অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৪১ || golper shohor golpo

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৪১
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

চোখের পানি শুকিয়ে আছে। পাথরের মত শক্ত হয়ে বসে আছি মাটির বারান্দায়। আমার সামনে
আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ গমগম করছে সবাই আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে।
সবাই মনে মনে আমাকে পাষান বলছে কেউ বলছে,
“কি হলো রে এই স্নেহার আগে তো কতো ভালোবাসতে বাপকে। একটু কিছু হলেই কেঁদে
ভাসিয়েছে। আর আজকে বাপ মরলো ও একটুও কাঁদছে না কেমন শক্ত হয়ে বসে আছে।
ও কি শহরে গিয়ে চেঞ্জ হয়ে গেল।”
আবার কেউ বলছে,,,,

” আহারে মাইয়াটা এতিম হ‌ইয়া গেল। এখন কি হ‌ইবো ওর তো আর আপন বলতে কেউ র‌ইলো
না ভাইতো জীবনে খোঁজ ও নেয় না। বাপ ম‌ইরা পাথর হয়ে গেছে।”
সবাই সবার মতো কথা বলছে সহানুভূতি প্রকাশ করছে আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে।
বাবার কবর দেওয়া হয়েছে অনেক ক্ষন তারপর থেকে এভাবেই বসে আছি। একবার ও কাঁদি নি
কেন জানি আমার কান্না পায় নি একটুও।
সবাই আমাকে নানান কথা বলে বলে চলে যাচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে আসছে বাড়ির উঠান ফাঁকা হয়ে
গেল।এবার আমি উঠে দাঁড়ালাম আর সোজা হেঁটে আব্বুর কবরে চলে এলাম তাঁরপর কবরের
পাশে বসে কাঁদতে লাগলাম।

জীবন আমার থেকে সব কেড়ে নিলো আর আজ আমার শেষ সম্বল টাও কেড়ে নিলো।
মাকে হারিয়ে বাবাকে ঘিরে ছিলো আমার সমস্ত আশা ভরসা। মাথায় উপর বাবার ছায়া ছিলো
কিছু করতে না পারলেও আমি নিশ্চিত থাকতে পারতাম। এই ভেবে বাবা আমার সাথে আছে।
সব ভুলে তার জন্য সব কষ্ট করতাম অচেনা শহর গিয়ে পড়ালেখা করার সাহস করলাম নিজের
পায়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে সুস্থ করে সুখে থাকবো সেই সপ্ন দেখলাম।
আর আজ সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেল বেচে থাকার মতো আর কিছু র‌ইলো পৃথিবীতে একা রেখে
বাবা ও চলে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

আজ সেও ফাঁকি দিয়ে চলে গেল কাল আমার জীবনের সমস্ত সুখ একটু একটু করে শেষ হয়ে
গেল।সব হারিয়ে ফেললাম ফাস্ট আদ্রর ওই অবস্থায় তারপর বাবার এই মৃত্যু সব মিলিয়ে একটা
কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে আছি‌। বুকের ভেতর টা হাহাকার করছে চারপাশে অন্ধকার
কেউ নেই আর আমার এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমি একদম একা হয়ে গেলাম।
কেন বাবা আমাকে এভাবে একা করে চলে গেল কেন?
বাবা মার কবর একসাথে দেওয়া হয়েছে এটা বাবার ইচ্ছে ছিলো। মার কবরের দিকে তাকিয়ে
চোখের জল ফেলতে লাগলাম।

কাল আদ্রর ওখানে থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটতে লাগি। টেনশনে নানান খারাপ চিন্তা মাথায়
আসছে।
আদ্রর চিন্তায় কি করে বাবার কথা ভুলে বসলাম এই ভুলের জন্য আমাকে কি কোন বড় মাশুল
দিতে হবে।
আল্লাহ আর খারাপ কিছু দেখিয়া না সামলাতে পারবো না।
এদিকে ফোন লাইট জ্বালিয়ে হেঁটে যাচ্ছি গাড়ি তো পাই নাই এতো মাঝে রাতে কী গাড়ি পাওয়া
যায় অবশ্য ই না তাই সে আশা ও করছি না ।

কিছু দূর আসতে বিপদ সংকেত পেলাম আমার থেকে কিছু টা দূরে দুজন ছেলে আসছে হাতে
একটা বোতল আর হেলে দুলে হাটছে তাদের হাটার রেশ দেখেই আমি বুঝতে পারছি এরা ড্রিংক্স।
মাতাল হয়ে আছে আমার হাতে লাইট আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে লাইট ধরেই আছি পালানোর
কথা মনেই নেই আদরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছি হঠাৎ ছেলে দুজন আমার দিকে তাকালো।
সাথে সাথে নিজের বোকা টা বুঝতে পারলাম।

.

