অনুভূতির অন্তরালে - Golpo Bazar

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব ২ || নীল ক্যাফের ডায়েরী গল্পের লিংক

অনুভূতির অন্তরালে

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব ২
Devjani

অদ্রির কথায় পাশে তাকাতেই মেজাজটা ধপ করে গরম হয়ে গেল।মার্জিয়া লুচুটা পেছনের সিটে দেওয়ালে
হেলে দাঁড়িয়ে আছে। তাতে আমার কোনো প্রবলেম নেই। আমার প্রবলেম হলো ওর চোখ দুটো
নিয়ে।ড্যাবড্যাব করে রোদ্দুর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এই মেয়ের কি লজ্জা সরম নেই নাকি! ইচ্ছে
করছে গিয়ে চুলের মুঠি ধরে বলি,স্যার হয় তোর।এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? স্যারের চোখে দেখ,লুচু।
কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সেটা আমি বলতে পারবো না। কারণ যার দিকে তাকাচ্ছে তারই তো কোনো মাথাব্যথা নেই।

তাছাড়া মার্জিয়ার সাথে আমার শেষ কথা হয়েছে দুই বছর আগে।তাও ঝগড়ার মাধ্যমে।ও সম্পর্কে আমার
মামাতো বোন হয়।জানি না কেন ও আমাকে সহ্য করতে পারে না। শেষবার যখন ও আমাদের বাসায় এসেছিল
তারপর থেকেই আমার কিউট দাদিটা ভিলেন দাদিতে পরিণত হয়েছে।আর এই রোদ্দুর ভাইয়াও কেমন‌
মানুষ!আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে বকা দিল আর মার্জিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওনাকে দেখে যাচ্ছে সেদিকে দেখি
কোনো খেয়ালই নেই।

আমার ভাবনার মাঝেই রোদ্দুর ভাইয়া হেঁটে হেঁটে মার্জিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।বুকে হাত গুজে জিজ্ঞেস
করে, দাঁড়িয়ে আছো কেন?
আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,ওকে বকা দিয়েছি শুনোনি?
— সরিইই স্যাএএর!
মার্জিয়ার দাঁড়ানোর স্টাইল এই মুহূর্তে ঝড়ে নেতিয়ে পড়া গাছের মতো লাগছে। ক্লাসের সবাই ওদের দিকে
তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
— সিট ডাউন।
— এক্সকিউজ মি স্যার আপনার নামটা কি বলেছেন?

রোদ্দুর ভাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মার্জিয়ার দিকে তাকালো।মার্জিয়া শুকনো ঢোক গিলে বলে,আমার নাম ম্যারি!
আল্লাহ্,এই মেয়ে বলে কি!মার্জিয়া থেকে ম্যারি!তাহলে আমার নামও আরাদ্ধা থেকে এ্যারি।এ্যারি,,,,,উহুম
সুন্দর নাই নামটা।আরাদ্ধাই সুন্দর!
রোদ্দুর ভাইয়া রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,আমি কি তোমার নাম জানতে চেয়েছি? অদ্ভুত!
— আহলে স্যার,,,,
রোদ্দুর ভাইয়া ওকে বলতে না দিয়ে রাগী গলায় বলে, তোমার বেয়াদবি অনেকক্ষন ধরে দেখছি। সুমাইয়া তো
ভালো মেয়ে। তুমি ওর বোন এমন হও কি করে!
মার্জিয়া ভীত কন্ঠে বলে,আপনি সুমু আপুকে চিনেন?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

— আমার ফ্রেন্ড হয় ও,চিনবো না?
— ওহ্ আচ্ছা!বলে ও চুপচাপ বসে গেল।
রোদ্দুর ভাইয়া বই নিয়ে পড়ানো শুরু করল। যদিও ওনার পড়ার দিকে আমার কোনো মনোযোগ নেই।
অদ্রির সাথে রোদ্দুর ভাইয়ার চোখ এড়িয়ে দুষ্টুমি করছি।

