অচেনা শহর পর্ব ৩৯
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
“কি এতো ভাবছো?”
অন্তরালে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল হৃদয়।
“আদ্র ভাইয়ার সাথে প্লান করে তো স্নেহাকে রেখে এলাম এখন কি হবে সেটাই ভাবছি।”
চিন্তিত হয়ে বললো অন্তরা।
” এতো চিন্তা করো না। আদ্র ভাইয়া তো সত্যি ভালোবাসে স্নেহাকে তুমি সেটা ভালোই জানো।”
“হ্যা, কিন্তু স্নেহাকে দেখে কিন্তু একটু ও মনে হয় না ও আদ্রকে ভালোবাসে। এটাই আমার
টেনশন যদি ও আদ্রকে ভালো না বাসে তাহলে আজকের পর ওর সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে
যাবে। কারণ ওকে না জানিয়ে ওর অনেক ইনফরমেশন আদ্রকে দিয়েছি আবার আজকেও আমি
ওকে এখানে নিয়ে এসেছি।”
গভীর ভাবে বলল অন্তরা ও খুব চিন্তিত। স্নেহাকে রেখে ওরা কিছুটা দূরে এসেছে ওদের একা
টাইম দেওয়ার জন্য। হৃদয় এগিয়ে অন্তরার সামনে দাঁড়িয়ে পরল।
“কি এভাবে সামনে দাঁড়িয়ে পরলে কেন?”
“তুমি মন খারাপ করছো কেন?”
“করছি না ভয় পাচ্ছি।”
“ওফ ভয় পেয় না তো আর ওসব চিন্তা বাদ দাও।”
“বললেই কি বাদ দেওয়া যায়।”
“যাবেনা কেন অবশ্যই যাবে।আর আজকে কি সেটা কি ভুলে গেছ। এতো ভালো একটা দিনে
তুমি এমন বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে না থেকে ভালোবাসা বাসি তো করতে পারো।”
“মানে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
“এই যে আমি তোমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।আর তুমি কি একবার ও আমার দিকে
তাকিয়ে দেখেছো। খালি আজেবাজে চিন্তা করে সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করছো।”
“কি আমি আজেবাজে চিন্তা করছি? বলবেই তো তোমার তো একটু ও চিন্তা হচ্ছে না।”
“চিন্তা হবে কেন? এখানে চিন্তার কি আছে আমি জানি আদ্র ব্রো সব ঠিক করে নেবে।স্নেহাকে
তো মানিয়েই পারবে দেখো।”
“তাই যেন হয়।”
“হবে। শুন না।”
“কি ?” ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,,
” তোমাকে না আজকেই বিয়ে করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।”
“কেন?”
“তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে। মিষ্টি বউ চলো বিয়ে করে ফেলি।”
” পাগল নাকি অসম্ভব। তুমি আমাকে বিয়ে করে খাওয়াবে কি আগে লেখাপড়া শেষ করো
তারপর চাকরি তাঁরপর আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে তারপর সেনা বিয়ে।”
“ওরে আল্লাহ এতো দিন।”
“হ্যা।”
“কিন্তু আমার তো তোর সইছে না। ”
“সইতে হবে পরিবার ছাড়া আমি বিয়ে করতে পারবো না।”
“আচ্ছা আচ্ছা মন খারাপ করো না। আমি তো মজা করছিলাম এখন আমার বাসা থেকে ও
মানবে না।”
হৃদয় অন্তরার গালে হাত দিয়ে বলল,,
“হুম।”
হৃদয় কে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে।
বিরক্ত নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর পর চারপাশে তাকিয়ে অন্তরাকে খুঁজছি। দেখছি ও
আসছে কিনা এখানে নেমে আমাকে দাঁড়া করিয়ে রেখে কোথায় যে চলে গেল দুজন। বিরক্তের
সাথে এখন রাগ লাগছে এইভাবে যখন আমাকে রেখে ওরা চলেই যাবে নিয়ে কেন এলো।
আজকে দুজনে একা টাইম স্পে করবে এজন্য তো আমি আসতে চাই নাই কিন্তু জোর করে
নিয়ে এলো আর হাওয়া হয়ে গেল।
.
