অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৭ || মেঘের আড়ালে || Golper Shohor

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৭
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

কথাটা বলে স্নেহা পেছন ফিরে তাকালো। কোন আওয়াজ আসছে না দেখে। পাশে তাকিয়ে দেখে আদ্র নাই।
কাশতে কাশতে ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। গলা ব্যথা করছে মুখে হাত দিয়ে পেছন তাকিয়ে দেখে
আদ্র চলে যাচ্ছে। ও সে দিকে এক পলক তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়,,
কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আদ্র এমন একটা কান্ড করবে ও কল্পনা তে ভাবে নাই। আদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে
থাকে কিছু সময় হঠাৎ ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিচে পড়ে যায়। একেতে কাশি থামছে না তার ওপর আরেক
যন্তণা। অনেক টা কিনার ঘেঁষে বসেছিল স্নেহা পুকুরের কিনারে ব্যাগটা পড়েছে ওই সেটা তুলতে গিয়ে পা
পিছলে ধড়াম করে পানিতে পড়ে যায়।

স্নেহার কাশি দেখে বিরক্ত হয়ে আদ্র উঠে যায় ন্যাকামো একদম সহ্য করতে পারে না। এই সিগারেট খেতে
বলেছিলাম বলে আমাকে সবার সামনে চর মেরেছিল না এখন সেই সিগারেটের গন্ধ খাও।বলে একটা তৃপ্তির
হাসি দিয়ে ওঠে শার্টে বুকের কাছ থেকে সানগ্লাস টা বের করে চোখে দিয়ে বাইকের চাবি আঙ্গুলে ঘোরাতে
ঘোরাতে চলে যেতে লাগে। স্নেহার কাশি দিতে দেখেছে শুধু পানি চাওয়াটা শুনি নাই।
আপন মনে হেঁটে চলে যাচ্ছে হঠাৎ চিৎকার শুনে পেছনে তাকায়। অনেকটা দূরে চলে এসেছে তাই দূর থেকে
কিছু বুঝা যাচ্ছে না শুধু চি‌ৎকার শুনা যাচ্ছে। হঠাৎও খেয়াল করে লেকের পাড়ে স্নেহা নাই। এই মাএ না
ওখানে বসা দেখলাম গেল কোথায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

চলে গেছে বোধ হয় এর সামনে ফেরে আবার তাড়াতাড়ি পিছনে ঘুরে। স্নেহা শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে
এমনিতে ও সাঁতার জানে না। কাশিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে অস্থির লাগছে তারপর আবার পানিতে পড়েছে ভয়ে
ও কি করবো বুঝতে পারছে না। ডুবে যাচ্ছে পানি খেয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে এখন বুঝি
জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। হঠাৎ বাবার মুখটা ভেসে উঠলো আমার কিছু হলে বাবার কী হবে কে তাকে দেখে
রাখবে ভাবতে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো।আস্তে আস্তে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো। হঠাৎ মনে হলো কী
আমাকে জড়িয়ে ধরেছে?

আমি উপরে উঠছি মনে হয়। চোখ খুলতে পারছি না চোখ খুলে মানুষটাকে দেখতে চাইছি। মনে হচ্ছে কেউ
আমার গালে হাত দিয়ে আমাকে ডাকছে আমার নাম ধরে। শত চেষ্টা করেও চোখ খুলতে পারলাম না। তারপর
আর কিছু মনে নেই যখন চোখ খুললাম দেখলাম আমি একটা অচেনা পরিবেশে আছি চোখ খুলে হাত নাড়াতে
গিয়ে হাত নাড়াতে পারলাম না।

হাতে কিছু একটা টান পড়লো সে দিকে তাকিয়ে দেখি আমার হাতে স্যালাইন দেওয়া । হঠাৎ চিৎকার করে
ডাক্তার ডাক্তার বলে ডাক দিল। দেখে দেখে এই মুহূর্তে বুঝতে পারলাম এই নার্স হসপিটালের বেডে শুয়ে
আছি এখন বুঝতে পারলাম। নার্স ডক্টর কে চিৎকার করে বলছে ডক্টর পেশেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে।
তারপর আমার পাশে এসে একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করল এখন কেমন লাগছে?

