অচেনা শহর - গল্প বাজার

অচেনা শহর শেষ পর্ব || romantic love story

অচেনা শহর

অচেনা শহর শেষ পর্ব 
লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি

আদ্র স্নেহাকে একদম নিজের কাছে টেনে নিয়ে চুমু খাওয়ার জন্য। আজকে আদ্র
স্নেহাকে একটা চুমু খাবেই। স্নেহা ছোটাছুটি চেষ্টা করো না পেরে শান্ত হয়ে গেছে।
চোখ বন্ধ করে আছে। আদ্র স্নেহার ঠোঁট স্পর্শ করবে এমন সময় দরজা বাইরে
থেকে আদ্রর বোন মিলা ডেকে উঠলো। আদ্র তাড়াতাড়ি স্নেহাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে
সরে গেল। রাগে চোখে দরজার দিকে তাকাল আসার সময় পেল না আমার
রোমান্সের বারোটা বাজাতে এখনি আসতে হল।
স্নেহা আদ্রর মুখের ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলল।

বেশ হয়েছে আমাকে জোর করে চুমু খাওয়ার ইচ্ছে জেগেছিল না। আসেন এখন।
ধুর ভাল লাগে না যাইগা।
আদ্র উঠে দরজা খুললে মিলা এসে বলল মা খেতে ডাকছে। তারপর নিচে গিয়ে
আমরা খাবার খেলাম।পরদিন থেকে আদ্র একদম পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে
উঠল আমার সাথে আর দুষ্টামি ফাজলামি করতাছে না। আমি আমার মত রুমের
ভিতরে থাকি কেউ আমার সাথে তেমন একটা কথা বলে না। একমাত্র দাদি ছাড়া।

তার সাথে আমার সম্পর্কটা একটু ভালো হয়েছে। আদ্র চাচাতো ভাইবোন দুজন
শুনলাম তারা দুজনেই বিদেশ থাকে। আদ্রর মা চাচি আমাকে দেখতে পারে না।
একদিন মাইশা এল বাসায় আদ্বর পরীক্ষা শুরু হবে তার আগের দিন। হন্তদন্ত হয়ে
বাসায় এসে আদ্রর কলার ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে তাকে বলতে লাগলো,,,
আদ্র তুই এই গাইয়া চরিত্রহীনা মেয়েটাকে বিয়ে করেছিস?
আদ্র বলল,,, মাইশা কলার ছাড়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

ছাড়বো না কি করবি তুই এই মেয়েটাকে বিয়ে কোন সাহসে করতে পারলি আমি
তাকে ভালোবাসি তুই জানিস না।
তুই ভালোবাসলেই আমাকে ও তোকে ভালবাসতে হবে এমন কোন কথা নেই আর
আমি প্রথম থেকে স্নেহা কে ভালবাসি সেটা তো তোরা সবাই জানিস।
না আমি কিছু জানো কিছু জানতে চাই না। আমি শুধু তোকে চাই।
পাগলামো বাদদে ছাড় আমাকে।

আমি ছাড়বো না। তুই কেন ওকে বিয়ে করলি আমি তোকে ভালোবাসি। তোকে
ছাড়া বাঁচতে পারব না আমি। সেই কলেজ থেকে তাকে আমি ভালোবাসি।
কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না।
মাইশার থেকে জোর করে কলার ছারিয়ে নিলো আদ্র।
মাইশার সামনেই স্নেহাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে কাছে টেনে বলল,,
আমি শুধু মাএ একজনকে ই ভালোবাসি আর সে আমার স্ত্রী। তাই পাগলামো
করিস না।

আর আমার ভালোবাসা।
তুই ও একজন ভালো কাউকে পাবি ডোন্ট ওয়ারি।
বলেই আদ্র স্নেহাকে নিয়ে রুমে চলে এলো মাইশা ওখানেই দাঁড়িয়ে র‌ইল শক্ত
করে। ওর রাগে শরীর কাঁপছে আদ্রর মা এসে দাড়ালো সামনে।
দেখছো আমার ছেলেটাকে ওই খারাপ মেয়েটা বিয়ে করে নিয়েছে।
তাকে দেখে রাগ কমালো মাইশা আর ভাবলো এই মহিলাই ভরসা এখন একে
উস্কে দিতে হবে।

.

