অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৩৭ || valobashar shohor

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৩৭
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

আজকে এক্সামের শেষ দিন।এক্সাম শেষ করে অন্তরার সাথে গল্প করতে করতে গেটের বাইরে এলাম।
ও আমার হাত ধরে টেনে হৃদয়ের কাছে নিয়ে গেল।
ভালোবাসা দিবসে ওরা দুজন বেরাতে যাবে আমাকে ও যেতে বলছে রাজি হচ্ছি না তাই নিয়ে যাচ্ছে
কিন্তু আমি তো কিছুতেই যাব না ওদের মাঝে আমি গিয়ে কি করবো একশ বার এই কথা টা বলেছি
কিন্তু অন্তরা শুনতে নারাজ সে আমাকে নিয়েই যাবে।
“হৃদয় তুমি কিছু বলো স্নেহাকে ও কেন আমাদের সাথে যেতে চাইছে না। ওকে রেখে একা আমি যেতে
পারবো না বাড়ি থেকে ওর কথা বলে বের হবো এখন যদি ওই না থাকে কি হবে ভাবতে পারছো।”
এক ধুমে কথা গুলো বলে থামল অন্তরা।

“তুই বুঝতে পারছিস না তোদের মাঝে আমি গিয়ে কি করবো বল তো‌। তোরা যা আমাকে
কেন টানছিস এইটাই আমার মাথায় আসছে না।”
“আরে চল না ইয়ার হৃদয় কিছু বলো‌।”
এবার হৃদয় বলল,,,” স্নেহা আমাদের সাথে চলো প্লীজ।”
“ভাইয়া আপনিও কি পাগল হলেন নাকি।আপনারা দুজন একা টাইম স্পে করতে না চেয়ে আমাকে
কেন টানছেন বুঝতে পারছি। ওইদিন তো সবাই তার গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে সেখানে আপনারা
আমাকে গলার হাড্ডি করতে চাইছেন কেন?”

“আমরা তো প্রেম করবোই কিন্তু তোমাকে নেওয়া টা খুব বেশি ইম্পর্টেন্ট।”
হৃদয়ের কথায় আমি বিস্মিত হলাম,,,”মানে।”
“এতো মানে করো না বোন চলো না এই শেষ বার আর কখনো বলবো না প্লীজ রাজি হয়ে যাও।”
“কিরে কিছু বলছিস না কেন যাবি না। আর এমন সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছিস কেন?”
আমি হৃদয়ের সামনে কিছু বললাম না অন্তরাকে টেনে একপাশে নিয়ে বললাম,,,
বড় বড় চোখ খ করে বললাম,,,”সত্যি করে বল তো তোদের মতলবটা কি?
আমি কেমন সন্দেহের গন্ধ পাচ্ছি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অন্তরা একটা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,,
” তুই আমাকে বিলিভ করিস না স্নেহা এভাবে সন্দেহ করিস।”
“তোর কথা ঠেকছে কেন?”
অন্তরা মুখ অফ করে ফেললো আমি কিছু বলতে যাব হৃদয় ভাইয়া চলে এলো।
“কি ব্যাপার দুই বান্ধবী এক হয়ে আমাকে একা করে দিলে দেখছি। তা কি সিদ্ধান্ত নামলো স্নেহা যাবে
তো।”
নাহ।
অন্তরা এবার চিৎকার করে উঠল,,” যাবি না সত্যি। না গেলি আমার কথা কেন শুনি আমি তোর কে
যাওয়া লাগবে না তোর।”

রেগে কথা টা বলে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,”দাঁড়িয়ে আছো কেন চলো ওর যাওয়া লাগবে না আমি
ওর কে আমার কথা শুনবে কেন?”
অন্তরা রাগে গমগম করতে করতে চলে গেল। হৃদয় আর আমি হা করে ওর যাওয়ার পথের তাকিয়ে
র‌ইলাম।
“বান্ধবী কিন্তু ক্ষেপে গেছে এখন ও কি সেই একই মত নাকি চেঞ্জ করেছো।”
“এতো রাগতে পারে না। বাসায় বাবা একা কোথায় যেতে ভয় করে। তাই না করেছিলাম।”
“হ্যা বুঝতে পেরেছি কিন্তু খুব বেশি সময় লাগবে না।আমরা বিকেলে বের হবো আর সন্ধ্যার আগেই
চলে আসবো।”

