অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৩ || You are my Lifeline

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৩
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

গলার অনেকটা জায়গায় ভিজে গেছে ওড়না এক পাশে ভিজে গেছে। পানি ঝরিয়ে ফেলে ভালো করে মাথায়
ওড়না পেঁচিয়ে নিল স্নেহা। পাশে দাঁড়িয়ে আছি অন্তরা। তার চোখ-মুখ ভয় স্পষ্ট।
আমি এক নজর তার দিকে তাকাতেই সে বাইরে ইশারা করলো। বাইরে তাকিয়ে আবার আতকে উঠলাম। ওই
ছেলেটা এদিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।চোখে রাগ স্পষ্ট তার চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে আমাকে
চরম রকমের শাস্তি দেওয়ার জন্য বসে আছে। আমাকে যদি এখন মাঠের সবার সামনে দশটা চড় মারতে
পারে তাহলে সে ক্ষান্ত হবে না।

ভয় আমি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম সে আমাকে দেখতে পাচ্ছ না জানি তবুও আমার মনে হচ্ছে সে
আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর চোখ দিয়ে আমাকে ভষ্স করে দিচ্ছে।
—স্নেহা তুমি এটা কি করে করলা কিভাবে তুমি ওই ছেলেটার গায়ে হাত তোল্লা। তুমি জানো ওদের কত দাপট
চাইলে তোমার যা খুশি করতে পারে। আমার তো ভাবতেই ভয়ে গা শিউরে উঠছে।
স্নেহা অসহায় মুখ করে অন্তরার দিকে তাকালো। ওর ভয়ার্ত মুখ দেখে আমার আরো বেশি ভয় করছে।

—এই ভাবে ভয় দেখাচ্ছ কেন?আমি কি এমন ভুল করছি তারা তো আমাদের সাথে অন্যায় করেছে। আর
আমি সত্যিই চাই নি তাকে থাপ্পড় দিতে আমার হাত আপনাআপনি চলে গেছে।সিগারেটের গন্ধ আমি আগে
থেকেই সহ্য করতে পারিনা তারপরও ওই ভাবে হাত টেনে আমার সত্যি খুব রাগ উঠেছিল। কিভাবে কি করে ফেলেছে?কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল স্নেহা। ওর মুখে নরম কথা শুনে অন্তরার খুব মায়া হল। অন্তরা অতটাও
ভীতু নয় কিন্তু সবার সামনে ন্যাকামীটা একটু বেশি করে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

—এখন আর ভয় পেয়োনা আচ্ছা চল আমরা ক্লাস করি এখন তারা আমাদের কিছু বলবেনা ক্লাস টাইম।
ক্লাস শেষে বলেছে কিছু করবে। আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য।
স্নেহা কৌতুহল ভরা চাহনি দিল।
—কি প্ল্যান?
—এখন চলো ক্লাস করি ছুটির পর আমরা লুকিয়ে ওদের চোখের আড়াল ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যাবো।
—কিভাবে দেখনা মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে আমরা এখান দিয়ে বের হতে গেলে তো ধরা পড়ে যাব।
—চলো তো তখন দেখা যাবে এখন ক্লাস তো করি। ভার্সিটির প্রথম দিন কত কিছু ভেবে এসেছিলাম আর
কিছুই হলো না ভয়ে আতঙ্কে সারাটা সময় কেটে গেল।

ভয় ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ক্লাসে যাওয়ার জন্য মনস্থির করল স্নেহা‌। ক্লাস করতে হবে এমনিতেই কিছুদিন ক্লাস
করতে পারে নাই। এখন আর ক্লাস মিস দিতে চায় না। ভাল করে লেখাপড়া করতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে
হবে তারপর সেনা বাবার ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারবে।
স্নেহা অন্তরার সাথে কমন রুম থেকে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এগোতে লাগল ওরা এখন নিচতলায়। এখান
থেকে মাঠ স্পষ্ট দেখা যায় একবার আড়চোখে গাছের নিচে তাকায় ওখানেই বসে আছে আদ্র সিগারেট খাচ্ছে
আর আমাদের দিকে রক্ত লাল করা চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে।আশেপাশের সবাই গল্পে মেতে উঠেছে হয়তো
সিরিয়াস কিছু নিয়ে কথা বলছে সবার মুখে রাগ স্পষ্ট।

