অচেনা শহর পর্ব ৩৩
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
চিনি পানি খেয়ে ঝাল কিছুটা কমাতে পেরেছে। চোখ মুখ এখন ও লাল হয়ে আছে। এমন ঝাল হয়েছে
তাহলে খাওয়ার কি ছিলো কিন্তু আমি মনে মনে এখন একটা জিনিসই ভাবছি আর আনন্দ পাচ্ছি।
আমাকে জ্বালানির শাস্তি এটা হু এতোক্ষণ খারাপ লাগাটা নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। আদ্রর ঝাল দেখে
এখন আমার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।
বাসায় এসে কি জ্বলানিই না জ্বালালো এ জন্য ই এমন হলো।
“এভাবে হাসলো কেন? আমার কষ্ট দেখে কি তোমার আনন্দ হচ্ছে।”
আদ্র বিষ্ময় চোখ তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
আদ্রর প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় আমি ভেবে ভেবে হেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।ভয় না পেয়ে সাহস
সঞ্চয় করে বললাম,,
” তা তো ভাবই আমাকে জ্বালানোর শাস্তি পাচ্ছেন যে। আনন্দ হবে না আবার”
আমার কথা শুনে আদ্র চোখ মুখ কঠিন করে তাকালো।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছি।
ভ্রু কুঁচকে সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল,,,
“এই তুমি আবার আমাকে ইচ্ছে করে এমন জ্বাল খাবার দাও নি তো? আমার তোমাকে সন্দেহ হচ্ছে
সত্যি করে বলো।”
“সত্যি আপনাকে আমার একটা শিক্ষা দিতে ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু এই বিষয়টা মাথায় ছিলো না থাকলে
আর ও বেশি ঝ্বাল দিতাম কিন্তু ফাটা কপাল আমার আমি এইসব ভাবিই নাই একাই এমন ঝাল হয়েছে।
আর আমার কাজ করে দিয়েছে।”
আদ্র রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
” কি বললে তুমি ইচ্ছে করে এমন করতে?”
“হ্যা করতাম এখানে এসে এমন হেনওস্তা করার জন্য।ভয় দেখানোর জন্য আর আমার তো আপনাকে
আর…
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
আদ্রকে বিছানায় ছেড়ে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে চমকে গেলাম সাথে আমার কথাও
অফ হয়ে গেল। কঠিন মুখ করে আসছে যেন চোখ দিয়েই ভষ্স করে দেবে। আমি ভয়ে আমতা
আমতা করে বললাম,,
“আ–পনি আমার দিকে এভাবে আসছেন কেন?”
এগিয়ে আসতে আসতে,,,”কি বললে তুমি কি করতে আমার সাথে?”
আমি হাত বাড়িয়ে বললাম,, “থামুন আর এগুবেন না। আমি কিছু বলি নি।”
“তাই কিছু বলো নি।”
“না মানে সরি।”
আদ্র কিছু বলল না আমি পিছন ফিরে দেখলাম দেয়ালে লেগে গেছি। আদ্র আমার গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে
পরল এটা দেখে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।
“কি করছেন সরুন আমাকে টাচ করতে মানা করছিলাম।”
এটা শুনে আদ্র রেগে গেলে কিন্তু আমাকে কিছু বলল না একটু পিছিয়ে গেল এখন আর আমার শরীরের
সাথে তার টাচ লাগছেনা। আমি ভাবছি চলে যাবে হয়তো কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে আরো
দুইপা এগিয়ে এসে দেয়ালের দুপাশে হাত রেখে আমার সাথে লেপ্টে দাঁড়ালো।
বিষ্ময়ে আমার মুখটা হা হয়ে গেল।
কি ভাবলাম আর কি হলো এতোক্ষণ একটু লেগেছিলো এখন একটু না একদম গা ঘেঁষে
দাঁড়িয়েছে।অবাক হয়ে আদ্রর রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
আদ্রর দৃষ্টি গভীর আমি তাকিয়ে ই একটা ঢোক গিললাম।
ইশ কেন যে ওই কথা গুলো বলতে গেলাম। আমার হাত কাঁপছে অদ্ভুত ভাবে।
কাঁপা গলায় বলতে গেলাম। সাথে হাত বাড়িয়ে আদ্র কে নিজের থেকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিতে
চাইলাম।
“ক–কি
.