আমি ভালো বলে। জিজ্ঞেস করলাম,,,আমি এখানে কি করে এলাম আমি তো ভার্সিটিতে ছিলাম।
আপনাকে একটা আমার কথার মাঝে ডক্টর রুমে ঢুকলো। উনি আর উত্তর দিতে পারল না সরে দাঁড়ালো।
ডাক্তার এসে ও এক‌ই কথা জিজ্ঞেস করলো, এখন কেমন লাগছে?
ভালো লাগছে বলাতেই উনি আমার হাত থেকে স্যালাইনটা খুলে নিল।
তারপর দুজনে বেরিয়ে গেল।

.

কিছুক্ষণ পর দরজা হলে খুলে রাহাত ভাইয়া রুমে ঢুকলো। সে এসে আমার পাশে বসলো। তাই দেখে আমার
চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল সে এখানে কি করছে আচ্ছা উনী কি আমাকে বাঁচিয়েছে। জ্ঞান হারায় আগে
আমি বুঝতে পেরেছি কেউ আমাকে ডেকেছিল। পুকুরে থেকে উঠিয়ে ছিল কিন্তু আমি তাকাতে পারছিলাম না।

—হে স্নেহা তুমি পুকুরে কিভাবে পড়লে?
—ভাই আপনি আমাকে উদ্ধার করেছেন তাই না।
—সেসব পরে হবে আগে বল তোমার এই অবস্থা কিভাবে হল কতটা ভয় পাই দিয়েছিলে সবাইকে।
—আজ আর কথা বলতে গিয়ে বলল না।
—জানিনা কিভাবে যেন পড়ে গেলাম।
—থ্যাঙ্ক গড তুমি ঠিক আছো।
—-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। এভাবে সাহায্য করার জন্য।
আপনি না থাকলে আমার যে কি হত।
রাহাত কিছু বলবে ওর ফোনটা হঠাৎ বেঁচে উঠল,,
—-একটু বস আমি একটু কথা বল আসছি।

বলে রাহাত দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। স্নেহা আস্তে আস্তে উঠে বসলো পুরা শরীর ব্যথা হয়ে আছে। গলাটা
অনেক ব্যাথা হয়ে আছে তখন অনেক কাশি হয়েছিল এজন্য। আদ্রর জন্য আমরা আজ এই অবস্থা। আমি
কখনো ক্ষমা করবো না ।বিনা দোষে সরি বলেছিলাম সামান্য একটু গায়ে হাত তুলেছিলাম বলে আমার সাথে
এরকম করবে। সে আমাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছিল। আজ যদি আমার কিছু হয়ে যেত বাবার কি হতো।
বাবার কথা ভাবতে চোখ দুটো স্নেহা ছল ছল করে উঠলো। দেয়াল ঘড়িতে চোখ যেতেই দেখি চারটা বাজে।
এত বেলা কখন হয়ে গেল ভার্সিটিতে যখন ছিলাম তখন সাড়ে এগারোটা মত ছিল। এত সময় আমি অজ্ঞান
ছিলাম।

.

তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়।
দুপুরে বাবার ঔষধ খাওয়াতে হবে। এখনো তো বাবার না খেয়েই আছে। ওর আর এদিকের কিছু খেয়াল নেই
স্নেহা সোজা কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেল। রিসিপশনে গিয়ে টাকা দিতে গেলে বলে টাকা নাকি দেওয়া হয়ে
গেছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে। একটা বাইক দেখে একটু চমকালো
বাইকটা তো আদ্রর এটা এখানে কেন? আদ্র কি এখানে আছে?
ভাবতে ভাবতে একটা অটো পেয়ে গেল তাই এদিকে আর মাথা না ঘামিয়ে অটোতে উঠে বসে,
রাহাত ফোনে কথা শেষ করে কেবিন এসে দেখে স্নেহা নাই। স্নেহার নাম ধরে কয়েক বার ডাকে সাড়া
শব্দ না পেয়ে বেরিয়ে আসতেই আদ্রর সাথে দেখা হয়।

কিরে এভাবে কি খুজছিস?
স্নেহা কেবিনে পেলাম না আমি কথা বলছিলাম হঠাৎ ফোন আসায় বেরিয়ে কথা বলে এলাম এসে দেখি ও
বেডে নাই। গেল কোথায় মেয়ে টা?
চলে গেছে।
চলে গেছে মানে। তুই জানলে কিভাবে চলে গেছে?
দেখলাম অটোতে উঠে গেল।
চলে গেলে তুই আট কালি না। অর শরীর দুর্বল আর ওষুধের নিলোনা। আরেকটা কথাও ভেবেছে আমি নাকি
ওকে বাচিয়েছি।
ভালো।
ভালো কেন আমি তার কথা বলতে চাইছিলাম কিন্তু বলার সুযোগই পেলাম না কালকে বলে দেবো।
না দরকার নাই বলিস না।

