ইস্ক মোবারাক - Golpo Bazar

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০২ || isko mobbarok

ইস্ক মোবারাক

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০২
লাবিবা ওয়াহিদ

“হার ওয়াক্ত দিল কো সাতায়ে
এইসি কামি হে তু…
মেইন ভি না জায়ানু ইয়ে
কি ইটনা কিউন লাযামি হে তু..
নিন্দেন জাকে না লউটি
কিতনি রাতেইন ঢাল গেয়ি
ইতনি তারে গিনে কি
উঙলিয়ান ভি জ্বাল গেয়ি
হ…..

হামনাভা মেরে তু হেতো
মেরি সানসে চালি বাতাদে কেয়সে মেইন জিউঙ্গি
তেরে বিনা,,,হ…(২)

গান শেষ হতেই সাদাফ গিটার রেখে নিজের কাধে মুচকি হেসে তাকালো। তার
কাধে এক মেয়ে অতি আরামে মাথা রেখে চোখ বুজে রয়েছে। দেখেই বোঝা
যাচ্ছে বেশ মনোযোগ দিয়ে গানটা শুনেছে। সাদাফ অতি যত্নে মেয়েটির গালে
হাত রাখলো এবং বলে,” ভালোবাসি অনি।”
মেয়েটি চোখ মেলে সাদাফের দিকে মুচকি হেসে তাকালো এবং বললো, “আমিও
ভালোবাসি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

– কি করে পারো তুমি আমায় এতো সুন্দর মুহূর্ত দিতে বলোতো?
অনি কাধ থেকে মাথা উঠিয়ে সাদাফের গলা জড়িয়ে কিছুটা কাছে এসে
বলে,”তুমিই নিজেই তো আমার জীবন রঙিনময় করেছো তাই নিজেও প্রফুল্ল
পাচ্ছো। এখন আরেকটু প্রফুল্ল হও বেইবি…”
বলেই সাদাফের আরও কাছে যেতে থাকে সাদাফ তাড়াতাড়ি অনিকে সরিয়ে
দিলো।

– নো অনি… এখন না তুমি আগে স্টাডি কমপ্লিট করো তারপর আমরা বিয়ে
করবো দেন সব হবে।
অনি বিরক্তি এবং রাগ নিয়ে বলে,”ওয়ায়াট দ্যা হেল? অলয়েজ কেন এই এক
কথা বলে বলে আমার মুড নষ্ট করে দাও বলোতো? কেন বুঝোনা আমি তোমায়
ভালোবেসে কাছে পেতে চাই। ওয়াই কান্ট ইউ আন্ডারস্টেন্ড?”
– আমি সব বুঝি… আগেই বলেছি সময় এখনো হয়নি! তোমার এমন জেদের
কাছে কখনোই আমি ধরা দেবো না, সে যাইহোক বাসায় কাজ আছে যেতে হবে।
– হ্যাঁ আমি কিছু বললেই তো তোমার কাজের অভাব থাকে না। ইচ্ছা করে এড়িয়ে
যাচ্ছো তাইতো? ওকে যাও আমি তোমায় আটকাবো না। বলেই চোখ মুছলো।

.

ইশরা সব জিনিসপত্র নিজের রুমে এনে সবটা গুছিয়ে নিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে
বেরোলো। এমন সময়ই ফোন বাজার শব্দ হয়। ছুটে বিছানা থেকে ফোন নেয়
এবং রিসিভ করে মিষ্টি হেসে বলে,
-আসসালামু ওয়ালাইকুম বাবা।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম মা কেমন আছিস?
– এইতো বাবা বেশ ভালো তুমি কেমন আছো? খেয়েছো? মেডিসিন নিয়েছো?
কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?

মেয়ের এতো এতো প্রশ্ন রিত্তিক সাহেব হেসে দিলো এবং বললো,”তুইও না এভাবে
এতো প্রশ্ন করে? এখন কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দেই বলতো?”
– হেয় ইউ লিসেন টু মি আমি তোমার রাজমাতা তাই আমি যা যা প্রশ্ন করেছি তার
সকল উত্তরই তুমি দিতে বাধ্য!
মেয়ের এমন বাচ্চামো কথা শুনে রিত্তিক সাহেব হেসে বলে,”হ্যাঁ মা আমি
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, খেয়েছি, মেডিসিনও নিয়ে এন্ড কোনো সমস্যা
হয়নি। সব উত্তর পেয়েছেন আমার শ্রাদ্ধেয় রাজমাতা?

.

– হ্যাঁ পেলাম এখন তোমার পুরষ্কার হিসেবে তোমায় মহাপুরুষ উপাধিতে ভূষিত
করিলাম।
ইশরা এবং রিত্তিক সাহেব দুজনই বেশ করে হাসতে লাগলো। তারপর হাসি থামিয়ে রিত্তিক সাহেব বলেন,”তা মা সেখানে তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
ভার্সিটির এডমিশন ফর্ম কবে জমা দিবি?”