হুম আন্টি আমি কি বলেছিলাম মনে নেয় আপনার ওই মেয়ে এমন ই খুব খারাপ
টাকার অনেক লোভ। কতো ছেলেকে ফাঁসিয়ে যে টাকা খেয়েছে হিসেব নাই এখন
আদ্র কে ধরেছে।
মেয়েটাকে আমার খারাপ লাগে না।

কি বলছেন আন্টি আমি আপনাকে ওর অন্য ছেলেদের সাথে অশ্লীল ছবি দেখিয়ে
ছিল ভুলে গেলেন। ওরা নাটকবাজী খুব ভালো নাটক করতে পারে। অভিনয়
করে সবাইকে নিজের জালে আটকে ফেলতে পারে যেমন আদ্রকে ফেলেছে।
আমি আদ্রকে সত্যি ভালোবাসি ওর ক্ষতি আমি চাইনা আন্টি ওই মেয়ে আদ্রর
জীবনের থাকলে আদ্র রং জীবন নষ্ট করে ফেলবে। আপনি চান এসব।

না না আমি এসব চাই না আমার ছেলেকে বাঁচাবো কি করে ওই মেয়েকে তো
কিছুই বলা যায় না আদ্র সহ্য করে না।
হুম জানি অন্য কিছু করতে হবে। আমাকে ভাবতে দিন।
আচ্ছা।
আদ্রর পরিক্ষা শুরু হলো পরদিন থেকে। আদ্র একদম পড়াশোনা মনোযোগী হয়ে
উঠল, আমাকে আর তেমন ডিস্টার্ব করে না রাত দিন এক করে লেখাপড়া
করছে।

পরীক্ষা ভালো হতে দিচ্ছে চারটা পরীক্ষা শেষ হল আদ্রর। পরিক্ষা শেষ করে
বাসায় এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেল যেটা এখন প্রতিদিন করে
আদ্র পরিক্ষা দিতে যাওয়ার সময় একবার এসে একবার। প্রথম দিন আন‌ইজি
লাগছিলো কিন্তু এখন ভালো লাগে। কিন্তু আদ্রকে বুঝতে দেয় না। রাতে আদ্র
আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় কাজটা প্রথমে থেকেই জোর করে এটা আমার
ভালো লাগে আদ্রর জোর করে ভালোবাসা গুলো।

.

আদ্রকে ভালোবাসি বলতে কাছে টানতে আমার ভয় করে খুব ভয় করে। আপন
সবাইকে হারিয়ে ছি এখন কাউকে আপন করতে খুব ভয় লাগে যদি হারিয়ে
ফেলি‌।
এর থেকে এভাবেই থাক না ভালোই তো আছি আদ্রকে ও যদি হারিয়ে ফেলি কি
নিয়ে বাঁচবো আমি। না না আদ্রকে আমি হারাতে পারবো না।
ব‌উ কি ভাবছো?

আদ্র ফট করে আমার হাঁটুর উপর মাথা রেখে শুয়ে পরলো‌
একি এখানে শুয়ে পরলেন কেন?
মাথা ব্যাথা করছে ব‌উ, একটু টিপে দাও না।
বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আমি হাত বাড়িয়ে মাথায় হাত রাখলাম। আদ্রর মুখে ক্লান্তি
স্পট অনেক সিরিয়াস লেখাপড়া নিয়ে।

রাতে খাবার টেবিলে অবাক হলাম আমি ও আদ্র আদ্রর মা আমার সাথে ভালো
ব্যবহার করছে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ।সাথে ক্ষমা ও চাইলো সে তার
ভুল বুঝতে পেরেছে আরা আমাকে নাকি মেনে নিয়েছে হা করে তাকিয়ে ছিলাম
উনার দিকে আমি যেন সপ্ন দেখছি উনি আমাকে জরিয়ে ধরলো।হতদম্ব হয়ে
দাঁড়িয়ে আছি চোখে জল খুশির।

.

