অচেনা শহর পর্ব ৪৪
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
যেখানে বাড়িতে বিয়ে হবে বলে সবাই মাতামাতি করছিল এখন তারাই থ হয়ে জিম মেরে বসে
আছে।
বাসার সবাই এতে কষ্টে কাতর হলেও আমার খুশির সীমা নাই।
বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।
আমি রুমে থেকে শুনতে পাচ্ছি সেগুলো। আমার আশেপাশে কেউ নেই একা বসে আছি রুমে
চোখ বুলিয়ে নিলাম সং হয়ে বসে থেকে কি হবে পালাতে হবে এই সুযোগ এখন সবাই রোহিতের
চিন্তায় মক্ত আছে সেই নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। এখন আমি যদি পালাই কেউ খেয়াল
করবে না কিন্তু এই রাতে যাবো কোথায় ? খুব রাত হয়নি আটটার মতো বাজবে কিন্তু বাইরে তো
অন্ধকার যাব কোথায়?
একটা কানা কড়ি ও নাই হাতে যাবই কি করে। হঠাৎ চাচি দৌড়ে এলো আমার কাছে আর বলল
চল।
কোথায় যাবো?
অবাক হয়ে বললাম।
আমার সাথে চল এবারের মতো বেঁচে গেলি রে স্নেহা।
বলেই চাচি আমার হাত শক্ত করে ধরলো।চাচি আমার খারাপ চায় না জানি তাকে বিশ্বাস করি
আমি তাই চাচির সাথে বেরিয়ে এলাম।
এই বাড়ির পেছনে দিয়ে দরজা আছে আমি জানতামই না চাচি আমাকে সেখানে দিয়ে বের করে
নিয়ে এলো।
এপাশে কেউ নেই অন্ধকার।
চাচি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো।
চল তোকে বাচাচ্ছি। এইখানে থাকলে ওই রোহিতকে বিয়ে করতেই হবে কাল সকাল হতেই
ছেলেকে ছাড়িয়ে আনবে। তারপর বিয়ের এখন সবাই রোহিতকে নিয়ে চিন্তিত তোর কথা মাথায়
নেই এখন পালানোর মুখখোম সু্যোগ।
কিন্তু এই রাতে আমি কোথায় যাবো।
অসহায় মুখ করে বললাম।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
চাচি আমার কথার উত্তর এ কিছু বলল না টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
কিছুটা আসতেই রাস্তায় উঠলাম আর চোখ পরলো একটা গাড়ি ও একজন লোকের উপর।
লোকটাকে দেখে চরম বিষ্ময় হলাম একবার চাচি ও একবার তার দিকে তাকাচ্ছি।
সে ফোন টিপছিল এজন্য তার মুখ আরো পরেছিল আমার চিনতে অসুবিধা হয় নি।
এই যে সেই পুলিশ টা উনি এখানে কি করছে? আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে চাচির
দিকে তাকালাম।
“এসব কি চাচি উনি এখানে কি করছে আর তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে।”
বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
“উনার সাথে তুই ঢাকা চলে তা তাহলে এই রোহিতের থেকে রক্ষা পাবি।”
চাচির কথা অবাক হলাম এমন অচেনা অজানা ছেলের সাথে আমাকে যেতে বলছে। আর এটা
ঠিক যে উনি আমার সেদিন উপকার করেছে তাই বলে তো উনার সাথে রাত বিরাতে চলা যায়
না। উনি এখানেই বা কি করছে?
তাই বলে উনার সাথে যাব। আর উনি এখানে কি করছে?
“তোর জন্য ই এসেছে।”
আমি অবাক হলাম আমার জন্য এসেছে মানে,, ” আমার জন্য মানে কি?”
চাচির আগে লোকটা আমার দিকে এগিয়ে এলো আর বলল,,,
“এই ধরেন কথা বলুন।”
লোকটা আমার দিকে তার ফোন এগিয়ে দিলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তার ফোন দিকে একবার তো
তার মুখের দিকে তাকাচ্ছি।
উনি আমার দিকে ফোন ধরে আছে। আমি তো অবাক ফোন দিচ্ছে কেন ফোন দিয়ে কি করবো
আমি?
কি হলো নেন কথা বলুন?
বিরক্ত হয়ে বলল।
.
কার সাথে কথা বলবো আর আপনি আমাকে ফোন দিচ্ছেন কেন?
