অচেনা শহর পর্ব ৪৫
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
কতো দিন পর আদ্রকে দেখবো। ছটফট করছি আমি গাড়ি এসে হসপিটালের
সামনে থামলো একাই এসেছি। কাল রাতে অন্তরার বাসায় এসেছিলাম।
অন্তরা আমাকে বিয়ের সাজে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে এসব কি?
আমি আগে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলি ও আমাকে বিছানায় বসিয়ে জিগ্যেস
করে।
আর গ্লাসে পানি দেয় পানি খেয়ে সব বলি ওকে। ওর বাসায় ওর ছোট বোনটা
ছাড়া আর কাউকে দেখি নাই ওকে জিজ্ঞাস করতেই বললো সবাই আত্মীয় বাড়ি
গেছে দুইবোন বাসায় একা।
নিশাত আমাকে রেখেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
রাতে অন্তরার থেকে জানতে পেরেছি নিশাত লোকটার ওর ফুফাতো ভাই যার
সাথে কিনা ওর বিয়ে ঠিক করেছে।
বিয়ের কথা শুনেই তো শক খেয়েছিলাম। অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,,
বলিস কি বিয়ে? হৃদয়ের কি হবে?
আমি এই বিয়েতে রাজি না আর না নিশাত ভাইয়া রাজি। বাড়ির লোক আমাদের
মত না নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিন্তু আমরা কিছুতেই এই বিয়ে করতে
পারবো না। বিশেষ করে আমি অসম্ভব তুই তো জানিস আমি হৃদয়কে
ভালোবাসি।
হুম জানি তো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
কিন্তু সমস্যা একটাই হৃদয় এখন বিয়ে করতে পারবে না । ওর তো স্টুডেন্ট
লাইফ বিয়ে কি করে করবে বলে কিছু দিন ওয়েট করতে হবে কমপক্ষে দু’বছর।
কিন্তু বাবা মা তো মানছেই না।
চিন্তা করিস না সবঠিক হবে।
তারপর আদ্রর কথা জিজ্ঞেস করলাম।
অন্তরার কথা শুনে বুকের উপর থেকে মনে হলো একটা বড় পাথর নেমে গেল।
আদ্র সুস্থ আছে অনেকটাই এখন ও হসপিটালে। কালকে বাসায় যাবে অন্তরা
দুবার দেখা করেছে প্রতিবার নাকি আদ্র আমার কথা অনেক জিগ্যেস করেছে।
অন্তরা আব্বু খবর পেয়েছে আগেই কিন্তু আমি কোথায় আছি জানতো আসলে
আমি কখনো আমার গ্ৰাম সম্পর্কে ওকে কিছু বলি নি।
ও নাকি অনেক বার কল করেছে আমাকে কিন্তু আমার নাম্বার অফ পেয়েছে ।
ওকে বললাম ফোন হারিয়ে ফেলেছি । আদ্রকে আমার বিষয়ে কিছু বলেনি অসুস্থ
শরীর নিয়ে এসব শুনলে চিন্তা করবে এজন্য।
আদ্রর জ্ঞান ফেরার পর থেকে নাকি আমার নাম বলেছে ওর চিন্তা ছিলো যারা
ওকে আক্রমন করেছে তারা যদি আমার ও ক্ষতী করে এই ভয়ে সবার থেকে
জানতে পেরেছে আমি ঠিক আছি। তারপর শান্ত হয়েছে। এখন প্রায় সুস্থ আদ্র।
.