সময় ভালো যাচ্ছিল তারপর থেকে সবাই আমাকে মানলেও আদ্রর বাবা মানে নি
আমি চেষ্টা করছি।
আদ্রর সাথে রাতে বারান্দায় বসে থাকতে হয় এটা ওর নিয়ম। দেখতে দেখতে
পরিক্ষা শেষ হলো আদ্রর।
আর তারপর এমন একটা নিউজ পেলাম আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
আদ্রকে বিদেশে লেখাপড়ার জন্য পাঠাতে চাইছে। কিন্তু আদ্র কিছু তেই যাবে না
রেগে রুমে এসে বসলো চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে যেন।
স্নেহা আমি কিছু তেই বিদেশে যাব না তোমাকে ছেড়ে আমি এক মুহূর্ত ও থাকতে
পারবো না।

বলেই আমাকে জরিয়ে ধরলো।
তোমাকে ছাড়া আমি দু’বছর কি ভাবে থাকবো বলো‌।
পারবো না তুমি ও পারবে না তাইনা।
বলেই আমার গালে হাত দিলো।
আমি কিছু বলছি না।
তুমি তো আমাকে ভালোই বাসনা‌। তোমার তো কষ্ট ই হবে না।
কেন ভালোবাস না স্নেহা কেন বলো।

আমি কিছু বলবো তখন আদ্রর মা এলো আর আমাকে তার সাথে করে নিয়ে গেল।
আদ্রর অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে।
মা কিছু বলবেন।
হুম তুমি তো জানো আদ্র রাজি হচ্ছে না কিন্তু আমরা কি ওর খারাপ চাই বলো ওর
ভালোর জন্য ই তো আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আদ্রর ইচ্ছে ছিলো বিদেশে
গিয়ে পরবে এখন যেতে চাইছে না তোমার জন্য। তুমি ওকে রাজি করাও প্লীজ।
তোমার কথা ও ফেলবে না আমার বিশ্বাস।

.

আদ্রকে রুমে এসে কিছু বললাম না।
আম্মু তোমাকে কি জন্য নিয়ে গেছিল।
এমনি।
আদ্র আমার কথা বিশ্বাস করো না মনে হয়। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।
সেদিন আর আদ্রকে কিছু বলতে পারলাম না ছটফট করতে লাগলাম। আমি ও
আদ্র কে আমাকে ছেড়ে দূরে যেতে দিতে চাইনা কিন্তু শাশুড়ি মার কথা
ফেলতে ও পারছি না।
চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে কষ্টে থেকে হারিয়ে ফেলার কষ্টে।

কিন্তু যদি এখন আমি আমার শাশুড়ি মার কথা না শুনি তাহলে তিনি আমাকে ভুল
বুঝবেন কষ্ট পাবেন। ফাস্ট কিছু চেয়েছেন আমার কাছে। আগে তো আমাকে সহ্য
করতে পারত না আর এখন তো চোখে হারায়।খুব ভালোবাসে আমাকে উনাকে
পেয়ে আমি নিজের মায়ের অভাব পূরণ করতে পেরেছি। আমাকে চোখে হারায়
এমন অবস্থা খুব ভালোবাসে তিনি।আমিও তাকে নিজের মায়ের জায়গায়
বসিয়েছি তার কথা কি করে ফেলি?

মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আদ্রকে বিদেশে যাওয়ার জন্য আমি রাজি করাবো।
মায়ের কথা বলতে পারবোনা। দু’বছরের ব্যাপার খুব তাড়াতাড়ি কেটে যাবে আদ্র
ফিরে এলে আমি আমার মনের কথা জানাবো। আমিও যে ওকে ভালবাসি সেটা
আমাকে বলে দেব।
পরদিন রাতে আমি নিজেই আদ্র কফি আর আমার জন্য কফি করে রুমে এলাম।
আজকে আদ্রকে বিদেশে যাওয়ার কথা টা বলব। সারাদিনই আদ্র বাসার কারো
সাথে কথা বলে নাই রেগে বাসার বাইরে ছিল।

.

