অচেনা শহর পর্ব ৪২
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা উঁচু করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
চাচি দাঁড়িয়ে আছে।
” এই ভর সন্ধ্যায় এখানে কি করিস? চল বাঁড়া চল আজ তোর সাথে আমি থাকবো।”
নরলাম না শক্ত হয়ে বসে রইলাম। চাচির পাশে তিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। ও এসে
আমাকে টেনে তুলতে চাইলো আর বলল,
” তুই এখানে কিভাবে বসে আছিস রে স্নেহা। তুই না কি ভীতু ছিলি আর এখন ভর সন্ধ্যায় কবরের
পাশে বসে আছিস।”
টিটকারি মেরে বলল তিশা আমাকে জীবনে ও পছন্দ করে না আমরা সম বয়সী ও আর আমি এক
সাথে লেখা পরা করেছি কিন্তু কখনো ও আমার সাথে মেশে নি। এই যেমন স্কুলে যাওয়া আসা
আলাদা ভাবে হয়েছে।স্কুলে গিয়ে ও আমাকে চিনতো না এমন করতো আমি প্রথম এ মিশতে
চাইলেও ও আমাকে ইগনোর করতে দেখে আর কাছে যাই নি একাই চলেছি।
চাচি মানে তিশার মা আমাকে একটু দেখতে পারে খুব না কিন্তু তবুও এখানকার মাঝে সেই।
এই এখন খোঁজ নিতে এসেছে।
চাচি আর তিশা মিলে আমাকে ধরে উঠালো উঠার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নাই বাবাকে এখানে রেখে কি
করে আমি বাড়ি যাব কি করে চোখ বেয়ে জল পরতে লাগলো।
আমি নরছি না এক প্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগলো বাড়িতে। তারপর আমাদের রুমে নিয়ে
এলো।
চাচি একটা খাবারের প্লেট এনে আমাকে দিলো আর বললো,
” সারাদিন কিছু খাচ্ছ নি এখন কিছু খা। না হলে তো না খেয়ে মরবি।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
“মরলেই তো বেঁচে যাই চাচি খাবার কেন এনেছো মরতে দাও না খেয়ে। আত্মহত্যা তো করতে
পারবো না তাই এভাবে মরলে…
“চুপ করবি তুই চুপচাপ খা।”
একটু কড়া গলায় বলল চাচি।
মেঝের দিকে তাকিয়ে আছি। চাচি আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রেখে নিজেই জোর করে এক লুকমা খাবার মুখে ঢুকিয়ে দিলো।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি চাচির দিকে চিবাচ্চিনা।
“এমন হা করে না থেকে খাবার গিল।”
ওইভাবেই রইলাম পারবো না গিলতে কিন্তু খাবার ফেলে ও দিতে পারবো না। কি করবো আমি
আমার চাপা মে ব্যাথা হয়ে আছে এই খাবার চিবানোর শক্তি ও নাই তাই নিরুপায় হয়ে না চিবিয়ে
গিললাম আর হলো বিপদ খাবার গলায় আটকে গেল আমি খটখট শব্দ করে কেশে উঠলাম,,
সিলবরের গ্লাসে পানি ছিলো তা নিয়ে খেতে লাগলাম নাক মুখ দিয়ে পানি পরছে কষ্টে চাচি
হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আর জোর করে নি খাওয়াতে অনেক ক্ষন কেশে ঠিক
হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম নিস্তেজ হয়ে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর আমি নিরব হয়ে মাথার
উপর জালি ফ্যান দেখছি এটা আমার রুম। ঘুম আসছে না চাচি চলে গেছে একটু পর আসবে
বলল,
ঘুম ভাঙল খারাপ সপ্ন দেখে চিৎকার করে ওঠে বসেছি আমি। তাকিয়ে দেখি আমি নিজের রুমে
শুয়ে আছি পাশে চাচি শুয়ে ঘুমে বিভোর।
সপ্নে দেখেছি আদ্রকে নিয়ে তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে আসছে বাবার মতো আদ্রকে হারিয়ে যাবে।
বাবা মা আদ্র যারা আমাকে ভালোবাসে সবাই আমাকে ছেড়ে নিষ্শ করে চলে যায় কেন?
বাবা আমাকে এইভাবে ছেড়ে চলে গেল একবার ও ভাবলো না এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে একা আমি
কি করে বাঁচবো।
.
