অচেনা শহর পর্ব ৫
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে স্নেহা থামল।
চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলছিলোএবার ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকায় আশে পাশে থেকে কোন কথার
আওয়াজ আসছে না। চোখ মেলে প্রথমে আদ্ররদিকে তাকায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার আদ্রর চোখে আমি
রাগ দেখতে পাচ্ছিনা যে রাগটা কালকে ছিল।
আমি ব্রু কুচকে তার চোখে দিকে তাকিয়ে আছি। এত ঠান্ডা কেন কিছু বলছ না কেন? কেমন করে যেন
তাকিয়ে আছে। তার তাকানো দেখে আমার অস্থি হচ্ছে।আমি একবার পিছন ঘুরে অন্তরার দিকে তাকালো ও
আমার দিকে তাকিয়ে আছে ওর মুখে ভয়ের ছাপ।কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি না এখন আমার সাহস হচ্ছে ভুল
করেছে সরি বলেছি। এখন যদি সে আমার সাথে বেশি বারাবারি করে সোজা প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে তার
নামে আমি কমপ্লেন করব। সে তো আমাদের সাথে রুড বিহেভ করেছিল বলে আমি তার গায়ে হাত
তুলেছিলাম। তবুও সেটা নিয়ে তাকিয়ে আমরা এটা কিছু বলি নাই উল্টো আমরাই সরি বলেছি।
আমি একদম আদ্রর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেছি এবার আমি পিছিয়ে অন্তরার কাছে যেতে নেই। কিন্তু
আমাকে অবাক করে দিয়ে আদ্রর আমার হাত চেপে ধরে। আচমকা ঘটনায় থমকে যায় আমি। অবাক হয়ে
হাত দিকে তো একবার আদ্রর দিকে তাকায়।
—দেখছিস মেয়েটাকে কাল চড় মেরে আজকে আবার সরি বলতে এসেছে সরি বললে সব সমস্যার সমাধান
হবে নাকি। আদ্র তুই মেয়েটাকে কখনো ক্ষমা করবি না। তুই যদি ওকে শাস্তি দিতে না পারিস আমাকে বল
আমি ওকে এক থাপ্পর,
আদ্র হাত উঠিয়ে ওকে ইশারায় থামতে বলে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
—মাইশা বেবি স্টপ। আমি আছি নাও আমার গায়ে হাত তুলেছে সেই হিসেব আমি তুলবো।
—দেখুন আপনি আমার হাত ছাড়ুন।
—ওকে ছাড়লাম এখানে দাঁড়াও। তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাইছ তার মানে তুমি বুঝতে পেরেছ তুমি কাজটা
ঠিক করো নাই।
কথাগুলো বলে আদ্র স্নেহার হাত ছেড়ে দেয়। ভুল করেছে শুনে স্নেহা আবার একটু চেতে ওঠে ভুল কোথায়
করল ছেলেটা ওদের অসভ্যতামি করেছে এর জন্যই তো হাত তুলেছে। নিজের দোষটা তো দেখতেই পাচ্ছি না।
কিছু বলতে যাবে হঠাৎ অন্তরায় এসে ওর হাত চেপে ধরে। ও অন্তরার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে ঠান্ডা হয়ে
ক্ষমা চেয়ে মিটমাট করে নিতে বলছে এদের সাথে আমরা পারব না উল্টা ঝামেলা হবে। তার থেকে নিজেরাই
সরি বলে কেটে পড়া ভালো।
সেহার কিছু কথা শুনাতে ইচ্ছে হলেও নিজের কথা নিজের মধ্যে রেখে দিল।
এখানে লেখাপড়া করতে এসেছে এদের সাথে ঝামেলা করে নিজের বিপদ ডেকে আনতে চায় না আর এই
শহরে একেবারেই নতুন স্নেহা। আপন পরিচিত বলতে কেউ নাই।এক বাবা নিজের কোন বিপদ হলে বাবা
তাকে সাহায্য করতে পারবেও না সে নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারে না।
গল্পে রিয়েল লেখিকা তানজিনা আক্তার মিষ্টি। আর ভার্সিটিতে এদের যে অনেক ক্ষমতা তা ভালোই বুঝতে
পেরেছে স্নেহা। কাল ক্লাসের কেউর সাথে বসে নাই কথা বলেনা স্টুডেন্ট সব এই ঝামেলার জন্য। কাল যে
ভাবে আদ্র ক্লাস রুমে নিয়ে গিয়েছিল প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল। আর কোনো ক্ষতি করলেও আদ্রর থেকে নিজেকে
রক্ষা করতে পারত না। সেসব ভেবে আর একটু ভয় পেয়ে যায়। তাই নিজেকে সংযত করে।
আদ্র আবার জিজ্ঞেস করে, তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
স্নেহা মাথা উঁচু করে একবার আদ্রর দিকে তাকিয়ে, বলে উঠে, হ্যাঁ।
.
—ওকে তোমার সরি একসেপ্ট হতে পারে কিন্তু তার জন্য একটা শর্ত আছে।
কথা শুনেই অন্তরা বলে ওঠে,, আবার কি শর্ত?