আমি রুমে এসে ঢুকে দেখলাম আদ্র আমাদের রুমের বারান্দা আছে। আমি
আদ্রর পাশে বসে আদ্রকে কফি দিলাম। আদ্র কফির কাপ নিয়ে আমার দিকে
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
সবাই কত খারাপ দেখছ আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে চাইছে।
আমিতো আপনার সাথে আছি আলাদা কিভাবে করতে পারবে।

পারবে তো দেখনা বিদেশে যাওয়ার জন্য পাগল করে যাচ্ছে আমার বিদেশীকে
পড়ার দরকার নাই আমি দেশেই ভালো করে পড়বো স্নেহা কেউ বুঝতে চাইছে
না আমাকে আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
আপনাকে যেতে হবে।
শেষে তুমিও বলছো।
হ্যাঁ বলছি এটা আপনার ক্যারিয়ারের ব্যাপার আর আপনারও তো ইচ্ছে ছিল
বিদেশে গিয়ে পড়ার তাহলে এখন কেন না করছেন।

হ্যাঁ ছিল তখন তুমি ছিলেনা কিন্তু এখন তুমি আছো। তোমাকে ছেড়ে আমি
কি করে থাকবো।
আদ্র অসহায় মুখ দেখে আমার বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে।
আমি তবুও নিজেকে শক্ত করে বললাম,,,
তবুও আপনাকে যেতে হবে আমার সাথে সংসার করতে চাইলে আপনাকে
যেতেই হবে। আমি আমার শ্বশুরের টাকায় খেতে পারব না আপনি নিজের
ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবুন।

.

আমি তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াস তোমার জন্য সিরিয়াস প্লিজ সবার মতো
কথা বলো না।
সবার মতো বলছিনা আপনি যদি এখন না জান সবাই ভাববে আমার জন্য আপনি
যাচ্ছেন না এতে আমার খারাপ লাগবে সবাই আমাকে দোষারোপ করবে আর
এখন সবাই আমাকে ভালবাসে মেনে নিয়েছে আমার জন্য যদি আপনি পিছিয়ে
থাকেন তাহলে এর দায় তো আমাকেই নিতে হবে। আপনি কি চান এজন্য সবার
কাছে আমি কথা শুনি।

তুমি আমাকে নিজে থেকে আলাদা করতে চাইছ তাই না। ভালোবাসো না তো তাই
এমনটা বলছে ভালোবাসলে আমাকে যেতে বলতে না।
আপনাকে আমি ভালোবাসি কিনা সেটা আপনি আসার পরে জানতে পারবেন।
প্লিজ রাজি হয়ে যান আমি চাইনা আমার জন্য আপনার স্বপ্ন অপূর্ণ থাক।
আচ্ছা রাজি হলে কি দিবে আমাকে? ভালোবাসি বলবে তাহলে হয়তো বা যেতে
পারি।

বললাম তো আসার পরে সব জানতে পারবেন।
আদ্র আমার কাছে এসে বলল,
আসার আগেই যদি মরে যায়।
আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠল, আদ্র কথা শুনে আমি মৃদু চিৎকার করলাম,,
এসব কি বলছেন কিছু হবে না আপনার। এমন বাজে কথা আর কখনো বলবেন । উত্তেজিত হয়ে পরলাম।
এমনতো হতে পারে তাই কোন জিনিস পরের
রের জন্য ফেলে রাখবো না এখনি বল।

.

আমার ভেতরটা শূন্য শূন্য লাগছে যেন আদ্র কে হারিয়ে ফেলবো। সেদিন আর
কোন কথা বলতে পারলাম না আদ্র কে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলাম। আদ্র হয়তো
আমার মনের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল তাই আর কিছু বলে নাই।
রাতে একটা বাজে স্বপ্ন দেখি। আর স্বপ্নটা দেখেই সকালবেলা আমি সিদ্ধান্ত নেই
আদ্র কে আর বিদেশে যাওয়ার কথা বলবো না। যদি সত্যি হারিয়ে ফেলি না ও
দেশে থাকুক বিদেশে যাওয়ার দরকার নাই হতেই যার যা ভাবার ভাবুক।