আর নিশাতের সাথে অন্তরার বিয়ের কথা হবার পর নিশাত ওদের বাড়ি আসে
বিয়েতে না করতে তখন অন্তরার ফোনের আমার পিকচার থেকে জিজ্ঞেস করে
আমি কে চিনে কিভাবে অন্তরা সব বলার পর নিশাতের সাথে ঘটা সব বলে।
অন্তরা তখনই আমাদের গ্ৰামে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। নিশাত বলে কাল
নিয়ে আর ও উত্তেজনায় অঘটন ঘটিয়ে ফেলে বাথরুমে ঠাস করে পরে পা
মচকে যায়।
এজন্য ওকে না নিয়ে নিশাত একা আসে আমাকে নিয়ে যেতে।
সব শুনার পরই আমি ডিসাইড করি আদ্রকে দেখতে যাব কাল সকালেই তারপর
ওই বাসায় যাব মা ফেলে গেছিলাম পাই কিনা দেখার জন্য। থাকার জন্য তো
বাসায় দরকার টাকাই বা কোথায় পাব। সব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুম দেয় কিন্তু ঘুম
আসে না আদ্রকছ দেখির জন্য মনটা ছটফট করতে লাগে কখন সকাল হবে
আর কখনো আদ্রকে নিজের চোখে দেখবো।
সকালেই উঠেই রেডি হয়ে নেয় অন্তরা আস্তে পারবে না ওর পা ব্যথা এজন্য
একাই বেরিয়ে পরি। হসপিটালে তো আমি চিনি না ওর থেকে জেনে নেই
আগের হসপিটালে আদ্র নেই অন্য হসপিটালে আডমিট করিয়েছে।
হসপিটালে এসে আদ্রর কেবিন খুঁজতে ও সময় লাগে আধাঘণ্টার মতো।
তিনতলায় আদ্রকে রাখা হয়েছে আজকে বিকেলে নাকি বাসায় চলে যাবে।
.
আমি রুম নম্বর জেনে দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছি বুকটা ধুকপুক করছে অসম্ভব।
অবশেষে আদ্রর কেবিনের সামনে আসি দরজার সামনে দুজনে লম্বা মোটা
বন্ধুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে এদের দেখে পাহারাদার লাগছে। বন্দুক দেখেই
ঢোক গিললাম।
আমার পাশে জানালা আছে সেখান দিয়ে ভেতরে তাকাতেই আদ্রর সাইট চোখে
পরলো। আদ্র বসে আছে হাতে ফোন আরেক হাতে জুস খাচ্ছে। পলকহীন
তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে এক সপ্তাহ পর আদ্রকে দেখলাম।
এই মেয়ে কে তুমি এখানে কি করছো?
আচমকা কারো কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে আদ্রর থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। চমকে
মাথা উঁচু করে দেখি ওই গার্ড গুলোর একজন আমার দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে।
তার তাকানো দেখে শুকনো ঢোক গিললাম। আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,
“আমি ভেতরে যাব।”
আদ্রর কেবিনের দিকে দেখিয়ে বললাম। লোকটা কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছে
আমার দিকে। আমাকে সে কিছু তেই ভেতরে যেতে দেবে না তার মুখের ভঙ্গি
বলে দিচ্ছে।
“এই মেয়ে ভেতরে যাবে কেন কে তুমি? তোমার খারাপ কোন মতলব নেই তো
ছোট স্যারের ক্ষতি করতে এসেছো।”
রেগে চিৎকার করে বলল।
না না কি সব বলছেন ক্ষতি কেন করতে যাবো তার ক্ষতির কথা তো আমি
কল্পনাও করতে পারি না।
আমাকে ভেতরে যেতে দিন।
অসম্ভব অচেনা কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া যাবে না। তুমি চলে তাও ভেতরে
যেতে পারবে না।
প্লীজ একবার ভেতরে যেতে দিন আর আমি অচেনা না আমাকে খুব ভালো করে
চিনে আদ্র।
এই মেয়ে যাও তো ডিস্টাব করো না। যতসব ফালতু ঝামেলা।
আমি আদ্রর সাথে দেখা না করে কোথাও যাব না। হারুন আপনি।
.
কি অসভ্য মেয়ে জোর করে যাবে বলছে?এর কোন খারাপ মতলব অবশ্যই
আছে।
আপনার যা খুশি ভাবতে ইচ্ছে করে ভাবেন। আমি তো ভেতরে যাবোই আদ্রর
সাথে দেখা না করে আমি কোথাও যাবো না।
বলে দুজনকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরলাম আমি।
লোক গুলো তো রেগে চিৎকার করে ভেতরে আসে আমাকে বের করতে। এসব
চেঁচামেচি শুনে আদ্র ও আমাদের দিকে তাকায় আর আমাকে দেখেই থমকে
যায়।
এই মেয়ে বের হও বলছি।
আমি নরছি না আদ্রর দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে আছি। কয়দিনেই আদ্র
অনেকটা শুকিয়ে গেছে চোখ মুখে ক্লান্তির ছাপ। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি।
লোকগুলো আমাকে বলে বের করতে পারছেনা তাই রেগে আমার হাত ধরে
টেনে বের করতে যাবে তাই হাত বাড়িয়ে দেয়। আদ্র এটা দেখেই চিৎকার
করে উঠে।
“কেউ ওকে টাচ করবে না তোমরা বাইরে যাও।”
লোক গুলো থেমে যায় আর আদ্রর দিকে তাকায়।
“কি হলো বললাম না বাইরে যেতে। এখন ও দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
আগের থেকে ও চিৎকার করে ওঠে। ভয়ে লোক গুলো চলে যায়।
আদ্র বিছানায় থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে।
.
আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে
পানি পরছে। আদ্রর বুকে ব্যান্ডেজ করা।
আদ্রর একদম আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে চোখের পানি এক হাতে মুছে দেয়। আদ্রর স্পর্শ পেয়েই চোখ বন্ধ করে ফেলি।
“কাঁদছ কেন মরে তো আর যাই নাই। মরে গেলেই ভালো হতো তোমার জন্য
তোমাকে আর আমার জ্বালাতন সহ্য করতে হতো না। কিন্তু দেখো তোমাকে
জ্বালানোর জন্য আমি সুস্থ আছি।”
চোখ খুলে আদ্রর দিকে তাকালাম আদ্র তাকিয়ে আছে আমার দিকে কিছু না
বলেই আদ্রকে জরিয়ে ধরলাম। আর কাঁদতে লাগলাম বাবাকে হারিয়ে ততটা কষ্ট
পেয়েছি আদ্রর বুকে মাথা রেখে সেই কষ্টটা কম লাগছে এখন মনে হচ্ছে এখনো
একজন আছে যে আমাকে আমার থেকে ও বেশি ভালোবাসে যার জন্য বাঁচতে
চাই তার সাথে চলতে চাই।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
” একদম মরার কথা বলবেন না। আপনি মরে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো
বলেন কে আছে আর আমার। সবাই তো আমাকে একা করে চলে গেছে স্বার্থপর
এর মতো আপনিও তাদের মতো আমাকে একা করে চলে যেতে চান। আমি
সারাজীবন আপনার জ্বালাতন সহ্য করতে চাই। কতো ভয় পেয়েছিলাম জানেন
আপনার ওই অবস্থা দেখে।”
আদ্র আমাকে জরিয়ে ধরে নি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আমি কান্না করছি আর
কথা বলে যাচ্ছি। অনেকক্ষণ পর আদ্রর থেকে সরে দাঁড়ালাম।
.
“এতো দিন কোথায় ছিলে।”
গম্ভীর হয়ে বলল।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছি।
কথা বলছো না কেন বলো কোথায় ছিলে। আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা ছিলো তো
দেখতে এতো দিন না এসে আজকে এলে কেন?
আসার মতো পরিস্থিতি পাই নাই আমি।
কি এমন পরিস্থিতিতে ছিলে যে আমি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলাম তুমি আমার
খোঁজ নিলে না। কতোবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছি জানো কেউ বলে নি ।
দরজার দিকে তাকিয়ে থেকেছি তোমার জন্য এই বুঝি আসবো আমার জন্য
কাঁদবে কিন্তু প্রত্যেকবার নিরাশ হয়েছি।
আদ্রর চোখে মুখে রাগ স্পস্ট। আমি কিছু বলতে যাব আদ্র আবার বললো,,
” দেখো এখন কান্না দেখানোর দরকার নেই। আর আমি জানি তুমি আমাকে
ভালোবাসো না কিন্তু আমার জন্য যে তোমার একটু ও খারাপ লাগেনি চিন্তা হয়নি
সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। আর এসবের জন্য আমি তোমাকে ছেড়ে দেব ভেব
না এ জন্মে তোমাকে আমি ছারছি না। এখন আসতে পারো।”
আমার কথাটা তো শুনেন আমি ইচ্ছে করে এমনটা করি নি আর আ…
“দেখো স্নেহা আমার রাগ উঠিয় না চলে যাও আমার রাগ হচ্ছে তোমার সাথে
আমি খারাপ বিহেভ করতে চাইনা।”
আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আদ্র আমার হাত ধরে টেনে বের করে দেয়।
তারপর ভেতরে চলে যায়।
আমি পেছনে থেকে আদ্রকে ডাকলাম কিন্তু ও শুনলো না।
আমি ঢুকতে গেলে ওই গার্ড গুলো দরজা আটকে ধরে জানি আর ঢুকতে দেবে
না। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি ও আমার দিকে ফিরেও
তাকাচ্ছে না।কষ্টে আমার বুক টা ফেটে যাচ্ছে।
.
