অচেনা শহর পর্ব ৬
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ চলে গেছে। এর মাঝে আর আজ আমার সাথে বা অন্তরা কারো সাথে কথা বলে নাই
ভালো কিংবা খারাপ। আমরা আমাদের মতো আসি আমাদের মতই থাকি প্রথম প্রথম ভয় হয়েছিল আবার
আসবে কিছু বলবে কিনা। কিন্তু আর কেউ কিছু বলে নাই তাই এখন ভয়টা কেটে গেছে তাদের আশেপাশে খুব
কম যাই বললেই চলে। এ সেই ক্লাসের ঢুকি আর বের হয়না অন্তরা বের হয় আমি ক্লাসে বসে থাকি ভালো
লাগেনা কিছু বসে বসে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি। ক্লাস শেষ হলে বের হয়ে যায় টিফিন টাইমে অন্তরা
অনেক ডাকে খেতে যাওয়ার জন্য যায় না।
প্রথম প্রথমে স্টুডেন্টরা আমাকে নিয়ে চর্চাটা বেশি করেছে এখন আর সেসব দেখি না। কিন্তু কেউ আমার
সাথে মিশে না বললেই চলে তার প্রধান কারণ আমার ড্রেস আপ নাকি কারো পছন্দ না। কার সাথে বসতে
গেলে একই কথা তুমি আমার পাশে বসে না প্লিজআমার তোমাকে ভালো লাগে না তুমি একটু স্মার্ট হয়ে
আসতে পারো না কেমন খালাম্মা খালাম্মা লাগে। যেন যে সিটে কেউ থাকেন ঐ সিটে গিয়ে বসে পড়ি এর
মাঝে অন্তরা কলেজ আসে নাই একদিন। সেদিন পড়েছিলাম মহা মুশকিলে। আমি একটা সিট ফাকা পেয়ে
সেই সিটে বসে পড়ি আজকে অন্তরা আসবে না। অন্তরা থাকলে নিজেকে একা মনে হয় না কিন্তু আজকে
একাকীত্বটা বুঝতে পারছি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
ক্লাস এতই স্টুডেন্ট অথচ কেউ আমার বন্ধু না সবাই সবার সাথে হাসি তামাশা করে চলেছে। আমি নিজের
সিটে বসে সবার আনন্দ দেখছি নিজের চাইছি যদি এরাও আমার সাথে এভাবে গল্প করতো। কিন্তু এটা তো
সম্ভব না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। যতদূর চোখ যাচ্ছে দেখে যাচ্ছে মাঠে একই
স্থানে একেক স্টুডেন্ট বসে আছে। সবাই নিজেদের ফ্রেন্ড দের নিয়ে মেতে আছে। আচমকা আমার চোখটা
ঝাপসা হয়ে হেলো গ্রামে থাকতে আমারও এমন ফ্রেন্ড ছিল আমরা সবাই কত আড্ডা দিতাম লেখাপড়া করে
অবসর সময় আড্ডা দিতাম। রিনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল পরীক্ষার পর ওর বিয়ে হয়ে গেছে। গ্রামে থাকতে
ওর বিয়ে খেয়ে এসেছি। গ্রামে কলেজ আছে কিন্তু ভালো ভার্সিটি নাই এজন্যই শহরে আসা। বাবার জমানো
শেষ সম্বল ব্যাংকের টাকা উঠিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম আর কিছু টাকা আছে ওইটা কাইবা কতদিন যাবে।
একটা কাজের ব্যবস্থা করতেই হবে।
আমি যে বাসায় থাকি সেটা নিচতলা। পাঁচতলা বিল্ডিং আমি নিচ তলার দুটো রুম নিয়েছি।সে যত রুমের ভাড়া
5 হাজার টাকা রুমগুলো ছোট আর একদম অযোগ্য ছিল এজন্য 4000 টাকায় দিয়েছে। না হলে তার অন্যসব
রুমের ভাড়া নাকি একেকটা 4000 করে। তাহলে আমি ভাড়া নিতে পারতাম না। নিচতলার আমার পাশের রুম
সেখানে একটা আপু থাকে তার একটা মেয়ে আছে দুই বছর।তার সাথে আমার এই কয়দিনে অনেকটা সম্পর্ক
ভালো হয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগ সময় আমার কাছে থাকে তার মেয়ে রায়া। সেই ভাবির নাম রুনা রুনা
আপুকে আমি আমার সমস্যার কথা সব বলেছি। আপু বলেছে আমাকে একটা টিউশনি খুঁজে দেবে।আজকে
গিয়ে সে কথাটা আবার জিগ্গেস করতে হবে পেয়েছে কিনা?
