অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৪৭ || nill cafer diary golpo

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৪৭
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

অন্তরাদের বাসা থেকে কাল চলে এসেছি এই নতুন বাসায়। টিনের একটা বাসায়
ছোট দুই হাজার টাকায় এটা দিয়েছে আমি রাজি হয়ে গেছি। আমার কাছে সাথে
তার হাজার টাকা আছে 2000 টাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছি বাসাটা একদমই খারাপ
অবস্থা। কিন্তু কিছু করার নাই এত কম টাকায় এর থেকে ভালো বাসা পাওয়া যাবে
না।রাতে যখন আসেন তখন আরো খারাপ অবস্থা ছিল অনেক কষ্টে দাঁড়ানোর
মত অবস্থা করেছি।

ছোট একটা রুম পুরাই ফাঁকা রয়েছে থাকার মত কিছুই নেই না খাট আছে না
রুমে আসবাবপত্র শুধু ধুলো-ময়লা ছিলো আর বাড়িওয়ালা এইটা ময়লার পুরনো
আসবাব পত্র রাখার জন্য করেছিল। বাসা এইটা পড়েছিল ময়লা-আবর্জনা
ফেলার জন্য।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

একমাস আগে নাকি সব পুরনো আসবাবপত্র সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছে জন্য
রুমটা খালি পড়ে আছে। রাস্তায় বাড়িওয়ালার সাথে দেখা হয় সে আসলে একটা
এক্সিডেন্ট এআঘাত পায় পায় এই সাগরে যাচ্ছিল রিকশা উল্টে পড়ে যায় আমি
তাকে সাহায্য করেছি তখন সে আমার বিষয়ে জানতে চাইলে আমি আমার সব
কিছু বললে সে আমাকে বলে যে আমার তো বাসা ফাঁকা নাই একটা ময়লা টিনের
ঘর আছে। আমি তাতে রাজি হয়ে যায় অন্তরার সাথে আর মার লেগেই থাকে
রাগারাগি অন্তর আমাকে বুঝতে না দিল আমি তো সব বুঝেই গেছি এভাবে
অন্যের বাসায় পড়ে থাকা ঠিক না তাই রাজি হয়ে যায়।

আদ্র কি এখনো কিছু বলিনাই। ওর সামনে পরীক্ষা এক সপ্তাহ আছে। রিসিভ করি
নাই যদি জানতে চাই কোথায় আছি তাই।
আজকে বাসা থেকে বের হয়েছি বাইরে থেকে কিছু কিনে খেয়েছি কাল আজকে
কি করবো বুঝতে পারছি না। বাইরে খেলে টাকা ও বেশি লাগে অন্তরা ওর
আমাকে কল করেছে রিসিভ করি নি‌।
হাতে দুই হাজার টাকা নিয়ে বসে আছি আর ফোন।

হাঁটতে হাঁটতে আমি একটা পার্ক এ চলে এসেছি এখন দুপুর। না খেয়ে আছি এখন
ও ক্লান্ত হয়ে বসে টাকা গুলো গুনে দেখছি। হঠাৎ একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেল
একটা কালো চিকন করে ছেলে আমার কাছে দিয়ে দৌড়ে আমার টাকা নিয়ে
ভেগে গেল আমি হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ছেলেটা দৌড়ে
পালাচ্ছে।

.

যখন হুশ এলো দাঁড়িয়ে পরলাম এই ছেলে যে আমার সম্বল নিয়ে পালাচ্ছে
এই দিন দুপুরে এ মে চুরি হয় আমার জানা ছিলো না আমি ও চিৎকার করে তার
পেছনে দৌড়াতে লাগলাম। কিন্তু ছেলেটার সাথে কি আমি পারবো না।
ছেলেটা অনেকটা দুরে চলে গেছে আমি তবু তাকে ধরতে চাইছি চিৎকার করছি
দৌড়াচ্ছি। অবাক করা বিষয় আশেপাশে এতো মানুষ আছে কেউ ভ্রুক্ষেপ ও
করছেনা।

একবার করে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।এটা গ্ৰাম হলে এতোক্ষণ এ হ‌ইচ‌ই
শুরু হয়ে যেত সবাই এগিয়ে আসতো কিন্তু এখানে কেউ আসছে না।
সবার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ছেলেটার দিকে যাচ্ছি হঠাৎ ছেলেটা উধাও
কোথাও নাই। আমি দাঁড়িয়ে পরলাম আশেপাশে ছেলেটা নেই তার মানে পালিয়ে
গিয়েছে।

থম করে সেখানেই বসে পরলাম এখন কি করবো আমি সব টাকা তো নিয়ে গেল
এবার আমার চলবে কি করে।
সারাদিন কিছু খাইনি খিদের জ্বালায় পেট ব্যাথা করছে। সব বিপদ কি আমাকে
এসেই ঘিরে ধরে।
রাস্তায় কিনার ঘেঁষে বসে চোখের পানি ফেলছি নিজেকে এতো অসহায় লাগছে
বলে বুঝাতে পারবো না।

.