নিজেই তাদের ড়াতে ধরা দিয়েছি এবার কার করবো ওরা তো আমাকে দেখে ফেলেছে আর
তাদের হাটার গতীও দ্রুত আমাকে ধরার আমি সামনে না গিয়ে পেছন ফিরেই দৌড় দিলাম কিন্তু
পারলাম না। শাড়ি পরে আমি হাঁটতেই পারছি না তার উপর দূবল ক্লান্ত শরীর সব মিলিয়ে থপ
করে রাস্তায় মুখ থোবড়ে পরলাম শাড়িতে বেজে।
বিপদ যখন আসে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে।

ভয়ে আমার বুক ঢিপঢিপ করছে ছেলে দুজন খিটখিট করে হেসে আমার কাছে আসছে।
আমি উঠতে ও পারছি না হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছি ওরা আমাকে ধরার আগে উঠতে হবে।
এমন বিপদ এখন‌ই পরতে হলো এতো চিন্তা কি নেওয়া যায়‌।
আমি অনেক চেষ্টা করে উঠতে পারলাম। উঠে দৌড় দিবো কিন্তু পেছনে থেকে ছেলে দুটো
আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরছে।
চমকে উঠলাম তারাতাড়ি পেছনে ফিরলাম দুজনের মুখে বিচ্ছিরি হাসি ফুটে আছে।
তাদের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললাম।

“সুন্দরী এতো দৌড়াদৌড়ি করছো কেন? এই ভাবে কেউ দৌড়ায় হয়রান হয়ে গেলাম আমরা।”
“হাত ছারুন।”
“বলো কি এতো কষ্ট করে ধরেছি কি ছারার জন্য।”
“ছারুন প্লিজ।”
কান্না করতে করতে বললাম।
ছেলেগুলো বাজে কথা বলতে বলতে আমার দিকে এগিয়ে এলো ভয়ে আমি পেছাতে লাগলাম।
এখন কে আমাকে হেল্প করবে আমার কি এখন এদের কাছে হার মেনে নানা নিজেকে রক্ষা করতে ই হবে‌।

আদ্রর কথা মনে পরে গেল আজকে আদ্র সুস্থ থাকলে ও ঠিক বাচাতো আমায় কিন্তু ও তো সেই
অবস্থা তেই নেই।
আমার যত বার কোন বিপদ হয়েছে আদ্র ঠিক বাঁচিয়েছে।
চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে কষ্টে বাবার কথা মাথা এলো আমি এখন বাসায় কি
করে পৌঁছাবো।
হঠাৎ একটা তীব্র আলো আমাদের দিকে এলো ছেলেগুলো পেছনে ঘুরে আলোর দিকে তাকালো
আমিও সেদিকে তাকালাম।

.

একটা গাড়ি তার আলো আমাদের উপর পরেছে ভেতরে যে আছে সে নিশ্চয়ই আমাদের দেখেছে
আমি মনে মনে আল্লাহকে বলছি ভালো কেউ যেন থাকে সে যেন আমাকে রক্ষা করে।
আমার প্রার্থনা মনে হয় কবুল হলো গাড়ি থেকে একজন পুলিশ অফিসার বেরিয়ে এলো তার
পরনে ইউনিফর্ম দেখেই আমার কাছের ছেলে গুলো আমাকে ছেড়ে উল্টাপাল্টা দৌড়ে।
একটা স্বস্থির নিংশ্বাস ফেললাম।

যাক অবশেষে বিপদ মুক্ত হলাম এখন বাসায় যেতে পারলেই বাঁচি। এতো ক্ষনে লোকটা আমার
কাছে চলে এসেছে লাইট এখন ও আমার দিকে দূরে থেকে তাকে আমি একটু বয়স্ক মানুষ
ভেবেছি এখন বয়স্ক লাগছে না। লম্বা ফর্সা একজন লোক ক্লিন সেভ করা।
উনি এগিয়ে এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্কান করে বলল,
” আপনি মাঝ রাতে রাস্তায় কি করছেন?”
সন্দেহজনক ভাবে তাকিয়ে বলল।

