অনুভূতির অন্তরালে - Golpo Bazar

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব ৫ || রোমান্টিক অত্যাচার গল্পের লিংক

অনুভূতির অন্তরালে

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব ৫
Devjani

রোদ্দুর ভাইয়াকে মেসেজ দিয়ে নদীর পাড়ে আসতে বললাম।আমার প্রিয় জায়গা।আমি ভেবেছিলাম উনি
হয়ত ভুলে গেছেন। কিন্তু এসে দেখি উনি গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রোদ্দুর ভাইয়াকে মৃদু কন্ঠে ডাক দিলাম।
উনি মুখে হাসি নিয়ে বলে,আরাদ্ধা তুই এসেছিস?
— হুম!

ওনার দিকে নিজের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,গত দশদিনের ইমেইল চেক করুন! ভাইয়া রাইয়ের
হাসবেন্ড হাসান বিবাহিত ছিল।ইরা ওনার প্রথম স্ত্রী।আর এই ভদ্রমহিলাই আমাকে এসব পাঠাচ্ছে।
উনি ফোনটা নিয়ে আবার দিয়ে দিলেন।রাগী গলায় বললেন,হাসান সম্পর্কে উল্টাপাল্টা এসব কি বলে ঐ
ভদ্রমহিলা! হাসানের প্রথম স্ত্রী রাই।আর আমার জানামতে ও খুব ভালো মানুষ।

— ভাইয়া আমি কিছু জানি না। কিন্তু মনে হচ্ছে আমরা খুব ভুল করে ফেলেছি। রাইয়ের জীবনটা নষ্ট হয়ে
গেছে।হতেও পারে ওটা হাসান ভাইয়ের মুখোশ ছিল!বলে আমি কাঁদতে লাগলাম।
রাইকে আমি বোনের মতো ভালোবাসি।আমার থেকে বড় কিন্তু নাম ধরেই ডাকি। ছোটবেলায় মাকে
হারিয়েছে।বাবা বড়ো করেছে। কিন্তু অসুস্থ থাকায় তিনি তাড়াতাড়ি রাইয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়।কেউ ভালো করে
খোঁজ নেই নি। কিন্তু আমরা চাইলে সেসব করতে পারতাম।তাই এখন আরো বেশি খারাপ লাগছে। বারবার
মনে হচ্ছে,এত তাড়াতাড়ি কেন রাইয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের হাসান ভাই সম্পর্কে খোঁজখবর
নেওয়া উচিত ছিল। বিয়ের আগে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ে দিতে হয়।আমরা জানতাম না যে হাসান
ভাই আগে বিবাহিত ছিল।তাহলে নিশ্চয়ই রাইয়ের বিয়েতে বাঁধা দাতাম।

রোদ্দুর ভাইয়া আমার মাথাটা ওনার বুকে চেপে ধরে।শান্ত কন্ঠে বললেন, চিন্তা করিস না পিচ্চি। এগুলোর
উপর ভিত্তি করে কমেন্ট করা উচিত না।প্র্যাকটিক্যালি সব যাচাই করতে হবে। যদিও হাসান এখন আমার
কল রিসিভ করে না।
— ভাইয়া ওকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া হলো কেন?
— ভুলটা আমাদেরই।
— এর দায় কে নেবে?রাই কি এসব জানে?
— জানি না।কাল তোকে নিয়ে রাইয়ের সাথে দেখা করতে যাব।আর এগুলো মিথ্যেও হতে পারে।সো এত
সিরিয়াস হোস না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

আমি ওনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।উনি আমার হাতগুলো ধরে বলে,আরু এসব চিন্তা বাদ দে।দেখ
জায়গাটা খুব সুন্দর।চল একটু নদীর পাড় থেকে হেঁটে আসি।মনটাও ভালো হবে।
আমি ওনার কথায় সায় দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।উনি পাশে হাঁটছে।
এখন আনুমানিক পাঁচটা বাজছে।জায়গাটা বেশ নদীর পাড়ের এই জায়গাটা বেশ নির্জন। আশেপাশে অবশ্য
একজন দুজন মানুষও ঘোরাফেরা করছে।ওনার সাথে ভালোই লাগছে। সাথে একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ
করছে মনের ভিতর।