স্নেহা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিল। তারপর অন্তরার পেছনে পেছনে যেতে লাগলো কারন ও ক্লাস চিনে না।
দোতালার একদম কর্নারের রুম স্নেহা দের। ও আর অন্তরা ক্লাসে ঢুকলো স্যার এখনো ঢুকেনি দেখে স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলল।কিন্তু ওরা ঢোকার পর সবাই এমন ভাবে বড় বড় চোখ করে তাকালেন যে মনে হলো কেন
জোকার রুম এসেছে। সবাই কেমন করে যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানোর কারণটা বুঝতে
পারলাম না। হ্যা পরে বুঝতে পারলাম তাদের তাকানোর কারণটা।

.

একটা মেয়ে বলাবলি করতেছে একটা মেয়ে বললে ভুল হবে প্রায় ক্লাসের অনেক মেয়ে ছেলেই বিড়বিড় করে
বলতাছে,,এই দেখ এই সেই মেয়ে কি সাহস মেয়ের আদ্র ভাইয়া কে চড় মেরেছে। মেয়েটা সাহস দেখে অবাক
হই যার দিকে চোখ তুলে তাকানোর কারো সাহস নাই তার গায়ে হাত তুলেছে। সব স্যারেরা যার ওপর কথা
বলতে পারেনা তার সাথে এমন ব্যবহার।

এই মেয়ের যে কি হাল করবে আদ্র ভাইয়া আল্লাই জানে।মেয়েটার ভয় ও নাই কোথায় ছুটে পালিয়ে বাসায়
চলে যাবে তা না আবার ক্লাস করতে আসছে।
অন্তরা কানে ও কথাগুলো গেল ও আমার হাত ধরে বলল চলো সিটে গিয়ে বসি। একটা সিটেদুইজন বসে আছে
আর দুজন বসা যাবে সিটটা বড়ই। অন্তরা আমাকে নিয়ে বলল ভেতরে যাও আমি কিনারে ছাড়া বসতে
পারিনা।

আবার আরেকজনের কথা কানে এলো, সেইসব নিয়ে তো বলাবলি করছেই আবার আরেকটা কথা বলল।
যা শুনে আমার চোখে অটোমেটিক পানি চলে এলো।
ভেতরে যাওয়া বাদ দে আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। মেয়েটা তার পাশের মেয়েকে বলছে।
এই শোন এই মেয়েটা এখানে বসলে আমরা দুজনে উঠে যাব বুঝছিস। একেতে আদ্র মাই জানের সাথে
ঝামেলা করেছে।কিভাবে থাপ্পর  মারল দেখছিস ও যখন  থাপ্পড় মারছিল মনে হয়েছে থাপ্পর টা ও আদ্র
গালে নয় আমার গালে মারছে। আর দেখছিস ড্রেস আপ ওর মত এমন ড্রেস পড়ে এসেছে ভার্সিটিতে‌।
আর শুনতে পাচ্ছি না অপমানে আমার কান্না দলা পাকিয়ে আসছে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না।আমি পেছনে
ঘোরে অন্তরাকে ঠেলে সরিয়ে সবার পেছনের ফাঁকা ছিঁটে গিয়ে বসলাম।

.

কান্নার আটকাতে পারলাম না মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠলাম। থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি পারছিনা।হঠাৎ ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকাতেই আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,,
—কাঁদছো কেন স্নেহা? ওদের কথায় মন খারাপ করো না। ওরা এরকমই কেউ তোমার পাশে না বসলে
আমি তোমার পাশে বসব।
আচমকা ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠলাম…
—আরে কাঁদছো কেন? আজ থেকে তুমি আমার ফ্রেন্ড শুধু ফ্রেন্ড না বেস্ট ফ্রেন্ড।
এর মাঝে ক্লাসরুমে স্যার রুমে ঢুকলো