চল এবার বাসায় যাওয়া যাক সারা দিন তো একটা ফালতু মেয়ের পেছনে সময় নষ্ট করলাম।
তাকে বুঝি না একটু আগে এত অস্থির হয়ে ছিলি কেমন পাগলামি করছিলি এখন কঠিন কথা বলছিস।
ওই অস্থির আমি ওর জন্য কখনোই হই নাই।জাস্ট নিজের জন্য একজন মরতে বসে ছিল তাই তাকে জাস্ট
বাঁচিয়েছি বেঁচে গেছে আমার কাজ শেষ। ঝামেলা মুক্ত হলাম আবার মরে গেলে তো ঝামেলায় ফেসে যেতাম
এজন্যই বাঁচিয়েছি।
কিন্তু আমার তো তা মনে হয় না হয়। তুই আবার ঝামেলার ভয় পাস নাকি।
দেখ রাহাত তুই কিন্তু বাজে কথা বলছিস ওই মেয়ের জন্য আমি কেন চিন্তিত হতে যাব।

.

একটু রেখেই কথাটা বলল আদ্রর আর রাহাত প
কিছু বলল না,,, আচ্ছা চল বাসায় যাই।
আদ্র আগে আগে চলে গেল ওর পেছনে রাহাত ও এল। এই ছেলেটাকে বুঝতেই পারেনা।হসপিটালে আনার
সময় আদ্র খুবই পাগলামি করে চিৎকার করে ডাক্তার কে ডেকেছে। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত হাত ধরে বসে ছিল
আদ্র স্নেহার ওর চোখে ভয় দেখেছিলাম।
কিন্তু এখন আবার কেমন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথা বলল। তখনকার আদ্র আর এখনকার আদ্র দুইজন
দুই রকম।

স্নেহা বাসায় এসে সোজা ওর বাবার রুমে যায়। গিয়ে দেখি বাবা ঘুমিয়ে আছে। পাশে খাবারের প্লেট। খাবার
এলো কোথা থেকে? হঠাৎ পেছন থেকে রুনা আপুর আওয়াজ এলো,,,
কিরে স্নেহা তোর আজকে বাসায় আসতে এত লেট হল কেন? তোর আসতে লেট হয়েছে বলে আমি দুপুরের
খাবার দিয়ে গেলাম আঙ্কেলকে। হয়তো ভার্সিটিতে তোর কোন কাজ আটকে পড়েছিল।
ধন্যবাদ আপু আমি তো বাবার জন্য খুব চিন্তা করছিলাম। তুমি আমার অবর্তমানে বাবাকে দেখেছো এজন্য
তোমার কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবো।

অচেনা শহর পর্ব ৭

দেখছো মেয়ের কথা আমি না তোর বোন আমাকে বলিস ঋণী হয়ে থাকার কথা। বোন হয়ে বোন কে সাহায্য
করব এটা আবার ঋণের কি হলোরে পাজি মেয়ে আর কখনোই একথা বলবিনা তোকে আমি নিজের ছোট
বোন মনে করি। আর আংকেলকে নিজের বাবা মতো ভালোবাসি।
সত্যি আপু তুমি খুব ভালো।
তোর থেকে কম যা এবার ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে কেমন শুকনো লাগছে? শরীর ঠিক আছে তো এমন লাগছে
কেন?
সত্যিটা বলো না কিছুক্ষন নিরব থেকে বললাম ঠিক আছে আপু তুমি বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ড্রেস চেঞ্জ করে বসতে শরীর কেঁপে উঠলো শরীরের জ্বর এসেছে বুঝতে পারলাম আমার কথা বলার মত আর
পরিস্থিতি ভালো না পেলাম না শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে। ধড়াম করে খাটে শুয়ে পড়লাম। এর মাঝে রায়া
আন্টি বলতে বলতে রুমে আসলো কথা বলতে পারছি না চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে
আমার সাথে কথা বলে যাচ্ছে। একটু পর আপু ভেতরে চলে এলো।
আমাকে পড়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে আঁতকে উঠল চোখ বন্ধ করে
আছি আর আপু আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে।

অচেনা শহর পর্ব ৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.