.
এক মনে বাইরে তাকিয়ে কথাগুলো ভেবে যাচ্ছি। কখন যে স্যার এসেছে টের পায় নাই। হঠাৎ স্যার এর ডাক
কে চমকে দাঁড়ায়,, স্যার আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
একটা শুকনো ঢোক গিলে স্যারের দিকে তাকায়,
এই যে মেয়ে কি যেন নাম তোমার?
জি স্যা র স্নে হা? ভয়ে টেনে টেনে কথাটা বলি!
আমি যে ক্লাসে এসেছি সেটা তুমি খেয়াল করেছো বাইরে থেকে কি করছিলে?
স্যার আসলে…
স্টপ ইট বেয়াদব মেয়ে বাইরে তাকিয়ে ক্লাসে অমনোযোগী ছিলে আবার এখন মুখে মুখে কথা বলছ।
যাও বের হও ক্লাস থেকে।
কিন্তু স্যার…
তুমি আবার মুখে মুখে কথা বলছ আমার কথা না শুনে। গেট আউট।
স্যারের চিৎকার শুনে, এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে স্নেহা ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে এভাবে স্যার বের না করলেও পারত।এমনিতে স্যার
আমাকে দেখতে পারেনা প্রতি ক্লাসেই কিছু না কিছু বলে কিন্তু অন্তরা কে সামলে নেয়। আজ অন্তরা নাই
আজকে আমাকে এভাবে বের করে দিল।কেন সবাই আমার সাথে এরকম করে আমার টাকা নাই আমি
গরিবের জন্য আমি এখানে পড়তে পারবোনা।কেউ তো আমার সাথে এমনিতেই মেশে না তবুও আমি নিজের
কষ্টকে ধামাচাপা দিয়ে সবার সাথে মিশে থাকার চেষ্টা করি তবুও সবার আমাকে এভাবে কষ্ট কেন দেয?
.
দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি নিজেকে আর স্বাভাবিক রাখতে পারছি না। এলোমেলোভাবে নামছিলাম হঠাৎই
কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে চাইছিলামএমনিতে আমি এলোমেলোভাবে হাঁটছিলাম এখন নিজের
কন্ট্রোল হারিয়ে পড়ে যেতে নেয় আমি চিৎকার করে উঠি এখান থেকে একদম গড়িয়ে নিচে পড়লে প্রচন্ড
ব্যাথা পাবো। ভাবতে গা শিউরে উঠছে ভয়ে বন্ধ করে ফেলি।অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু আমি নিচে পড়ছি
না মনে আছে কেউ আমার কোমর শক্ত করে ধরে আমাকে পড়ার হাত থেকে বাচিয়েঁছে। একটা স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়।
চোখ মেলে তাকিয়ে আমি আরও ভয় পেয়ে যায়। মনে হচ্ছে পড়ে গেলে মনে হয় ভালো হতো। প্রায় দুই সপ্তাহ
পর আবার সেই মুখ দেখতে পাচ্ছি। এতদিন দূর থেকে দেখেছি আজকে আবার কাছে। আমি বড় বড় চোখ
করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। অনেকক্ষণ হয়ে গেল আমাকে ছাড়ছে না সেইভাবে ধরে কেমন করে যেন
তাকিয়ে আছে। আমিও তার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি এমন করে তাকিয়ে আছে
কেন?
