অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৩২ || tanjina akter misty

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৩২
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

আদ্র আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর দরজাটা আটকে কঠিন চোখ করে আমার দিকে
তাকায় আর বলে,, তোমার রুম কোনটা?
আমি বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছি না।হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্র এখানে কি করছে?
এখানে এলোই বা কিভাবে?
আদ্রর কথায় আমার ঘোর কাটে।
“আপনি এখানে কি করছেন? আমার বাসায় কেন এসেছেন হাত ছারুন। এটা কেমন অসভ্যতামি।
আবার আমার রুম জিজ্ঞেস করছেন।”

একদমে কথা বলে থামলাম। হাত ছারানো চেষ্টা করছি আর কথা বলছিলাম। হঠাৎ আদ্রর দিকে তাকিয়ে
আমার হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো।
ভয়ংকর রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্র আমার দিকে।যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে আর একটা প্রশ্ন
করলে আমি আদ্রর এমন রাগী চেহারা দেখে চুপসে গেলাম।
শুকনো একটা ঢোক গিললাম,,
আদ্র আমার হাত শক্ত করে ধরে নিজেই রুম খুজতে লাগলো। প্রথমে বাবার রুমের কাছে গেল সাথে
সাথে আঁতকে উঠলাম,, আর মৃদু চিৎকার করে বললাম,,
“আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন এটা বাবার রুম।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

আদ্রর রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,, ” এতোক্ষণ মুখ অফ রেখে এখন বলার কি ছিলো আমি
তোমার বাবার কাছেই যাব। তার সাথে আমার কথা আছে।”
বাবার সাথে কথা আছে মানে কি বাবাকে কি বলবে আদ্র,,
“কি সব বলছেন বাবার সাথে কথা আছে মানে বাবাকে কি বলবেন?”
শয়তানি হাসি দিয়ে,,,,”কি বলবো গেলেই দেখতে পাবে।”
“না না প্লিজ আমার রুমে চলুন। ওইদিকে যাবেন না।”
বলে আমি আদ্রর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম কিন্তু আদ্র নরছে না আমি টানছি কিন্তু নরাতে
পারছি না।

অসহায় মুখ করে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“কি হলো আসুন।”
“বললাম না তোমার বাবার সাথে আমার কথা আছে।”
“প্লিজ না।আর তাছাড়া বাবা তো কথা বলতে পারে না। আপনি কি কথা বলবেন বাবার সাথে। অযথা…
“সেটা আমি বুঝে নেবো।”
বলেই আদ্র আমার হাত ধরে টেনে বাবার রুমে প্রবেশ করে। শত চেষ্টা করেও তাকে থামাতে ব্যর্থ হয়।
বাবা কথা বলতে না পারলেও বুঝতে পারে সব আদ্রর সাথে আমাকে দেখলে কি ভাববে ভেবেই হাত-পা
ঠান্ডা হয়ে আসছে।

শক্ত করে হাত ধরে আছে নিজের সব শক্তি দিয়ে হাত ছুটাতে চাইছি পারছিনা।
রুমে পা রাখবো এমন সময় আদ্র থেমে যায়। আর আমার দিকে তাকায়। আস্তে করে বলি,
“প্লিজ যাবেন না বাবাকে অন্যরকম ভাববে। আর বাবা কষ্ট পাবে‌।”
আদ্র আমার একদম কাছে এসে মাথা নিচু করে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ,,,
“সরি সুইটহার্ট তোমার কথাটা রাখতে পারবোনা।এটা তোমার পার্নিশমেন্ট আমার কথার অবাধ্য
হওয়ার।”

.