হঠাৎ উনি হালকা হেসে বললেন,আরু তোর মনে আছে ছোটবেলায় তুই আমার কোলে উঠতি।আর আমি
তোকে ফেলে দিব বলে ভয় দেখাতাম,,,
ওনার এমন কথায় এতক্ষণের অনুভূতিটা নিমিষেই উড়ে গেল।একরাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো
সম্পুর্ণভাবে।গলা ঝেড়ে বললাম, ছোটবেলায় বাচ্চারা কোলে উঠতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক।আর আমি
ছোটবেলায় শুধু তিনবার আপনার কোলে উঠেছি।

উনি ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। ওনার এরুপ হাসিতে লজ্জাটা দ্বিগুণ বেড়ে গেল। উনি বললেন,মনেও রেখে
দিলি? জানিস তোর ওই ছোট ছোট নরম হাতগুলো এখনো মনে পড়ে। ইচ্ছে করে একদম খেয়ে ফেলি।
লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে উনি আমায় লজ্জা
দিচ্ছে।তাহলে আমিও একটু লজ্জা দেই দোষ কি তাতে!সাহস নিয়ে বললাম, আমি তিনবার আপনার কোলে উঠেছি। তৃতীয় বারে আপনি আমাকে ফেলে দিয়েছেন।তাই আর উঠিনি।আমার এখনো মনে আছে।কোমড়ের
ব্যথায় দুদিন ঠিকভাবে বসতে পারিনি।

আমার কথা শুনে হঠাৎ উনি দাঁড়িয়ে গেলেন।আমি ওনার দিকে তাকালাম। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে
দাঁড়ালেন কেন।উনি মেকি হেসে বললেন,সরি রে তোকে ফেলে দেওয়ার জন্য।বিলিভ মি, এরপর থেকে কোলে নিলে আর ফেলবো না।
আমি ওনার কথায় পুরোপুরি চুপসে গেলাম।বলে কি এসব! এরপর থেকে কোলে মানে!আমি এখন বড় হয়ে
গেছি। কোলের কথা আসছে কোথা থেকে?এই লোকটা কি বলে এসব!
ওনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।আমি উল্টো দিকে ঘুরে গেলাম।
মৃদু কন্ঠে বললাম, ভাইয়া বাসায় যাব!

.

উনি বিরক্ত হয়ে বললেন, এখনো সন্ধ্যা হয়নি।রাতের তারাগুলো না দেখে যাব না।
আমি বেকে বসলাম। বললাম,তাহলে আপনি থাকুন।আমি যাচ্ছি!
উনি ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,যা যা আমি আটকে রেখেছি নাকি!
ওনার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।উনি জানেন সন্ধ্যার দিকে রাস্তাটা ভালো না। উনি জানেন
আমি একা যেতে পারবো না তাই এভাবে কথা বলছেন। ডেভিল একটা!

উনি নদীর পাড়ের এক সাইডে গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লেন।আমাকে একবার ডাকলেও পারত।নিজে
থেকে গিয়ে ওনার পাশে দাঁড়ালাম।উনি একবার তাকিয়ে হাত টান দিয়ে ওনার পাশে বসিয়ে দিলেন। ওনার
থেকে দুরত্ব বজায় রেখে বসে পড়লাম। অস্তমিত সূর্যের লাল আভা নদীর পানির উপর পড়ে পানিটা চিকচিক
করছে। পরিবেশটা ছবির চেয়েও সুন্দর লাগছে।
আড় চোখে একবার ওনাকে দেখলাম।মুখটা গম্ভীর।।।।

