অচেনা শহর পর্ব ৪০
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
অন্তরারা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত এমন সময় একটা বিকট আওয়াজ ওদের
কানে যায়।
সাথে সাথে দুজনের চোখাচোখি হয়ে ভ্রু কুঁচকায়,
“এটা কিসের শব্দ হলো বলোতো।”
হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলল। হৃদয় আশেপাশে তাকিয়ে কিছু বুঝতে না পেরে বলল,,,
” বুঝতাছিনা তো এটা কিসের শব্দ? গুলির আওয়াজ মনে হলো কিন্তু এখানে গুলি কে করবে?”
অন্তরা গুলির কথা শুনেই কেঁপে উঠলো,, অবাক ও ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,,” গুলির বলো কি চলো
তো ওইদিকে স্নেহা আছে একা আদ্র ভাইয়া এসেছে নাকি দূরে থেকে দেখে আসি।”
বলে অন্তরা স্নেহাদের দিকে যেতে পা বারালো কিন্তু যেতে পারলো না। পেছনে থেকে হৃদয় ওর
হাত ধরে আটকে ফেলেছে।
“কি হলো চলো আমাকে আটকালেন কেন?”
“তুমি আবার ওদের কাছে যাইতে চাইছো কেন ওদের এখন একা টাইম দেওয়া উচিত আমাদের।”
“গুলির শব্দ বললে ভয় হচ্ছে চলো না দূরে থেকেই দেখবো কাছে যাবো না তো প্লীজ।”
“তোমাকে নিয়ে পারা যায় না।”
“যাবে না তো চলো না।”
হুম চলো দূর থেকেই দেখবে কাছে যেতে চাইবে না একদম।
“ওকে বাবা চলো।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
“আমি তোমার বাবা না। বাবা না বলে জামাই তো বলতে পারো নাকি।”
“আমার টেনশন হচ্ছে আর তুমি মজা করছো আমার সাথে।”
“মজা না সত্যি তো আমি কি তোমার বাবা যে আমাকে কথায় কথায় বাবা বলো।”
“উফফ ( বিরক্ত হয়ে) ওইটা কথার কথা জাস্ট সেটা ধরছো কেন?”
“কথার কথায় ও বাবা বলবা না তোমাকে আমি একদম মেয়ে ভাবতে পারবো না তোমাকে
সবসময় মেয়ের মা ভেবে জল্পনা কল্পনা করেছি।”
“ধ্যাত,
অন্তরা এগিয়ে যেতে লাগলো হৃদয় আর ফাজলামি না করে যেতে লাগলো ও এইসব ফাজলামকি
ইচ্ছে করে করেছে যাতে যেতে না পারে। কারণ আদ্র আর স্নেহার একা থাকা দরকার নিজেদের
মত করে।
কিন্তু অন্তরা কে থামাতে পারলাম না।
কিছু দূর যেতেই দুজনেই কান্নার আওয়াজ পেল। দুজনে অবাক হয়ে নিজেদের দিকে তাকিয়ে
বলল,,
“এই হৃদয় শুনতে পাচ্ছো কেউ কাঁদছে?”
হৃদয়ের ও ভয় হচ্ছে এখন।ও মাথা নেড়ে সায় দেয়।
“এই আওয়াজ টা স্নেহার মতো লাগছে না।”
“হ্যা”
“স্নেহার কিছু হলো কি? ও এমন করে কাঁদছে কেন তারাতাড়ি চলো।”
বলেই হৃদয়ের উওরের আশা না করে অন্তরা শাড়ির কুচি ধরে হালকা দৌড় দিলো। জোরে
দৌড়াতে পারছে না শাড়ি পড়ে কি দৌড়ানো যায়।
হাঁপাতে হাঁপাতে এসে থামলো কিছু দূরে এসে। হৃদয় ও ওর সাথে দৌড়ে এসেছে।
অন্তরা সামনে তাকিয়ে থমকে যায়।
স্নেহা আদ্রর পাশে বসে কেঁদে যাচ্ছে আর আবোলতাবোল কি যেন বলছে।
চোখ মুখ লাল কি যেন লেগে আছে।
আর আদ্র এভাবে শুয়ে আছে কেন?