—স্নেহা আমাকে ছাড়া ওই দেখো চলে এসেছে। তুমি তো আমার থেকেও বেশি কাঁদুনি দেখা যায়।
সারা আসছে শুনেই আমি তাড়াতাড়ি ওকে ছেড়ে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলাম।
রোল কলের সময় আমার নামটা আসতেই আমি দাঁড়িয়ে কিছু বলবো স্যার আমার দিকে কেমন করে যেন
তাকিয়ে আছে। আমি স্যারের তাকানো দেখে মাথা  নিচু করে ফেললাম,,
—এই যে মেয়ে তুমিতো দশদিন পর এসেছ তাই না। 10 দিনে একদিন তোমার পেজেন নাই।
–আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালাম,
—তা এতদিন লেট করে এসেছ কেন?
—স্যার আসলে আমি গ্ৰামে থেকে এসেছি আমি কালকেই  এখানে এসে পৌঁছেছি।
এজন্য উপস্থিত থাকতে পারি নাই।

—আচ্ছা সমস্যা নাই আগের ক্লাসের নোটগুলো নিয়ে নিবা। আর একদম প্লাস অ্যাপস সেন করবে না।
আমি তার কথায় সম্মতি জানালাম সে আমাকে বসতে বলে রুল কল শেষ করল। তারপর ক্লাস শুরু হলো
মনোযোগ সহকারে ক্লাস করলাম একেএকে তিনটা ক্লাস শেষ হলো। আরেকটা ক্লাস আজকে হবে না।
এখনই ছুটি ক্লাসে এতটাই মুশগুল ছিলাম যে আমার বাইরের বিপদের কথা মনেই ছিলনা।
নিচতলায় আসতে আমার গাছের দিকে চোখ পড়ল ভয়ে অন্তরার হাত খামচে ধরলাম,
গাছ থেকে আস্তে আস্তে নিচের দিকে চোখ আনলাম সাথে সাথে আমার ভয় ছুটে গেল। গাছের নিচে কেউ
নাই। বাইক টাও নাই। এই সুযোগ অন্তরা তো এটাই বলেছিল পালাতে হবে।
অন্তরা মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখে ও হাসি। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম।

অচেনা শহর পর্ব ২

–তোমার হাসিটা খুব সুন্দর স্নেহা?
—ধ্যাত কি যে বলো না। আমি আমার কিছুই সুন্দর না। তুমি অনেক সুন্দর একদম গুলুমুলু।
—এখানে এসব বাদ দাও চলো পালাই। ওয়েট দাঁড়াও তোমার নাম্বারটা দিয়ে যাও।
স্নেহার নাম্বারটা অন্তরার মোবাইলে তুলে দিল। তারপর দুজনে তাড়াহুড়া করে মাঠ দিয়ে এগোতে লাগলো।
তাড়াতাড়ি সময় হাঁটা মনে হয় জোরে হয়না।আজকে তাই হচ্ছে মনে হয় মাঠ আজকে ফুরাবেই না।

অবশেষে মাঠে শেষ প্রান্তরে চলে এলাম। দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গেটের বাইরে পা রাখবে এমন সময়
কেউ ঝড়ের গতিতে এসে স্নেহার হাত টেনে ধরলো। তারপর উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলো। স্নেহা তো স্তব্ধ হয়ে গেছে
ভয়ে হাত-পা অনবরত কাঁপছে। অন্তরা হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।অবাক করা বিষয় অন্তরা কে কেউ
কিছু বলছে না।অন্তরা ওদের পিছনে যেতে যাবে হঠাৎ একটা ছেলে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।ছেলেটাকে দেখে
চিনতে অসুবিধা হয়না এই ছেলেটা তখন রাগিং করানোর সময় ছিল।

—কি ব্যাপার আপনি আমার পথ আগলে দাঁড়াচ্ছেন কেন?
—তোমার যাওয়া বারণ আছে। আর তোমার কোন শাস্তি নাই তাই তুমি ফট। যে শাস্তি পাওয়ার তাকে নিয়ে
যাওয়া হয়েছে।
অনেক কাকুতি-মিনতি করে ও অন্তরা যেতে পারে না। জোর করে যেতে চাইলে ওকেও শাস্তি পেতে হবে বলা
হয়। তাই বাধ্য হয়ে অন্তরা চলে যায় কিন্তু ওর খারাপ লাগছে স্নেহা জন্য। কিন্তু ওর করার কিছু নাই।

অচেনা শহর পর্ব ৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.