অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৩৬ || bristy namar pore

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৩৬
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

চোখ বন্ধ করতেই দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। তারপর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে পানি টুকু
মুছে দৌড়ে বারান্দায় এলো। গেটের বাইরে আদ্রকে আবসা আলো ছায়ার মতো দেখা যাচ্ছে আদ্র
বাইকে উঠছে। এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছি আচমকা আদ্র ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে ফিরলো তারাতাড়ি করে বসে পরলাম।আর একটু হলেই দেখে ফেলতো বুকে হাত দিয়ে নিচে বসে আছি বা
ইকের শব্দ শুনে দাঁড়িয়ে পরলাম।
পরদিন আজকে এক্সাম নাই। কাল একটু ও পরা হয় নাই‌। আজকে পরিক্ষা না থেকেই ভালো হয়েছে।
সকালে টিউশনি করে আসার সময় রাস্তায় ওই ছেলে গুলো কে দেখলাম।
অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে পরলাম।আর এগুনোর সাহস পাচ্ছি না।

এরা তো বিকেলে থাকে তাহলে সকালে কি করছে আগে তো দেখি নি। আচ্ছা কোন ভাবে কি জানতে
পেরেছে এই সময় আমি এখান দিয়ে যায়।
ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে এখন বাসায় যাব কি করে।
“এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ”
আদ্রর কন্ঠ শুনে চমকে পেছনে তাকালাম, আদ্র আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।এক হাত প্যান্টের
পকেটে আরেক হাতে ফোন। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আদ্রকে দেখে একটু
নিশ্চিন্ত হলাম। ভয় মনে হলো কিছু টা চলে গেছে কেন গেল জানি না।
আমার উওর না পেয়ে এগিয়ে এসে আবার জিজ্ঞেস করলো,,
“গাড়িতে না গিয়ে হেঁটে যাচ্ছো কেন?”
আদ্রর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পেছনে তাকালাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

ওই ছেলেগুলো এখনো আছে কিন্তু এতো দূরে আমাকে লক্ষ্য করে নি। আবার আদ্রর দিকে তাকালাম।
“কি হলো কথার অ্যান্স দিচ্ছো না কেন? ”
“আপনি এই সময় এখানে কি করছেন?”
“তোমার এই বাজে স্বভাব টা কখনো যাবে না‌। উল্টো প্রশ্ন না করলে ভালো লাগে না তাইনা।”
আদ্রর কথায় চুপ করে গেলাম। তারপর আদ্রর কিছু বলার আগেই বলে উঠলাম,,,
“একটু আমাকে বাসা অবধি ছেড়ে আসবেন। আপনার বাইকে করে।”
আকুতি ভরা মুখের বললাম আদ্র আমার কথা শুনে চরম বিষ্ময় হলো বিষ্ময়ে তার চোখ দুটো বড় বড়
হয়ে গেল।

এমন কিছু সে কল্পনাও করে নাই। হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আবার বললাম,,
” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? হেল্প করবেন কিনা বলেন নাহলে চলে যাই।”
“স্নেহা আর ইউ ওকে, তুমি নিজে থেকে হেল্প চাইছো? ব্যাপারটা কি বলতো? কোন…
“সব কিছু তেই আপনার এতো মানে খুজতে হবে কেন বলেন তো। সব সময় তো জোর করে বাইকে
উঠান আর আজকে আমি উঠতে চাইছি ভাব দেখাচ্ছেন।”
“ভাব তো দেখাবোই কারণ বাইকটা যে আমার। তাই আমি উঠাতে চাইলে ব্যাপারটা অন্যরকম আর
তুমি উঠতে চাইলে সেটার মানে অন্য রকম।”
“তার মানে হেল্প করবেন না। ওকে আমি যাচ্ছি।”

বলেই পেছনে ঘুরে চলে আসতে নিলাম। কিন্তু পারলাম না আদ্র আমার হাত টেনে ধরেছে। আমি ভ্রু
কুঁচকে তাকালাম,,,
” এতো বেশি বুঝ কেন আমি কখন বললাম নিয়ে যাব না।”
“নিয়ে যাবেন সেটাও তো বলেন নাই।”
“নিয়ে যাব তবে তোমাকে বলতে হবে কাল কান্না করেছিলে কেন?”
আদ্রর কথায় বিষ্ময়ে মুখটা হাঁ হয়ে গেল।আদ্র জানালো কি করে আমি কাল কান্না করেছি।
“আপনি….
“কিভাবে জানলাম সেটা বললেও আমি উওর দেব না। তাই বলে লাভ নাই। কিন্তু তোমাকে উওর দিতেই
হবে।”

.