আদ্রর শরীরে লাল কি ওগুলো আদ্রর চোখ তো অফ নরছেও না।
এসব দেখেই অন্তরার মনে ভয় ঢুকে যায় দৌড়ে ওর পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
স্নেহা কি হয়েছে আদ্রর?
অন্তরার আওয়াজ পেয়ে কিছুটা স্বস্তি বোধ করি ওর দিকে কান্না মাখা মলিন মুখ টা নিয়ে তাকায়।
তারপর ওকে জরিয়ে ধরি আর সব বলতে লাগি।
.
“কাদিস না স্নেহা কে করলো এমন আদ্রর সাথে তুই জানিস?”
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে কথা বলতে পারছিনা।
তবুও মাথা নেড়ে না বুঝালাম আমি কিছু জানিনা।
হৃদয় এসে বললো,,
“এখন কথা বলার সময় নেই আদ্র ব্রো কে এখনই হসপিটালে নিতে হবে ওনার অবস্থা খুব
খারাপ। বাঁচবে কিনা বুঝতে পারছিনা।”
বাঁচবে কিনা শুনেই আমি চিৎকার করে উঠলাম,, ” নানানা আদ্রর কিছু হতে পারেনা ওকে
বাঁচতেই হবে আমার জন্য।”
বলেই আদ্রর হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলাম। হৃদয় এসে আদ্রকে ধরে উঠাতে
চাইলো পারছেনা আমি ও ধরলাম সবাই মিলে আদ্রর গাড়িতে বসিয়ে দিলাম। হৃদয় গাড়ি চালাতে
পারে এজন্য সুবিধা হয়েছে আদ্রর পকেটে থেকে গাড়ির চাবি বের করে ড্রাইব করতে লাগে।
আমি পেছনে আদ্রকে নিয়ে বসলাম।আদ্রর মাথা আমার হাঁটুর উপর রাখা। আমি এক দৃষ্টিতে
আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি আর চোখের পানি ফেলছি।
আদ্রর এমন নির্মম অবস্থা দেখে কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
প্রায় আধা ঘন্টা পর আমরা হসপিটালে এসে পৌঁছালাম।
রিসেপশনের সামনে বসে আছি। আমার পাশে বসে আছে অন্তরা প্রায় এক ঘন্টা হয়েছে এখানে
বসে আছি।
হসপিটালে আসার পর পরই ডাক্তার আদ্রকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে এ ঢুকেছে।
ডাক্তার আদ্রকে দেখেই বলেছে ওর অবস্থা খুব খারাপ।
একবার বের হয়ে বলেছে ভেতরে গুলি নেই। কিন্তু রক্ত খরন হচ্ছে অনেক।
বুকে লেগেছে এজন্য অবস্থা খুবই খারাপ বাঁচবে কিনা সিউর নাই। এসব শুনে আমার ভেতরটা
দুমরে মুচড়ে উঠলো।
.
