অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৪৬ || nill cafer valobasha

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৪৬
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

আজ তিনদিন হলো অন্তরাদের বাসায় আছি। আদ্রর সাথে আমার যোগাযোগ হয়
নি। আমি করতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি আদ্র এখন ওর বাসায় আছে সম্পূর্ণ রেস্টে
সেখানে আমি যেতে পারিনি। বাসায় ঠিকানা যুগার করে দুইবার বাসায় সামনে
দিয়ে ঘুরে এসেছি। আদ্রকে দেখার জন্য ব্যাকূল হয়ে আছি ও কি বুঝে না এতো
অভিমান আমার উপর ওর।

আজকে ভার্সিটিতে যাব পরতে না আদ্রকে দেখতে পড়া আর আমার হবে না।
আদ্রর এক্সাম চলে এসেছে সামনে সপ্তাহে থেকে আজকে আসবে তাই অনেক
দিন আসেনা‌। আমি এটা হৃদয় এর থেকে জেনেছি।
সকালে খাবার টেবিলে থেকে অন্তরা আমাকে ডাকছে আমি বেলকনিতে থেকে
আসছি বলে রুমে এলাম। দরজার বাইরে পা রাখবো তখনি কিছু কথা আমার
কানে এলো অন্তরা ও ওর মা কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি করছে। আমি সেখানে
দাঁড়িয়ে পরলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“মা তুমি কিন্তু বেশি করছো? ওর ব্যাপারটা একটু বুঝবে না ওর আর যাওয়ার
জায়গা নাই। আমার জন্য ই তো এসেছে।”
“সেসব কিছুই আমি জানি না। তুই একে বাড়িতে আনলি কেন কতো দিন
অন্যের মেয়েকে বাসায় রেখে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো।”
এভাবে বলছো কেন ও স্নেহা তো তোমার ও মেয়ের মতো তাইনা।
মেয়ের মতো মেয়ে তো না। আর তোর বাবার কি ইনকাম তুই তো জানিস
আমাদের পক্ষে ওর ভরণপোষণ করা সম্ভব না। যাওয়ার জায়গা না থাকলে
গ্ৰামে ফিরে যাক এখানে অন্যের দয়ায় কেন পরে আছে।

মা প্লীজ চুপ করো ও শুনতে পাবে। আর স্নেহা আসে নি আমি নিয়ে এসেছি তাই
তুমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে না।
ওই মেয়েকে চলে যেতে বলবি তারাতাড়ি না হলে আমি নিজে বলবো। নিজের
গুলোকে খাইয়ে পরিয়ে ইমশিম খাচ্ছি আবার আরেক জন এতো জ্বালা ভালো
লাগে না।
বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল রান্না ঘরে। অন্তরা রেগে সেদিকে তাকিয়ে
র‌ইলো।

দরজায় কাছে থেকে সব কথা আমি শুনলাম। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি
পরছে। মুখ সেপে ভেতরে চলে এলাম। এখানে এসে আমি ভুলেই গেছিলাম অন্য
একজনকে বাসায় আছি তাদের মনে কি আছে আমাকে নিয়ে আমার থাকা নিয়ে
ভাবতেও চাইনি। আজকে এসব না শুনলে তো মনেই পরতো না।
আমি এতো খারাপ কি করে হলাম এভাবে তাদের সমস্যা কারণ হলাম। আমার
জন্য তাদের প্রবলেম হবে তা একটু মাথায় আসেনি। এভাবে অন্যের বাসায় পরে
থাকা আমার একদম উচিত হয়নি। আমার নিজের থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা করতে
হবে আজকেই একটা কিছু করতেই হবে।

.