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ফোন জামার নিচে লুকানো ছিলো এটা অনেক
দামি ফোন তাই আগে থেকেই সাবধান এ ছিলাম।
ফোন ধরতে ও ইচ্ছে করছে না তাও বের করলাম ফোনের দিকে তাকিয়ে আদ্রর
নাম্বার চোখে পরলো আদ্র কল করছে।
হ্যালো, স্নেহা কোথায় তুমি? দুইদিন ধরে কল কেন রিসিভ করছো না আর আমি
আজ অন্তরাদের বাসায় গিয়েছিলাম ওখানে তো তুমি ছিলে না কোথায় আছো তুমি
প্লীজ বলো আমি কতো চিন্তায় আছি জানো তুমি।

আমি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। ফোন কানে নিয়েই কেঁদে
উঠলাম আমার কান্না শুনে আদ্র আর ও ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।
কি হয়েছে তোমার বলো আমাকে কাঁদছো কেন? দেখো আমার কিন্তু ভয় করছে
বলো কি হয়েছে? আচ্ছা তা বলতে হবে না কোথায় আছো বলো এখন।

আমি কাঁদার জন্য কথা বলতে পারছি না হেঁচকি দিয়ে দিয়ে কাঁদছি। আর ওপাশ
থেকে আদ্রর ভয় পাওয়া কন্ঠ কানে আসছে হঠাৎ আদ্র ধমক ধমক শুনে কেঁপে
উঠলাম। আমাকে আর সাথে সাথে আমি চুপ করে গেলাম আর বললাম কোথায়
আছি। আদ্র ফোন কেটে দিলো।
আমি ওইখানেই বসে র‌ইলাম বিশমিনিট পর আদ্র বাইক নিয়ে এলো আমার
কাছে।

.

বাইক থেকে নেমে আমাকে এই অবস্থায় দেখে দৌড়ে আমার পাশে বসে আমার
গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে?
স্নেহা কান্না না করে বলো কি হয়েছে এখানে এভাবে বসে আছো কেন?
আমি আস্তে আস্তে সব খুলে বললাম আদ্রকে সব শুনে আদ্র ঠাস করে আমার
গালে চর মারলো।

ইডিয়েট গার্ল এতো কিছু হয়েছে আর তুমি আমাকে কিছু জানাওনি কেন বলো?
কতো চিন্তায় ছিলাম এই দুইদিন জানো।
রেগে চিৎকার করে উঠল।
আমি ভয়ে গালে হাত দিয়ে চুপ করে আছি।
কি হলো কথা বলছো না কেন বেশি বেড়ে গেছো তুমি আমাকে এসব জানালে কি
হতো না নিজে মাতাব্বরি করতে গিয়েছে।
আমি আপনার দয়া নিতে চায় নাই।
আমার কথা শুনে আদ্র মুখ কঠিন করে ফেলল আরো।

আমি তোকে দয়া করবো কে বলেছে? ভালোবাসি তোকে কেন বুঝিস না।
আপনি তুই তোকানি করছেন।
হ্যা করছি আর কোন দিন কিছু লুকালে মেরে ফেলবো একদম স্টুপিট।
আপনি আমাকে বকছেন কেন?
একশ বার বলবো চলো।
বলেই আদ্র আমার হাত ধরে টেনে দাড় করালো।
কি অবস্থা করেছো নিজের।
কোথায় যাবো? অবাক হয়ে বললাম।

.

আদ্র বলল,, আমার সাথে আমার বাসায় থাকবে আজ থেকে। অন্যের বাসায়
থেকে আর কটু কথা শুনতে হবে তোমার।
না আমি আপনার বাসায় যাব না।
তুমি যাবে।
যাব না বললাম তো।
স্নেহা জেদ করো না আমি যেহেতু বলেছি তোমাকে আমার সাথেই যেতে হবে।

কেন যাব আপনার সাথে। আপনি আমাকে জোর করতে পারেন না আমার উপর
আপনার কোন অধিকার নেই। আমি নিজের ব্যবস্থা নিজেই করবো অন্যের
দয়ায় থাকবো না আর একদম অধিকার খাটাতে আসবেন না।
রেগে বললাম আদ্রর মা আমাকে সহ্য করতে পারেনা আদ্র‌ই বলেছে এখন আদ্রর
সাথে বাসায় গেলে সে আমাকে দেখতে পারবেনা হয়তো আদ্রর সাথে রাগারাগি
হবে। এসব ভেবে আদ্রকে এমন করি বললাম।

কি বললে তুমি তোমার উপর আমার অধিকার নেই।
চোখ মুখ শক্ত করে বলল আদ্রর।
হ্যা নেই কে হন আপনি কিছুই না আপনাকে সব কিছু বলে কেন করবো আমি।
তুমি কিন্তু বেশি বলছো।
ছারুন আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।
আদ্র হাত ছারলো না।
কথা শুনছেন না হাত ছারুন কেন আপনার বাসায় গিয়ে কি পরিচয় দেবেন
আপনি। আর তারা আমাকে থাকতেই বা দিবে কেন?
পরিচয় দিবে এখন তারপর সেটাই বলবো।
মানে।
অবাক হয়ে বললাম।

.