আদ্র যে আমাকে ভালোবাসতো কতো বুঝাতে চেয়েছে আমি বুঝে ও না বুঝার ভান করে
থেকেছি।
আজ সেও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে কালকে কতো ক্রিটিক্যাল অবস্থা দেখেছি সারাদিন চলে
গেছে আচ্ছা সে কি বেঁচে আছে নাকি বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
সবাই আমাকে একা করে চলে যাচ্ছে কেউ নেই আমার কেউ না। কেউ ভালোবেসে না কার
জন্য বেঁচে থাকবো আমি অনেক তো চেষ্টা করলাম আর বেঁচে থাকার মানেই হয়না।
সাথে সাথে চরম একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। মনটা মৃত্যু চাইতে লাগলো এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার
সমস্ত ইচ্ছা নষ্ট হয়ে গেল।
এখন আমার পিছু টান নাই মরতে পারলেই বাঁচি।
মৃত্যুর আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দেবে।
আত্মহত্যা মহাপাপ এই জিনিস টা আমার মাথায় ই এলো না এখন আমি ক্ষেপে গেছি মৃত্যু ছাড়া
আর কিছু মাথায় আসছে না।
বাঁচা মতো কোনো কারনেই নাই আর তাই মরতে বাঁধা নাই নিশঃব্দে আমি খাট থেকে নেমে
বেরিয়ে পরলাম পাশে একটা গভীর পুকুর আছে আমি সাঁতার জানি না তাই সেখানে।
ভেবেই হাঁটতে লাগলাম।
গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ফজরের আজানের শব্দ কানে আসছে। আমার সামনে চাচি
দাঁড়িয়ে আছে কঠিন চোখ মুখ করে।
পুকুরের সামনে আমি ও আমার মুখোমুখি চাচি দাঁড়িয়ে। তার মুখে রাগ স্পস্ট।
একটু আগেই আমি এই পুকুরে এসে নিজের জীবন শেষ করে দিতে চাইছিলাম চোখ বন্ধ করে
একবার করতেই আপন জনের মুখ ভেসে উঠলো মনে সাথে আদ্রর কথাও।
যখন ঝাঁপিয়ে পড়তে যাব পেছনে থেকে চাচি আটকে ধরে আমাকে চাচিকে দেখে চরম অবাক
হয়।
.
“তুই এখানে কি করছিস স্নেহা।” ককর্শ গলায় বলল চাচি।
“আমি বাঁচতে চাই না আর তাই মুক্তি পেতে এসেছি কেন আটকালে আমাকে।”
কান্না গলায় বললাম।
“মরতে চাস আচ্ছা মরবি যেহেতু মর কিন্তু আমি যে তোর ঘরে ছিলাম তুই আমাকে রেখে চলে
এলি মরতে তোর মৃত্যর পর এই দোষ আমার ঘড়ে পরুক তুই কি এটাই চাইছিলি।”
“কি বলছো আমি এমন কেন চাইবো। এমনটা চাইনি শুধু শান্তি চাইছিলাম।”
“আত্মহত্যা করে শান্তি চাইছিলি হাসালি আমাকে। আত্মহত্যা মহাপাপ সেটা কি তুই ভুলে গেছিস। বাবা মা সবার সারাজীবন থাকে না একদিন না একদিন তারা আমাদের ছেড়ে চলে যায় ই। তাই
দুঃখে কাতর হয়ে এতো বড় সিদ্ধান্ত নিবি এটা তুই ঠিক করিস নি স্নেহা।”
চাচি আমাকে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে এলো।
ভোর হলো ওইভাবেই বসে থেকে।
চাচি আমার পাশে বসে কঠিন মুখ করে তাকিয়ে ছিলো।
পরদিন সকালে খিদের জ্বালাটা বুঝতে পারলাম। একদিন না খাওয়া শেষ খেয়েছিলাম অন্তরার
সাথে যাওয়ার আগে। গলা শুকিয়ে আসছে একটু পানি মুখে দিলাম সাথে সাথে তিতা হয়ে এলো
মুখ।
শীত ও লাগছে অনেক ক্ষন ধরে জ্বর এলো নাকি।
হ্যা সত্যি জ্বর এলো খাবার আর পেটে দিতে পারলাম না তিতা মুখে পেটে খিদে কিন্তু খেতে
পারছি না। এতো কষ্ট লাগছে মনে হয় মরে যাব এই জ্বর এই।
মনে হমনে এইটাই চাইছি এই জ্বরই যেন আমার মৃত্যুর কারণ হয় এতে আমার আত্মহত্যা ও
করতে হবে না আর আমি অভিসপ্ত জীবন থেকে বেঁচে যাব।
অচেনা শহর পর্ব ৪১
কিন্তু চাইলেই কি এতো সহজে মুক্তি পাওয়া যায় যায় না। মুক্তি পাওয়া এতো সহজ না।
আমার ও তাই হলো চাচির সেবায় সুস্থ হলাম সাথে আরেক বিপদ মাথায় এসে পরলো।
জীবন কি আমাকে বিপদ থেকে ছারবে না। তিন দিন পর।
একটু সুস্থ হয়েই আমগাছের তলায় মুখ ভার করে বসে ছিলাম। এমন সময় একজন কে দেখে
আমি চমকে উঠলাম,
“স্নেহা তুই চইলা আইছিস। যাক এবার তাইলে বিয়েটা করতে পারুম। কতো দিন পর তোরে
দেখলাম। তিশা না কইলে তো জানতেই পারতাম না তোর বাপ বইলে মইরে গেছে কষ্ট পাস না
আমি তোরে বিয়া করুম আজকেই বাপজানরে কমু তোরে আমার বাড়ি রাখুম।”
আমার পাশে বসতে বসতে বলল। ওর নাম রহিত। আমাদের গ্ৰামের চেয়ারম্যানের ছেলে।
লেখাপড়া একটুও করে নাই। এমন কোন খারাপ কাজ নাই করে না। গ্ৰামে থাকা কাল থেকে
আমার পেছনে পরেছে ঢাকা গিয়ে এর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল আবার এর সামনে পরলাম কি
বললো তিশা বলেছে। ইচ্ছে করেই করেছে এটা ভয়ে কাঁপতে লাগলাম আমি রহিত এগিয়ে
আসতে লাগল ফট করে আমার হাত ধরে নিলো আমি হাত ছারাতে চাইলাম।
রহিত বিচ্ছরি হাসি দিয়ে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। সামনে মহা বিপদের আবাস পাচ্ছি।