অন্তরা কখনো আমাকে যেতে দিবে না আমাকে কেই সমস্যা বলে যেতে হবে।
অন্তরার আওয়াজ পেয়ে তারাতাড়ি চোখ মুছে নিলাম।
স্নেহা ক‌ইরে তুই কখন থেকে ডাকছি তোকে আসছিস না কেন চল খাবি।
হুম।
কি হুম এখানে বসে আছিস কেন চল।
বলে টেনে নিয়ে গেল। খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি খাবার গলা দিয়ে নামছে
না আমার তবুও খাওয়ার চেষ্টা করছি না হলে অন্তরা বুঝে যাবে আমি ওদের কথা
শুনে ফেলেছি‌।

আন্টির দিকে তাকালাম উনি বিরক্তি নিয়ে একবার আমার দিকে তাকিয়ে খাওয়া
শুরু করলো। আগে ও উনাকে গম্ভীর দেখেছি কিন্তু সেটা যে আমার জন্য
ভাবিনি।আজকে বুঝতে পারছি।
আর খেতে পারলাম না হাত ধুয়ে উঠে পরলাম।
কিরে উঠছিল কেন?
আমার খাওয়া শেষ।
কিছু ই তো খেলি না।
আমার পেট ভরে গেছে আমাকে বেরতে হবে।
জানি তো আমি ও কলেজে যাব তো।
আমার একটা দরকার আছে সেটা সেরে যাব তুই চলে আসিস।
একা যাবি।
হুম।

অন্তরাকে রেখে একাই চলে এলাম।
অন্তরার বাসা থেকে ভার্সিটি যাওয়ার পথ এক ঘন্টা। টাকা হাতে নাই। হেটেই
যেতে হবে এখন ভার্সিটিতে না যাব ইমন দের বাসায়( ইমন আমার স্টুডেন্ট
ওদের দুই ভাইকে পরাতাম)

.

মাস শেষে চলে এসেছিলাম। ইমনের বাবা বাজে ব্যবহার করেছিল বলে ভাবতেই
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। লোকটা এখন বাসায় থাকবে না এখন গিয়ে ওই আপুটার
কাছে থেকে টাকা আনতে হবে।
হেঁটে বাসায় এলাম এখানে থেকে তাদের বাসায় কাছেই তারাতাড়ি চলে এসেছি।
কলিং বেল দিতেই আপু দরজা খুলে আমাকে দেখেই চমকালো আর জিজ্ঞেস
করলো এতো দিন কোথায় ছিলাম।

আমি বাবার কথা বললাম তার স্বামীর কথাটা বললাম না উনি আমাকে বরাবর
পছন্দ করে না কিন্তু বাবার কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করলো। আর রুনা আপুর কথা
ও বলল আপু নাকি আমার কথা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো।
আমি টাকার কথা বলতেই মুখ ছোট করে ফেলল কিন্তু টাকা দিলো পাঁচশ টাকা
কম কিছু করার নাই কম‌ই নিলাম আর আসার সময় রুনা আপুর নাম্বারটা নিয়ে
এলাম। উনি জিগ্গেস করলো প্রাইভেট আবার পরাবো কিনা আমি সরে জানাবো
বলে চলে এলাম।

ভার্সিটিতে যাব এখন হেঁটেই যাচ্ছি বাসা খুজতে হবে কমের মধ্যে।
হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো চমকে এক কদম পিছিয়ে গেলাম। গাড়িতে
থেকে বেরিয়ে এলো নিশাত তাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালাম উনি হেসে আমার
কাছে এলো তারপর বলল,,
ত্রিশ টাকার জন্য কি আমার বাসায় চলে এসেছো নাকি?
উনার কথায় অবাক হলাম।
বিস্মিত হয়ে বললাম,,,
“বাসায় এসেছি মানে আপনার বাসা কোথায়?”
উনার বাসা দেখিয়ে বলল।

.