তোমার উপর আমার অধিকার সব থেকে বেশি থাকবে আজকের পর থেকে।
শক্ত করে হাত ধরে বলল।
বাইকে উঠো আমি এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না।
যাব না বললাম তো।

আমি একদিন ভাবতে গিয়ে আরেকদিক ভুলে গেছিলাম। আদ্র আমার ওই কথায়
যে এমন কান্ড করবে ভাবিনি।
আমি হতদম্ব হয়ে সব কিছু দেখছিলাম না করতে পারিনি। আদ্রকে তো আমি ও
খুব ভালোবাসি তাকে নিজের করে পাওয়ার বাসনা আমার ও হয়েছিলো তাই চুপ
করে আদ্রর কথা মেনে নিয়েছিলাম চুপ।
আদ্র আমাকে জোর করে একটা বাসায় নিয়ে এসে দুতালা বাসা সামনে বিশাল
ফুল ফলের বাগান।
আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষন পর অন্তরা হৃদয় আদ্রর ফ্রেন্ড আশিক
রাহাত ভাইয়া আসে‌।

অনেকদিন পর রাহাত ভাইয়াকে দেখি সে আমাকে দেখেই শুকনো একটা হাসি
দেয় তাকে দেখেই চমকে উঠি কি অবস্থা হয়েছে তার।
ভাইয়া আপনাকে এমন লাগছে অসুস্থ কি আপনি।
ভাইয়া একটা হাসি দিয়ে বলে, তেমন না অনেকদিন পর দেখছো তো তাই এমন
লাগছে।
না আপনাকে অসুস্থ লাগছে।
দূর আমি অসুস্থ না চিন্তায় থাকি তো কিছুদিন পর ফাইনাল পরিক্ষা তা তো জানোই।
ওহ।

.

অন্তরা আমাকে শাড়ি পরিয়ে দেয় না খাওয়া আমি ধরতে পারছি না কিন্তু আদ্রর
এক কথা আগে বিয়ে তারপর সব। গম্ভীর হয়ে ছিলো সারাটা সময় আমার কথায়
যে কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পেরেছি।
শাড়িটা দেখে আমি চমকিয়েছিলাম কারন এটা তো সেই শাড়ি যেটা আমি আদ্রর
সাথে শপিং মলে গিয়ে দেখেছিলাম।

এটা আদ্র কোথায় পেল আদ্রকে জিজ্ঞেস করতে হবে অন্তরা আমাকে সাজিয়ে
দিলো বাইরে এসে আদ্র কে দেখলাম ও পাঞ্জাবি পরে আছে গোলাপী রং এর
শাড়ির সাথে ম্যাচিং এসব কি আগেই করে রেখেছিল নাকি। আদ্র আমার দিকে
একবার ও তাকালো নি আমি ই হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
আদ্র তাকালো না দেখে মনে মনে কষ্ট ও পেলাম।

কাজি আসতেই বিয়ে পরানো শুরু হলো প্রথমেই একটা কাগজে সাইন করতে
হলো তারপর তিনবার কবুল বলে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
কবুল বলার সময় বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল কিন্তু সে তো নেই কোথায় ও নাই
এই পৃথিবীতে আর নেই। আমার নিসঙ্গ জীবনে একজন কে পেলাম।
বিকেলে খাওয়া দাওয়া সেখানেই হলো। এটা আদ্রর বাসায় ওই জন্মদিনে নাকি
ওর বাবা গিফট করেছে। পরে জানতে পারলাম।

অচেনা শহর পর্ব ৪৬

সন্ধ্যায় সবাই বেরিয়ে এলাম বাসায় থেকে এখন আমি আর আদ্র আদ্রদের বাসায়
যাব। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। আদ্র বাইকে উঠে আমাকে উঠতে বলল শাড়ি
পরে উঠতে কষ্ট হলো।
আদ্র আমার একহাত নিয়ে বলল,,
আর কখনো বলতে পারবে না আমার তোমার উপর অধিকার নেই। আজকে
থেকে আমার সব কথা শুনে চলতে তুমি বাধ্য।
আপনার পরিবারের কেউ আমাকে মানবে না।

আই ডোন্ট কেয়ার। আর সেসব তোমার ভাবতে হবে না আমি সব সামলে নেব।
আমার ভয় করছে। আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন।
আদ্র আমার হাতে উল্টো পিঠে চুমু খেলো আমি টেনে হাত ছারিয়ে নিলাম। আদ্র একবার আমার দিকে তাকিয়ে বাইক স্টাট দিলো।

অচেনা শহর পর্ব ৪৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.