণ আমাকে বাচাল বলল।
এখন নিজে কি করছে এখন আমার মাথা ধরিয়ে ফেলবে।
কথা বললে কথা বাড়বে এজন্য আর স্নেহা কথা বললো না চুপ করে বসে রইল।
আরচোখে একবার তাকিয়ে দেখল আদ্রর কানে ইয়ার ফোন দিয়ে ফোন টিপতে।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরে পরিবেশ দেখছি। হালকা ঠান্ডা বাতাস আসছে চোখ বন্ধ করে বাতাস নিচ্ছি।
সারা মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বাতাসে আরেক ঝামেলা একটু পরপর মাথার ওড়না পড়ে
যাচ্ছে। আমি সাথে সাথে আবার টেনে তুলে দিচ্ছি। এবার হাত দিয়ে ধরে রেখেছি। হঠাৎ মনে হল যে কেউ
আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার পাশের দিকে তাকাই দেখি আদ্র একদৃষ্টিতে ফোনের দিকে
তাকিয়ে আছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস আবার জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
অনেকটা সময় পর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি নয় টা বাজে তারমানে একঘন্টা হলো গাড়ি চলছে। এভাবে
সময় কাটতে লাগলো বাইরে ভিতরে দেখতে দেখতে।
চোখ বন্ধ করে কেবল মাথা রেখেছি সাথে সাথে আমার মনে হলো ঠান্ডা কিছু মনে হলো আমার পায়ে ফেলল।
চমকে চোখ খুললাম। তাকিয়ে দেখে আদ্র পানি খাচ্ছে।আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনি দিকে নিজের
মত পানি খেয়ে যাচ্ছে একবার আমার দেখাচ্ছেনা কতটা অসভ্য কতটুকু পানি ফেলেছে পাজামার এখানে
ভিজে গেছে।
“কি হলো এমন রাক্ষসীর মত তাকিয়ে আছ কেন?”
“এভাবে কেউ পানি খায় দেখুন তো আমার জামা ভিজিয়ে ফেলেছেন।”
.
“দেখুন আমি ভালো ভাবেই খেয়েছি তুমি নরছিলে তাই তাই পড়ে গেছে। এটা আমার দোষ কোথায়।”
“দেখুন সব দোষ আপনি আমার দিবেন না সব কিছুতেই নিজের দোষ ঢাকা যত্তসব অসভ্য লোক একটা।”
“তুমি আবার আমাকে অসভ্য বললে তোমার সাথে আমি কি অসভতামি করেছি।”
ভেংচি কেটে অন্যদিকে ফিরলাম।
আদ্রর আমাকে অনেক কথা বলে যাচ্ছে আমি উত্তর দিচ্ছি না আর কথা বলব না অসভ্য বেয়াদব ছেলে একটা।
আরো দুই ঘন্টা হয়ে গেছে ওই ভাবেই এই দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে থাকতে আমার ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে
তাই এদিকে ফিরতি ঠাস করে গাড়িটা থেমে গেল।থামতে ঠাস করে সামনে মাথায় বাড়ি খেতে গেলাম কিন্তু
খেতে পারলামনা কেউ আমার সামনে হাত দিয়ে রেখেছে তাই রক্ষা পেলাম তাকিয়ে দেখি আদ্রর হাত।
কিছু বলতে যাব আদ্র উঠে দাঁড়ালো।হঠাৎ চলে যেতে লাগে। দেখি বাসের অনেকে নেমে যাচ্ছে। নামছে কেন
এত তাড়াতাড়ি চলে আসলাম নাকি কিন্তু শুনেছিলাম তো 6-7 ঘন্টা লাগবে। কে বলছো তিন ঘন্টা হল।
আদ্র নামছে আচ্ছা গাড়ি কি নষ্ট হয়ে গেল?