অন্তরাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদেছি কিন্তু বেশিক্ষণ চিৎকার করেc কাঁদতে পারলাম
না।
একটা নার্স আসলো গমগম করতে করতে আর বলল শক্ত মুখ করে গম্ভীর হয়ে,,
” এটা কি আপনার বাসা পেয়েছেন। এটা একটা হসপিটাল এখানে অনেক ক্রিটিক্যাল রোগীর
আছে তাদের ও ফ্যামিলি আছে কই তারা তো আপনার মতো চিৎকার করে হসপিটালের
পরিবেশ নষ্ট করছে না। আর এখানে একদম চিৎকার করে কাঁদবেন না এতে রোগীদের সমস্যা
হবে চুপচাপ বসে থাকুন না হলে হসপিটালের বাইরে গিয়ে কাঁদুন যতসব ফালতু ঝামেলা।”
মহিলাটি চিৎকার করে গম্ভীর হয়ে বলে চলে গেলেন।
তারপর থেকে আর চিৎকার করিনি।
আদ্রর কাছে মোবাইল, ম্যানিব্যাগ ঘড়ি সানগ্লাস তা ছিলো সব আমাদের কাছে রেখে গেছে।সব
কিছু আমি আঁচলে নিয়ে বুকে জরিয়ে কাঁদছি।
মোবাইল টা হৃদয় আমার কাছ থেকে নিয়ে আদ্রর বাড়িতে খবর দিলো।
তার ঠিক পনেরো মিনিট পর হসপিটালে হুসগোল পরে গেল।
পুলিশ, সাংবাদিক কাউকে ঘিরে ধরে আছে মুহূর্তে হসপিটালে হইচই সরে গেল।মানুষ গিজগিজ
করছে সবাইকে ঠেলে একটা লম্বা ফর্সা একজন অতি স্মাট লোককে জায়গা করে দিচ্ছে সে
অস্থির হয়ে আসছে তার সাথে একটা মহিলা সেও খুব সুন্দরী যে কাঁদছে এরা কারা সেটাই ভাবছি।
আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল সবাই।
হৃদয়ের থেকে জানতে পারলাম উনি এমপি আর পাশে উনার স্ত্রী। তার ছেলের জন্য এখানে
এসেছে।
ওইসব বাদ দিয়ে আদ্রর চিন্তায় মুসগুল হলাম।
.
একটু পর ওই মহিলা সাথে ওই লোকটা আর ও লোক আমাদের সামনে এসে দাড়ালো।
হৃদয় অন্তরা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে সামনে তাকালো। আমি কান্না করতে করতে
নিস্তেজ হয়ে গেছি গলা ব্যাথা করছে চোখ ফুলে গেছে
ওনারা জিজ্ঞেস করলো,
” কে আমার ছেলের এই অবস্থা করেছে বলো। তাকে জিন্দা লাশ করবো।”
রেগে চিৎকার করে উঠল।
হৃদয় চিৎকার শুনে ভয়ে কেঁপে উঠলো আর বলল,,” আমরা কিছু জানি না।”
লোকটা গম্ভীর হয়ে বলতে যাবে কিছু কিন্তু মহিলাটি তাকে থামতে বলল।
তারপর উনি আচমকা আমাকে জরিয়ে ধরলো তারপর ছেড়ে আমার দিকে কেমন করে যেন
তাকিয়ে বলল,,
” আজ তো আদ্র তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো তুমি বলো এসব কি ভাবে হলো। আদ্রর
ক্ষতি কে করলো।”
উনার কথায় কিছুটা শক খেলাম উনি কি করে জানলেন আমার সাথে আদ্র দেখা করতে
এসেছিল।
সবাই চলে গেল ডাক্তার বের হয়েছে শুনে আমি যেতে পারলাম না খুব ক্লান্ত লাগতেছে।
নরতে ও মন চাইছে না হৃদয় বলল ও জেনে এসে বলবে চিন্তা করতে না করতে।
ওই মহিলাটি ও গেল না।
সে আমার পাশে বসলো। আর আমার দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু বলতে লাগলো ওনার কথা
শুনে আমি চমকে উঠলাম। উনি জানেন আদ্র আমাকে ভালোবাসে।
আদ্রর মা উনি ওনার সাথে নাকি আদ্রর বন্ধুর মতো সম্পর্ক তাকে নাকি সব বলে আমার
ব্যাপারটাও বলেছে।
উনি নাকি আমাকে দেখতে চেয়েছিল আমাকে নিয়ে যেতে বলেছিল আদ্রকে কিন্তু আদ্র ওর
পছন্দের কথা আমাকে জানায়নি সেটাও বলেছে তাই ছবি দেখিয়েছিল। এজন্য আমাকে দেখেই
উনি চিনে ফেলেছে।
.