আদ্রতো রাজি না তাহলে ও যাবেনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ
হয়ে রান্না করতে গেলাম কিন্তু আজকে অনেক বেলা হয়ে গেছে রান্না শেষ আদ্র ও
রুমে ছিলো না।
আমি মায়ের সাথে খাবার টেবিলে সাজাতে লাগলাম তারপর আদ্র আর আদ্রর বাবা
মানে আমার শ্বশুর আব্বু বাইরে থেকে এলো।দুজনেই কিছু নিয়ে কথা বলছে আদ্র
ভেতরে এসে একবার আমার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেল একটু পর এসে খাবার
টেবিলেই বসল।

আমি আদ্রর পাশে বসে পড়লাম কারণ আদ্রর কড়া হুকুম ওর সাথে খেতে হবে।
খাবার টেবিলে শশুরের বাবার কথা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে
গেল মনে হয়।খাবার মুখে দিতে যাচ্ছিলাম সেইটা আবার পেটে রেখে অবাক হয়ে
একবার আদ্রর দিকে তো একবার শ্বশুর মশাইয়ের দিকে তাকালাম।
উনি বলছেন,

.

তুমি দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছো এটা শুনে খুশি হয়েছি আমি অনেক
মাই সান আমি জানতাম তুমি রাজি হবেই।
আদ্র একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
জি আব্বু যাব ভেবে দেখলাম যাওয়াটা দরকার থাকলে তো অনেকে বুঝতে পারে
না সব কিছুর মূল্য চলে গেলে মুল্য বুঝতে পারবে।
আদ্র কথাগুলো আমাকে শোনালো বুঝতে বাকি থাকলো না আমার।
ভেরি গুড মাই সান চারদিন পর তোমার ফ্লাইট মনে থাকে যেন।
মনে থাকবে।

আমি আর খেতে পারলামনা অস্বস্তিতেই ওখানে কিছুক্ষণ বসে থেকে খাবারে হাত
ধুয়ে উঠে রুমে চলে এলাম।কান্না গলায় দলা পাকিয়ে আসছে রুমে এসে মুখ চেপে
কান্না করে দিলাম আদ্রকে কি তাহলে আমি হারিয়ে ফেলবো। ও কি আমার
উপর রাগ করে চলে যাচ্ছে।
একটু পরে আদ্র রুমে এসে বলল,,,
কি হল কাঁদছো কেন তুমি তো বলেছিলে আমার যাওয়া দরকার তোমার কথা
রাখতেই তো যাচ্ছি।
আমি ছলছল চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।
হোয়াট হ্যাপেন।

কান্না কন্ঠে বললাম,, আমার কথা রাখতে হবে না আপনার যেতে হবে না। আপনি
রাজি কেন হলেন কালতো তো বলছিলেন যাবেন না।
সারারাত ভেবে দেখলাম যাওয়ার দরকার শুধু ক্যারিয়ারের জন্য না আরেকটা
কারণ আছে তাকে বুঝাতে হবে।
আরেকটা কি করেন বলেন।
কিছুদিন গেলে বুঝতে পারবা।
আপনি যাবেন না প্লিজ আমার কষ্ট হচ্ছে।

.

কেন তোমার কষ্ট হচ্ছে কেন তোমার তো খুশি হওয়ার কথা আমি তোমাকে আর
জ্বালাবো না। তোমার তো এখন আমাদের নাচা উচিত। তা না করে তুমি কাঁদছো?
প্লিজ মজা করেন না বলেন আপনি যাবেন না।
আমি যাব স্নেহা আমাকে বলে লাভ নাই আমি ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি।
আপনি সত্যি যাবে না আমাকে ছেড়ে যেতে আপনার কষ্ট হবে না।
তুমিতো আমাকে ভালোই বাসো না তোমার কাছে থাকলেই কি আর না থাকলেই
কি।কাছে থেকেও সে আমাকে কষ্ট পেতে হয় তার থেকে দূরে থেকেই কষ্ট পাই
এতে যদি তুমি কিছু রিয়ালাইজ করো।

আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো।
আদ্র আর কিছু বলল না আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে
গেল।
একটু পর আদ্র এলো ওর চোখ লাল হয়ে আছে ও যে কেঁদেছি আমি জানি। তাহলে কি ডিসিশন চেন্স করছে?
আপনি যাবেন না তাই না আমি জানি আপনি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।
এটা তোমার ভুল ধারণা আমি যাবোই শত কষ্ট হলেও আমি যাব।