জিজ্ঞেস করার মতো কাউকে পেলাম না রাহাত ভাইয়া গাড়িতে নাই তাছাড়া আর কাউকে চিনি না এখানে
আদ্রর ছারা আদ্রকেই জিজ্ঞেস করতে হবে।
আমি তাকে থেকে পিছন থেকে ডেক উঠলাম।
“শুনছেন আপনারা সবাই নামছেন কেন আমার কি এসে পড়েছি?”
আদ্র ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো,,
“হোয়াট এখনো ঠিক অর্ধেক রাস্তা ও যেতে পারি নাই আর তুমি বলছো আমরা এসে পড়েছি।”
“তাহলে আপনার নামছেন কেন?”
.
“এখন ব্রেক দিয়েছে যদি খেতে ইচ্ছে হয় খেতে পারো। বা ওয়াশরুমে যাওয়ার দরকার হয় সেজন্য।”
বলেই চলে গেল। আদ্র যেতেই আমিও নামলাম।নেমে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম কোন দিকে যাব
বুঝতাছি না। রেস্টুরেন্ট দেখলাম সেখানে অনেকে আছে আমাদের।হঠাৎ অন্তরাকে দেখেই দৌড়ে
ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ওকে নিয়ে ওয়াশ রুমে গেলাম আর আদ্রর সাথে যা যা হয়েছে সব বললাম। আমাকে টেনে রেস্টুরেন্টে নিয়ে
গেল একটা টেবিলে বসলাম। আমাকে যেতে বললে আমি খেলাম না এখন আর টাকা না নষ্ট করবোনা।
জোর করে আমাকে একটুও খাওয়াতে পারলো না আমি শুধু এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম।
বাসে সবাই একে একে গিয়ে বসলো সবার শেষে আদ্রর আসলো।
এসে আমার পাশে বসলো এসে এমন ভাবে বসে একদম সিটটা লাফিয়ে উঠে ।
আমি রাগী দৃষ্টিতে একবার তার দিকে তাকিয়ে আমার সামনে তাকালাম।
এক নাম্বার হনুমান এভাবে কেউ লাফিয়ে বস।
হঠাৎ খাওয়ার খসখস আওয়াজ পাশে তাকিয়ে দেখি বিস্কুট খাচ্ছে আদ্র। আমি তাকাতে আর দিকে তাকিয়ে
বলে উঠলো….
“এভাবে তাকিয়ে আছ কেন খাওনি কিছু খিদে পেয়েছে নাকি আমার দিকে নজর দিও না আমার পেট খারাপ
হবে।”
আমি তো কথা শুনে রীতিমতো হতবাক। একটু তাকিয়ে তাও শব্দ পেয়েছি বলে আমি কি একবারও ওভাবে
তাকিয়েছিলাম পেট খারাপ হয়ে যাবে। সব সময় আমাকে অপমান করার ধান্দা।
রেগে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে।
.
“কি হলো তবুও তাকিয়ে আছো এভাবে। খাবে নাকি? তাহলে খাও তবুও আমার খাবারে নজর দিও না।
বলে আমার দিকে বিস্কুটের প্যাকেট বারিয়ে দিলো।”
“আপনি আসলেই একটা শয়তান। আমি আপনার দিকে মোটেও ও ভাবে তাকায় নি যে আপনার খাবারের
নজর লাগাবে আমিতো শব্দ পেয়ে তাকিয়েছে।”
“সে সব কিছু আমি জানিনা। তুমি এখান থেকে নিয়ে কিছুটা খাও। না হলে আমার মনে হবে তুমি আমার
খাবারে নজর দিয়েছে।”
“আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন। আমি বললাম তো আমি সেভাবে তাকাইনি।”
“”তুমি খাবে নাকি আমি এখন খাওয়া বাদ দিয়ে বসে থাকব আমার এমনিতেই খুব খিদে পেয়েছে তোমার জন্য
আমি যেতে পারছিনা।
“আমি কি আপনাকে খাওয়া বাদ দিয়ে বসে থাকতে বলেছি।”
“তোমার নজর ভালো না দেখেই তো খেতে পারছি না তখন আবার পেট খারাপ হয়ে গেলে দেখো একটা
জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছি সেখানে গিয়ে আমি একদমই অসুস্থ হতে চাই না।”
“আপনি…
আর কিছু বলতে পারলাম না আদ্র আমার মুখে একটা বিস্কুট ঢুকিয়ে দিয়েছে।আমি হাঁ করে বড় বড় চোখ করে
আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। কথা ওবলতে পারছিনা মুখে বিস্কুট।
“কি হলো এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছ কেন? খাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি নাহলে আমি খেতে পারব না।”
অজ্ঞতা আমার খেতে হল।না হলে আমি কিছু বলতে পারব না খাওয়া শেষ হতেই কিছু বলতে যাবার আগেই
আর একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে দিল।
আমিতো হতবাক হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি মন চাইছে লোকটার মাথা ফাটিয়ে দেই। এভাবে পরপর
পাঁচটা বিস্কুট আমাকে খাইয়ে ছাড়লো।
আরো হয়তো দিতো কিন্তু আমি মুখে হাত দিয়ে খাওয়া শেষ করেছি। তারপর রাগী চোখে তাকিয়ে মুখে হাত
দিয়ে বলেছি।
.
“আরেকটা বিস্কুট যদি আমার মুখে দিয়েছেন তাহলে আমি আপনাকে আজকে মেরে ফেলবো। অসভ্য শয়তান
বাঁদর হনুমান খাটাশ লোক একটা এভাবে জবরদস্তি করে আমাকে থাইয়ে কি মেরে ফেলতে চান।”
“স্টপ ইট।তোমাকে মেরে আমি জেলের ভাত খেতে চায় না ওকে। আমার খাবারে নজর লাগবে বলে আমি
খেয়েছি আর খাওয়াবো না এই দেখো এখন আমি খাবো সবকিছু তোমাকে দিলে আমি কি খাব?”
বলে নিজে খেতে লাগলো।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে তার কথা হজম করলাম।
লোকটা প্রচুর খারাপ প্রচুর। এখন পানি খাওয়া লাগবে এতগুলা বিস্কুট খেয়ে আমার পেট ভরে গেছে। বিস্কুট
জবরদস্তি করে খাওয়ালো এখন পানি খাওয়াবে না শয়তান লোক একটা।
“পানি দেন”।
“কি?”
“বলছি পানি খাবো পানি দেন। নাকি পানি না খাইয়ে আরো কষ্ট দিতে চান আমাকে।আপনি তো শুধু শুধু কার
কিভাবে ক্ষতি করা যায় সেই প্ল্যান নিয়ে বসে থাকেন।”
“আরেকটা বাজে কথা বললে তোমাকে আজকে আমি পানি দেবো না থাকো তুমি ওইভাবে।”
“প্লিজ পানি দেন।”
‘নো।”
“প্লিজ দেন না সত্যি খুব পানি পিপাসা পেয়েছে।”
” দিতে পারি এক শর্তে।”
“কি শর্ত?”
“সরি বলো তাহলেই পানিতে দেবো।”
“ইম্পসিবল আমি আপনাকে একটু স্যরি বলবো না এখানে দোষ আপনার।”
“ওকে বসে থাকো সরি বলতে হবে না পানি ও পাবে না।”
স্নেহা ব্যর্থ চোখে তাকিয়ে আছে। আমার সত্যি খুব পিপাসা পেয়েছে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।বিস্কুট খেলে
এমনিতেই পানি পিপাসা বেশি পায়
একটু পানি না খেয়ে থাকতে পারব না এখন কি করব? এই খারাপ লোকটা তো আমাকে একটু পানি দিবে না
সরি না বল্লে।
.
10 মিনিটের মত ওইভাবেই থেকে সরি বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি পানি খাচ্ছে।
আমি নিচু হয়ে সরি বললাম। আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি?
