অচেনা শহর পর্ব ২৫
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।
চোখ মেলে ফোন হাতে নিয়ে দেখছি কতো বাজে। ছয়টা বাজে। সকাল হয়ে গেছে। এই সময় কে কল
করেছিল। কল কেটে যাওয়ায় আর না ভেবে ঘুমানোর চিন্তা করি। কিন্তু সাথে সাথে আবার ফোন বেজে
ওঠে তাকিয়ে দেখি আদ্রর নাম্বার। আদ্রর নাম্বার দেখেই আমার ঘুম ছুটে যায়।
আদ্রর কল করেছে কেন এ সময়?
ভাবতে ভাবতে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ঝাঁজালো কন্ঠস্বর আসে।
“এতোক্ষণ লাগে ফোন রিসিভ করতে? তারাতাড়ি উঠে দরজা খুলো আমি বাইরে আছি।”
আমি তার কথা শুনে ই ভয় পেয়ে যায়।তার থেকে বেশি অবাক হয় দরজা খুলতে বলায়।
“কি বলছেন দরজার বাইরে আছেন মানে?”
“বাংলা কথা বুঝ না। এক ঘন্টা যাবত এখানে আছি কতো গুলো কল করছি হিসেব নাই। আর এখন তুমি আমার
কাছে কৈফয়ত চাইছো।”
“আমি এই সাত সকালে বাইরে কেন আসবো।স্যাররা কি আসতে বলেছে।”
“দুই মিনিটের মাঝে না আসলে আমি তোমার রুমে চলে আসবো কিন্তু।”
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই কল কেটে গেছে।
ফোন কানে থেকে নামিয়ে হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি।কি করবো বুঝতে পারছি না।
এই সময় বাইরে কেন যেতে বলছে আর উনি বা বাইরে আছে কেন?
শীত কাঁটা দিচ্ছে গায়ে এই সময় কেন যেতে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
না আমি যাব না কিন্তু যদি সত্যি রুমে চলে আসে তাহলে কি হবে?উফ আর ভাবতে পারছি না এখানে এসে
আবার জ্বালানো শুরু করছে।
উনাকে বিশ্বাস নাই সত্যি যদি রুমে চলে আসে তার থেকে একটু শুনে আসি কি জন্য।
উঠে চুল খোপা করে ওরনা দিয়ে মাথা ও শরীর ঢেকে নিলাম ভালো করে। শীতের জামা পরলাম না এসেই
আবার শুয়ে পরবো ভাবলাম।
উঠে দরজা খুলতেই চোখ পরলো আদ্রর দিকে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সে।
পেছনে ফিরে ছিলো দরজার শব্দ এদিকে ফিরে তাকায়। আদ্রর আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।
কিন্তু আমার সেগুলো দেখার টাইম নাই আমি তো রেগে জিজ্ঞেস করলাম,,
“আপনি এখানে কি করছেন?”
সাথে সাথে বলে উঠলো,, “তোমার জন্য অপেক্ষা।”
“হোয়াট?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
শীতে জমে যাচ্ছি দাঁড়ানো যাচ্ছে না। রুমে ভেতরে এতো ঠান্ডা লাগে নি এখন লাগছে। আমি তাই কথা বাদ
দিয়ে ভেতরে এসে চাদর নিতে চাইলাম এজন্য দরজার কাছে থেকে ঘুরে গেলাম।
কিন্তু হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রর আমার হাত ধরে আছে।
আমার দিকে তাকিয়ে শুধু একটা কথা বললো,,,”চলো।”
আমি কিছু বলার আগেই সামনে এগুতে লাগলো। কিছু বলার সুযোগ ই পেলাম না হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি
আদ্রর দিকে। আর ভাবছি চলো মানে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে এই সাত সকালে।
“আরে আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে ছারুন হাত।ধরাধরি পছন্দ করি না একদম।”
“বেশি কথা না বলে হাঁটতে লাগো।”
.
