অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৪৩ || golper mohol golpo

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৪৩
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

চেয়ারম্যান বাড়িতে সকাল থেকে বিয়ের তোরজোর চলছে। বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে
কথা। ছেলে মুক্তার আলী খুব‌ই ভালো বাসেন যা চায় সেটা যেভাবেই হোক তাকে এনে দেন। তিন
মেয়ের পর এই ছেলে তার অতি আদরের এজন্য তো ছেলে তার খারাপ হয়ে গেছে এই নিয়ে
চিন্তিত ও থাকেন ছেলে তার একটু ও লেখা পড়া করে নি করবে কি করে স্কুলে গিয়েই তো
স্যারের সাথে মারপিট করেছি।

তার পরে আর ভর্তি করে নি ছেলে ও পরতে চায়নি। তারপর থেকে ইচ্ছে মতো থেকে খারাপ
সঙ্গে প্রথমে ধমক দিলেও ছেলেও মলিন মুখ দেখে ক্ষমা করে দিতেন এটাই তার বড় ভুল এখন
যে ছেলে হাতের বাইরে চলে গেছে মদ, গাঁজা খেয়ে এলাকায় মস্তানি করে বেরায় তার কথা
ভুলেও শুনে না।

এই ছেলের জন্য তার নাম খারাপ হয়েছে বিশেষ করে কিছু দিন আগে মারপিট করে জেলে
পযন্ত গিয়েছিলো। চেয়ারম্যান এর ছেলে ছেলে এটা নিশ্চয় ভালো কথা না এলাকা বদনাম ছুটে
গিয়েছিল। সেই থেকে ছেলের উপর তার খুব রাগ কথা বলে না। ফাস্ট টাইম ছেলের গায়ে হাত ও
তুলেছিল তারপর একদিন ছেলে এসে বলে সে বিয়ে করতে চায় তাও কাকে আমাদের এলাকা
সামান্য একটা স্কুল মাস্টার এর মেয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

সাবসাফ না করে দেয় ওই গরীব ঘরের মেয়ে কে কিছুতে ই আমি বাড়ির ব‌উ করবো না। কিন্তু
ছেলে খাওয়া দাওয়া অফ করে দেয় তার এক কথা বিয়ে সে করবেই তাও রাজি হলাম না তখন
ছেলে বলে আত্মহত্যা করবে ভয় পেয়ে যায় কারন শত হলেও ছেলে আমার একটাই কিছু হয়ে
গেলে আমি রাজি হয়ে কিন্তু সাইফুল ইসলাম ( স্নেহার বাবা।)রাজি হয় না। তার মেয়ে কম বয়স
এ্যান ত্যান মেয়ে আমার ছেলের মতো খারাপ ছেলের কাছে নাকি বিয়ে দেবে না শত বলেও রাজি
করাতে ব্যর্থ হয়। তিনি কিছু তেই আমার ছেলের কাছে বিয়ে দেবে না। তারপর ছেলেকে একটা
মিথ্যা বলি আমি কারন এটা জানলে ছেলে আমার পাগল হয়ে যাবে। বলি স্নেহা আর একটু বড়
হলে বিয়ে দেবে।

তারপর এই বলে ছেলে মানিয়ে রাজি।
এদিকে স্নেহাদের এই করুন অবস্থা মন থেকে ওই মেয়ে কে কখন সহ্য হতো না সুযোগ বুঝে
শহড় পাঠায় রাতে ছেলের মাথায় ভুত যায় কিন্তু ক‌ই গেল তো না সেই আবার তাকে বিয়ে করতে
পাগল করেছে দুইদিন থেকে এবার তার কথা স্নেহার সাথে বিয়ে দিলে খারাপ সব কাজ থেকে
সরে আসবে ভালো কাজ করবে তার শুধু স্নেহাকে চাই।

মেয়েটাকে পছন্দ না হলেও ছেলে এই মেয়ের জন্য ভালো হতে চাইছে এটা শুনে মন স্থির করি
এই মেয়ের সাথে বিয়ে দেব।আর রাজি হয়ে যায় মেয়ে যেহেতু কেউ নেই ভাই ছিলো সে তো
লাপাত্তা তাই চাচির কাছেই যায় চাচা রাজি হলো ও চাচি হয় না কিন্তু এবার বিয়ে আমি দেবোই
যেভাবেই হোক বিয়েটা হলে ছেলে ভালো হবে বলেছে।
ওর চাচিকে তোয়াক্কা না করে ওর চাচাকে টাকার লোভ দেখিয়ে বিয়ের আয়োজন করেছি।
গ্ৰামের মানুষ ভাবছে চেয়ারম্যান কতো দয়ালু এতিম মেয়েকে ছেলের ব‌উ করছে। এতে আমার
রেপূটেশন ও ভালো হচ্ছে।মেয়ে তো রাজি না একটু ও কিন্তু আমি তো একে ছারছি না তাই
নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছি তাতে পালাতে না পারে।

.