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না উনি খুব গম্ভীর ভাবে বলছে ছেলেটাকে মুটেও রাগি লাগছে না
কিন্তু রাগ দেখাচ্ছে।
হালকা ভয় পেলাম পুলিশ দের একটু ভয় পায় আমি।
তাই কাচুমাচু করে তাকিয়ে আছি।
“কি হলো কথা বলছেন না কেন আপনাকে আমার সুবিধার লাগছে না। আপনি কি…
ওনাকে মাঝে থামিয়ে বললাম,, ” আমাকে খারাপ ভাববেন না প্লিজ। (তারপর সব বললাম)
সব শুনেও চুপ করে আছে মনে হয় বিশ্বাস করছে না।
” আপনি কথা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।”

“আমার বাবা বাসায় একা আছে প্লীজ আমাকে জেরা করা অফ করুন আমি খুব টেনশনে আছি
আমার একজন আপন মানুষ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আরেক জনের চিন্তায় আমি এখন রাস্তায়
আমাকে বাসায় ফিরতে হবে।”
“আচ্ছা চলুন আমি আপনাকে পৌঁছে দেবো আর সত্যি টা জেনে নেব আপনি ঠিক বলেছেন নাকি মনগড়া কথা।”
আমি রাজি হয়ে গেলাম।উনি গেলে আর ও ভালো আমি তারাতাড়ি বাসায় পৌঁছাতে পারবো।
উনার গাড়িতে উঠে পড়লাম।

অচেনা শহর পর্ব ৪০

ফোন টিপ দিয়ে দেখলাম সারে তিনটার উপরে সকাল হয়ে এলো বলে।
সাথে সাথে ফোন অফ হয়ে গেল।
আধাঘণ্টা পর বাসায় সামনে এসে নামলাম।উনাকে আমি এ্যাড্রেস বলে দিয়েছি।
উনি সত্যি আমার সাথে ভেতরে গেল।চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে আগে বাবার রুমে
গেলাম বাবার রুমে গিয়ে আমি চিৎকার করে উঠলাম।
লোকটা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাবা ফ্লোরে পড়ে আছে পাশে গ্লাস ভেঙ্গে আছে।
দৌড়ে বাবাকে ধরে ডাকতে লাগলাম।

অজানা ভয়ে কাঁপতে লাগলাম বাবার শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে বার কয়েক ডেকেও বাবাকে
উঠাতে পারলাম না নরলো না তা বুঝার বুঝে ফেললাম মুহূর্তে।
পৃথিবী শূন্য হয়ে গেল আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে কান্না করতে পারছি না গলা ব্যথা করছে ভীষণ
পাথর হয়ে গেলাম আমি।
অদ্ভুত নজরে এক দৃষ্টিতে বাবার প্রানহীন দেহের দিকে তাকিয়ে আছি।
লোক এগিয়ে এসে বাবার হাটর্বিট চেক করলো আর একটা কথায় বলল,,
উনি আর নেই।

আমি জল ভড়া চোখে কঠিন মুখ করে উনার দিকে তাকালাম।
ওইভাবেই পাথর হয়ে বসে ছিলাম ফ্ল্যাটের সবাই এলো দেখতে সবাই আমাকে সহানুভূতি
দেখালো তারপর যখন কবর দেওয়ার কথা হলো মনে পরলো বাবার দুই বছর আগের কথা যখন
বাবা প্রথম অসুস্থ হয় তখন বলেছি,,

স্নেহা মা আমার আমি আর বাঁচবো না রে আমি মরে গেলে তোর মায়ের পাশে আমার কবর দিছ।
তাই সকাল হতেই বাবার লাশ নিয়ে চলে এলাম গ্ৰামে ওই পুলিশ টা কিন্তু ছিলো সাথে আমাকে গ্রামে নিয়ে আমার সেদিকে খেয়াল নেই আমি সারা রাস্তা বাবার মুখে দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
কবর দেওয়া হলে উনি চলে যান তার আগে একবার আমার কাছে এসে বিদায় নেয় এবং একটা
কার্ড দিয়ে যায়।আমি নেই নি আমার হাতের মুঠোয় দিয়ে চলে যায়।

অচেনা শহর পর্ব ৪২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.