আজকে আদ্র চলে যাবে চার দিন চোখের পলকে মনে হয় কেটে গিয়েছে। প্রথমে
আমার বিশ্বাস ছিল এসব অভিনয় আমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য করছে। আমাকে
ছেড়ে কিছুতেই যেতে পারবেনা আদ্র।কিন্তু ভুল কালকে রাত্রে যখন আদ্র আমাকে
পাসপোর্ট এনে দেখালো তখন থেকে আমার ভেতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। আদ্রকে শত বল থামাতে পারলাম না ও আমার কোন কথায় গুরুত্বই দেয় না। মনে
হয় জিদ করে যাচ্ছে?

.

পরে সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে মনের কথা জানিয়ে দেবো হিন্দু পোড়া কপাল আমার
তাও পারলাম না। সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেরিয়েছে আর রাতে যখন বাসায়
এসেছে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েছ আমি কথা বলার জন্য গেলে বলেছি আমি খুব
ক্লান্ত
আমি ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেছি।আদ্র আমাকে বুকে না নিয়ে ঘুমায়
নাই এক মাস কিন্তু দিব্যি চারদিন একাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমি আদ্রকে হারিয়েছি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম। আদ্র রেডি হচ্ছে একটু পর
এয়ারপোর্টে যাবে।

রেডি হয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো আমি বিছানার উপর চুপ করে বসে
চোখে জল ফেলেছিলাম।
আমার পাশে এসে বসল আদ্র আমি অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
এখনো চাইছি আদ্র যেন বল আমি যাব না।
আদ্র আমার দুগালে হাত দেখে চোখের জল মুছে দিল।
আমি খুশী হয়ে বললাম,,, আপনি যাবেন না তাই না।
আদ্র আমার কপালে চুমু খেয়ে বললো।

আমি যাব স্নেহা আমাকে যেতেই হবে না গেলে তো কখনই তুমি আমার শূন্যতা
অনুভব করতে পারবে না। এর জন্য হলেও আমাকে যেতে হবে।
আমি উত্তেজিত হয়ে পরলাম,,যাবেন না প্লিজ আমি না অনেক বুঝতে পেরেছি
আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন। আর বুঝতে
চায় না |
এখন কিছু করার নেই স্নেহা সব হাতের বাইরে চলে গেছে। তোমাকে আমার জন্য
অপেক্ষা করতেই হবে।
আপনার কষ্ট হচ্ছে না।

.

আদ্র কিছু বলল না আচমকা আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিল। আচমকা ঘটনায়
চমকে উঠলাম। আদ্র পাগলের মত আমার ঠোটে চুমু খাচ্ছে। কতদিনের তৃষ্ণা
মেটাচ্ছে সেটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে রইলাম বাধা দিলাম
না। কিছুক্ষণ পর আদ্র নিজে থেকেই সরে এল আর হাঁফাতে লাগলো। আমি
লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে সাথে পরম সুখের আবাস পাচ্ছি। আদ্র কি তাহলে
যাবে না অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম দিচ্ছি।
আদ্র আমার কপালে কপালে কি বলল,,

এবার আমাকে যেতে হবে। আর সরি তোমার অনুমতি ছাড়াই তোমাকে টাচ করে
ফেললাম। কিন্তু কি করবো বলো তোমাকে দেখতে পাবো না ছুঁতে পারব না
দু’বছর কতটা যন্ত্রণায় থাকবো আমি। সেটা শুধু আমি জানি। আমার কত কষ্ট হবে
কিন্তু আমাকে যেতেই হবে। তাই তোমার অনিচ্ছা থাকা শর্ত ও তোমাকে শুতে হল
আমি থাকতে পারতাম না এই তোকে ছাড়া এই স্পর্শটুকু আমি দু বছর মনে করে
ভালোভাবে কাটিয়ে দেবো।নিজের খেয়াল রাখবে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া
করবে আর ভার্সিটিতে আমি কথা বলে নিয়েছি ঠিকমতো ভার্সিটিতে যাবে কেমন।

বলে আরেকবার কপালে চুমু খেয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল দ্রুতগতিতে। আমি
তো মেরে চোখের জল ফেলছি আর চোখের আড়াল হতে চিৎকার করে কেঁদে
উঠলাম। সত্যি আমিও তোমাকে হারিয়ে ফেললাম ও আমাকে ছেড়ে চলে গেল
আমাকে ছেড়ে নিঃস্ব করে।
মাথা হাঁটুর উপর রেখে‌ চিৎকার করে কাঁদছি।

.

