অচেনা শহর পর্ব ২৭
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
সকাল সকাল সবাই বেরিয়ে পরলো ঘুরতে যাওয়ার জন্য। ব্রেকফাস্ট করে।
চাদর গায়ে আছে তবুও ঠান্ডা লাগছে অনেক।
তার মূল কারণটা হলো সকালে বের হওয়া কিন্তু কিছু করার নেই।আজকেই বিকেলে রওনা হতে ঢাকা।
এজন্য আগেই বের হতে হলো না হলে বেরানো হবে না।
উদ্দেশ্য রিসাং ঝর্ণা।
চারপাশে সাদা কুয়াশায় ঘেরা। ওই ভাবে আমরা এখানে আসতে আসতে কুয়াশা চলে গেছে। একটু বেলা হয়েছে
সূর্যের তাপ গায়ে লাগছে এখন ভালো লাগছে।
শীতের রেশ কমে এসেছে। সবাই ঝর্ণার কাছে এসে পানি দেখতে লাগলাম।
হাত দিয়ে ছুয়ে দিলাম সাথে সাথে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো আমার। প্রচন্ড ঠান্ডা পানি। শীতল হাওয়া সারা
শরীর বেয়ে গেল। সাথে সাথে পানি থেকে হাত উঠিয়ে সরে দাঁড়ালাম। পানি পরার ঝনঝন শব্দ কানে এসে
বাজছে এই শব্দ টা শুনতে কি যে ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না। হঠাৎ অন্তরা এসে টেনে আমাকে
চেপে ধরলো, ছবি তোলার জন্য।
ও ফোন নিয়ে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে অন্যদিকে গেল আর ও ছবি তুলবে বলে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
কয়েকটা ছেলের দীকে নজর গেল তার ড্রেস খুলছে আর অন্য সিম্পুল ড্রেস পরে পানি তে নেমে গেল।
দেখেই আঁতকে উঠলাম আমি। আমি হাত দিতে পারলাম না আর এরা এভাবে নেমে পরলো ভাবা যায়।
সবাই ঠান্ডায় জমে গেছে মুখই বলে দিয়েছে কিন্তু আনন্দ ও করেছে। হঠাৎ আদ্র কে চোখে পরলো সাথে ওনার
ফ্রেন্ড রাও আছে তারা ও নেমে পরলো। কিন্তু রাহাত ভাইয়া নামলো না। আদ্র নামার সময় আমার দিকে
তাকিয়ে ছিলো।
“হে স্নেহা কেমন কাটছে দিনকাল?”
আচমকা কন্ঠ পাশ ফিরে রাহাত কে দেখে চমকে উঠি,
রাহাত দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে,
“জি ভাইয়া ভালো, আপনার?”
“ভালো। চলো ওইদিকে যাই।”
না করতে চেয়ে ও পারলো না স্নেহা রাহাতের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো,
“আপনি নামলেন না যে?”
স্নেহার প্রশ্নের ঘার কাত করে তাকিয়ে বলে,,
‘আমি কি ভাবে নামবো। বাপরে যে ঠান্ডা পানি তার উপর আমার আবার ঠান্ডা প্রবলেম আছে।”
“ও আচ্ছা।”
“এখানে এসে কেমন লাগছে।”
উজ্জ্বল মুখ করে বলল,, “খুব ভাল।”
রাহাত সেটা দেখে হেসে ফেললো।
রাহাতের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে একটু ঘুরলো। রাহাতের ফোন আসতেই স্নেহাকে ছেরে চলে গেল।
স্নেহা একাই ঘুরতে লাগলো। নিজে ও ফোন বের করে রুনাকে আপুকে কল করলাম। আব্বুর খোঁজ নিলাম
আর আজকে চলে আসবো সেটা ও বলে দিলাম। হঠাৎ ঠান্ডা কিছু মুখে পরতেই চমকে মাথা উঁচু করলাম,
আদ্রকে দেখে ভীষণ অবাক হলাম।ভিজা শরীর নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ওনি মাথায় চুল ঝেড়ে আমার মুখে পানি দিয়েছে এখনো দিচ্ছে। রেগে গেলাম আমি।
.