অদ্রির সাথে ক্যান্টিনে বসে কথা বলেছি।কথা বলছি বললে ভুল হবে।বলা যায় তর্ক-বিতর্ক করছি।টপিকটা
রোদ্দুর ভাইয়া। অদ্রির মতে,আমার রোদ্দুর ভাইয়াকে ভাইয়া নয় স্যার বলে ডাকা উচিত। কিন্তু এত বছরের
অভ্যাস ফেলে হুট করে স্যার শব্দটা মুখে আসে না।ভাইয়া শব্দটাই বেরিয়ে যায়।

হঠাৎ কোথা থেকে শ্রেয়ান ভাইয়া এসে হাত টেনে ধরল। গম্ভীর গলায় বলল,তুই আমাকে এভোয়েড করছিস?
শ্রেয়ান ভাইয়ার এমন অদ্ভুত কথায় ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।তবে কিছু বলার আগেই অদ্রি বলে,ও
আপনাকে কেন এভোয়েড করবে?ও এভোয়েড করার কে হুম?
শ্রেয়ান ভাইয়া বিরক্তি সহকারে বলে,কাকে বললাম আর কে উত্তর দিচ্ছে!এই তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি?

— আমাকে জিজ্ঞেস করেননি কিন্তু আমি উত্তর দিয়েছি।
— একদম না।আমার আর মোহনের মাঝখানে তুমি কথা বলবে না।
শ্রেয়ান ভাইয়ার এমন কথা শুনে আমি আর অদ্রি একসাথে বলে উঠলাম,মোহন,,,,,,!
— ইয়ে মানে,,,,এমনে আরাদ্ধাকে ডাকলাম আরকি। কেন নামটা সুন্দর না?
আমি ছোট ছোট চোখ করে বললাম,আপনি আমাকে ছেলের নাম ধরে ডাকলেন কেন?
— কিছু না।চল আমার সাথে।
— কোথায়?
— কৈফিয়ত দিতে আমী রাজি নই।যেতে বলেছি যখন যাবে।

— পাগল নাকি আপনি?আপনি বললেই আমাকে আপনার সাথে যেতে হবে নাকি। আচ্ছা আপনি
আমার সাথে এমন করেন কেন?আমি তো আপনাকে চিনিও না।
অদ্রি মুখ বেঁকিয়ে বলে, খারাপ লোক তো তাই।
শ্রেয়ান ভাইয়া রেগে গিয়ে বলে,এইযে মিস অদ্রিজা আমাদের মাঝখানে কথা বলবেন না।আর ম,,সরি
আরাদ্ধা আপনার সাথে কেন এমন করি জানেন,আমি আপনাকে ধরে নিয়ে একজনের কাছে বিক্রি করে
দেব। হয়েছে?এবার চল।

.

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।শ্রেয়ান ভাইয়ার কথা আগামাথা কোনোটাই আমার বোধগম্য হলো না।চোখ
বাঁকিয়ে পাশে তাকাতেই দেখি রোদ্দুর ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম না এসব
কি হচ্ছে আমার সাথে!
অদ্রিকে ইশারায় কিছু একটা করতে বললাম।নাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাব না। রোদ্দুর ভাইয়ার উপর
বিশ্বাস নাই। আম্মুর কাছে যদি উল্টাপাল্টা কিছু লাগিয়ে দেয়,তখন আবার বকা গুলো আমাকেই শুনতে হবে।
অদ্রি গিয়ে শ্রেয়ান ভাইয়ার কলার চেপে ধরে। চেঁচিয়ে বলে, অনেকক্ষন ধরে আপনার বাজে বকবক সহ্য
করছি।আর,,,,,

— গলা নিচে।শ্রেয়ান চৌধুরীর সাথে এভাবে কথা কেউ বলে না।বাই দা ওয়ে,এই ডায়লোগগুলো কি সিরিয়াল
থেকে শিখেছো নাকি, হুম?শ্রেয়ান ভাইয়া কথাটা বলে মুখ টিপে হাসল।
অদ্রি যেই উদ্যম নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিল।শ্রেয়ান ভাইয়ার কথা শুনে মুহূর্তে চুপসে গেল।আমি ততক্ষণে
ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে এসেছি। আব্বু গাড়ি দিয়ে করিম চাচাকে পাঠিয়েছে।