বাসায় আসেন নি তাহলে এখানে কোথায় এসেছেন?
সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার আপনাকে বলতে চাইছি না। দেখা যেহেতু হয়েছে
আমার টাকা দিন।
এই ধরুন টাকা।
টাকা নিয়ে চলে আসতে নিলাম কিন্তু ওনি অফার করে নিলো ওনার গাড়িতে
যেতে আমি না করতে গিয়ে ও করলাম না।ওনার সাথে অন্তরা কে নিয়ে কথা
বলবো।
আপনি অন্তরা কে বিয়ে করেন না।
আচমকা কথায় চমকে আমার দিকে তাকালো।
মানে।

অন্তরা হৃদয় নামের একটা ছেলেকে ভালোবাসে। আপনি বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েন।
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
কি হলো কিছু বলছেন না কেন?
আপনার কথা আমি শুনবো কেন?
তার মানে আপনি বিয়ে করবেন অন্তরা না বললো আপনি ও রাজি না।
এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার আপনার কাছে এই বিষয়ে কিছু শুনতে চাইনা।

আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে তারপর হেসে উঠলাম। গাড়ি ভার্সিটির
সামনে এসে থেমেছে। আর কিছু না বলে নেমে গেলাম উনি মাথা বের করে হাত
নারিয়ে বাই বলে চলে গেল।
গাড়ি চলে যেতেই আমি পেছন ফিরে থমকালাম আদ্রর ঠিক আমার পেছনে
দাঁড়িয়ে আছে চোখ মুখ লাল করে কঠিন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
রাগের কারনটা বুঝতে অসুবিধা হলো না আমার।
আমি কিছু বলার আগেই আদ্র আমার বাহু শক্ত করে ধরে বললো,,,
” ছেলেটা কে?”

.

আপনি ভালো আছেন ? আমি তো শুধু…
“আমার কথার উত্তর দাও। কে ওই ছেলে কি সম্পর্ক ওর সাথে তোমার।”
ওই ছেলে তো অন্তরার..
“অন্তরা কি মিথ্যা বলবে না কি নিয়ে হাসছিলে আর ওই ছেলের গাড়িতে করে
কেন এলে? আমাকে বোকা পেয়েছো কয়দিন তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি আর।”
“আপনি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছেন ওইটা অন্তরা ভাই। তাই আমি ওনার সাথে।

অন্তরার ভাই তোমার তো না ওই ছেলের সাথে হাসছিলে কেন এতো আমার সাথে
তো কখনো এতো হেসে কথা বলো না।
আপনি জেলাস হচ্ছেন।তাহলে তো আর ও মিশতে হবে এমনিতেও আপনি তো
এখন আমার সাথে কথা বলেন না।
খুন করে ফেলবো। কথা না বললে ও তুমি শুধু আমার ওকে।
আদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে
আছি।

সরি ওদিন খারাপ ব্যবহার করার জন্য। আর এই কয়দিন তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি‌। আম্মু ফোন ধরতেই দেয়না। তোমার
উপর রাগ হলো কি করে এতো বুঝতে পারছি না।
মানে।

.

তোমার আব্বুর খবরটা হৃদয়ের থেকে জানতে পেরে এতো খারাপ লেগেছে বলে
বুঝাতে পারবো না। তারপর ই তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছি কিন্তু কেউ
আমাকে বাসা থেকে বের হতে দেয়নি। আবার ফোনটাও আম্মু লুকিয়ে রেখেছে
আজকে ও গার্ড নিয়ে এসেছি ওদের ভেতরে রেখে লুকিয়ে এখানে তোমার
অপেক্ষা করছিলাম।
আমি নিঃশব্দে কাঁদছি আদ্র আমাকে নিয়ে সামনে হাঁটা ধরলো তারপর একটা
গাড়িতে উঠিয়ে চলতে লাগলো।
আমরা কোথায় যাচ্ছি?
অবাক হয়ে বললাম।
আদ্র কিছু না বলে ড্রাইভ করছে।

কি হলো বলেন এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আর আন্টি কি বললেন বুঝলাম
না।
কিছু বলল না। আমি ও আর কিছু বললাম না। আদ্রর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছি আদ্র রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ি পার্ক করলো।
গাড়িতে থেকে বেরিয়ে ভেতরে গেলাম।
পাশাপাশি সিটে বসলাম।আদ্র আমার গালে ওর হাত রেখে চোখের পানি মুছে
দিয়ে বলল,,

আই এ্যাম সরি জান তোমার কষ্ট না বুঝে খারাপ ব্যবহার করার জন্য। তুমি এতো
কষ্টে ছিলে আর আমি কিনা কি ভেবেছি। তোমার এতো খারাপ সময়ে পাশে
থাকতে পারলাম না আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আপনি ক্ষমা চাইছেন কেন? আপনি ও তো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন আমার
পাশে কি করে থাকবেন? আমার আপনার প্রতি কোন অভিযোগ নেই আপনি
সুস্থ আছেন এতেই আমি খুশি।

.

