অচেনা শহর পর্ব ৩৪
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
কথার প্রেক্ষিতে আদ্র কিছু বলল না।
গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি বুঝতে পারছিনা আদ্র কি করবে হঠাৎ আদ্র আমার হাত ছেড়ে দিলো। তারপর সোজা অন্যদিকে
ফিরে চলে গেল। আমি ভ্রু কুঁচকে আদ্রর যাওয়া দেখছি।
আদ্র আর পেছনে ফিরে তাকালো না কিন্তু আমি তাকিয়ে রইলাম। বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্র কিছু
বলল না এটা ভালো লাগছে না। আদ্রর দিক থেকে চোখ সরিয়ে অফিস রুমে গেলাম। মুখটা মলিন
করে।
অন্তরা আগেই ফিস দিয়েছে এজন্য ও আজ আসবে না। আমার জন্য আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি ই
না করেছি কাল এক্সাম আজ পড়া উচিত।
অফিস রুমের কাজ শেষ করে বেরিয়ে এলাম। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। কিন্তু মাঠে নাই
সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে চারপাশে তাকালাম মাঠে এসে আদ্রর থাকার জায়গায় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম
কেউ নাই।
সব সময় তো এখানেই থাকে আজ নাই কেন? না চাইতেই ভাবনায় এলো তারপর নিজের কাজে
অবাক হয়ে দৃষ্টি সামনে রাখি। আমি আদ্রকে খুঁজছি কেন আর সে যেখানে খুশি সেখানে থাকুক
আমার কি।
আর কোন দিক না তাকিয়ে সোজা গেটের বাইরে চলে আসি। অটো করে যাব না হেঁটে যাব। তাই আর
না দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলাম হঠাৎ আদ্রর বাইক থামলো সামনে এসে আচমকা বাইক সামনে আসাতে ভয়ে
দু পা পিছিয়ে যায় আমি।
বিষ্ময় চোখে আদ্রর দিকে তাকালাম,,
“উঠো!”
উঠো শুনেই চমকে উঠলাম। আদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে উঠতে বলছে। তার শান্ত চাহনী আমি বিস্মিত হয়ে
তাকিয়ে আছি। কিছু বলবৈ তার আগেই আদ্রর মুখের শান্ত চাহনি কঠিন হয়ে উঠলো এবার চিৎকার
করে উঠল,,,
“উঠতে বলছিইই।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
আদ্রর চিৎকার কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম।
আর কিছু না ভেবে সুরসুর করে বাইকে উঠে বসলাম।
উঠে বসতেই বাইক চলতে লাগলো একটুর জন্য পরে যাই নাই।উঠে হ্যান্ডেল ধরার আগেই চ
লতে শুরু করেছে তাই তারাতাড়ি করে আদ্রর শার্ট খামচে ধরে পরার হাত থেকে বেঁচে ছি।
আদ্র বাইক স্পিডে চালিয়েছে এজন্য পুরো রাস্তা আতংকে আস্তে হয়েছে বাইক থামতে বড় একটা
নিঃশ্বাস ফেললাম।
“নামো।”
বসা থেকেই ভ্রু কুঁচালাম একবার উঠো একবার নামো কি শুরু করেছে এই লোকটা। না নেমে চিন্তা
করছি আদ্র আবার বলে উঠলো,,,
“কি হলো নামছো না কেন? উঠতে বললে উঠানো যায় না আবার নামতে বললে নামো না তুমি চাও টা
কি বলতো সব সময় আমার কথার উল্টা করতে।”
রাগে গজগজ করতে করতে নেমে দাঁড়ালাম।এটা তো রেস্টুরেন্ট এখানে কেন এনেছে।বিষ্ময় হয়ে
আদ্রর দিকে তাকালাম,,,
“এখানে কেন এনেছেন?”
আদ্র নেমে দাঁড়ালো তারপর বাইক পার্ক করলো। আমি যে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম তা কানেও
নিলো না।
যে কিছু শুনতেই পারেনি। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আদ্রর কান্ড কারখানা দেখছি।
এগিয়ে আসতে দেখে বললাম,,,
” কি হলো বলছেন না কেন? এখানে নিয়ে এসেছেন কেন।”
কোন কথা না বলে আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো,,
“আরে টানছেন কেন? দেখুন কাল আমার পরিক্ষা আমার বাসায় যেতে হবে আপনি আমাকে
রেস্টুরেন্টে এনেছেন কেন?”
.
সোজা রেস্টুরেন্টের ভেতরে এসে বসে আমাকে ও জোর করে বসিয়ে দিলো তারপর চোখে
চোখ রেখে বলল,,
“রেস্টুরেন্টে মানুষ কেন আসে?”
অবাক হয়ে বললাম,,,”মানে।”
“আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”
“হাত ছারুন। আর দূরত্ব বজায় রাখুন।”
আদ্রর আমার হাত ধরে ছিলো আমার কথা শুনে ছারলো। কিন্তু সরলো না।
“কালকের জন্য অনেক বার সরি বলেছি কিন্তু এজন্য তোমার কথা মেনে চলবো ভেবো না। আমার
যেটা ইচ্ছে সেটাই করবো। আর এখন খাবার খাবো দুদিন ধরে খাইনা ঠিক মতো প্রচন্ড খিদে পেয়েছে
আমার।”
বলেই ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার করলো। আমি হাঁ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। বিষ্ময়ে
মুখটা হা হয়ে আছে।
“তো আপনার খিদে লেগেছে খেয়ে নিন আমাকে নিয়ে এসেছেন কেন?”
“কারণ তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে তাই।”
‘কিহহহ।”
“ইয়েস তোমার জন্য আমার হাতের এই অবস্থা এজন্য খেতে পারছি না। এখন তুমি আমাকে খাইয়ে
দিবে।”
বলেই হাত উঁচু করে দেখালো দেখেই চমকালাম আদ্রর ডান হাত ব্যান্ডেজ করা।
বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। এতোক্ষণ একসাথে ছিলাম তবুও খেয়াল করিনি।আর আদ্র আমার হাত
ওর বাম হাত দিয়ে ধরে ছিলো তাই আরো খেয়াল করিনি।
হালকা উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,”আপনার হাতে ব্যান্ডেজ কেন কি হয়েছে হাতে?”
“জেনে কি করবে আমি কষ্ট পেলে তো তুমি আনন্দ পাও। এখন ও আনন্দ উপভোগ করো।”
আদ্রর কথা চরম অবাক হলাম।
.
পিটপিট করে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।আদ্র আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। আর কোন কথা বললাম না চুপ করে রইলাম একটু পর খাবার চলে এলো।
“খাইয়ে দাও।”
“আমি পা…
“দেখ না করে লাভ নেই তোমাকে খাইয়ে দিতেই হবে তাই ঝামেলা না করে শুরু করো। ”
“দেখুন আমাকে এভাবে হেরাজ না করলে হয় না আপনার তাইনা। আমার জন্য আপনার এই অবস্থা
আমি কখন আপনার এই অবস্থা করলাম।”
“তারাতাড়ি করো কাল না তোমার এক্সাম। ”
“আমি পারবো না।”
“খাইয়ে তো তোমাকে দিতেই হবে অযথা টাইম নষ্ট করছো এতে ই তোমার ই ক্ষতি কারন
তুমি মত র
লেট করবে তোমার বাসায় যেতে ততই দেরী হবে।”
কিছু ক্ষন চুপ করে রইলাম।
“দেখো রেস্টুরেন্টে অনেক মানুষ সবার সামনে আমাকে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে
বাধ্য করোনা।”
বাধ্য হয়ে খাইয়ে দিতে লাগলাম লজ্জায় আসে পাশে তাকাতে পারছি না। আসে পাশের করো অবশ্য
আমাদের দিকে নজর নেই যে যার মতো আছে। তবুও সবার মাঝে আদ্রকে খাইয়ে দিচ্ছে গায়ে কাঁটা
দিয়ে উঠছে।
আদ্রর দিকে ও তাকাতে পারছিনা।ও কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন চোখের পলক
পরছেনা।
চরম অসস্থি নিয়ে খাওয়াচ্ছি।
নিজে খেয়ে এবার আমাকে খেতে বাধ্য করলো আর খেতে হলো কিছু খাবার প্যাকেট ও করে নিয়ে
এলো।জানি না কি জন্য ইশারাতে আবার বাইকে উঠতে বলল উঠলাম।
বাসায় সামনে এনে থামতেই নেমে চলে যেতে লাগলাম পেছনে থেকে আবার ডেকে উঠলো,,,
“কি সমস্যা আবার ডাকছেন কেন?”
.
আদ্র বাইক থেকে নেমে খাবারের প্যাকেটটা আমার হাতে দিলো আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।
“তোমার জন্য না আন্কেলের জন্য।”
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে আমার
তাকিয়ে থাকার মাঝেই আদ্রর বাইক চলে গেল।
কি আর করবো না চাইতেও খাবার রুমে নিয়ে এলাম আদ্রকে যে ফিরিয়ে দেবো তার সুযোগই পাইলাম
না।
পরদিন যথারীতি আমাদের পরিক্ষা শুরু হলো এক্সাম বিকেলে এজন্য সকালে টিউশনি করাই।
এখন আর আদ্রর ডিস্টার্ব সহ্য করতে হয়না ওকে দেখি না বন্ধ মনে হয়।
নিশ্চিন্তে পরিক্ষা দেয় কিন্তু তবুও চারপাশে আদ্রকে খুঁজি।
কিন্তু অন্য একটা ছেলে জ্বালিয়ে খায় নতুন আগে কখনো দেখিনি তাকে। ছেলেটাকে খুব বখাটে লাগে
আমাদের বাসায় কিছু টা আগে তিন চার জন চায়ের দোকানে বসে থাকে । এক্সাম দিয়ে সন্ধ্যায় দিকে
বাসায় যায় তাই তার নজরে পরেছি প্রথম কয়েকদিন দূরে থেকেই আজেবাজে কথা বলেছে। কিন্তু
আজকে একদম সামনে এসে প্রপোজ করে বসেছে তার নাম্বার বলে বলে মাথা খারাপ করে দিয়েছে
কোন ভাবে পালিয়ে বেঁচেছি ছেলে গুলো কে একদম সুবিধার লাগেনা।
অচেনা শহর পর্ব ৩৩
আজকেও ভয়ে ভয়ে আসছি টাকা থাকলে কখনো এই রাস্তায় হাটতাম না। কাছাকাছি আসতেই হাঁটার
গতী বারিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারলাম না।সেই সামনে এসে দাঁড়ালো।সেই ছেলেটা।
“ও সুন্দরী আমাদের সাথে কথা না বলেই চলে যাচ্ছিলে নাকি। তা তোমার নাম্বারটা তো দিলে না।”
“দেখুন আমার পথ ছারুন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।”
“তুমি তো সন্ধ্যাই আসো এসেই যাই যাই করো কেন আসো একটু প্রেম করি তোমাকে আমার এক
দেখাই ই সেই লেগেছে।”
তিনজন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
ওই ছেলেটা আমার হাত থেকে টান মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো।
“কি করছেন ফোন নিচ্ছেন কেন?”
ছেলেটা ফোন চাপতে লাগলো আমি চাচ্ছি কিন্তু দিচ্ছে না।এদিকে আযান ও পরে গেছে। হঠাৎ ছেলেটা
আমার হাত ধরলো আমি চমকে গেলাম।
“কি করছেন হাত ছারুন?”
ছেলেটা হাত ছেড়ে দিলো তারপর ফোন দিয়ে দিলো আমি কাঁপতে কাঁপতে দৌড়ে সেখানে থেকে চলে
এলাম চোখে দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
বাসায় সামনে এসে থামলাম বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
কান্না এসে ঠেকছে গলায়।মুখে হাত দিয়ে কাঁদছি এমনটা হবে ভাবিনি। দারোয়ান কাকা এগিয়ে জিগ্যেস
করল কি হয়েছে আমি কিছু না বলে দৌড়ে ভেতরে চলে এলাম।