“এসব কি হচ্ছে? আপনি আমাকে ভিজাচ্ছেন কেন? আর এখানে কেন আপনি না পানিতে ছিলেন।”
আদ্র কথা বলছেনা নিজের মত পানি ছিটিয়ে যাচ্ছে। স্নেহা ওর কাছে হতদম্ব হয়ে গেছে এমন করছে কেন?
তার উপর আবার উওর ও দিচ্ছে না। লোকটার প্রতিটি কাজ খারাপ। রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে।
“কি হলো এমন অসভ্যতামী না করলে কি হচ্ছে না এখন ও আমাকে জ্বালাবেন সরুন আমার সামনে থেকে।”
আদ্র পানি ঝারা ওফ করে। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে দেখলো স্নেহাকে অত্যন্ত রেগে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
“আপনি এলেন কেন এভাবে।”
“তোমাকে ভেজাতে।”
“মানে আপনি আমাকে ভেজাতে এসেছে। আপনি তো খুব খারাপ একদম ভেজাবেন না আমাকে কি ঠান্ডা
পানি।”
আদ্র শুনেও যেন শুনলো না আবার পানি দিতে লাগলো। স্নেহা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর
সহ্য করতে না পেরে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে আসে।
রাগে গজগজ করতে করতে সামনে এগিয়ে আসে।
হঠাৎ সামনে এসে দাড়িয়ে মাইশা।
কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে ওর দিকে।মাইশা কে দেখে স্নেহা থেমে যায়।
“এই তুই আদ্রর সাথে কি কথা বলছিলি।”
এমন কথা শুনে স্নেহা অবাক হয়ে তাকায় মাইশার দিকে।
“কি হলো কথা বলছিস না কেন? দেখ একদম আদ্রর আশে পাশে থাকবি না
আর কথা ও বলবি না। কি দেখে আদ্র তোর…
কথাটা বলতেই রাইসা পাশ থেকে ওর হাত চেপে ধরে।সাথে সাথে থেমে যায়। আদ্র যে ওকে ভালোবেসে
সেটা বলা যাবে না তার আগেই ওর মন থেকে আদ্রকে গেট আউট করবো আর ওকে বুঝাব আদ্র আমাকে ভালোবাসে।
আর আদ্রর এতো সহজে মনের কথা বলবে না আমি জানি এটাই আমার সুযোগ।
কথার মাঝে থেমে যেতে দেখে স্নেহা সন্দেহ চোখে তাকিয়ে থাকে।
“শুন আদ্রর থেকে দূরে থাকবি।”
.
বলেই মাইশা চলে গেল রাইসা কে নিয়ে। স্নেহা ওদের যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল
ওদের কথা কিছু বুঝতে পারলো না।
“এখনি তো বলে দিচ্ছিলি আদ্র স্নেহার উপর দূর্বল। ভালোবাসে ওকে।”
“একদমি মনে ছিল না ওকে আদ্রর পাশে দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেছিলো।”
“মাথা ঠান্ডা রাখ আর সাবধান এসব কিছু আদ্র জানতে পারলে তোকে যে কী করবে ভেবেই ভয় হচ্ছে।”
“জানবে কি করে তুই ছারা আর তো জানে না তুই কি বলে দিবি নাকি।”
“দূর আমি বলবো কেন?”
“তাহলে চিন্তা করিস না কেউ জানবে না। তুই আমার পাশে থাকবি তো।”
“অবশ্যই আমি তো জানি তুই আদ্র কে কতো ভালোবাসি কিন্তু আদ্র তোকে কেন যে বুঝলো না।”
“আদ্রর দোষ নেই সব ওই মেয়ের কি দিয়ে জাদু করেছে।”
মাইশা আর রাইশা কথা বলছিলো রাহাতকে দেখে দুজনে থেমে যায়।
রিসোর্টের রুমে বসে আছে স্নেহা। সামনে অন্তরা রেডি হচ্ছে। একটু পরেই আমরা রওনা হবো ঢাকার
উদ্দেশ্যে।
স্নেহা উঠে বারান্দায় গেল দুদিনের বেলকনি টা আপন হয়ে গেছে। খুব পছন্দের ছিলো এটা ছেড়ে চলে যেতে
হবে ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আব্বু র কথা মনে হতেই আনন্দ হতে লাগলো দুদিন পর আব্বু কে
দেখবো খুশি লাগছে একা আগে কখনো থাকা হয়নি।
রুমে এসে ব্যাগ প্যাক করতে লাগলাম।
আধা ঘন্টা পর সবাই রেডি হয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম।সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে আছি।
গাড়ি আসতেই সবাই উঠে গেলাম।
এবার আর আদ্রর সাথে বসি নাই।
রাত বারোটায় ভাসির্টির সামনে এসে গাড়ি থামলো।সবাই একে একে নেমে গেল।
সব মেয়ের ফ্যামিলির কেউনা কেউ এসেছে।আর ছেলেরা ও। অন্তরা এসে আমাকে ওর সাথে যেতে বলল
কিন্তু আমি না করে দিলাম। হেঁটে ই চলে যাব গাড়ি না পেলে কিন্তু বাসায় যাবই।
.