আর এমন জায়গায় কেন রেখে গেল জায়গা সাজানো মনে হচ্ছে কেউ তার ভালোবাসার
মানুষটির জন্য খুব যত্ন করে সাজিয়েছে।
জায়গা পছন্দ হয়েছে খুব আমার কিন্তু কার না কার জন্য আরেন্জ করা হয়েছে সেখানে আমি
এসে দাঁড়িয়ে আছি। এটাই আমার অসহ্য লাগছে। আর অন্তরার রা আমাকে এখানে কেন রেখে
গেল আর গেল যে গেল আর এলো না।
এদিকে আদ্র গাড়িতে হেলান দিয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। এগিয়ে না গিয়ে ভাবছে স্নেহা
ওকে দেখলে কিভাবে রিয়াক্ট করবে? কিভাবে মনের কথা ওকে জানাবো প্রচুর নাভার্স লাগছে
উফফ আদ্র এতো নাভার্স হচ্ছিস কেন এর আগেও তো অনেক বার স্নেহার সামনে গিয়েছিস কই
তখন তো এমন করিস নি তাহলে আজকে এতো নাভার্স হচ্ছিস কেন?
আরেকবার গাড়ির আয়নার নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিলো আদ্র চুল নারিয়ে ঠিক করতে লাগলো
তারপর সানগ্লাস বের করে পরে এ্যাটিডিউট লুক নিয়ে এক এগিয়ে আবার পিছিয়ে গেল। উফফ
হচ্ছে না ভয় পাচ্ছি আবার ঘেমে গেছি আমি এতো ভীতু কবে হয়ে গেলাম।
সানগ্লাস খুলে কপালে হাত রেখে চিন্তা করতে লাগলাম। হঠাৎ হাতটা বুকে চলে গেল ও গড
আমার হাটর্বিট এতো লাফাচ্ছে কেন? বুক হাত দিয়ে দাঁড়ালো উফ হাটর্বিট এতো লাফাচ্ছে
কেন আমি কি ঠিক মতো স্নেহার সামনে যেতে পারবোনা।
ভয় হচ্ছে কেন মনে হচ্ছে স্নেহাকে কিছু বলতে পারবো না হারিয়ে ফেলবো।
এসব কি ভাবছি ওই তো স্নেহা ওর কাছে যেতে আমার মাত্র দুই মিনিট লাগবে তাহলে
কেন মনে হচ্ছে স্নেহা আমার খুব দূরে আছে ওকে আমি হারিয়ে ফেলবো।
আদ্রর মনে একটা অজানা ভয় কাজ করছে সানগ্লাস হাতে রেখেই এগুতে লাগলো।
এদিকে আদ্রর বাবার বিপক্ষ দলের লোক এদিকেই ছিলো তারা হঠাৎ আদ্রকে দেখে আদ্র একা
ওর সাথে কোন গার্ডস নেই। আশেপাশে লোকজন নেই কিছু টা দূরে শুধু মাত্র একটা মেয়ে
আছে।
.
তাদের মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে।
অনেকদিন ধরেই স্যার আমাদের একে ক্ষতম করতে বলেছিলো এনী নাকি ইলেকসনে স্যারের
গায়ে হাত তুলেছিলো ওর বাবাকে একটা বকা দিয়েছিলো বলে।
সে জন্য স্যার এই আদ্রর উপর খুব ক্ষেপে আছে আজকে যদি একে মেরে দিতে পারি তাহলে
স্যার খুব খুশি হবে।
সব গুলো মুখে শয়তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে এলো অশ্র হাতে।
স্নেহা রাগে গজগজ করতেছে।অন্তরা সামনে পেলে খুন করে ফেলতো। শাড়ির আঁচল দিয়ে
হাতের মুঠোয় ধরে আছে বিরক্ত হয়ে চুলে হাত দিয়ে খোপা করে নিয়েছে।
হঠাৎ মনে হল কেউ আমার পেছনে আছে আসলে হাঁটার আওয়াজ আসছে খচখচ আওয়াজ।
অন্তরা নিশ্চয়ই এসেছে এটা ভেবে স্নেহা কিছুটা খুশি হলো সাথে এক গাদা বকা ভেবে নিলো
তাকিয়ে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বকতে লাগবে।
কিন্তু আমি পেছন ফিরে থমকে গেলাম আদ্রকে দেখে সে এখানে কি করছে।আদ্র আমার
তাকানো দেখে ঠোট কামড়ে ধরে হেসে উঠলো,,,,
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। আদ্রকে আজকে একদম অন্যরকম লাগছে দেখতে। ওকে
ফাস্ট পাঞ্জাবিতে দেখলাম একটু পর পর চুল ঠিক করছে পাঞ্জাবির কলার টানছে আর এক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। একটু পলক ফেলছে না।
আমার মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।অন্তরা গেল কোথায় আর আদ্র এলো কোথা থেকে ও
জানালো কিভাবে আমি এখানে আছি। এর উওর আদ্রর দিতে পারবে।
এখানে আদ্রর সাথে অন্তরার কোন না কোন কানেকশন তো আছেই আমি সিউর।
আমি একটু দূরে ছিলাম আদ্রর থেকে ওখানে থেকে আদ্রকে দেখে নিজের ফোন হাতে নিলাম
অন্তরারকে কল করতে কিন্তু ফোনে টাকা নাই কি আর ফোন নামিয়ে রাখতেই একটা বিকট
আওয়াজ হলো।
আওয়াজ শুনে আমি চমকে উঠলাম তারাতাড়ি পেছনে ফিরেই থমকে গেলাম।
আদ্র মাটিতে পড়ে আছে পেছনে তিনটা মুখোস ধারী লোক দাঁড়িয়ে তাদের হাতে বন্দুক। বন্দুক
দেখেই আমার বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো।
বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি সামনে।
.