বিষ্ময় ভরা চাহনি দিয়ে বললাম।
কথা বলে দেখুন।
কথা বলবো মানে কি? অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে পারবো না আর আপনি এখানে কেন
এসেছেন? আর আমাকে নিয়ে বা যাবেন কেন আপনার মতলব কি বলুন তো।
রেগে বললাম কথা শেষ করে উনার দিকে তাকালাম উনি আমার কথা শুনে চোখ মুখ শক্ত করে
তাকিয়ে আছে সে যে রেগে আছে মুখ দেখেই বুঝা যায়।
কিন্তু আমি উনার সাথে যাব না কেন যাব রাতের বেলা একটা ছেলেকে বিশ্বাস করা যায় না। যদি
কোন খারাপ মতলব থেকে থাকে তাহলে।
নানান খারাপ চিন্তা মাথায় আসছে। মনে মনে ডিসাইড করলাম উনার সাথে কোথাও যাব না
এখন আমি চাচির সাথে নিজের বাড়ি যাব ভোরের দিকে আমাকে পালাতে হবে।
“চাচি চলো এই লোকের সাথে আমি কোথাও যাবো না।”
চাচির হাত ধরে বলল চাচি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই উনি আবার ফোনটা
আমার কাছে এনে লাউডস্পিকার দিলো এবার আমি ওপাশের কথা শুনতে পেলাম ওপাশ থেকে
অন্তরার কন্ঠ আসছে।
“হ্যালো স্নেহা বোন আমার প্লীজ নিশাতের সাথে চলে আয়।”
অন্তরার কন্ঠ শুনে তো আমি হতদম্ব সাথে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। চমকে উনার দিকে তাকিয়ে
ফোনটা কানে নিলাম।
“হ্যালো”
থ্যান্কস আল্লাহ অবশেষে ফোন ধরলি।
তুই উনাকে কিভাবে চিনিস।
সেসব পরে হবে। আগে বল তুই কেমন আছিস?
ভালো না আব্বু…
বলেই কান্না করে দিলাম।
আমি সব শুনেছি কাদিস না প্লীজ। আর এখন নিশাত ভাইয়ের সাথে চলে আয় আমি তাকে
পাঠিয়ে দিন তোকে আনতে।
উনি কে বললি না তো আর তুই উনাকে কি করে চিনিস।
পরে বলবো। এখন তারাতাড়ি আয়।
হুম অন্তরা আদ্র কেমন আছে। ও ঠিক আছে তো।
আদ্রর কথা বলতেই অন্তরা চুপ হয়ে গেল।
ও কথা বলছে না দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
“কিরে কথা বলছিস না কেন? বল আদ্রর কি অবস্থা।”
“আগে আয় তারপর সব বলবো।”
“আমি এখন ও শুনতে চাই।”
.
আর কথা এলো না অন্তরা লাইন কেটে দিলো। আমি ফোন কানে থেকে সামনে এনে তাকিয়ে
আছি। আদ্রর খবর দিলো না কেন অন্তরা মনটা কু ডাকছে কেন দিলো না।
আদ্র ঠিক আছে তো অজানা ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল।
“এই যে ম্যাডাম এবার আমার সাথে যাবেন তো নাকি আমি চলে যাবো।”
নিশাত লোকটার নাম অন্তরা তো তাই বলল। লোকটাকে যেহেতু অন্তরা চিনে তাহলে বিশ্বাস করা
যায়।
আদ্রকে নিয়ে ভয় করছে এই ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো যত তারাতাড়ি অন্তরার কাছে
যেতে পারবো।
লোকটার দিকে একবার তাকিয়ে চাচির দিকে তাকালাম। চাচি পাশেই না থাকলে হয়তো বের হতে পারতাম না চাচি কে জরিয়ে ধরে কেদে উঠলাম তারপর চাচির থেকে বিদায় নিয়ে লোকটার
গাড়িতে উঠে বসলাম।
চাচি দাঁড়িয়ে রইলো গাড়ি ছাড়া অবধি। আমি গাড়ির পেছনে জরোসরো হয়ে বসে আছি আর
উনি সামনে বসে ড্রাইভিং করছে।
আমি মনটা নিশমিশ করছে এই নিশাত অন্তরার কে হয় জানার জন্য। থাকতে না পেরে
জিজ্ঞেস করলাম,,
“আপনি অন্তরা কে কি করে চিনেন?”
প্রশ্নটা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি উনার পেছনটা দেখা যাচ্ছে। উনার গায়ে আজকে পুলিশ
ড্রেস নেই নীল শার্ট পরে আছে। উনি কিছুই বলল না। এক মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে কথা বলছে
না যেন আমার কথায় শুনে নি।
উনি যে আমার সাথে কথা বলতে চায় না বুঝলাম তাই আর কিছু বললাম না চুপ করে বসে
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।
আদ্রর জন্য খুব টেনশন হচ্ছে অন্তরা কেন আদ্র কেমন আছে বলল না। আদ্র সুস্থ আছে তো
নাকি না চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
আল্লাহ আদ্র যেন ঠিক থাকে ওকে সুস্থ রাখো।
.