নিজে বলবে না আবার আমার কাছে উওর চাইছে বলবো না দেখি কি করতে পারে।
আমি বলছি না দেখে আদ্র রেগে উঠলো,,
“কি হলো কথা বলছো না কেন? বলো কাল কি হয়েছিল?”
“কিছু হয়নি।”
“মিথ্যা বলবে না একদম। মিথ্যা কথা আমি পছন্দ করি না।”
“আমি বললাম তো কিছু হয় নাই।”
“ওকে ফাইন না বললে কিন্তু আমি তো জেনেই ছারবো‌।”
“জানতে পারবেন মানে। কিভাবে?
অবাক হয়ে।
“চলো।”

আদ্র আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো তার বাইকের কাছে। আমার কথার উওর দিলো না।
এর পক্ষে অসম্ভব না কিছু আমি জানি।
তবুও বললাম না। চুপ করেই র‌ইলাম আদ্র বাইকে উঠে বসলে আমিও উঠে বসলাম।
চায়ের দোকানের কাছাকাছি আসতেই মুখ ঢেকে নিলাম তাও ভয় করছে আদ্রর পিঠে মুখে ঘষে আড়াল
হলাম।
কিন্তু অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো একদম চায়ের দোকানের সামনে এসেই আদ্র বাইক থামালো আমি চমকে
উঠলাম,,,
“নামো।”

আদ্রর নামো শুনেই আর ও বেশি অবাক হলাম।মুখ বেঁকিয়ে চায়ের দোকানে তাকিয়ে দেখি ওই ছেলে
গুলো কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।
নামলেই ধরা খাব নিশ্চিত কিন্তু আদ্র নামতে কেন বলছে?
এর আবার কি হলো ? শুকনো ঢোক গিলে বললাম,,
“নামবো কেন?
নামতে বলছি নামো।
কিন্তু..

.

আদ্র রেগে আমার দিকে তাকালো ভয়ে সুরসুর করে নেমে গেলাম।নেমে মুখটা ঢেকে নিলাম ভালো
করে।আদ্র আমার এমন মুখ ঢাকা দেখে ভ্রু কুঁচকালো,,,
” এভাবে মুখ ঢাকছো কেন?”
“আমার মন চাইছে তাই। আপনার এই বাইকে আমি আর জীবনেও উঠবো না। এমন ভাবে নামিয়ে না
দিলেও পারতেন এতোই যখন প্রবলেম তখন না উঠালেই তো হতো।”
“চুপ বেয়াদব। সব সময় বাজে বকা তুমি আমার পিঠে মুখ ঘষছিলে কেন?”
আমি আদ্রর কথায় ভ্রু কুঁচকালাম,,,
“এজন্য ই তো তুমি হয়তো ভুলে গেছ আমি একটা ছেলে। আর এভাবে…

“ছিঃ কি সব বলছেন আমি তো শুধু ওদের হাত থেকে লুকানো জন্য একটু মাথাটা আপনার পিঠে
দিয়েছিলাম যাতে ওরা আমার মুখ না‌ দেখে।আর আপনি কি বলছেন এসব ওইসব বাজে স্বভাব আমার
না ওইসব তা আপনি করেন।”
“কি বললে ওদের হাত থেকে লুকানোর জন্য মানে। ওরা কি করেছে?”
বলেই আদ্র আঙ্গুল দিয়ে চায়ের দোকানের ওই অসভ্য ছেলে গুলো কে দেখালো। আমি চমকে উঠলাম
রেগে কি থেকে কি বলেছি আল্লাহ। আদ্র রক্ত লাল চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“ক.–ই কি–ছু ক–করে নি তো…
“স্টপ ইডিয়েট সত্যি করে বলো?”
চিৎকার করে উঠল,,, আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম,
আর সব বলে দিলাম।

আদ্রর অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে তারপর ওদের দিকে একবার তাকিয়ে আমাকে বাইকে
উঠতে বললো।
আমি উঠে বসলাম।
বাসায় সামনে এসে থামায়।
“ফোন যেন অফ না থাকে। আর যদি থাকে তোমার কি অবস্থা করবো ভাবতে পারবে না। আর সাথে
সাথে ফোন রিসিভ করবে লেট যেন না হয়। মাইন্ড ইট।”
নিজের হুমকি দিয়েই চলে গেল। আমি নিরব হয়ে শুনলাম তারপর ভেতরে চলে এলাম।
পরদিন আপুদের চলে যাওয়ার দিন।
টিউশনিতে যাইনাই।

.