—আছে যদি সেই শর্তটা মানতে রাজি হও তবে তোমাকে ক্ষমা করব।
স্নেহা শর্তের কথা শুনে ভয় জমে গেছে।মাথায় দেওয়া ওড়না টা আরেকবার মাথায় ভালো করে
টেনে উনার কোন আঙ্গুলে পেচাতে থাকে। আমার কি শর্ত দিবে।
—কি হলো তুমি কি আমার শর্ত শুনতে রাজি আছো।
–কি শর্ত? কাঁপা কাঁপা গলায় স্নেহা কথাটা বলে।
—তুমি সিগারেট এর জন্য আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল।সারা ভার্সিটির সবার সামনে যেখানে কেউ আমার দিকে
তাকানোর সাহস করেনি সেখানে তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছে। এতে আমার রেপুটেশন খারাপ হয়েছে।সে
জন্য তোমাকে তো আর এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায় না তবু আমি তোমার সরি অ্যাকসেপ্ট করতে পারি
যদি তুমি যে কারনে আমার গায়ে হাত তুলেছিল সেই কাজটা এখন করো।
কথাটা শুনে স্নেহা বড় বড় চোখ করে আদ্রর দিকে তাকায়,
—মানে?
—মানে খুব সহজ তোমাকে সেদিনের অসম্পন্ন কাজটা শেষ করতে হবে। তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা
করে দেব । কেউ কিছু বলবো না তোমাকে।
স্নেহা কল্পনাও করেনি এমন একটা কথা বলবে আদ্র। আদ্রকে যতটা খারাপ ভেবেছিল তার থেকেও জঘন্য এই
ছেলেটা। তার চোখে মুখে দুষ্টুমি সাপ আর সহ্য করতে পারলো না।
—দেখুন আপনি আবার অসভ্যতামি করছেন আমাদের হেরাস করছেন। আপনাকে আমার ছরি বলাটাই উচিত
হয় নাই আমি এখানে সব মিটমাট করতে চাইছিলাম কিন্তু আপনি মিটমাট করতে চাইছেন না। আমি আর
আপনার কোনো শর্ত মানতে পারবেন আপনার ছরি এক্সেপ্ট করা লাগবে না। আমি এখনই নিজে প্রিন্সিপালের
কাছে আপনার নামে নালিশ করব।
বলে অন্তরার দিকে তাকায় স্নেহা,
.
কি হলো এখন এই ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তোর কথা শুনে তো কিছু বললাম দেখলি কতটা খারাপ এরা।
এদের যত মাথায় তুলব ততই রা মাথায় চড়ে বসবে। চল আমার সাথে এখনই আমরা অফিস রুমে যাবো।
দুই কদম এগোতেই ওর পা থেমে যায় আপনা আপনি।
রাগী চোখের পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়। আদ্রর মুখে হাসি হাতে থাকা সানগ্লাস চোখে দিয়ে বাইকে উঠে অফিস
রুমে চলে যায়।
অন্তরা আর স্নেহা ওখানে দাঁড়িয়ে হা করে আদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। পেছন থেকে ওর ফ্রেন্ড গুলো
আর সেই মেয়ে দুটো ওদের কাছাকাছি এসে বলে।
—তুমি প্রিন্সিপালের কাছে কী নালিশ করবে আমরা তোমার নামে এখন গিয়ে নালিশ করব যে তুমি আদ্রর
গায়ে হাত তুলেছো। প্রিন্সিপাল তোমার কি হাল করবে দেখো এমন না হয় তোমাকে ভার্সিটি থেকে বের করে
দেয়। একদিন ক্লাস ও করতে পারলে না ভালোমতো আহারে বেচারী।
কথাটা মাইশা বলেই ওর বেস্টফ্রেন্ড রাইসার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যায় পেছনে আশিক রাও চলে যায় শুধু
একজন দাঁড়িয়ে থাকে। সে আর কেউ নয় যে স্নেহাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল রাহাত।
—তোমাকে প্রথম যখন সরি বলতে শুনলাম আমি কিন্তু খুশি হয়েছিলাম ভেবেছিলাম তুমি বুঝেছ কিন্তু পরে
আবার প্রিন্সিপাল করলে কেন। এখন তোমাদেরকে ওরা ফাসিয়ে দেবে আর তোমাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী
দেবে না।
—উনিতো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে আপনি তো দেখেছেন। আপনাকে অনেকটা ভালো মনে
হয়েছে। প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন।
—সরি বোন আমি কিছু করতে পারবোনা আর্দ্র একটু জেদি হল মনটা খুব ভালো। আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওর
বিরুদ্ধে আমি কিছু বলতে পারবো না।
—দেখনা আমি তো সরি বলেছিলাম কিন্তু উনি আবার সেই কথাটাই তুলল । আমার সিগারেটে প্রবলেম আছে
এটা আমি কিছুতেই করতে পারবোনা না।
—সেটা তুমি তখন বললে না হয় অন্য একটা কিছু করা যাইতো এখন দেখো ওই যে ওরা চলে যাচ্ছে স্যারকে
তোমার বিষয়ে অনেক কিছু বলবে।
.