স্নেহা আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি বলে বুঝাতে পারবো না। তুমি প্রতি
মেয়ে যার জন্য আমার মনে অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হয়েছে। তোমাকে
ভালোবাসি যেদিন বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার
পাশে ছায়ায় মতো থাকবো সব সময়। কিন্তু যেভাবেই হোক সেটা তো পারলাম
না। আমি জানি এখনো তুমি আমাকে ভালোবাসো না। কিন্তু আমি তোমাকে খুব
ভালোবাসি।

আমি আদ্রকে জরিয়ে ধরে আদ্রর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলাম।
আর মনে মনে বললাম।
আপনি জানেন না আমি ও আপনাকে ভালোবাসি আগে বুঝি আপনাকে ছেড়ে
দূরে গিয়ে সেটা বুঝতে পেরেছি এজন্য তো বাবাকে হারিয়ে আছি বেঁচে আছি
সেটা শুধু আপনার জন্য।
অনেক ক্ষন এভাবে কাটলো।
আদ্রর থেকে সরে আসতেই আদ্র বলল,,,

কিন্তু একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না আম্মু তোমাকে সহ্য করতে পারছেনা
কেন? আগে যখন তোমার কথা আম্মু কে বলেছিলাম তোমার জন্য পাগল হয়ে
গেছিল আর এখন তোমার নাম ও শুনতে চায়না‌।
চিন্তিত হয়ে বললো আদ্র।
আমিও ভাবছি তাহলে কি ওনি আমাকে দেখে এমন করছে আমাকে কি পছন্দ
হয়নি। অজানা ভয়ের আভাস পাচ্ছি।
কি ভাবছো? চিন্তা করো না আম্মু কে ঠিক মানিয়ে নেব আম্মু আমাকে খুব
ভালোবাসে।
হুম।

অচেনা শহর পর্ব ৪৫

আদ্র খাবার অডার দিলো। খাবার আসতেই খাইয়ে দিতে বলল,,,
আমি চুপচাপ খাইয়ে দিতে লাগলাম। আদ্র একবার এর জন্য ও অন্য দিকে
তাকাচ্ছে না পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে খাইয়ে দিচ্ছি। এভাবে তাকিয়ে থাকলে কি সামনে
থাকা যায়।
উফ স্নেহা লজ্জা পেয় না প্লীজ আমার কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি
বিয়ের আগে কিছু করতে চাইনা।
আপনি অন্য দিকে তাকান না প্লিজ।

কেন?
আমার লজ্জা করছে।
সরি পারবো না কতোদিন পর তোমাকে মন ভরে দেখছি। কতোটা অস্থির হয়ে
ছিলাম তোমার জন্য জানো।
আর কিছু বললাম না। খাইয়ে দিতে লাগলাম হঠাৎ আদ্র আমার মুখে খাবার দিলো। আমি চমকে আদ্রর মুখের দিকে তাকালাম।
তাকিয়ে না থেকে খাও।

খেতে পারছি না শেষ কবে কেউ আমাকে খাইয়ে দিয়েছে মনে নেয়। মার ফর
আর কেউ খাইয়ে দেয় নি। ইমোশনাল হয়ে পরলাম কেঁদে উঠলাম।
খাওয়া শেষ করে আদ্র আমাকে নিয়ে ফোনের দোকান এ এলো আর দুটো ফোন
কিনলো এ্যান্ডয়েট। একটা আমাকে ও একটা নিজের। আমি নিতে না চাইলেও
জোর করে দিলো এ ছাড়া যোগাযোগের রাস্তা নেই‌।
তাই নিলাম।

অচেনা শহর পর্ব ৪৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.