জোর করে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে রহিত এর বড় বোন। রাগে দুঃখে সব কিছু ধ্বংস করে
ফেলতে ইচ্ছে করছে। ওইদিন মরতে পারলেই বলে বেঁচে যেতাম কিন্তু মরতে পারলাম না।
এমন ভাবে সবাই জেকে ধরছে পালানোর ও সুযোগ ও নাই এই বাড়ির কেউ আমাকে একটু
সাহায্য করবে না সবাই খারাপ।
রহিতকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে ওকে কিনা আমি বিয়ে করবো অসম্ভব মরে গেলেও
এই কাজ আমি করতে পারবো না।
“এই মেয়ে এতো কাঁদছিস কেন সাজাতে পারছি না ভালো মতো।”

“আমি সাজাবো না সরুন তো একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন লজ্জা করে না।”
“কি দেমাক বাবা গো এতো দেমাক কেন রে তোর। এই ঘরের ব‌উ হবি এইটা তোর ভাগ্য রহিত
তোর জন্য পাগল না হ‌ইলে জীবনে তোর মতো ছোটলোক ঘরের এতিম মাইয়া আমার ভাইয়ের
ব‌উ করতাম না। কি দেইখা যে তোর জন্য পাগল হ‌ইল এমনিতে সুন্দর তুই কিন্তু তাই কি কতো
সুন্দর ধনী ঘরের মাইয়া দেখাইলাম তার পছন্দ ই হলো না।”
আফসোস করে বলল।

আকুতি মিনতি করে বললাম,,,”আমি আপনার ভাইয়ের ব‌উ হতে চাইনা প্লিজ আমাকে সাহায্য
করেন এখান থেকে পালাতে আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।”
আমার কথায় ফুঁসে উঠলো,, ” কি বললি আমি তোকে সাহায্য করবো পাগল নাকি আমি।
পালানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে আজকে তোর বিয়ে আমার ভাইয়ের সাথেই হবে
ন্যাকা কান্না অফ কর।”

শক্ত মুখ করে বলল। আমি নিরাশ হয়ে চুপ করে র‌ইলাম। কি করবো কিভাবে এখানে থেকে
পালাবো কাল থেকে এই বাসায় এক ঘরে বন্দি আছি দুজন মানুষ ছাড়া কেউ আমার কাছে আসে
নি এই রোহিতের বড় বোন সাবিনা আর রোহিতের মা।
তাকে আমার খারাপ লেগেছে খুব কঠিন মুখ করে তাকিয়েছে আমাকে তার একদম পছন্দ জানি।
এই পরিবারে শুধু মুক্তা একটু ভালো কিন্তু অদ্ভুত ওকেই আমি দেখি নি ওর সাথে আগে আমার
একটু সাক্ষাৎ ছিলো ওর সাথে দেখা হলেৎএকটা ব্যবস্থা করতে পারতাম।

.

মুক্তা রোহিতের ছোট বোন আমার এক বছর সিনিয়র।
এমন সময় দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো রহিত।
দাঁত বের করে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে
তাকে দেখেই সাবিনা চলে গেল।
রোহিত আমার কাছাকাছি আসতে লাগলো হাসতে হাসতে। সে যে খুব খুশি তার হাবভাব‌ই বলে
দিচ্ছে আমি ঘৃণার চোখে তাকিয়ে আছি। তারপর সাহস করে বললাম,
” দেখুন আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

কিছু বলল না ওইভাবেই অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে রাগে শরীর কাঁপছে আমার
মাথাটা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
“তোমারে খুব সুন্দর লাগতাছে সেই রকম।”
বলেই আমার দিকে এগিয়ে এলো তারপর একটু দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত
স্কান করলো তারপর বললো,
” বিয়ে করতেই হবে তোমার হয় ইচ্ছে তে নাহলে জোর করে।”
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল।

কাউকে বলে লাভ নাই কেউ আমার কথা শুনবে না কেউ সাহায্য করবে না তা করার
আমাকেই করতে হবে
রুমে বসে আছি সন্ধ্যায় দিকে চাচি এলো কোথা থেকে এসেই আমাকে জরিয়ে কেঁদে দিলো
এই একটা মানুষ ছাড়া আর কেউ আমার এই নিয়ে অসম্মতি প্রকাশ করে নি।
“চাচি আমাকে এইখানে থেকে মুক্ত করো প্লিজ এটাকে আমি করতে পারবো না।”
কান্না গলায় বললাম।

চাচি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর বললো,,,,” আমি কি করবো স্নেহা
কেউ আমার কথা শুনছে না। আর এখন পালাতে ও পারবি না তোর জন্য লোক ও রাখা আছে
যারা বিয়ের আগ পর্যন্ত নজরে রাখবে। পালানোর পথ নেই।”
“এই বিয়ে মরে গেলেও করবো না আমি। একটা ফোন এনে দিতে পারবা।”
“ফোন দিয়ে কি করবি?”

.