ওভাবে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। চিৎকার শব্দে ও হাত ধরে
টেনে কেউ আমাকে উঠে বসালো তাকিয়ে দেখি মাইশা।মাইশা অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি ফ্যাল ফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। কিছু
বুঝে ওঠার আগে আমার গালে ঠাস করে চড় মারল।
আর বলে উঠলো,

খুব বার বেড়েছিস তাই না আদ্রর ব‌উ হয়ে এখানে এসে উঠেছিস চরিত্রহীনা মেয়ে
কোথাকার। বেরিয়ে মা বাসা থেকে।
গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি একটু পর আমার শাশুড়ি মায়ের
তিনিও একই কথা বলতে লাগলো। অবাকে চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম তাদের
কথা শুনে।
কি সব বলছেন মা কোথায় যাব আমি?
তুমি আমার সাথে চলে যাও।
মানে চলে যাওয়া মানে কি চলে যেতে কেন বলছেন?
বিস্মিত হয়ে বললাম।

চলে যাবে মানে চলে যাবে আমাদের জীবন থেকে আমার আদ্রর জীবন
থেকে।তোমার মত চরিত্রহীন মেয়েকে আমি কখনো বউ হিসেবে মানি না আর
মানবো না এজন্যই তো আদ্রকে এতো প্ল্যান করে বিদেশে পাঠালাম।যাতে
তোমার থেকে দূরে করতে পারি তোমার ভুত মাথায় থেকে নামাতে পারি।
মা এসব কি বলছেন আপনি এসব করেছেন আর বারবার আমাকে চরিত্র না
কেন বলছেন?

.

তুমিতো চরিত্রহীনাই তোমাকে প্রথমে আমি ভালোই ভেবেছিলাম মাইশা না বললে
তো জানতেই পারতাম না তুমি কতটা খারাপ একটা মেয়ে।
কিসের ভিত্তিতে আপনারা আমাকে খারাপ বলছেন কি করেছি আমি?
মাইশা তখন কিছু ছবি আমাকে দেখালে। একটা ছেলের সাথে আমার কিছু অশ্লীল
ছবি বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে আছে সেদিকে।
এসব কি আমার ছবি ছেলেটার সাথে কেন কে এই ছেলে।
তার মাইশা এসে বলল,,

কে এই ছেলে তাই না এখন না চেনার নাটক করছিস। অসভ্য দুশ্চরিত্রা মেয়ে,তুই
যে কত খারাপ সেটা আমরা খুব ভাল করেই জানি আর আমি এইসব আন্টিকে
দেখিয়েছি। তুই আমার আদ্রকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিস এত বড় সাহস তোর।এখন
বেরিয়ে যা বাসা থেকে এখন আর আদ্র নাই যে তাকে বাসা থেকে বের করা যাবে
না।
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আচমকা শাশুড়ি আমার পা ধরে ফ্লোরে বসে
পড়লো আর কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,,

মা বিশ্বাস করুক এইসব মিথ্যা আমি এসব কিছু করি নাই এইখানে আমার ছবি
কিভাবে এলো আমি জানিনা। হা নামের ছেলেটাকে চিনিও না কখনো দেখিও
নাই প্লিজ বিশ্বাস করুন।
দুশ্চরিত্রা মেয়ে ছাড় আমাকে তোকে বিশ্বাস করি না। বেরিয়ে যাও আমার বাসা
থেকে তোর অপবিত্র হাতে আমাকে ছুবি না।
প্লীজ আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবেন না।
মাইসা আমার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে ড্রইং রুমে নিয়ে এলো চুল টেনে
ধরায় মাথা ব্যথা হয়ে গেছে। ডয়িং বলল,,
বেরিয়ে যা বাসা থেকে।

.