হসপিটালে থেকে বেরিয়ে আগে যে বাসায় থাকতাম ওইটাই এলাম। আদ্রকে সুস্থ
দেখেছি এর থেকে বড় আর কিছু না। এখন আদ্র রেগে আছে আমার উপর এটা
স্বাভাবিক ও তো আর জানে না আমি কি বিপদে ছিলাম জানলে কখনই আদ্র
আমার সাথে এমন করতো না।
আসসালামু আলাইকুম। চাচা কেমন আছেন?
বাড়িওয়ালা চাচা আমাকে দেখে চশমা ঠিক করে আমাকে ভালো করে দেখে
বলল,
” আরে স্নেহা যে কবে এলে।”
এই তো কালকে আন্কেল।
ওহ তা আবার বাসায় থাকবে নাকি। তা কিন্তু পারবে না আমি বাসা ভাড়া দিয়ে
দিয়েছি।
বিরক্ত মুখ করে বলল।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,, ” না।”
উনি আমাকে কখনো পছন্দ করেনা। রাখবে ও না বাসায় খুব ভালো করে জানি।
তা কি জন্য এসেছিলে।
আন্কেল আমার কিছু জিনিস ফেলে গেছিলাম। আর বিশেষ করে আমার
ফোনটাও ফেলে গেছি।
সেসব কিছুই আমি জানি না।
আমাকে একটু রুমে যাওয়ার চাবিটা দিন অন্তর কিছু না পেলে ও ফোনটা
দরকার।
উনি আমার সাথে এলো।
রুমে এসে দেখলাম নতুন ভাড়াটিয়া। ফোনের কথা জিজ্ঞেস করতেই তারা না
করলো। অসহায় মুখ করে চারপাশে তাকালাম কিছুই পেলাম না। চলে আসবো
এমন সময় ওয়ারড্রপের উপর আমার ফোন দেখতে পেলাম আমি ছুটে হাতে
নিয়ে বললাম এই তো আমার ফোন।
অচেনা শহর পর্ব ৪৪
মহিলাটি ও চটকরে হাত থেকে ফোন নিয়ে বলল এটা ওনাদের ফোন আমি
বললাম আমার কিন্তু তারা বলে এক একরকম ফোন কতো হয় ওইটা ওনাদের। কিন্তু আমি নিশ্চিত এটা আমার ফোন ফোনের পেছনে একটা বাটা দাগ আছে
সেটা আমার ফোনের দাগ।
কিন্তু তারা ঝগড়া লাগিয়ে দিলো তাই বাধ্য হয়ে শূন্য হাতে বাসা থেকে বেরিয়ে
এলাম।
অন্তরাদের বাসায় এলাম। ক্লান্তে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
বাড়িতে আজকে অন্তরার মাকে দেখলাম। আমাকে দেখেই অন্তরা বলল,
“এতো লেট হলো কেন?”
ওই বাসায় গেছিলাম।
ওহ আদ্রর সাথে কথা হয়েছে।
মলিন মুখে বললাম,” হুম। কিন্তু ( অন্তরা কে সব খুলে বললাম।)
সব জানাস নি কেন?
আমার কথা শুনেই নি। অনেক অভিমান হয়েছে ওর রাগ ওর চোখ দেখেই
বুঝতে পেরেছি।
কষ্ট পাস না আদ্র তো জানে না তুই কি পরিস্থিতিতে ছিলি জানলে এমন করতো
না।
হুম।
ফ্রেশ হয়ে আয় খাবি।
ফ্রেশ হয়ে এলাম খিদেও পেয়েছে। খাবার টেবিলে এসে অন্তরার মা আন্টির সাথে কথা বললাম। খাবার খেয়েই একটা ঘুম খুব ক্লান্ত লাগছে।