কিন্তু পারলাম না।আদ্র একহাত দিয়ে আমার হাত ধরে নিয়েছে।সাথে আমার কথা বন্ধ হয়ে গেছে।
স্তব্ধ হয়ে হয়ে গেলাম সাথে ছুটাছুটি করতে লাগলাম,,
আদ্র ছারছে তো নাই উলটো রেগে শক্ত করে ধরে আছে এখন আমি ছুটাছুটি ও করতে পারছিনা।
প্রচন্ড রেগে বললাম,,,”কি করছেন কি আপনি ছারুন।”
আমার কথার উত্তর দিলো না । ওইভাবেই মাথাটা নিচু করে বললো,,
“আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি আনন্দ পাও।”
নিচু কন্ঠে বলল আদ্র অদ্ভুত ব্যাপার কথাটা শুনে আমার মনে হচ্ছে না আদ্র রেগে আছে।
কিন্তু আদ্রর নিচু হওয়াতে আমার যে চরম অসস্থি হচ্ছে। কারণ এখন আদ্রর মুখ আমার মুখমুখি ওর
নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে বারি খাচ্ছে।
হার্টবিট বেড়ে গেছে এভাবে থাকা যায়।আদ্রকে ঠেলেও সরাতে পারছিনা।ও কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে আমি সেই দিকে তাকাতে পারছি না।অজানা ভয়ে হাত-পা কেঁপে উঠছে।
কোন কথাও যেন মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না অনেক কষ্টে কিছু বলতে নেব ওমনি থেমে গেলাম।আদ্র হাত
উঠিয়ে আমার গালে রেখেছে আদ্রর ছোঁয়া পেয়ে থমকে গেলাম।
বোকা চোখে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।আদ্র কি করতে চাইছে ওনি
কি খারাপ কিছু করবে।
কিভাবে থামাবো ভেবেই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখি আদ্রর ধরা হাত আলগা হয়ে আসছে।
আদ্রর মুখ আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম তারপর নিজের
সমস্ত শক্তি দিয়ে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেললাম।
কিছু টা সরে গেল আদ্রর আমি সুযোগ পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দরজা আটকে ফেললাম।
বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিচে বসে পরলাম। হার্টবিট এখনো জোরে জোরে লাফাচ্ছে।
রাগে দুঃখে কাঁদতে লাগলাম এই ছিলো মনে। ছিঃ এজন্য এখানে এসেছিলো।
.
এদিকে আদ্রর স্নেহার কাছে গিয়ে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিল তাই কি করতে যাচ্ছিলো বুঝতে
পারেনি।স্নেহার ধাক্কায় ওর হুস আসে।
তাঁরা তারি করে বারান্দায় দরজার সামনে এসে ধাক্কা দিলো।
এদিকে
চোখ বন্ধ করে আদ্রকে নিয়ে তীব্র ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে।
এতো দিন আদ্র বিরক্ত করলে রাগ হতো খারাপ লাগতো না আর আজ কষ্ট পাচ্ছি। একটু হলেও আদ্রকে
ভালো ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম উনি আমাকে জালালেও কখনো এমন কিছু করবে না কিন্তু আজ।
আদ্রর বাক কানে ভেসে এলো। দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর ডেকে যাচ্ছে।
“স্নেহা ওপেন দ্যা ডোর, আই অ্যাম সরি প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।”
আমি নিরব হয়ে আছি।আদ্রর আবার বলল,,
“স্নেহা আই এ্যাম এক্সট্রিমলি সরি আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি। বিলিভ মি। নিজেকে কন্ট্রোল
করতে পারিনি দরজা খোল না।”
আদ্রর কোন কথা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবুও বললাম,,,
“আপনি চলে যান।”
“প্লিজ দরজা খোল।”
“আপনি না গেলে আমি দরজা খুলবোনা। আপনি এমন টা কি করে করতে পারলেন ছিঃ।”
“আচ্ছা নিজের ক্ষতি করোনা প্লীজ আমি চলে যাচ্ছি।”
“আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।আর আমি নিজের ক্ষতি ভুলেও করবো তাই এসব না বাবাই
ভালো।”
“আচ্ছা টেক কেয়ার।”
“আপনি খুব খারাপ।”
.