সেদিন আর মতামত দিলাম না বাসায় চলে এলাম আসার পথে ফোনে টাকা ভরে নিলাম।
আজকে রুনি আপুর সাথে আর আমার গ্ৰামের এক চাচির সাথে কথা বলবো। শুনেছি গ্ৰামে আমাদের
বাড়ি নাকি দখল নিয়েছে। সেসব বিষয়ে জানতে এদিকে আরেক কথা ভাইয়া নাকি আমাদের খুঁজতে
গিয়েছিল।

.

রাতে আপুর সাথে কথা বলে চাচির সাথে কথা বললাম। তারপর ফোন রেখে পরতে বসলাম।
দুইদিন পর রাতে
আদ্রর নাম্বার থেকে কল এলো। দেখলাম কিন্তু ধরলাম না। তখন মেসেজ এলো একটা ফোন হাতে
নিয়ে মেসেজ টা অপেন করলাম কল রিসিভ করার থ্রেট।
“ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?”
“বিজি ছিলাম।”
“কি করছিলে?”
“পরছিলাম আপনার মতো তো না লেখা পড়া বাদ দিয়ে আজাইরা কাছের পেছনে পরে থাকবো।”
“যা খুশী বলো কিছু বলবো না কিন্তু তুমি আমার সম্পর্কে কিছু জানো না লেখাপড়া নিয়ে আমি সিরিয়াস
আছি ওকে।”

“আপনার কথা শুনলেই আমার হাসি পায়।”
“হাসির কি বললাম। তুমি বিশ্বাস করছো না তো আমার আগের রেজাল্ট দেখো বুঝতে পারবা।”
“দরকার নাই। ফোন দিয়েছেন কেন?”
“কথা বলতে।”
“ফোন রাখেন আমি পরবো।”
“আচ্ছা পরে কল দেবো তাহলে বাই।”
বলেই আদ্র ফোন রেখে দিলো।
সাথে সাথে আমার নাম্বারে একটা কল আসলো।আমি ভয়ে ভয়ে কলটা রিসিভ করলাম,,
“আদ্র তোকে কল করেছিল।”
“হুম।”

“তোকে বলেছিলাম আদ্রর কল রিসিভ করিস না তাও তুই ওর ফোন রিসিভ করেছিস কেন?”
“ফোন রিসিভ না করলে বাসায় চলে আসে এজন্য…
“চুপ স্টপিট গার্ল। আচ্ছা শুন আর ফোন রিসিভ করবি না। রাতে একবার করবি আর পুরো পুরি
আদ্রকে ইগনোর করবি। ও মত কাছে আসবে তুই ওকে অপমান করবি। ”
“আমি চুপ করে শুনছি।”
‘কিরে আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস তো। আমার কথা না শুনলে কিন্তু তোর ভাইকে আমি তোর খুঁজ
দিয়ে দেবো। আর তোর ভাই এখন তোর কাছে কি চায় জানিস তোদের গ্ৰামে বাড়িটা। তুই কি তোর
শেষ সম্বল হারাতে চাস।”
‘না না ভাইকে আমার কথা বলো না।”
“আমার কথা শুনলেই বলবো না।”

.

“আমি রাখবো কথা আদ্রকে কোন রকম প্রশ্চয় আমি দেবো না।”
“ওকে ভেরি গুড।”
বলেই ফোন কেটে দিলো আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। চোখ বন্ধ করতেই
গাল বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
এতো অশান্তি আর নিতে পারছি না। কেউ কি নেই যে আমাকে এই অশান্তি থেকে মুক্তি দেবে। গ্ৰামের
বাড়ি নেওয়ার জন্য ভাইয়া এমন করছে ছিঃ এতো কিছু করেও তার শান্তি হয়নি এখন ওখানেও নজর
দিয়েছে।এটা বাবার কানে গেল সে ওইভাবেই শেষ হয়ে যাবে। আমি বাবাকে কষ্ট দিতে পারবো না
ভাইয়ের থেকে আমাকে লুকিয়ে থাকতে হবে না হলে আমি কিছু আটকাতে পারবো না।