আদ্রর নিশ্বাস আমার মুখে বারি খাচ্ছে। শক্ত করে আমার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে আটকে রেখেছে।
অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে আমার শরীরে।ফার্স্ট টাইম কোন ছেলে আমাকে এভাবে নিজের সাথে জড়িয়ে
রেখেছে। আদ্রর নড়াচড়া না দেখে আমি নিজে একটু নড়ে উঠলাম।
সাথে সাথে আদ্র আমাকে ধরে রাখা নিজের হাত আলগা করে ফেলে।আমি চোখ বড় বড় করে নিজের
দুই হাত দিয়ে আদ্রর শার্টের কলার শক্ত করে চেপে ধরি
—-এভাবে ছেড়ে দিলে তো আমি পড়ে যাব আমাকে সোজা করে দাড় করান এভাবে ছাড়বেন না প্লিজ।
অসহায় মুখ করে কথাটা বললাম,,
—তোমাকে আমি সাহায্য করবো ইম্পসিবল।
—প্লিজ প্লিজ এভাবে ছাড়বেন না আমি ব্যথা পাব দেখুন কতগুলি সিড়ি আছে এখন আমি একদম পড়ে যাব।
—সো আই ডোন্ট কেয়ার!
—আপনি আমাকে এর জন্য যা করতে বলবেন আমি তাই করবো তবুও আমাকে এভাবে ফেলে দিবেন না প্লিজ।
আমার কথাটা শুনে আদ্র কিছুক্ষন চুপ করে কিছু একটা ভাবে।
—ঠিক বলছো তো।
—হ্যাঁ!
.
আমার ওই সময় আর তেমন কিছুই মনে পড়েনি নিজেকে রক্ষা করতে আমি হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে
পড়েছিলাম। একটা হাসি দিয়ে আমাকে টেনে ঠিক করে দাড় করায়। আমি দাঁড়িয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলি,
মাথায় থেকে ওড়না পড়ে গেছে তাড়াতাড়ি ওড়না টেনে মাথা থেকে নেয়। দুই সিড়ি নিচে পড়ে আছে ব্যাগ
আমি নিচে নেমে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নিচে নামতে লাগলাম কি মনে করেছেন আবার পেছন ফিরে দেখি আদ্র
আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ দিলাম।
তারপর নিচে নামতে লাগলাম পেছনে থেকে আবার আদ্রর ডাকে থেমে গেলাম।
—জি বলেন।
—তোমার ভয় করছেনা??
—কেন?
—আমার কথা এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলে। এখন আমি তোমায় কি দিয়ে কি করাতে পারি সেটা ভেবে।
কথাটা শুনে স্নেহার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় ভয়েআতঙ্কে তখন কোথায় কি স্বীকার করে ফেলেছে কি বলে
ফেলেছে এখন মাথায় আসছে। সেটা মাথায় আসতে স্নেহা থমকে দাঁড়ায়।
আদ্রর এক ধ্যানে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। স্নেহার ভয় পাওয়া মুখ দেখে ওর খুব হাসি পাচ্ছে।
নিজের হাসি কন্ট্রোল করে বলল,
—কি ব্যাপার কাঁদছিলে কেন আর এখন না তোমার ক্লাস টাইম ক্লাস না করে বাইরে কোথায় যাচ্ছিলে।
আদ্রর স্নেহার চোখে পানি দেখতে পেয়েছে ধরে। তাই কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে
ফেলল,,
দুদিন তোমার ফাস্ট ইয়ারের নবীন বরণ অনুষ্ঠান হবে।আর যত অনুষ্ঠানে সেসব অনুষ্ঠানের দায়িত্ব এসে পড়ে
আদ্রর অপর সেই অনুষ্ঠানের কথা জানানোর জন্যই ওপরে যাচ্ছিল। তখনই হঠাৎ স্নেহাকে এলোমেলোভাবে
দৌড়ে নামতে দেখে।
স্নেহা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। ওকে যে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে সেটা বলতো লজ্জা পাচ্ছে
চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
—কি হল কথা বলছো না কেন?