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে শুনেছে তবুও ইচ্ছে করে বলছে।
আবার একটু জোরে বললাম “সরি ,এবার পানি দেন।”
“শুনতে পায় নাই আর ও একটু জোরে বলো।”
“বলেছি ,সরি।”
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললাম।
“আচ্ছা গুড গার্ল এই নাও পানি খাও।”
টেনে পানির বোতল নিয়ে গট গট করে পানি খেতে লাগলাম খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল।
এখন শান্তি লাগছে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বোতল ফিরিয়ে দিলাম।
স্নেহা তাড়াতাড়িতে বোতলের মুখ লাগিয়ে খেয়েছে। আদ্র সেটা দেখে সেখানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে একটু পানি
খেয়ে নেয়। কিন্তু সেটা স্নেহা দেখতে পায় না।
স্নেহার প্রচুর ক্লান্ত লাগছে চোখ বন্ধ করে আছে। পুরো রাস্তা এভাবে যাওয়া যাবে না আবার ঘুমানো ও যাবেনা
পাশে যে একটা অসভ্য ছেলে বসে আছে।
একে একটুও বিশ্বাস নেই। কিন্তু ক্লান্ত লাগছে খুব চোখ খুলে রাখতে পারছিনা।
ওই ভাবে বসে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা।আদ্র পেছনে ঘুরে রাহাতে সাথে কথা বলছিল
হঠাৎপাশে তাকিয়ে দেখে স্নেহা ঘুমিয়ে গেছে আর মাথাটা জানালা কাছে মাথা ঝাকিতে নড়ে ধরে গ্রিলে বাড়ি
খাবে। এটা দেখে আদ্র তাড়াতাড়ি করে ওর মাথা ধরে নেয়।
একটুর জন্য বারি খাওয়া থেকে বেঁচে গেল।
আদ্র স্নেহার মাথাটা এনে নিজের কাধের উপর রেখে দিল।
অচেনা শহর পর্ব ২২
আদ্র স্নেহার ঘুমন্ত মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক ফেলদে না যেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
স্নেহাকে দেখছি স্নেহা গভীর ঘুমে আবদ্ধ। ও জানতে পারল না কেউ একজন ওকে এইভাবে দেখছে। স্নেহা
মাথার ওড়না পড়ে গেছে।আজকে স্নেহার চুল বিনুনী করা। মুখের উপর কিছু চুল পড়ে আছে সেগুলো ছোটো
চুল দেখে হালকা করে হাত বাড়িয়ে চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়। হঠাৎই স্নেহা নরে আদ্রর হাত খামচে
জড়িয়ে ধরে।
আদ্র এটা দেখে বাঁকা হাসে।অজান্তে হলে ওত জরিয়ে ওর কাঁধে মাথা রেখে ওর খুব কাজে আছে স্নেহা।
অদ্রর মনে সুখের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ও ভাবছে এখানেই সময়টা থেমে যাক স্নেহা সবসময় আমার কাছে
এভাবেই থাকুক। খুব কাছে।
এদিকে একজন ওদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর রাগে হিস হিস করছে।রাগে ফায়ার হয়ে আছে ও
যদি এখন স্নেহাকে তে সামনে পায় তাহলে ওকে খুন করে ফেলবে গলা টিপে।
“আমি ওকে মেরে ফেললো। আমাকে খুন করে ফেলবো
কিভাবে আদ্রর গায়ে লেপ্টে আছে।কিভাবে দেখছিস ওর কি কোন রূপ আছে গাইয়া ক্ষেত একটা ও দেখতে
সুন্দর নয় স্মার্ট। আমি আছি সব দিক দিয়ে ফাস্ট কিন্তু আদ্র আমাকে রেখে ওর দিকে নজর দিয়েছে। মেয়েটার
আদ্রকে বস করেছে নিশ্চয়ই অন্য কোন কিছু হবে। এসব গাইয়া মেয়েরা কি করতে পারে আমার খুব ভালো
করে জানা আছে।”মাইশা কথাটা বলে রাইসার দিকে তাকায়।