শাড়ি পরেই এসেছি ওই বাড়ির শাড়িটা নিয়ে এসেছি। গয়না খুলে ফেলেছিলাম না হলে ওই গুলো
ও চলে আসতো অন্যের জিনিস নিতে চাই না।
হঠাৎ পেটে ব্যাথা অনুভব করলাম পেট চেপে ধরলাম ব্যাথার কারন বুঝতে দেরি হলো না
সারাদিন রাগছ দুঃখে না খেয়েছিলাম।এখন সেই খিদে জানান দিচ্ছে।
গ্ৰাম পেরিয়ে মেইন রাস্তায় এসে গেছে গাড়ি।
খিদের জ্বালা সহ্য করতে পারছি না। লাজ লজ্জা ভুলে সামনের লোকটাকে বলে বসলাম।
অনেক দোকান পাট দেখা যাচ্ছে কিছু খাওয়া দরকার না হলে থাকতে পারবো না।
এই যে শুনছেন গাড়ি থামান।
কিছু হলো না শুনেও শুনলো না মনে হয়।আমার রাগ উঠে গেল। চিৎকার করে উঠলাম,,
সাথে সাথে গাড়ি থেমে গেল। আর উনি রেগে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।
হোয়াই আর ইউ ম্যাড, এই ভাবে কেউ চিৎকার করে আর একটু হলে এক্সিডেন্ট হয়ে যেত। আপনার কোন কমন সেন্স নাই।
রেগে বলল।
আমিও রাগ দেখিয়ে বললাম,, আপনি আমাকে বকছেন কেন দরকার ছাড়া তো আর আপনাকে
ডাকি নাই। কিন্তু আপনি তো আমার কথা কানেই নিচ্ছেন না।
কি দরকার আপনার যে চিৎকার করে ঢাকতে হচ্ছে।
আমার খিদে পেয়েছে সকাল থেকে আমি না খাওয়া। প্লিজ এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে দিন
আমার কাছে টাকা আছে।
বিরক্ত মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে রেগে তারপর উঠে চলে গেল। আমি পেছনে থেকে ঢেকে
উঠলাম।
আরে টাকা নিয়ে যান তো।
শুনলো না চলে গেল।
আমার কাছে টাকা ছিলো না কিন্তু চাচি আবার সময় একশ টাকা দিয়ে দিয়েছে যদি দরকার পরে
এজন্য।
গাড়ি যেখানে পাক করেছে তার থেকে একটু দূরে মুদি দোকান দেখা যায় সেখানে গিয়ে নিশাত
কেক পানি বিস্কুট নিয়ে এসেছে।
অচেনা শহর পর্ব ৪৩
আপনি টাকা না নিয়ে চলে গেলেন কেন?
এখন টাকা দিন।
কতো হয়েছে।
লাগবে না।
লাগবে না মানে কি আমি অন্যের টাকায় খায় না।
৭০ টাকা দিন।
গম্ভীর হয়ে বলল।
কেক এনেছেন কেন শুধু বিস্কুট আনলেই হতো।
মনে মনে বলছি কেক না আনলে চল্লিশ টাকায় হতো। এখন আমার কাছে ত্রিশ টাকা থাকবে।
তাহলে কেক দিয়ে দিন।
না থাক। এই ধরেন টাকা।
একশ টাকার নোট দিলাম। উনি টাকা নিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো একি টাকা ফেরত দিচ্ছে না
কেন? দিবে না নাকি এই ত্রিশটাকা আমার সম্বল।
এই যে টাকা দিচ্ছেন না কেন? ত্রিশ টাকা দিন।
রেগে বললাম।
আবার ফেরত ও দিতে হবে।
টাকা বেশি নিবেন কেন?
এই ধরুন লাগবে না আপনার টাকা আমার কাছে ভাংতি নাই।
ভাংতি নাই আচ্ছা ভাংতি করে দিবেন ত্রিশ টাকা পায় আপনার কাছে। এটাই আমার শেষ সম্বল।
নাক মুখ কুঁচকে বিরক্ত হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশাত গাড়ি চালাতে লাগলো।
আমি ও আর কিছু বললাম না খেয়ে চুপ করে মাথা সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলাম খুব ক্লান্ত
লাগছে।