“একজনকে কল করতাম তার খোজ নেওয়া হয়না অনেক দিন। ছয়দিন হয়ে গেছে তাকে মৃত্যুর
মুখে রেখে এসেছি আল্লাহ জানে সে এখন কেমন আছে? চাচি দোয়া করো সে যেন সুস্থ থাকে।”
চাচি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বলল,,, ” কে সে?”
“আছে ফোন দিতে পারবা।”
“দাঁড়া দেখি তোর চাচাকে দেখী দেয় কিনা।”
“আমার কথা বলো না।”
মাথা নেড়ে চলে গেল। দুদিন ধরে আদ্রকে খুব মিস করছি ওর কি অবস্থা এখন জানার জন্য
হাঁসফাঁস করছি। কিন্তু নিজের ফোন যে হারিয়ে ফেলেছি ঢাকা থেকে আসার সময় বাবার চিন্তায়
কিছু আনতে পারানি‌। একটা ব্যাগে কিছু জিনিস এনেছে কিছু জামা কাপড় কেউ ভয়ে দিয়েছিল
মনে হয়।

একটু পর চাচি এলো হাতে ফোন নিয়ে তা দেখেই খুশি লাগল অনেক।
তারাতাড়ি হোন হাতে নিলাম আমার হাত কাঁপছে অদ্ভুত ভাবে। কাঁপা কাঁপা হাতে আদ্রর নাম্বার
উঠালাম এই নাম্বারটা আমার মূখস্ত হয়ে আছে এতো কল দিতো আদ্র মুখস্থ না হয়ে পারেই নি।
আল্লাহকে ডাকছি ফোনটা যেন আদ্র ধরে আর সে যেন সুস্থ থাকে। রিং হ‌ওয়ার শব্দ হচ্ছে সাথে
আমার হাটর্বিট বেড়ে গেছে মনটা কেমন করছে কি হবে ভাবছি?
রিং হতে হতে কেটে গেল কেউ ধরলো না। ফোন কানে থেকে নামিয়ে সামনে মুখ কালো করে
আছি।

চাচি আমার দিকে প্রশ্ন ত্তোক চোখে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো ধরলো না?”
আমি মাথা নেড়ে না বললাম।
“মন খারাপ করছিস কেন হয়তো ফোনের কাছে নেই আর একবার দে।”
“আমার ভয় করছে খারাপ কিছু শুনবো না তো।”
“ভয় পাচ্ছ না আল্লাহ কে ডাক সব ভালো হবে।”
“কিছু ই তো ভালো হলো না আমার সাথে।”
“তারাতাড়ি কর কেউ চলে আসবে।”

.

চাচির কথায় আমি আবার নাম্বার বায়ার করলাম কিন্তু এবার কপাল খারাপ সাবিনা চলে এলো
তাকে দেখেই চাচি ফোন কেড়ে নিয়ে লুকিয়ে ফেলল,,,
“কি ব্যাপার এতো কি কথা দুজনের?”
চাচি হাসি মুখ করে বলল, ” এমনি তেমনি কিছু না।”
সাবিনা গম্ভীর মুখে বলল, “চল স্নেহা এখন বিয়ে পরাবে।”
চাচি সাথে সাথে বলল,, “এখন‌ই।’
আমি চমকে উঠলাম। সব কিছু কি হাতের বাইরে চলে গেল। এই রোহিতকে কিনা শেষে বিয়ে
করতে হবে।

কান্না করে দিলাম মুখে শব্দ নেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি
চাচির দিকে।
বাইরে যাবার জন্য আমার হাত ধরে টেনে নিলো সাবিনা আমি নরছি না শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
একটু নরবো না প্রতিঙ্গা করেছি।
” এই মেয়ে চলো। কি হলো নরছো না কেন?”
“আমি যাব না।”
“কি যাবে না মানে কি?”
“যাব না মানে যাব না। এই বিয়ে আমি করবো না।”
“করবে চলো।”
“করবো না বললাম তো ছারুন হাত। ”
ঝামটা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলাম।

অচেনা শহর পর্ব ৪২

সাবিনা আগুন হয়ে গেল আমার কথায় ও রাগ দেখে। রেগে গিয়ে তাকালো আমার দিকে তারপর
কি মনে করে গটগট করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
তার ঠিক পাঁচ মিনিট পর চেঁচামেচি শব্দ এলো কানে। তা শুনে চাচি চলে গেল আর কিছু ক্ষন পর
এসে বলল রোহিতকে নাকি পুলিশে ধরতে এসেছে। কয়েকদিন আগে রোহিত মারামারি করেছে
সেখানের একটা ছেলে মারা গেছে তাই তারা ডাইরি করেছে রোহিতকে এখন থানায় নেওয়া হবে।
আমি এটা শুনে কতোক্ষন র্তদ্ধা খেয়ে গেলাম। হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি সাথে খুশি ও লাগছে
রোহিত কে পুলিশে নিয়ে গেলে বিয়েটা আটকে যাবে।

“চাচি দেখো নিয়ে গেছে কিন্তু শয়তান টাকে।
“নিয়ে গেলে বেঁচে যাবি বিয়ে হবে না।”
“হ্যা।”
খুশিতে আমার চোখ চিকচিক করছে।
আজকে বিয়ে আটকে গেলে আমাকে এই নরক থেকে পালাতে হবে। যে করেই হোক।

অচেনা শহর পর্ব ৪৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.