আদ্রর মুখে সুইটহার্ট শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তার উপর এভাবে এতো কাছে আসাতে
আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আদ্র কথা শেষ করে সরে দাঁড়ায়,,,
“তবুও নিজেকে সামলে বলি,,,,,” এবারের মতো ক্ষমা করেন আই প্রমিজ আর কখনো এমন করবো
না সারাদিন আপনার সাথে কথা বলবো প্রমিজ।”
“তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না।”
“এইবারের মতো বিশ্বাস করেন না।”
“এতো কিউট ফেস করে বলতে নেই আমি মানা করতে পারি না।যাও এবার মাফ করলাম কিন্তু তাঁর
জন্য…

“জানি জানি শর্ত দিবেন তো আমি সব শর্ত রাজি।”
“বাব্বাহ ওকে চলো তোমার রুমে যাই। তারপর বলি। আমি খুব টায়ার্ড তোমাকে।”
আমি তারাতাড়ি আমার রুমে এলাম আদ্র ও পেছনে এলো।বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে
দাঁড়ালাম রুমে এসে কি ডেন্জারাস ব্যাপার।
আদ্র রুমে এসেই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি বিছানায় শুয়ে থাকা আদ্রর দিকে।
“একি আপনি শুয়ে পরলেন কেন?”
চরম অবাক হয়ে বললাম,,

“দেখ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ওকে। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তোমার জন্য সারারাত ঘুমাতে পারি নাই। এখন
ঘুমাবো আর তোমার শর্ত হলো আমার জন্য খাবার তৈরি করা ঘুম থেকে উঠে আমি ব্রেকফাস্ট করবো।
তৈরি থাকে যেন।খুব নাইট।”
কিছু বলতে গেলে বাবার রুমে যাবে বলে হুমকি দেয়।আমি ভয়ে চুপ করে যায়।
আদ্র চোখ বন্ধ করে আছে আর আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এখানে দাঁড়িয়ে
থেকে কি হবে আর একে কিছু বললে আবার বাবার কাছে যাবে থাক ঘুমাক আমি বেরিয়ে এলাম রুমে
থেকে।

.

বাইরে এসে ভাবতে লাগলাম কি খেতে দেওয়া যায়‌ বলেছে যেহেতু না খেয়ে যাবেনা।ভাত তো শেষ
রানীকে নিয়ে খেয়েছি। এই যন্ত্রনার থেকে কিভাবে যে রক্ষা পাবো আল্লাহ জানে।এতো দিন ফোনে
সীমা বদ্ধ ছিল আজ বাসায় চলে এসেছে। আবার খাবার ও চাইছি ।রাগে দুঃখে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে
ইচ্ছে করছে। এখন আবার রাঁধতে হবে লাকসাহেবের জন্য অসহ্য।
ভাজি ও নাই।আবার রান্না করতে হবে নয়টা বাজে রান্না বসাতে হবে আবার রান্না ঘরে ঢুকলাম।কি
রাধবো কপি ছাড়া তো কিছুই নাই। আর দুইটা আলো আছে। তার উপর তেল ও নাই। কপি ভাঁজতে
পারতাম কিন্তু তেল ছাড়া কিভাবে ভাজবো।

এইগুলো কি ওনার মুখে রুশবে না রুশলে নাই‌। আমার কি আমি কি ওনাকে দাওয়াত করেছি নাকি।করিনি তো যা আছে তাই দেবো। কিন্তু তেল আনতে হবে পঞ্চাশ টাকা আছে এখানে থেকে
ওষুধ ত্রিশটাকায় এনে আর টাকায় তেল নিয়ে আসি।
বাসা থেকে বেরিয়ে বিশটাকার তেল নিয়ে এলাম।
ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে এসে দেখি আদ্র জেগে গেছে আমাকে দেখেই সামনে এসে দাঁড়ালো,,
ভ্রু কুঁচকে,,,”কোথায় গিয়েছিলে?”

“সেটা না জানলেও চলবে আপনার খাবার দরকার সেটা পেলেই হলো কোথায় গিয়েছিলাম জেনে কি
করবেন। আর আপনি না ঘুমালেন এতো তারাতাড়ি ঘুম শেষ।”
“না তুমি আবার রান্না করছো কিনা দেখতে জেগে গেলাম। তোমার তো কথার দাম নাই ।”
“আমার কথার দাও আছে ওকে।”
“তাই তাহলে কথা দিয়ে ও রাখলে না কেন?”
কিছু বললাম না আদ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম রান্না ঘরে।
আদ্র পেছনে এসে আবারো জিজ্ঞেস করল,,” বললে না।”
“আপনার খাবারের ব্যবস্থা করার জিনিস আনতে।”

.