অদ্রির কথা এখন মনে পড়ছে। অদ্রি সাথে থাকলে ভালো হতো।আগে অদ্রির সাথে এখানে অনেক এসেছি।
অদ্রির প্রিয় জায়গা।আজকাল অদ্রির সাথে তেমন কথাও হয় না। কিভাবে হবে! অদ্রি এখন ফ্যামিলিগত
সমস্যায় আছে। অদ্রির খালা প্রতিদিন তাদের বাড়িতে আসে। অদ্রির বিয়ের ব্যাপারে ওর মাকে উস্কে দেয়।
ব্যাপারটা অদ্রির পছন্দ না। অদ্রি এত তাড়াতাড়ি বিয়ের ঝামেলায় জড়াতে চায় না। তাছাড়া অদ্রি যে শ্রেয়ান
ভাইয়ার উপর দুর্বল তা এ কয়দিনে বেশ ভালোভাবেই বুঝেছি।এত তো সেদিন অদ্রি হিস্টোলজি ক্লাসের পড়া
না বুঝায় রিডিং রুমে আমার কাছে বুঝতে এসেছিল।

কিন্তু আমি বুঝাতে পারছিলাম না। সেখানে শ্রেয়ান ভাইয়াও ছিল। অদ্রিকে ডেকে নিয়ে বুঝিয়ে
দিচ্ছিলো।অদ্রিকে দেখে আরো কয়েকজন যেতেই রেগেমেগে ওদের দুচারটা কথা শুনিয়ে শ্রেয়ান ভাইয়াকে
টেনে বেরিয়ে যায়।শ্রেয়ান ভাইয়াও অবাক হয়েছিল। উনি যদি কাউকে বুঝিয়ে দেয় তবে স্বার্থ ছাড়া অদ্রির
এতো রিয়েক্ট করার কি আছে?রোদ্দুর ভাইয়া আস্তে করে আমায় ডাক দিলেন। বললেন,আরু,,, কোথায়
হারিয়ে গিয়েছিলি? কতক্ষণ ধরে ডাকছি!

উনার কথা অবাক হলাম। অনেক্ষণ ধরে কোথায় ডাকছে সবেই তো ওনার ডাক শুনলাম। বললাম,
কতক্ষণ ধরে ডাকছেন?
উনি রাগী গলায় বললেন,আমি সময় দেখে হিসেব করে রেখেছি নাকি?
— সরি,স্যার!
উনি আবার ধমক দিয়ে বললেন, কি শুরু করেছিস এসব একবার স্যার একবার ভাইয়া?যা ডাকবি একটা
ডাকবি!
আমি বললাম, ভাইয়া ডাকব।

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব ৪

সাথে সাথে উনি রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি কি করলাম! উনিই তো বললেন যা ডাকবি
একটা ডাকবি।আমি ওনার রাগী দৃষ্টি উপেক্ষা করে মেকি হাসলাম।
উনি অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন, গাড়িতে গিয়ে বোস।
— হুম!
আমি উঠে দাঁড়িয়ে জামাটা হালকা ঝেড়ে গাড়ির দিকে এগোতে লাগলাম।উনি দ্রুত পায়ে হেঁটে আমার আগে
গাড়িতে উঠে বসে পড়লেন।আমি গিয়ে পেছনের সিটের দরজায় হাত দিতেই উনি বললেন,ওখানে বসিস না
পিচ্চি।সামনে এসে বোস।

আমার কি হলো জানি না। জেদ ধরে বললাম,আমি এখানেই বসবো।
উনি ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,ভালোর জন্য বলছি তো তাই গায়ে লাগছে না।বোস তোর ইচ্ছা!পরে আমার
পাশে বসতে দিব না।
ওনার কথা উপেক্ষা করে গাড়ির হ্যান্ডেলে চাপ দিলাম।পেছনের দরজা খুলতেই ভয়ে ছিটকে দূরে সরে
গেলাম।

অনুভূতির অন্তরালে পর্ব ৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.