অন্তরা চলে গেল একে একে সবাই চলে গেল। ফাঁকা হয়ে গেল চারপাশ। স্নেহা আশেপাশে তাকিয়ে এক ঢোক
গিলে চলে যেতে নেয় হঠাৎ আদ্র সামনে এসে দাঁড়ায় বাইকে করে।
চমকে আদ্রর দিকে তাকালাম।উনি কোথা থেকে এলো,
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।
“তারাতাড়ি উঠে বসলো।”
“আপনি যাননি এখন ও।”
“নাহ। গেলে কি এখানে থাকতাম নাকি।কথা না বলে উঠো।”
“উঠবো কেন?”
“বাসায় যাবে না। দেখো বারোটা পনেরো বাদে তাই এখন তুমি কোন গাড়ি পাবে না।তাই আমার সাথে চলো।”
“গাড়ি আমার দরকার নেই। আমি হেঁটে চলে যাব।”
“হেঁটে যাবে? এই এতো রাতে।”
“হ্যা।”
“তোমার মাথা খারাপ হয়েছে।এই সময় যে কোন বিপদে পরতে পারো জেদ না করে উঠো।”
“নাহ আপনার সাথে আমি যাব না।”
আদ্র কি একটা ভেবে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলে।
“তুমি হয়তো ভুলে গেছ ভূতের ব্যাপারটা।”
“না ভুলি নাই।আর এটা ও ভুলি নাই ভূতটা আপনি ছিলেন।”
“সেদিন আমি ছিলাম কিন্তু সব সময় তো আমি থাকবো না।আজকে তো সত্যি কারে আসতে পারে তার উপর
বারোটা এই সময় শুনেছি ভূত প্তেত বেশি থাকে।”
আদ্র ওর দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে।স্নেহা এসব শুনে ভয় পেয়ে গেল। তবুও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
“ওকে তাহলে থাকো তুমি আমি যাই প্রচুর রাত হয়েছে।”
বলেই বাইক স্টাট দেয়।স্নেহার কি হলো কে জানে ও আদ্রকে ডেকে উঠলো,
“যাবেন না প্লিজ।”
আদ্র পেছনে ঘুরে জিজ্ঞেস করে, “যাবো না মানে।”
“মানে আমাকে রেখে যাবেন না প্লিজ।”
“তুমি না বললে আমার সাথে যাবে না।”
“হ্যা কিন্তু আজকে একটু পৌঁছে দিন।”
.
“পারবো না এতোক্ষণ বলছিলাম খুব ঢং দেখিয়েছো।”
আদ্রর পারবো না শুনে স্নেহার গলা শুকিয়ে আসে। এখন কি হবে সত্যি যদি ভূত আসে ইশ প্রথমে যে কেন না
করলাম কিন্তু এই লোকটা সব সময় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে এই জন্য ই তো। কিন্তু এখন কি করবো
উনি তো আমাকে নিতে রাজি হচ্ছে না।
“সরি প্লিজ এমন করবেন না ।”
“আচ্ছা করবো না একটা শর্তে।”
আবার শর্ত।
“এই লোকটা সব সময় শর্ত শর্ত করে কেন? আল্লাহ আবার কি যে শর্ত দেবে আল্লাহ জানে।”
“হ্যা রাজি থাকলে বলো।”
“জি বলেন।”
“আমি ফোন দিলো সব সময় রিসিভ করতে হবে।”
“আপনি আবার ও আমাকে কল করবেন।”
“সেটা পরে জানতে পারবে ধরবে কিনা বলো।হ্যা ওর না।”
চারপাশের ঘুটঘুটে অন্ধকারে দিকে তাকিয়ে আবার আদ্রর দিকে তাকালাম।সব দোষ আমার কেন যে
নিজে প্রথমে না করতে গেলাম।তাহলে এই যন্তনা সহ্য করতে হতো না।
অগ্যতা রাজি হলাম আর বাইকের পেছনে উঠে বসলাম।
“ভালো করে ধুরে বসো।নাহলে কখন পরে যাবে বুঝা যাবেনা।”
“পরবো না সেদিন পরি নাই মনে আছে।”
“হ্যা না ধরলে পরতে। আজকে স্পিড বাড়বে তাই আগেই বললাম।”
“বাড়বে কেন?”