আমি আবার শাশুড়ি মা চাচি শাশুড়ির তাঁদেরকে গিয়ে বললাম,,
পারে দিবেন না প্লিজ। এসব মিথ্যে এইসব বানানো আমি এসব কিছুই করি নাই। বিশ্বাস করো না আমাকে।
বেরিয়ে যাও আমার বাসা থেকে। তোমার মুখ আমি দেখতে চাই না।
আদ্রকে কি জবাব দিবেন আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে। আমাকে তাড়িয়ে
দিলে ও কিন্তু কাউকে ছেড়ে দেবে না।
মাইশা দিকে তাকিয়ে বললাম।

মাইশা হুংকার দিয়ে,,, তুই বেরিয়ে যা আর্দ্র তোকে ভুলে যাবে আমি লন্ডন যাব।
রাস্তার মেয়ের রাজপ্রাসাদে রাজরানী হতে চাস। কোন যোগ্যতা আছে আদ্র বউ
হ‌ওয়ার তোর মধ্যে।
কেউ আমার কথা শুনল না ঘাড় ধরে বের করে দিল বাসা থেকে গেটের বাইরে
ফ্লোরে বসে চিৎকার করে কাঁদছি এই অন্ধকারে রাতে আমি কোথায় যাবো কি
করবো?

গেটে চুপ করে বসে রইলাম আমার সমস্ত সুখ আনন্দ নিয়ে চলে গেল আদ্রর ও
যাওয়ার সাথে সাথে আমার জীবনে আর বা কালো ছায়া নেমে এলো।রাজপ্রাসাদ
থেকে আবার রাস্তায় এসে পড়লাম এই রাস্তায় বুঝি আমার শেষ আশ্রয় স্থল
এখানে কি আমাকে সারাজীবন থাকতে হবে। খনিকের সুখ খানিক সময়ের জন্য
এসেছিল জীবনে যা হারিয়ে ফেললাম নিজের দোষে। আদ্র তুমি কেন চলে গেলে
আমাকে ছেড়ে কেন মা বাবা র পরে ব্যক্তি যে আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবেসে
এসেছ। তোমাকেও নিজের কাছে রাখতে পারলাম না।

অচেনা শহর পর্ব ৪৯

সবাই ছলনা করে তোমার থেকে আমাকে আলাদা করে দিলো তুমি কি দুই বছরে
আমাকে ভুলে যাবে।
দু ঘন্টার মতো খানেই বসে রইলাম আমি।ভেবেছিলাম হয়তো বা কেউ আসবে
আমাকে নিতে কিন্তু না কেউ এলো না সবাই অভিনয় করেছে আমার সাথে।
পরনে শাড়ি ছিল শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে ওই ভাবে উঠে দাঁড়ালাম শাড়ি
শরীর ভালো করে পেয়েছি অন্ধকার রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম।

কিছুদূর আসতে দেখতে পেলাম পথশিশু।তাদের বাবা-মা কেউ কেউ কিছু খাচ্ছে
আর কেউ কেউ ক্ষুধার্ত মুখ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। পায়ে কিছু বেজে
উঠল আমার পায়ের নিচেকেউ শুয়ে আছে আমি ভুলবশত তাকে পাড়া দিয়ে
ফেলেছি।

তাড়াতাড়ি দুই কদম পিছিয়ে গেলাম। সে মাথা উঁচু করে একবার আমার দিকে
দেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। এমন কতবার না না জানি কত লোকের পাড়া
লেগেছে তবু ঘুম নিবারন করার জন্য এখানে শুয়ে আছে।
আমিও তাদের এক পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি
পড়ছে।নিয়তি আমায় রাস্তায় দাঁড় করালো নিঃস্ব হয়ে এবার এদের সাথে কি
আমার থাকতে হবে?

(সমাপ্ত)

2 thoughts on “অচেনা শহর শেষ পর্ব || romantic love story

  1. Golpo er baki ta kothay?plz plz er porer part gula din plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz plz

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.