বলেই তেলের বোতল দেখালো।আদ্র আর কিছু বলল না।সরে দরজার কাছে চলে এলো।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আমার রান্না দেখতে লাগলো,,
হঠাৎ পেছন তাকিয়ে দেখি আদ্র এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে
থাকতে দেখে অসস্থি লাগছে আমার।
“আপনি এখন ও দাঁড়িয়ে আছেন কেন? রুমে যান রান্না শেষ হলে থাকবো নি।”
“নো আমি এখানেই থাকবো। তোমার সাথে।”
আদ্রর এমন কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম,,
“কি বললেন?”
আদ্র কি বলছে বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে যায়।
“কিছু না।”
“কিন্তু আমি তো স্পস্ট…

“কথা বাদ দিয়ে রান্না শেষ করো আমার খিদে পেয়েছে। আর আমি এখানে থেকেই তোমার রান্না করা
দেখবো । তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না হতে পারে রেগে খাবার বাজে করে রান্না করলে আমাকে কষ্ট
দিতে।”
কটমট চোখে তাকালাম আদ্রর দিকে আদ্রর সেদিকে খেয়াল নেই সেতো তার প্রিয়সীকে দেখতে ব্যস্ত।
রেগে মনে মনে হাজার টা গালি দিলাম তারপর কাছে মন দিলাম। আদ্র দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে স্নেহার
কাজ দেখছে মুগ্ধ হয়ে।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই আমি খাবার নিয়ে এলাম।আলু ভর্তা, ফুল কপি ভাজি করেছি।
আদ্রর সামনে দিতেই একবার আমার দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো। খাবার খাচ্ছে আর একটু পর পর
আমার দিকে তাকাচ্ছে। খাচ্ছে কিন্তু তার থেকে বেশি পানি খাচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে তার খাওয়া
দেখছি।আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ খেয়াল হলো আদ্রর চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে গেছে।
“আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে আপনি ঠিক আছেন তো‌।”
কথা বলল না আবার পানি চাইলো হাত বাড়িয়ে গ্লাস বাড়িয়ে দিলো জগ থেকে পানি গ্লাসে রাখলাম।
পানি খেয়ে নিলো।

অচেনা শহর পর্ব ৩১

আদ্র আবার খেতে লাগলো আচ্ছা আদ্র জ্বাল খেতে পারে তো আমিও খুব একটা জ্বাল খেতে পারি না।
কিন্তু আজকে রান্না সময় আদ্রর ওইভাবে নজর রাখাতে মরিচের গুঁড়া বেশিই পরে গেছিলো।
কিন্তু অতটা ও টাও না আদ্র জ্বাল খেতে পারে হয়তো তাই আর চিন্তা করিনি। কিন্তু এখন তো
দেখছি ইনি আমার সোমান জ্বাল ও খেতে পারে না।
“আপনার কি জ্বাল লাগছে বেশি।”
“মিষ্টি কিছু হবে প্লিজ আমি জ্বাল খেতে পারিনা।”
যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো।

” আগে বলবেন না আর এতো জ্বাল লেগেছে তাও কেন খেলেন বাসায় তো মিষ্টি জাতীয় কিছু ই নাই‌। এখন কি হবে।”
রুনা আপুর থেকে নিয়ে আসি ভেবেই ছুট লাগালাম। তারাতাড়ি আপুর বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপলাম।
রানী দরজা খুলে দিল।
ওর কাছে চাইলাম তারাতাড়ি করে এনে দিতে বললাম।

আমাকে এমন অস্থির দেখে আপু জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। কিছু না বলে চিনি নিয়ে
তারাতাড়ি চলে এলাম।আদ্রর অবস্থা কাহিল।
পানি খাচ্ছে আর পাইচারি করছে।
দৌড়ে গিয়ে চিনি তার হাতে দিলাম। আদ্রকে সহ্য করতে না পারলে ও এই অবস্থা
দেখে সত্যি খারাপ লাগছে।

অচেনা শহর পর্ব ৩৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.