কান্না আটকানো যাচ্ছে না ভাই এমন কি করে হলো কোথায় আমাদের দায়িত্ব নিতে চাইবে তা শেষ সম্বল নেওয়ার জন্য পাগলের মত খুঁজছে। অনেক কেঁদেছি। মাথা ব্যথা করছে তাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে টিউশনিতে গেলাম।
সেখানে গিয়ে দুজনকে পরাতে আজ খুব অস্বস্তিতে পরতে হলো। আমার স্টুডেন্টের বাবা মাকে আগে
কখনো বাসায় দেখি নি থাকতে আজকে তাকে দেখলাম।
আমি পরানোর সময় খুব অস্বস্তিতে পরতে হয়েছে‌। লোকটার তাকানো কেমন সন্দেহের। কেমন হা
করে তাকিয়ে থাকে। পরানোর মাঝে উনি প্রতি দশ মিনিট পর পর এসে এটা ওটা জিজ্ঞেস করেছেন।

পড়ানো শেষ হতেই দ্রুত গতিতে বেরিয়ে এসেছি‌। কপাল বেয়ে ঘাম পরছে ওইভাবেই হাঁটছি। হাঁটতে
হাঁটতে বাসার গেটের সামনে আসতেই আদ্রর বাইক এলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে।
“ধরো।”
আদ্র একটা প্যাকেট আমার হাত দিলো তারপর যেভাবে এসেছিলো সেইভাবে ই চলে গেল। আমি হাঁ
করে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে। তারপর হাতের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম কিসের প্যাকেট
দিলো এটা‌।
আমি কিছু বলার ই সুযোগ পেলাম না‌।ফোনে মেসেজ এলো।
লেখা —
“প্যাকেটে যা আছে সব কিছু পরা অবস্থায় তোমাকে দেখতে চাই।”

অচেনা শহর পর্ব ৩৬

কি আছে এতে? পরা অবস্থায় দেখতে চায় মানে। কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে এসে প্যাকেট
খুললাম। আর খুলেই আমার মুখটা হা হয়ে গেল।
লাল শাড়ি, লাল ব্লাউজ, দুই মুঠো লাল চুড়ি, কাজল, লিপস্টিক, এক জোড়া জুমকো,সাজের সব
জিনিস আছে একটা সিম্পুল নেকলেস ও আছে।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। একটা আয়নাও আছে।আয়না নিয়েই মুখের সামনে ধরলাম। নিজের
মুখটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি গাঁয়ে রং অনেক ময়লা হয়ে গেছে।
আরেকটা জিনিস চোখে পরলো চিরকুট,,,
চিরকুট হাতে নিয়ে ভাঁজ খুললাম আর পড়তে লাগলাম,,,

“একবার তোমাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতে চাই। পরনে থাকবে লাল টকটকে শাড়ি,মাথার ঘন
কালো চুল থাকবে খোলা যা বাতাসে উড়বে অবাধ্য কিছু চুল বারবার তোমার চোখে মুখে এসে পড়বে।
আর তুমি বিরক্ত হয়ে কানের পিছনে খুঁজে দিবে আর আমি মুগ্ধ হয়ে দেখবো।চোখে মোটা কাজল
দেবে ঠোঁটে থাকবে হালকা লিপস্টিক। দুই হাত ভর্তি লাল রেশমি চুরি আর আলতা রাঙা পা। প্লিজ
একবার আমার জন্য সাথে আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো না সহ্য করতে পারোনা আমার এই
একটা আবদার রাখো।অনেকদিনের লোভ তোমাকে এভাবে দেখায় কিন্তু বলার সাহস হয়নি আজকে
আর থাকতে পারলাম না তাই সব জিনিসই তোমাকে দিয়ে দিলাম আর বেহায়ার মত চেয়েও বসলাম।
আমার এই চাওয়াটাকি রাখবে মায়াবতী। পরশু তোমাকে এই ভাবে দেখতে চাই।”

অচেনা শহর পর্ব ৩৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.