“বাসায় তারাতাড়ি ফিরবো তাই।”
.
কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
খুলছে না আর ও দুবার পর খুলে দিলো আপু।আমাকে দেখেই হেসে জরিয়ে ধরলো। ভেতরে ঢুকে আব্বু কে
উঁকি দিয়ে দেখে আসলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে আসতেই আপু খাবার দিলো এনে।
“খাবার আনলেন কেন?”
“কতো রাস্তা জার্নি করে এসেছিস তাই আরকি তোর তো খিদে পেয়েছে নাকি।তাই গরম করে নিয়ে এলাম।”
“এখন আবার কষ্ট করতে গেলে কেন?”
“চুপচাপ খা।”
খিদে পেয়েছিল তাই কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করলাম।
সকালে আপু নিজের বাসায় সিফট করলো। তার থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া আসে নি এর মাঝে আর ফোন
ও নাকি করে নি সেটা নিয়ে আপু কিছু টা চিন্তিত।
পরদিন অফ ভাসির্টি অফ।তাই বাসায় ই কাটলো।রাতে টিউশনি থেকে কল এলো আর বলল পরদিন যেতে।
রাতে আদ্রর নাম্বার থেকে কল এলো।ধরবো না ভেবে ফোন রেখে দিতেই কালকের করি মনে পড়ে গেল।না
চাইতে ও ফোন রিসিভ করলাম।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?”
বিরক্ত হয়ে ফোন কানে ধরে আছি।
“কি হলো কথা বলছো না কেন?”
“ফোন কেন দিচ্ছেন?”
“কথা বলতে! কি করছো?”
‘ঘাস কাটছি কাটবেন।”
“হোয়াট ?’
“ডিস্টার্ব করা শুরু করে দিয়েছেন। ফোন রাখেন আমি ঘুমাবো।”
“খাইছো?”
“বলবো না। বাই।”
ফোন কেটে দিলাম।এতো আদিক্ষেতা করে কথা বলছিলো যে দূর আবার কি সব ভাবছি।
অচেনা শহর পর্ব ২৬
দুই দিন পর
মন খারাপ করে আপু আমার সামনে বসে আছে। আপুর থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া এখন ও আসে নাই।
চিন্তিত আপুর মন খারাপ।
“আপু মন খারাপ করো না।”
“চিন্তা হচ্ছে আমার।”
“বুঝতে পারছি বাসায় কাউকে জানাও অন্য কেউ তো জানতে পারে।”
“শুনেছি ।”
“কি বলেছে?’
“বললো কাল নাকি কথা হয়েছে। কিন্তু আজ হয়নাই।”
“ওহ তাহলে তোমার মাঝে কি ঝামেলা চলছে।”
“থাক এসব বাদ দে।”
আপু বলতে চাইনা আর তাই চুপ হয়ে গেলাম।
সেদিন রাতে রুনা হাজবেন্ড কৌশিক বাসায় এলো।
রুনা কৌশিক কে দেখেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠলো।
ওকে দেখেই জরিয়ে ধরলো। ভালোবেসে বিয়ে হয়েছিলো ওদের বিয়ের পাঁচ বছর পার হয়েছে। প্রথম ভালোই
কাটছিল সংসার জীবন ভালোবাসায় ভরপুর ছিলো কিন্তু। মাঝে কি হয়ে গেল কে জানে ? আস্তে আস্তে চেঞ্জ
আসতে লাগলো।
ইদানিং বেশি হচ্ছে।
চোখ বন্ধ করে কৌশিকের বুকে মাথা রেখে জরিয়ে আছে দু হাতে কিন্তু বেশি সময় থাকতে পারলাম না।
কৌশিক ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিল ওকে।
ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কৌশিক বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে ।