অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৩৫ || nill cafer diary

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৩৫
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

রুমে এসে মুখে সেপে ধরে কাঁদছি বাবার কানে যেন না যায় শব্দ তাই তারাতাড়ি করে বাথরুমে ঢুকে
দরজা আটকে দিলাম। পাঁচ মিনিট ওইভাবে থেকে বেরিয়ে আসতেই ফোন বেজে উঠল,,,
ভয়ে ফোন হাতে নিচ্ছি না আচ্ছা এটা ওই ছেলেটা না তো না বাবা ফোন আমি কিছুতেই রিসিভ করবো
না। আর কালকে কিভাবে যাব টাকাও তো নাই। আর ও তিনটা পরিক্ষা আছে কি করবো। আজকে
ছেলেটা বাড়াবাড়ি করছে। খুব কাল না জানি কি করে কিন্তু ফোন বেজে ই যাচ্ছে থামছে না।
বাধ্য হয়ে কাছে গেলাম ফোন অফ করতে আর ফট করে ফোন অফ করে দিলাম।

আর পাঁচ মিনিটের মতো নিজেকে স্বাভাবিক করে নামাজ পরলাম তাঁর পর বাবার কাছে গেলাম। চোখ
বন্ধ তার মানে ঘুমিয়ে আছে। বাবার পাশে বসতেই কলিং বেল বেজে উঠলো,
এখন আবার কে এলো।হাত পা কাঁপছে ভয় হচ্ছে ওই ছেলেগুলো নয়তো।
তবুও সাহস সঞ্চয় করে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম হাত কাঁপছে খুলতে পারছি না ভয় হচ্ছে ওরা
থাকলে কি হবে।
হঠাৎ একটা কন্ঠ শুনে আমার ভয়ে হাওয়া হয়ে গেল এটা আর কারো আওয়াজ না রুনা আপুর
আওয়াজ তারমানে আপু বাইরে।

ওফফ আমি একটু বেশিই ভয় পেয়েছি। তারাতাড়ি দরজা খুলে দিলাম। আপু একা না সাথে ভাইয়া রানী
রায়া সবাই আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া সাধারণত এই সময় বাসায় থাকে না।আজ হঠাৎ আবার এখানে এসেছে।একটা জিনিস খেয়াল
করছি ভাইয়ার মুখে হাসি খুব খুশি লাগছে দেখতে তাকে আপু ও দরজা খুলতেই আমাকে আষ্টেপৃষ্টে
জড়িয়ে ধরলো আপু আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ভাইয়ার দিকে।আপু আমাকে ছেড়ে দিয়ে
বলল,,,
“কিরে এতো লেট করলি কেন দরজা খুলতে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

আমি বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আপুর দিকে হঠাৎ এমন করে জড়িয়ে ধরলো কেন?
“কিরে এমন থমকে আছিস কেন?”
“তুমি না তোমরা এই সময়ে এখানে?”
“এখানে দাঁড়িয়ে রাখবি নাকি ভেতরে আসতে দিবি।”
আপু একা আসলে চমকাতাম না আবার জরিয়ে না ধরলেও সন্দেহ হতো না আমি আসল ব্যাপারটা
বুঝতে চাইছি কিন্তু এভাবে না।তাই সরে দাঁড়ালাম সবাই ভেতরে গিয়ে বসলাম আমার রুমে আমি
দরজা আটকে আসলাম।

রুমে আসতেই আপু আমাকে তার বলল,, তা শুনে চরম অবাক হলাম এতো কিছু হয়ে গেল আমি
কিছুই জানতে পারলাম না।আর জানবো কি করে পরিক্ষার জন্য আপুর সাথে আড্ডা দেওয়া হয়না । রায়া আর রানী একটু আধটু আসে আবার চলে যায় তাই হয়তো জানতে পারিনি। কিন্তু কথাগুলো শুনে
আমার খুব ভালো লাগছে। কিন্তু আরেকটা কথা শুনে ও খারাপ লাগছে।ভাইয়ার চাকরি নাই এখন। সে
তার জব ছেড়ে দিয়েছে। তারা তাদের গ্রামে ফিরে যাবে। তার মানে এখানে আর থাকবে না। অজান্তে ই
চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো আপুকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।

এখানে আমার একাকিত্বের সঙ্গী ছিলো কতো সহযোগিতা ও করেছে। খুব আপন হয়ে উঠছে নিজের
আপন বোনের মত ভালোবেসে ছে। দুইদিন পর চলে যাবে‌।
ওই ঐশী মেয়েটার সাথে আপু দেখা করেছিলো কাল আর কালকেই ঝগড়া করে এসেছে। পরদিন
ভাইয়া রিজাইন লেটার দিয়েছে মানে আজকে। ভাইয়া যেসব নিয়ে ভয় পাচ্ছিল সেটা হয় নাই আপু
ভাইয়াকেই বিশ্বাস করেছে। আর সেই বলেছে চাকরি ছেড়ে দিতে আমি জানতাম আপু সঠিক সিদ্ধান্ত
নিবে আর তাই হলো। আগেই আপুকে জানালে সমস্যা আগেই সমাধান হতো কিন্তু দেরীতে হলেও সব
যে ঠিক হয়েছে তাই ভালো।

.

“আপু তোমাকে অনেক মিস করবো কোন ভাবে কি এখানে থাকা যায় না।”
“না রে কিভাবে থাকবো তোর ভাইয়ের চাকরি নাই এখানে থেকে কি হবে বারতি টাকা
খরচ আর নতুন চাকরি ও পাওয়া যাবে না এতো সহজে তো চাকরি হয় না।”
“হুম।”
“কষ্ট পাস না আমি ও তোকে মিস করবো নিজের বোন ভেবেছি তোকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে। কিন্তু
যেতে হবেই আর তুই মাস আমাদের বাসায় আমিও সময় পেলেই তোর সাথে দেখা করবো।”

অনেক টা সময় একসাথে র‌ইলাম গল্প করলাম। মাঝখানে থেকে রান্না টা করতে পারলাম না অনেক
সময় পার হয়ে গেছে এখন রান্না ও করতে মন চাইছে না।
ক্লান্ত লাগছে খুব তাও রান্না করতে হবে তাই উঠে রান্নাঘরে যেতে নিচ্ছিলাম আবার কলিং বেল বেজে
উঠল,,,
আবার কে এলো দরজা খুলে দেখি আপু। হাতে খাবার বুঝতে আর বাকি রইল না কেন?

আপুর আনা খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
এমন সময় কেউ ঝড়ের গতিতে বারান্দায় দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো আমি তারাতাড়ি উঠে লাইট অন
করে দেখি আদ্র।
ওকে দেখে বিষ্ময়ে আমার মুখটা হা হয়ে গেছে।
এখানে কি ভাবে এলো চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছি।
আদ্রর চোখ লাল রেগে আছে কেন কার উপর রেগে আমার বাহু শক্ত করে ধরলো আর বলল,,
“তোমার ফোন ক‌ই?”
আদ্রর শক্ত মুখ করে কথা বলা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। কথা বলতে গিয়ে ও কথা বলতে পারছি না
যেন কথা গলায় আটকে আছে।
“এন্সার মি।”
আমাকে রেগে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো,,

.

আদ্রর কথার আমার কথা গলায় আটকে আছে। আদ্র ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলছে তারপর আমাকে ছেড়ে
ফোন খুজতে লাগলো আমি হা করে আদ্রর কর্মকান্ড দেখছি।
সব কিছু লন্ডবন্ড করে অবশেষে খুঁজে পেল। তারপর ফোন চাপ দিয়ে বুঝতে পারলো ফোন অফ তা
দেখে রেগে তাকালো আমার দিকে যেন চোখ দিয়েই ভষ্স করবে আমাকে।
আমি সেদিকে তাকিয়ে ঢোক গিললাম,,
“তোমার ফোন অফ কেন?”
এবার তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,, “ইয়ে মানে ,,

“কি হয়ে মানে করছো উওর দাও আমাকে টেনশনে রেখে নিজে শান্তি তে থাকতে চেয়েছিলে। ”
বলে আমার দিকে এগিয়ে এলো। তারপর বলল,,
“ফোন অফ করে রেখেছো কেন কতো বার কল করেছি জানো। আমার কতো টেনশন হচ্ছিল জানো
পাগলের মত ছুটে এসেছি আর রাস্তায় কেদেছো কেন?*
“রাস্তায় কেঁদেছি আপনি জানলেন কিভাবে?”
অবাক হয়ে বললাম,,,
“তোমার সব কিছুই আমি জানি। বলো এসব কেন করেছো?”
“সব কিছু জানেন মানে।”
“উল্টো প্রশ্ন করতে বলি নি।”
“কিন্তু,,

অচেনা শহর পর্ব ৩৪

“স্টেট আপ ইউ ইডিয়েট গার্ল। আর কখনো যদি এমন করেছো তোমাকে আমি খুন করে ফেলবো।
কতোটা টেনশন হচ্ছিলো জানো মনে হচ্ছিল তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি কোন বিপদ হয়েছে
তোমার। তুমি কি কখনো বুঝবে না আমাকে।”
বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে আদ্রর কথার মানে বুঝতে পারছি না।
“আমার জন্য আপনি এতো টেনশন কেন করেছেন কি হয় আমি আপনার।”
“জানো না কি হ ও? জানবে কি করে জানতে চেয়েছো কি কখনো চাও নি। আমি যে তোমাকে এতো
করে চাই এইটা কেন বুঝ না।”
“মা….

আদ্র কিছু বলতে দিলো না মুখ চেপে ধরলো তারপর আচমকা জরিয়ে ধরলো শক্ত করে।
গরম কিছু গালে পরছে হাত দিয়ে দেখি পানি আদ্র কি কাঁদছে।
হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম শক্ত করে আদ্র একটু বাদেই ছেড়ে দিয়ে চলে গেল আর পেছনে ফিরে
তাকালো না।
আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম সেইখানেই‌।

অচেনা শহর পর্ব ৩৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.