“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।ছারুন আমার হাত। আমি আপনার সাথে কোথা ও যাব না।”
আদ্রর কিছু বলছে না নিজের মত চলতেছে।
রিসোর্টে বাইরে চলে এসেছি আদ্র আমার হাত ছারছেই না আমি চেষ্টা করে ও ছারাতে পারছি না।
এতো শক্ত করে ধরেছে।
“আমি না চাইলে আমার হাত থেকে তুমি নিজেকে ছারাতে পারবেনা।তাই বৃথা চেষ্টা করে নিজের শক্তির
অপচয় করো না।”
রেগে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে এমনিতেই শীতকাল তার উপর এখানে আর ও বেশি
শীত গায়ে কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে। হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে।আদ্রর ইচ্ছে করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে কষ্ট
দেওয়ার জন্য।
আমি সিউর এই লোকটা প্রথম দিন থেকে ই আমাকে সব রকম কষ্টের সামিল করেছে এখানেও তাই করছে। এই শীতে আমাকে বাইরে এনে সেটাই প্রমান করছে সেই দেখেছে আমার শরীরের কোন শীতের পোশাক নাই
ওমনি জোর করে ধরে বাইরে নিয়ে এলো।
যাতে শীতে আমি আধমরা হয়।
নিজে তো দিব্যি সব পরে এসেছে।
অজান্তে ই চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
উঁচু নিচু রাস্তা ধরে হাঁটছি তখন আমি আদ্রর থেকে চোখ সরিয়ে হাঁটতে লাগলাম। অসভ্য লোকটার দিকে
তাকাবো না। শীতে কাঁপছি। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে হচ্ছে। আর ও কিছু টা রাস্তা হাঁটলাম।
হঠাৎ আদ্রর থেমে গেল। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম কিছু বলবো তার আগে আদ্রই
বলল,
“তোমার শীতের পোশাক কই।”
.
কথাটা শুনে আমার আমার এতোটা রাগ হলো যে বলে বুঝাতে পারব না।কটমট চোখে তাকিয়ে রইলাম
অসভ্য , ইতর, হনুমান বাঁদর একটা ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে এনে এখন জিজ্ঞেস করা হচ্ছে শীতের পোশাক
কোথায়?
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আন্সার মি।”
“একদম নাটক করবেন না। কি বুঝাতে চাইছেন আপনি জানতেন ই না আমি শীতের পোশাক পরি নি। ”
“অফকোর্স জানতামই না তো জানলে কি এভাবে আনতাম তোমায়।”
“আপনি ইচ্ছা করে এভাবে এনেছেন যাতে শীতে আমাকে কষ্ট দিতে পারেন আমি ভালো করে জানি। তাই
নাটক করে লাভ নাই।”
“জানো ভালো।”
আচমকা আদ্র নিজের জ্যাকেট খুলে আমার দিকে বারিয়ে দিলো আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি সেটা দিকে।
সেটার থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রর দিকে তাকালাম।
“পরে নাও।”
হা করে তাকিয়ে আছি।
“মানে।”
সব কিছুর এতো মানে খুজো কেন? এই শীতে কাঁপছে কেমন দেখেছো আর একটু হলে ঙ্গান হারাবা আর আমি
তোমাকে অঙ্গান করতে চাইনা না হলে হতো কষ্ট দিতে পারবো না ঠিক মতো।
অতো খারাপ হলে এতো সব চিন্তা করতে পারে।
“কি হলো পরো?”
“নাহ পরবো না।”
এবার আদ্র চিৎকার করে উঠল,,, “একটা বাড়তি কথা শুনতে চাই না। তারাতাড়ি পরো।”
আদ্রর চিৎকার শুনে আমার আত্মা উড়ে যাওয়ার উপক্রম।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছি কানের তালা মনে
হয় ফাটিয়ে ফেলেছে।
“পরবে নাকি এই যে পাহাড় দেখতে পাচ্ছ এখানে থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।”
পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম।আর না করার সাহস পেলাম না শুরশুর করে জ্যাকেট হাতে নিলাম।পরার জন্য।
অগ্যতা পরতে হলো।
আবার আদ্র আমাকে নিয়ে হাটতে লাগলো।
.
আসতে আসতে এগিয়ে যাচ্ছি আর আমাদের মতো অনেক মানুষের দেখা মিলছে। আমি সবার দিকে একবার
তো আদ্রর দিকে একবার তাকালাম।
আদ্রর দৃষ্টি সামনে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দাঁড়ালাম দুজনে।
এখানে এসে আমার হাত ছেড়ে দিল আদ্র এতো ক্ষন নজর আদ্র উপর ছিলো কিন্তু এখন আমার নজর মেঘের
উপর। হা করে তাকিয়ে আছি।এমন কিছু দেখবো আমি কল্পনাতেও ভাবি নি।
মনে হচ্ছে কোন মেঘের দেশে চলে এসেছি।
বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি মুগ্ধ হয়ে।
আদ্র খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে এক দৃষ্টিতে। স্নেহার ঠোঁটে হাসি চোখ বড় বড় করে
দেখছে। আর লাফাচ্ছে ও যে অনেক খুশি হয়েছে তা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।খুশি ওর চোখে জল গড়িয়ে
পরছে। হঠাৎ স্নেহা ছুটে আদ্রর কাছে আসে।
“এটা আমাকে কোথায় নিয়ে এলেন মনে হচ্ছে মেঘের দেশে চলে এসেছে।সব কিছু সপ্নের মতো লাগছে আমি
কি সপ্ন দেখছি সুন্দর সপ্ন যেটা আপনি দেখালেন।”
স্নেহার উজ্জ্বল হাসি মুখ দেখে আদ্রর মুখেও হাসি ফুটে উঠে ও তো এই হাসি দেখার জন্য এতো কিছু
করলো।ওর কষ্ট সার্থক স্নেহার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছে।
“আমি এই মেঘ ছুঁতে চাই।”
“আচ্ছা ছও।”
“কিন্তু কিভাবে।”
আর মতো করো দেখবে মেঘ নিজেই তোমায় ছুঁয়ে দেবে। মাথায় ওরনা খুলে নিয়ো।
বলো আদ্র চোখ বন্ধ করে দাঁড়ায় আদ্রর কথা মতো ও চোখ বন্ধ করে।
.
আদ্র আগে আগে হাঁটছে আর আমি ওর পেছন পেছন হাঁটছি। এখন আর আদ্র আমার হাত ধরে হাঁটছে না।
আমি আর পেছনে হেঁটে যাচ্ছি। মুগ্ধ হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। আমি আজকের মত এত খুশি কবে
হয়েছিলাম আমার ঠিক মনে নাই। আসার সময় কত কিছুই না ভেবে আসলাম। কিন্তু এখানে এসে আমি
সারপ্রাইজড।আদ্রকে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে এমন সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
“এত আস্তে হাটছো কেন তাড়াতাড়ি হাট।”
আদ্র পেছনে ঘুরে আমাকে কথাটা বলে আবার হাঁটতে লাগে আমি দৌড়াতে পাশাপাশি এসে দাঁড়ায়। আদ্রর
সাথে হাঁটতে পারছে না ওর তাড়াতাড়ি হাঁটছে।
রিসোর্টে এসে আমি আমার রুমে চলে যায় আর আদ্র ও চলে যায়। এর মাঝে আর আমাদের মধ্যে কোন কথা
হয়না।
রুমে এসে দরজা আজকে পেছনে ঘুরতে দেখি অন্তরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে।
আমি কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।
“কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
খাটের অপর পাশে বসে কম্বলের নিচে পা ঢুকিয়ে।
“তুই কোথায় গিয়েছিলি?”
অন্তরার কথা শুনে স্নেহা একটা শুকনো ঢোক গিলে। আদ্র সাথে যাওয়ার কথা কাউটা বলা যাবে না তাহলে ও
নেগেটিভ ভাববে। ফোন দিয়ে আদ্র আমাকে যা বলছে সব ওকে বলেছি। আর ওসব শুনে বলেছে আদ্র নাকি
আমাকে লাইক করে এ্যান ত্যান। আরে এসব শুনলে তো আমারও বেশি করে বলবে। কিন্তু আমিতো জানিনা
আমাকে দিয়ে এ সব কেন করাচ্ছে।
অচেনা শহর পর্ব ২৪
কষ্ট দেয়ার জন্য। ডিস্টার্ব করে বিরক্ত করে ও শান্তি পায়। আজকেও ঠান্ডায় আমাকে আধমরা করে নিয়ে
গেছে তারপরে এই সারপ্রাইজটা সত্যি কেন দিলে আমাকে। আমি কনফিউজড কিন্তু সেটা আমাকে দিতে
চাইনাই। আমি জানি আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নিয়ে গেছিল পরে সারপ্রাইজ দিয়ে ফেলেছে।
ওই কি ভাবছিস বললি নাতো কোথায় গিয়েছিলি।
কোথায় যাবে সাতসকালে শীতের মধ্যে কোথাও যাইনি ওই তো একটু বাইরে গিয়েছিলাম আর সাথে সাথে চলে
এসেছি। তুই কখন উঠলি।
আচ্ছা সাথে সাথে চলে এসেছিস তাহলে তোর গায়ে জ্যাকেট টা কার? আর সাথে সাথে মানে আমি কিন্তু
অনেকক্ষণ ধরে জেগে ছি।
জ্যাকেটের কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেল।
জ্যাকেটের কথা তো আমার মনেই ছিলনা। আদ্রর কেউ জ্যাকেট ফেরত দেওয়া হয় নাই।
অন্তরা আমাকে জেরা করা শুরু করলো।
এই জ্যাকেট কোথায় পেলাম এটা কার জ্যাকেট।
এমন ভাবে চেপে ধরল যে আর লোকাতে পারলাম না সব বললাম।
ও সব শুনে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
“আমি বললাম না আদ্র ভাইয়া তোকে লাইক করে আজ তো বিশ্বাস করবি।”
“আবার এক কথা এজন্য তোকে বলতে চাই নাই।”
“তা বলবি কেন আমি তো সত্যি বলি মা আপনে বিশ্বাস করতে চান না।”
“তোর ফালতু কথা কেউই বিশ্বাস করবে না।”
দুজন তর্কাতর্কি করে চললো কিছু ক্ষন।