“শুধু তোমার জন্য। আর তুমি শুধু আমার এটা মাথায় রেখো।”
আদ্রর কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। ‘তুমি শুধু আমার’ কথাটা কানে বাজছে।
বাইকের আওয়াজে বারান্দায় থেকে মাথাটা উঠিয়ে দেখালাম আদ্র চলে যাচ্ছে।
কিন্তু আমি বিস্মিত হয়ে বসে আছি।এটা আদ্র কি বলে গেল। এইটা কেন বলল,,
আচ্ছা আমি কি ঠিক শুনছি নাকি ভুল।
এমন কথা আদ্র কেন বা বলবে।আদ্রকি আমাকে ভালোবাসে,,
ছিঃ কি ভাবছি। আদ্র আমাকে কেন ভালোবাসবে তাহলে আমি ভুল শুনছি।
উঠে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।
ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। বারবার আদ্রর শেষের কথাটা মনে পরছে।
ভুল নাকি সত্যি এই দুটানায় পরলাম।সাথে আদ্রকে নিয়ে তীব্র ঘৃণার জন্ম হচ্ছে।এই ছিল তার
মনে সব ছেলেরা ই এক সবাই।
বাবার রুমে আসতেই চমকে গেলাম বাবার চোখে পানি বাবা কি কিছু বুঝতে পেরেছে।
আমাকে দেখে বাবা তাকিয়ে রইল। অদ্ভুত বাবাকে খুশি দেখাচ্ছে কিন্তু তাহলে চোখে পানি কেন?
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি বাবার দিকে।
পাশে গিয়ে বসলাম বাবা কিছু বলার চেষ্টা করলো পারলো না। আমি ও কিছু বুঝলাম না বাবার কষ্ট হচ্ছে বুঝে কথা বলতে মানা করলাম।
অচেনা শহর পর্ব ৩২
পরপর দুইদিন ভার্সিটিতে গেলাম না।আদ্রর মুখোমুখি হতে চাইনা আমি।আর একদিন পর এক্সাম।তাই
ফিস দিতে ভার্সিটিতে গেলাম।
আর সামনে পরলো আদ্র।এতো চারপাশে তাকিয়ে আসলাম তবুও কোথা থেকে চলে এসেছে আল্লাহ
জানে।
সামনে এসে দাড়ালো আমি সাইটে সরে চলে যেতে চাইলে আমার হাত ধরে আটকে ফেললো। রেগে
একবার হাতের দিকে তো একবার আদ্রর দিকে তাকালাম কিন্তু তার সেদিন খেয়াল নেই।
রেগে বললাম,,,”আপনি আবার অসভ্যতামি করছেন আমার সাথে।”
“আমার ফোন রিসিভ করছো না কেন আর দুইদিন আসো নি কেন?”
আমার কথার উত্তর তো দিলোই না উল্টো এসব বলছে।এতো কিছুর পর ও ফোন রিসিভ করতে বলছে।
তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি। আদ্রর দৃষ্টি অশান্ত কেমন উষ্কখুষ্ক লাগছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে যেন
কতো রাত ঘুম হয়না।চুল গুলো এলোমেলো কিন্তু আগে কখনো এমন অগোছালো দেখিনি। আমি ভ্রু
কুঁচকে তাকিয়ে আছি।
“ওইদিন ওমন বিহেভের পর ও ভাবছেন আমি আপনি সাথে কথা বলবো বা ফোন রিসিভ করবো।”