আমি তো অবাক হলাম উনি আমার ছবি পেল কোথায়।
সেটা আদ্ররই বলতে পারবে।
আদ্রর কথা মনে হতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
উনি চোখের পানি মুছছেন আর অনেক কথা বলছেন। আমি ও বলে দিলাম আদ্রর গুলি করার
লোকদের আমি দেখেছি কিন্তু তাদের মুখ দেখতে পারিনি। কারণ তাদের মুখে ম্যাক্স ছিলো।
হৃদয় এসে যা বলল তাতে আরো ভয় পেয়ে গেলাম।
ডাক্তার বলেছেন আদ্রর চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ঙ্গান না ফিরে তাহলে বাঁচানো সম্ভব না।
মনে মনে আল্লাহকে হাজার বার ডাকছি আদ্রর সুস্থতা কামনা করছি। আদ্রর মা তো অঙ্গান হয়ে
গেছে।
তাকে ও হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে সময় মে পেরিয়ে যাচ্ছে আমার খেয়াল ই নাই।
আমি উঠে আদ্রর কেবিনের সামনে গেলাম ভেতরে ঢোকা নিষেধ। কাঁচের জানালা দাঁড়িয়ে দূর
থেকে আদ্রকে দেখলাম আদ্রর নিথর দেহটা পরে আছে সাদা বিছানার উপর।
অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখছি আদ্রকে।
অন্তরা বাসায় চলে গেছে একটু আগেই আমাকে অনেক বলেছে আমি যাই নি। আদ্রকে এভাবে
রেখে আমি যেতে পারবো না। এদিকে আমার বাবার কথা একদম ই খেয়াল নেই। আদ্রর ভালো
খবর না নিয়ে আমি হসপিটালের বাইরে যাবনা।
রিসেপশনে বসে আছি কান্না করতে করতে দূর্বল হয়ে গেছে গলা ব্যথা করছে ঘুম পাচ্ছে চোখ
লেগে আসছে।
হঠাৎ ফোনে টোন বেজে উঠলো,
ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখী অন্তরা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,,
স্নেহা কই তুই বাসায় গেছিস তো। আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম তাই আর ফোন দেওয়া হয় নাই এখন
জাগানা পেয়ে আগে কল করলাম। কাল সকালে হৃদয় আমি হসপিটালে যাব তোকে নিয়ে যাব
নি কান্না করিস না আর। আন্কেল কে বাসায় একা রেখে তো তুই ওখানে থাকতে পারবি না
তাইনা। একা বাসায় যেতে তোর প্রবলেম হয়নি তো ঠিক ভাবে পৌঁছে ছিপ তো তখন আমাদের
সাথে গেলেই….
অচেনা শহর পর্ব ৩৯
আর কিছু শুনলাম না ফোন কেটেই উঠে দাঁড়ালাম। বুকের ভেতরটা প্রচন্ড রকম ব্যথা করছে
ভয়ে হাত পা কাঁপছে ফোনটা চাপ দিয়ে দেখে নিলাম কতো বাজে দুটো এতো রাত কখন হয়ে
গেল।
তারাতাড়ি হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলাম। এখানে থেকে বাসা খুব একটা দূরে না কিন্তু তবুও
মনটা কূ গাইছে আমি এমন কি করে করলাম আদ্রর চিন্তায় বাবার কথায় ভুলে গেলাম।
এমনিতেই বাবার শরীর এটা খারাপ যাচ্ছে তার উপর কাল ওষুধ ছিল না খেতে পারেনি আমি
ভেবেছিলাম অন্তরাদের সাথে সময় কাটিয়ে ওষুধ নিয়ে যাব কিন্তু সেসব তো হলোই না উল্টা
আদ্রর এমন অবস্থা।
এমন সময় গাড়ি ও পাওয়া যাবে না জানি আমি হাঁটছি কিন্তু এগুতে পারছি না ক্লান্ত ভরা শরীর
নিয়ে।
মন চাইছে এখানে হাত পা ছুড়ে শুয়ে পরে থাকি এতো খারাপ লাগছে কেন?
মাথাটা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে আদ্রর চিন্তায় আবার আব্বুর চিন্তা তার উপর ঘুমের মাঝে উঠেছি।
এতো খারাপ লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
ওই ভাবেই এলোমেলো পায়ে হেঁটে যাচ্ছি।
আর আল্লাহ কে ডাকছি আব্বু যেন ঠিক থাকে তার যেন কিছু না হয়।