এদিকে আম্মু কল দিয়েই যাচ্ছে।একটু লেট হয়ে গেছে আজকে।বুঝি না আমাকে নিয়ে এত টেনশন করার কি
আছে।আমি তো আর ছোট নই। যথেষ্ট বড় হয়েছি আমি। আম্মুর এই টেনশনের জন্য আজ পর্যন্ত বন্ধুদের
সাথে দূরে কোথাও ঘুরতে যাইনি। অথচ সবাই কি সুন্দর ঘুরতে যায়!
আম্মুকে মেসেজ করে দিলাম,আমি আসছি।

গাড়ির দরজা খুলতে যাব এমন সময় কোথা থেকে রোদ্দুর ভাইয়া এসে হাত চেপে ধরলো।করিম চাচাকে
উদ্দেশ্য করে বলল,আপনি চলে যান।আমি ওকে নিয়ে আসছি।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। রোদ্দুর ভাইয়ার বলতে দেরি করিম চাচার যেতে দেরি নেই।
আহ্!মালিক আমি নাকি রোদ্দুর ভাইয়া? রোদ্দুর ভাইয়া বলল আর চাচা চলে গেল!আমাকে জিজ্ঞেসও করল
না!রোদ্দুর ভাইয়া রাগী গলায় বলে,আন্টি জানে?

— কি জানবে?
— তুই কলেজে এসে এসব করিস?
— কি করেছি আমি।
— সাধু সাজছিস। চেঁচিয়ে বলল রোদ্দুর ভাইয়া।ওই ছেলেটা কে হুম?
— কোন ছেলেটা?
রোদ্দুর ভাইয়ার গরম দৃষ্টি দেখে আমি ফ্যাকাসে হেসে বললাম, ওহ্!ইয়ে,,,ও হলো শ্রেয়ান।
মানে শ্রেয়ান ভাইয়া।আমার সিনিয়র।বাবা বিজনেসম্যান।মা টিচার।বোন আছে একটা।
— শাট আপ!এত কিছু জানতে চেয়েছি?যা গিয়ে গাড়িতে উঠে বোস।
— হুম।
চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। বিরক্তিকর! নিজের গাড়ি রেখে অন্যের গাড়িতে ওঠা
বরাবরই আমার পছন্দ না।

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব ১

রোদ্দুর ভাইয়ার গাড়িতে উঠতে আমি বেশ ভয় পাই।কারণ উনি অনেক স্প্রিডে গাড়ি চালান।এই পর্যন্ত ওনার
গাড়িতে দুইবার উঠেছি। প্রথমবার উঠেই বুঝতে পেরেছিলাম ওনার গাড়িতে উঠলে যেকোনো সময় আমার
লাইফ ওনার সাথে সাথে দি ইন্ড হয়ে যেতে পারে।এরপর অনেক বার উনি বলা সত্ত্বেও উঠিনি। কিন্তু আজকে
এই করিম চাচার জন্য উঠতে হলো।এখন যদি রোদ্দুর ভাইয়ার সাথে না যাই তাহলে আবার বাসায় পৌঁছাতে
আরও দেরি হবে।আজকে বাসায় গিয়ে করিম চাচার নামে আব্বুর কাছে বিচার দিব।আমাকে একবার জিজ্ঞেস
না করে কি সুন্দর চলে গেলেন।

— আরু?
— হ্যাঁ?
— শ্রেয়ান তোর কেমন ভাই হয়?শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন উনি।
— ভাই।আপনি যেমন ভাই তেমনি আরকি।
শুধু এতটুকুই বলেছি। আল্লাহ্ জানে কি ভুল বলেছি! উনি রেগে গিয়ে বলে, থাপ্পড় দিব আরেকবার ভাই
বললে।আমি তোর কোন সম্পর্কের ভাই রে?
— আজব! ছোটবেলা থেকেই ভাইয়া ডেকে আসছি।আর এখন আপনি আপনার পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করছেন?
হঠাৎ রোদ্দুর ভাইয়ার কি হলো কে জানে?মাঝ রাস্তায় গাড়িটা থামিয়ে,,,,,,,

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.