—প্লিজ আপনি একটু সাহায্য করুন প্লিজ ছোট বোন মনে করে আমাদের সাহায্য করুন।
আচ্ছা তোমরা এখন ক্লাসে যাও আমি দেখছি কি করা যায়। রাহাতের খুব খারাপ লাগলো স্নেহার মুখটা দেখে
সত্যি মেয়েটা খুব ভয় পেয়েছে। ওর সাথে তো খারাপই হয়েছে কিন্তু আদ্রর বিরুদ্ধে আমি যেতে পারব না
দেখি বলে কিছু করা যায় কিনা। দূর থেকে রাহাত দেখতে পায় ওরা প্রিন্সিপালের রুমের ঢুকার আগে বাইরে
কিছু আলোচনা করছে। রাহাত তাড়াতাড়ি সে দিকে যায়।
আদ্র সবাইকে বুঝিয়ে বলেছে কিভাবে কি বলতে হবে। এমন ভাবে বলবে যে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে ওর
গায়ে হাত তোলা শাস্তি তো পেতেই হবে। প্রিন্সিপালের রুমের ঢুকবে এমন সময় পেছন থেকে চিৎকার করে
আদ্রর নাম ধরে ডেকে ওঠে রাহাত তা দেখে সবাই অবাক চোখে রাহাতের দিকে তাকায়,
রাহাত কারো সাথে কোন কথা না বলে আদ্রকে একটু দূরে নিয়ে যায়। দূর থেকে সবাই দেখছে ওরা কিছু কথা
বলছে।
অনেকক্ষণ ওদের মাঝে কিছু কথাবার্তা চলল দেখা গেল আদ্র রেগে কিছু বলছে তারপর রাহাতের কথায় আস্তে
আস্তে শান্ত হলো। মুখটা গম্ভীর করে এলো রাহাত ওকে নিয়ে সবাইকে নিয়ে আবার মাঠে চলে এলো।
—-কি হলো এভাবে চলে এলাম করে সবাই। রাহাত তুই আদ্রকে কি বললি তখন।
—-কিছু না।
আদ্র কিছু বলছে না।সবাই জিজ্ঞেস করেও যখন ওদের মধ্যে মুখ দিয়ে কিছু বের করতে পারলো না সবাই চুপ
হয়ে গেল।
অন্তরার আর স্নেহা ভয়ে ভয়ে ক্লাসগুলো শেষ করল। না জানি কখন কোন বিপদ আবার এসে হানা দেয়। কিন্তু
কোনকিছুই করল না শেষ ক্লাস বের হতেই ভয় পাচ্ছে।
—-আমার ভয় করছে রে স্নেহা প্রিন্সিপালের কাছে কী নালিশ করে ফেলেছে প্রিন্সিপাল আমাদের ডাকলো না
তো।
—-হ্যাঁ মনে হয় রাহাত ভাইয়া কিছু করেছে।
—হতে পারে চল এবার বাসায় যায়।
অচেনা শহর পর্ব ৪
দুজনের গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে আজকে একবারও ক্লাস থেকে বের হয় নাই। মাঠের কাছে আসতেই
গাছটার দিকে নজর যায় সবাই বসে আছে ভয়ে ভয়ে দুজনে এগিয়ে যাচ্ছে এই বুঝি ডেকে উঠলো, কিন্তু
কেউ ডাকলো না। দুজনে গেটের বাইরে সে অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে হেসে উঠল,
—মনে হয় বিপদ গেল।
—-হ্যাঁ এর জন্য রাহাত ভাইয়ের কৃতিত্ব আছে তাকে ধন্যবাদ দিতে হবে।
—আচ্ছা কালকে তাহলে দেব।
দুজনেই নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে আস।
সবাই বাসায় চলে গেছে। রাহাত আর আদ্র পাশাপাশি একটা লেকের পাড়ে বসে আছে।
—তখনকার ব্যবহারের জন্য রাগ করেছিস?
একবার ফিরে তাকালো আদ্র রাহাতের দিকে তারপর আবার দৃষ্টি সামনে দিকে।
—রাগ করিস না।আমি কারো হয়ে কথা বলি নাই শুধু আমার মনে হয়েছে মেয়েটার সাথে অন্যায় হয়েছে।
–ও যে আমার গায়ে হাত তুললো সেটা কিছু না।
—-হ্যাঁ এটা খারাপ কিন্তু তুই তোর সাথে খারাপই করছিস জোর করে সিগারেট খেতে বলেছিস এটা কি ঠিক?
—তুই আমার ভুল ধরছিস আগে এমন ধরছিস না তুই আমার ফ্রেন্ড নাকি ওই মেয়েটার।
—আদ্রর তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। সে ভুল করেছে পরে তো ক্ষমাও চেয়েছে ক্ষমা করে দে প্লিজ। এই নিয়ে
আর বাড়াবাড়ি করিস না যা হওয়ার হয়েছে এখানে ভুলে যা।
আদ্র কিছু বলল না চুপ চাপ বসে রইলো কিছুক্ষণ।