অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর পর্ব ৯ || রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি

অচেনা শহর

অচেনা শহর পর্ব ৯
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

মাইশা নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে হঠাৎ আদ্রর দিকে চোখ পড়তেই ও চুপসে গেল।
কথা অফ করে একটা মেকি হাসি দিল।
“উঠছো কেন খাবে না?”
“না।”
“না মানে সবাই খেতে এলাম এখন না খেয়ে চলে যাবে।”
“আমি কি সবাইকে চলে যেতে বলছি তোরা খা। আশিক আমার সাথে আয় তো।”
“কোথায় যাবে?”

“দরকার আছে। আদ্র কাউকে কৈইফত দিতে পছন্দ করে না নেক্সট টাইম যেন এই ভুল তোর মাঝে না দেখি।”
বলেই আদ্র বেরিয়ে গেল ওর পেছনে আশিক ও গেল।
এদিকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে মাইশা।
“দেখলি আজও তোকে কেমন ইগনোর করে চলে গেল।”
“কি বলতে চাইছিস তুই রাইসা?”
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদ্রকে মনের কথা জানিয়ে দে। কবে জানি আবার তোকে ছেড়ে অন্য কাউকে ধরে
বসে।”

“অসম্ভব। আদ্র আমাকেই লাইক করে দেখিস না অন্য কোন মেয়ের সাথে কেউ কথা বলে না‌। আর কাউকে
তো ওর সহ্য করতে পারে না। আর ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী, স্মার্ট মেয়ে হলাম আমি আমাকে রেখে অন্য
কাউকেও লাইক করবে ইম্পসিবল।ও আমাকে লাইক করে দেখিস রাগটা আর ওর অ্যাটিটিউড একটু বেশী
এজন্য বুঝতে দেয় না। আর এই অ্যাটিটিউড হ্যান্ডসাম লূকের জন্য তো ওকে আমি এত ভালবাসি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

“কি জানি ? জানি না বাবা”
রাইসা মনে মনে ভাবতে থাকে,,,
“তোকে যে আদ্র একটু সহ্য করতে পারে না সেটা আমার থেকে আর কেউ ভালো জানে না।
আর তুই ভেবে বসে আছিস যে ও তোকে লাইক করে হাধারাম একটা।”
“তা জানবি কেন তুই কোন কামের না।”
বলে মুখ বেঁকিয়ে ফোন টিপতে লাগলো।

রাইস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে রাইসা। ভার্সিটিতে এসে আদ্রর ও তার সব ফ্রেন্ডের
সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়। মাইশা একটু অহংকারী কিন্তু মনটা ভালো। ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ টা খুব
কাকতালীয়ভাবে হয় রাইসাকে আদ্র সাহায্য করেছিল এখানে পড়াশোনায় । মধ্যবিত্ত হলেও ভাই-বোনের
সংখ্যাঅনেক জানার জন্য টাকার অভাব পড়ে পরীক্ষার ফিস দিতে না পারায় এক্সাম দিতে দেয় না তখন আদ্র
ওকে সাহায্য করে। তখন থেকেই ওর সাথে আদ্রর ফ্রেন্ডশিপ। তখন থেকে আদ্রর,আশিক, মাইশা, আয়রা,
রাহাত, নাদিম, অনিক, আবির, রাফি আরো কিছু আছে সবাই একটা গ্রুপ হয়। এই গ্রুপে আগে দুইটা
মেয়ে ছিল মাইশা আর আয়না। আয়রা আর মাইশা দুজন চাচাতো বোন। আয়রা আদ্রর ফুপাতো বোন আর
সেই সুবাদে আয়রার সাথে আদ্রর এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।আর আয়নার চাচাতো বোন মাইশা সেজন্য দুজন গ্রুপে মেয়ে ছিল পরে আবার আমাকে যুক্ত করা হয়েছে।

প্রথম প্রথম মাইশা আমাকে দেখতে পারত না। কিন্তু থাকতে থাকতে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হয়েছে।
তবে জানতে পারি মাইশা আদ্র লাইক করে প্লাস ভালোবাসে। মাইশা অনেকগুলো রিলেশনও করেছে কিন্তু ও
সবার সাথে টাইম পাস।
ও মনে করে আদ্রর ওকে লাইক পরে কিন্তু আমার তো মনে হয় না।
কিন্তু সামনা সামনি বললে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবে এজন্য চেপে গেলাম।
আয়রা বেড়াতে গেছে এজন্য ভার্সিটিতে আসতে পারতেছে না। কালকে ফিরে আসার কথা।

.

আদ্র আর আশিক স্নেহা দের ক্লাসে এলো। আশিক আর আদ্র ক্লাসের ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ালো।
যেন ক্লাসে স্যার এসেছে। আদ্র ক্লাসে চোখ বুলিয়ে কাউকে খুজল, সবাই দাঁড়ানো দেখে স্নেহাকে চোখে
পড়েনি আদ্রর স্নেহা সবার লাস্ট বেঞ্চে বসে গল্প করছে অন্তরার সাথে এজন্য ও আর অন্তরা বাদে সবাই
দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আদ্রর এটা দেখে রেগে উঠলো,
আদ্র স্নেহা আর অন্তরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