সকাল সকাল ই যাবে নিচে গাড়িতে মালপত্র নেওয়া শেষ আমি রায়াকে কোলে নিয়ে আছি।
রানী তো সেকি কান্না কিন্তু ওকে তো রেখে খাওয়ানোর সামর্থ্য আমার কাছে নেই। তাই তাদের সাথে ই
পাঠিয়ে দিলাম।
আপুও আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাদলো তারপর বাবাকে দেখে চলে গেল।
নৃশ্য লাগছে নিজেকে কষ্ট পেয়েছি অনেক আপন পর ও হয়ে আবার অনেক পর আপন যেমন রুনা
আপু।
বিকেলে পরিক্ষা দিতে গেলাম হেঁটে ই ভয়ে ভয়ে। কাছাকাছি আসতেই আবার তাদের মুখোমুখি তারা
আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো আমি ভয়ে পিছিয়ে গেলাম।

একটা বিষয় তিনজন না আজ দুইজন আছে। আরেকটা জিনিস তাদের হাতে কপালে ব্যান্ডেজ করা‌।
“আপু দাড়ান প্লিজ।”
তাদের মুখে আপু ডাক শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। এতো সুন্দর করে কথা বলছে কেন? আমি দাড়াতেই তারা এগিয়ে এলো আমি ভয় পাচ্ছি তবুও নরলামনা।
তারা দুজনেই ফট করে আমার পায়ের কাছে বসে পরলো,,
আমি ঘটনা আর্কষ্মিক হতদম্ব হয়ে গেলাম সাথে সাথে দু’পা পিছিয়ে গেলাম।
“কি করছেন কি?”

“আমাদের ক্ষমা করে দেন। আপনার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। আমরা যদি জানতাম
আপনি আদ্র ভাইয়ার পরিচিত জীবনে আপনার দিকে চোখ তুলেও তাকাতাম না। আপনার পা ধরে
ক্ষমা চাইছি জীবন আপনার সামনে আসবো না আর না ডিস্টার্ব করবো। এইবারের মতো মাপ করে
দিন নাহলে ভাই আমাদের মেরে ফেলবে যদি আপনি ক্ষমা না করেন। জাহিদকে তো আধমরা করে
ফেলেছে ও হসপিটালে ভর্তি আছে।”
“আপনারা উঠে দাঁড়ান।”
“না আগে বলুন মাফ করেছেন।”

অচেনা শহর পর্ব ৩৫

“এতো সহজে আমি আপনাদের মাফ করতে পারবো না আপনাদের জন্য আমি এই কয়দিন কতো
আপসেট থেকেছি জানেন। রাতে ঘুমাতে পারি নাই।সকালে উঠে আবার চিন্তা ভার্সিটিতে কিভাবে যাব এই বুঝি আপনারা সামনে চলে আসবেন নানান ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে থেকেছি।”
দুজনেই উঠে দাঁড়াল,,,” প্লিজ বোন বড় ভাই মনে করে ক্ষমা করুন।”
বড় ভাই শুনেই রেগে উঠলাম,,,” একদম আমার ভাই হতে আসবেন না। না আমার ভাই আছে আর
না কখনো থাকবে।”

“মাপ করেন না নাহলে ভাই আমাদের মেরে ফেলবে।আপনি মাপ না করলে। ”
দুজনে অনুতপ্ত সেটা তাদের আকুতি মিনতি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
“আচ্ছা ঠিক আছে ক্ষমা করবো তার আগে আপনাদের একটা কথা দিতে হবে আমাকে।”
কি?

“আপনারা আর কখনো রাস্তা ঘাটে কোনো মেয়েকে এভাবে ডিস্টার্ব করতে পারবেন না সবাই নিজের
বোন মনে করবেন।কারো দিকে খারাপ নজর দিতে পারবেন না। সব সময় এটা মনে রাখবে আপনি
যেমন একটা মেয়ে এভাবে অসম্মান করেছেন বিরক্ত করছেন এসব ঘটনা যদি আপনার নিজের
বোনের সাথে ঘটে তখন কি করবেন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে বোন। আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছি। এবারের মতো মাপ করেন আর
ভাইকে ব‌ইলেন।”
বলেই ছেলে দুটো চলে গেল।

অচেনা শহর পর্ব ৩৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.