স্নেহা আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে, তখনি আদ্রর ফ্রেন্ড রাহাত আসে রাহাদ এসেদেখে স্নেহা মাথা
নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর আদ্র ওকে কি যেন বলছে,,
—এখানে কি হচ্ছে?আদ্রর তুই না ক্লাসে যাচ্ছিলি ফাস্ট ইয়ারের এখানে কি করছিস?
—কিছু না।
.
বলেই আদ্র একবার স্নেহা দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে চলে যায়।
রাহাত স্নেহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করবে তার আগে স্নেহা সেখান থেকে চলে যায়। দুজনের যাওয়া দিকে
তাকিয়ে হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপরও ও উপরে যায়।
আদ্রর দুতালায় গিয়ে কনারের রুমের দিকে যেতে লাগে হঠাত ওর চোখ পড়ে নিচে দেখে স্নেহা বাম দিকে
যাচ্ছে। ক্লাস বাদ দিয়ে ওইদিকে কেন যাচ্ছে ওর মাথায় ঢুকছেনা। ফাঁকিবাজ একটা। ওইদিকে লেকের পাড়
ভেবে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস এ ঢুকে। ক্লাসে গিয়ে হঠাৎই স্যারকে জিজ্ঞেস করে,,
—সারাটা আপনার ক্লাসে স্টুডেন্ট যে বাইরে ঘোরাফেরা করছে সেগুলো আপনি দেখেন না।
—-কার কথা বলছো তুমি আদ্র।
আছে হয়তো আপনি ক্লাসে থাকাকালীন বেরিয়ে গেছে।
—ও বুঝতে পারছি। আর বলো না মেয়েটাকে দেখলে আমার রাগ উঠে। তাই আমি আজকে ইচ্ছে করে বের
দিয়েছি। আমি ক্লাসে আছি আর ওই মেয়েকে না বাইরে মনোযোগ দিয়ে রেখেছিল।
—এজন্য আপনি তাকে বের করে দিয়েছেন।
—-হ্যাঁ ,কিছুটা খুশি হয়ে। ভালো করেছি না।
অচেনা শহর পর্ব ৫
স্নেহা মাঠ দিয়ে বাম পাশে ওই দিকে হাটতে হাঁটতে যাচ্ছিল এদিকে কেউ ছিলনা তাই। কেউ ওকে পছন্দ করে
না এজন্য কারো পাশে ও যায়না। এদিকে আসতে একটা পুকুর চোখে পড়ে। হ্যাঁ আরেকবার আসছি লাম
অন্তরার সাথে। আজকে এই পাশে কেউ নাই। ঠান্ডা বাতাস বইছে আমি লেকের পাশে গিয়ে ঘাসের
উপর বসে পড়লাম।
অন্তরায় একদিন আসে নাই আর আজকে আমার সবচেয়ে খারাপ যাচ্ছে দিনটা। অনেকক্ষণ বসে রইলাম
হঠাৎ চমকে পেছনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আদ্র একটা গাছে হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকাতে চোখ সরিয়ে পকেটে থেকে একটা সিগারেট বের করে আগুন লাগল, তারপর সেটা ফুঁ দিতে
দিতে আমার পাশে এসে বসল,,,
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
—আপনি এখানে??
সে বসে সামনে তাকিয়ে ছিলো সিগারেটে ফূ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া নিয়ে আমার কথা বলার মাঝে সমস্ত
ধোয়া আমার দিকে দিল।
আমি মুখ ধরার আগে সমস্ত ধোয়া আমার নাক মুখ দিয়ে ঢুকে গেছে মনে হয়।
কাশতে কাশতে আমার অবস্থা খারাপ অন্যদিকে ঘুরে আমি খেলেই যাচ্ছি ধুমবন্ধ হয়ে আসছে আমার।
অনেক কষ্টে মুহূর্তে বললাম,,
—একটু পানি দিন প্লিজ’ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।