স্নেহা আর অন্তরা গল্প করতে এতটাই মগ্ন ছিল যে আদ্র কি খেয়ালই করেনি। আদ্রর রাগ মাথায় উঠে গেল।
ও রাগে বেঞ্চে একটা বারি মারলো,, ক্লাসের সবাই বারি পেছনে তাকালো,
স্নেহা আর অন্তরা আচমকা শব্দে ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ালো, স্নেহা কিনারে বাসা ছিল আর অন্তরা সাইডে আদ্র
স্নেহার মুখোমুখি মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহা দাঁড়াতে আদ্রর মাথার সাথে বারি খেয়ে আবার সাথে সাথে
বসে মাথায় হাত বুলাতে লাগল।

আদ্র ওইভাবেই ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা তার চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠল,
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,, আ আ প নি ,,
“এত কিসের গল্প হচ্ছে যে সবাই আমাদের খেয়াল করলো আর তোমরা ফিরে তাকালে না।”
চিৎকার করে কথাটা বললো আদ্রর।
স্নেহা কথা বলতে পারছে না ও আদ্রর দিকে তাকিয়ে কাপাকাপি করছে। আচমকা আদ্রকে দেখে
চমকে উঠে তারপর আবার চিৎকার করে বলা কথায় ভয় পেয়ে গেছে।
অন্তরা বলে,,” আসলে ভাইয়া আমরা একটা…

“স্টপ তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি আমি। যাকে জিজ্ঞেস করেছি তাকে বলতে দাও। হ্যালো মিস স্নেহা বলুন কি
কথা হচ্ছিল।তোমাকে ঐদিন স্যার ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলতাই না ক্লাশে এসে পড়ালেখা বাদ দিয়ে
অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়ার গল্প করা ইডিয়েট।”
স্নেহা লজ্জায় অপমানে মাথা নিচু করে আছে আদ্র সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, এক নজর স্নেহার মুখের দিকে
তাকিয়ে সোজা সামনে এসে দাঁড়ায়।

.

তারপর নবীন বরণ অনুষ্ঠানে নিয়ে কথা বলতে লাগে সবাইকে শাড়ি পড়ে আসতে বলে। মেয়েদের লাল শাড়ি
আর ছেলেদের সাদা পাঞ্জাবি। আর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেটা জানতে চাই। নাচ গান কবিতা
আবৃতি অভিনয় সবকিছুই আছে। দিতে চাইলে ম্যাডাম আর একটা স্যারের নাম বলে। তাদের কাছে গিয়ে
নাম দিতে হবে।
মেয়েগুলো তো হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিল।
কথা শেষ করে বের হয়ে আসে।

আদ্র বেরিয়ে আসতে আবার আগের মতো গল্পে মেতে ওঠে সবাই স্নেহা আর অন্তরা হতভম্ব হয়ে বসে থাকে।
কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছু ওদের মাথায় ঢুকলো না।
“দেখলি কতো অসভ্য এই ছেলেটার মতো বেয়াদব আরে একটা ও আমি দেখি নাই। কি বলছিলি এই ছেলে
আমাকে বাঁচিয়েছে বললাম থ্যাংকস বলবো। অসম্ভবে ছেলের জন্যই তো আমি পড়েছিলাম ও যদি আমাকে
সিগারেটের ধোঁয়া না দিত তাহলে আমি পড়তাম ই না।”

“আদ্র ভাইয়াকে কিন্তু আমার সেই লাগে! হ্যাঁ একটু রাগী বটে কিন্তু দেখতে কিন্তু হেব্বি।”
“দেখলে সুন্দর হলে হয়না মনটাও সুন্দর হতে হয় ছেলে যতটা দেখতে সুন্দর ততটাই মনটা খারাপ।
প্রথম দিন থেকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে যাচ্ছে।”
অন্তরা কিছু বলল না,, কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা বলল,,
স্নেহা পরশু তো শাড়ি পড়ে আসতে হবে লাল শাড়ি।আমিতো শাড়ি পরতে পারি না আমার তো পার্লারে যেতে
হবে তুই কি যাবি তাহলে আমরা দুজনে একসাথে পার্লারে গিয়ে সেজে আসবো।

অচেনা শহর পর্ব ৮

স্নেহা বড় বিপদে লাল শাড়ি পড়ে আসার কথা শুনে। না আছে শাড়ি একটা শাড়ি আছে সেটাও লাল না নীল
এর মধ্যে সাদা শাড়ি। মার বিয়ের শাড়ি লাল ছিলো সে শাড়িটা ভাবি নিয়ে গেছে আর একটা ছিল। মাকে আব্বু
পরে কিনে দিয়েছিল।নীল এর মধ্যে শাড়িটা সুন্দর অতো কাজ নয় পারটা সাদা ভেতরে হালকা কাজ আছে‌।
সেটা পরলে তো হবেনা। কি মুশকিলে পড়লাম এখন লাল শাড়ি কোথায় পাব। স্নেহাকে এত ভাবতে দেখে
অন্তরা ওকে ধাক্কা দিয়ে ধ্যান ভাঙালো,

“কিরে শাড়ি পরে আসবে না।”
“না।”
“হোয়াট কি বলল শুনলি না শাড়ি পড়ে আসতে হবে এটা তো বাধ্যতামূলক।”
“কি পরে আসবো এটা আবার বাধ্যতামূলক হবে কেন আমার যা আছে আমি তাই পরে আসবো।”
“দেখলি না সবাইকে পরে আসতে বলল।”
“এখন এসব বাদ দে ক্লাস কর।”
বলে আর স্নেহ কথা বাড়ালো না। ক্লাসে মনোযোগ দেয় স্যার ও এর মাঝে চলে আসে।
ক্লাস শেষে স্নেহা সোজা বাসায় চলে এলো।
অন্তরার সাথে তেমন কথা বলল না।

অচেনা শহর পর্ব ১০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.