লোক গুলো এগিয়ে এসে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে দেখলো জেগে আছে কিনা তারপর বন্দুক লুকিয়ে
দৌড়ে পালিয়ে গেল আর আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি নরার শক্তিটুকু পাচ্ছিনা।
মনে হচ্ছে আমার শরীর একটু নরার শক্তি নাই। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে পা দুটো অসাড়
হয়ে গেছে নরছে না। দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি আদ্রর সাদা পাঞ্জাবি লাল টকটকে হয়ে গেছে।
এমন কিছু চোখের সামনে দেখবো আমি কল্পনাতেও ভাবি নি। পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি নরছি
না। কিন্তু এখন আমার নড়া উচিত আদ্রর কাছে যাওয়া উচিত কিন্তু পারছিনা।
হঠাৎ একটা জিনিস থেকে আমার সমস্ত শক্তি মনে হয় ফিরে পেলাম আদ্র ওইভাবেই
আদোআদো তাকিয়েছে চোখ আমাতে আবদ্ধ বাম হাতটা একটু নারিয়ে আমার দিকে ধরলো
আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না প্রানপনে ছুটে আসতে লাগলাম আদ্রর কাছে কিন্তু এই
একটু পথ যেন শেষ হচ্ছে না।
আমি আদ্রর কাছে আসার আগেই আদ্রর হাত নেমে গেল।
আমি দ্রুত ওর পাশে গিয়ে বসলাম। সারা শরীর কাঁপছে আমার চোখ দিয়ে গলগল করে পানি
পরছে আদ্রর নিথর দেহটা আমার সামনে পরে আছে।
অচেনা শহর পর্ব ৩৮
হাত বাড়িয়ে আদ্রকে স্পর্শ করতে পারছি না আমার হাত থরথর করে কাঁপছে।
এমন দৃশ্য দেখতে হবে ভাবতে পারছি না। স্তদ্ধ হয়ে আদ্রর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
আমার চোখ পানি আদ্রর হাতে পরছে ওর সাদা পাঞ্জাবি লাল রক্তে লাল হয়ে আছে যেদিকে
তাকিয়ে আমি কেঁপে উঠি দুহাত উঠিয়ে চোখে হাত দিয়ে সাপিয়ে ধরি এসব দেখতে পারছি না
আমি কষ্টে আমার বুক টা
ফেটে যাচ্ছে। আদ্রর এমন অবস্থা আমি সহ্য করতে পারছি না কান্না দলা পাকিয়ে গলায় আটকে
আছে।
হঠাৎ আদ্রকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।
কান্না বাধা মানছে না চিৎকার করে কাঁদছি কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই সাহায্য করার মতো।
উঠে আদ্রর মুখটা দুহাতে ধরে চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম,,
“আদ্র চোখ খোলেন প্লিজ। আপনার কিছু হতে পারেনা। প্লিজ চোখ খুলুন ওরা কারা ছিলো আপনাকে কেন গুলি করলো বলুন না।”
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার বুকটা খালি খালি লাগছে খুব আপন কাউকে হারিয়ে ফেলেছি
মনে হয়। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার কি করবো কাকে ডাকবো স্নেহার সারা শরীরে আদ্রর রক্ত
লেগেছে গালে লাল শাড়ি আদ্রর রক্তে রাঙানো হয়েছে যেন।