– হ্যাঁ বাবা সব ঠিক আছে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। জানো বাবা মামনি ফুপা
খুউউব ভালো আমার খুব যত্ন করছে আসার পরপরই। এমন ভাব করছে যেনো
আমি তাদের নিজের মেয়ে। আর বাবা এডমিশন ফর্ম ফুপার কাছে আছে ফুপাই
ভালো জানে আমি এতো কিছু জানিনা। তবে তুমি চিন্তা করিও না আমি ভেশ
ভালোই থাকবো।
রিত্তিক সাহেব ইশরার কথায় স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।

– যাক আলহামদুলিল্লাহ। তবে চিন্তা না করে থাকতে পারি বল এতোদূর একা
থাকছিস তোর জন্য তো চিন্তা হবেই। আর দেখ না ছোট থেকে কিভাবে একা
করে রেখেছিলাম আমি যে নিজের কাছেই বেশ অপরাধী।
– ওওওহ বাবা তুমিও না! একা কোথায় ছিলাম হুম… আমার সুমনা খালা তো
আমার কতো যত্ন করেছে…বলেই ইশরা চুপ হয়ে যায়। তারপর ভাঙ্গা গলায়
বলে,”মায়ের অভাবটাও যে সে বুঝতে দেয়নি।”

.

ইশরার যে কষ্ট হচ্ছে সেটা রিত্তিক সাহেব বেশ বুঝতে পারছে ফোনের ওপার
থেকে। তারপর নিজেকে সামলে বলে,”ঠিক আছে ঠিক আছে এখন এসব বাদ
দে আমার কাজ আছে পরে জমিয়ে কথা বলবো কেমন আল্লাহ হাফেজ।”
ইশরা চোখ মুছে মুচকি হেসে বলে,”আল্লাহ হাফেজ বাবাই আসসালামু
ওয়ালাইকুম।”
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।

রিত্তিক সাহেব ফোন টা টেবিলের উপর রেখে রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে
পড়লো। তারপর চশমা টা রেখে চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকে
ইশরার মা কিয়ারার কথা।
ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলো কিয়ারাকে রিত্তিক সাহেব। পরিবার থেকে প্রথমে
মেনে না নিলেও পরে ঠিকই মেনে নিলো। রিত্তিক সাহেবের হাতে কোনো চাকরি
ছিলো না দেখে ইশরার নানা মানে কিয়ারার বাবা তার সকল ব্যবসার দায়িত্ব তাকে
দিয়ে দেয়। কিয়ারা ছিলো তার বাবা মায়ের আদরের একমাত্র সন্তান তাই সবকিছু
তাকেই দিয়েছিলো আর কিয়ারা দিয়েছে রিত্তিককে।

বেশ ভালোই তাদের সংসার চলছিলো। হঠাৎ রিত্তিক সাহেব ব্যবসাতে অনেক
বিজি হয়ে পড়ে কিয়ারাকে তেমন সময় দিতে পারেনা। তবে সে নিয়ে কখনোই
কিয়ারা অভিযোগ করেনি। কিয়ারা ছিলো বেশ সুশীল এবং চঞ্চল প্রকৃতির। যখন
ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরতো তখন কিয়ারার দুস্টু মিষ্টি কথাতেই যেনো তার
সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই ভুলে যেতো। এভাবেই তাদের দিন যাচ্ছিলো এমন
সময়ই তাদের কোল আলো করে আসলো এক টুকটুকে মিষ্টি মেয়ে।

.

যাকে নিয়ে দুজনে হাজারো স্বপ্ন বুনেছিলো। কিয়ারা বেশ আদর করে তার ছোট্ট
মেয়ের নাম রাখে রেহেক হুমাইরা! তবে রেহেক ইসলাম ছিলো রিত্তিক ইসলামের
বড় বোন। তার আগেই এক ছেলে ছিলো। রেহেক সেদিন তার পরিবার কে নিয়ে
আমাদের সাথে থাকতে শুরু করে কিছু বছরের জন্য। ছোট থেকেই কিয়ারা বেশ
যত্ন করতো সাদাফ এবং ইশরাকে। কিয়ারার খুব ইচ্ছে ছিলো সাদাফের সাথেই ইশরাকে নিজের হাতে বিয়ে দিবে এবং রেহেকেরও একই সিদ্ধান্ত। সেদিনই দুই
পরিবার ঠিক করে যে সাদাফের সাথেই ইশরার বিয়ে হবে যখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক
হবে। এভাবেই প্রায় ৩টা বছর কেটে যায়। সাদাফের বয়স তখন ৮ বছর আর
ইশরার বয়স ৩।

কিয়ারার হঠাৎই বেশ বমি হাতে লাগে, কিছুই খেতে পারেনা, যাই খায় সব ফেলে
দেয়, শরীর সবসময় দুর্বল থাকে। বিষয়টা সবাই লক্ষ্য করে এবং সবাই ভেবে নেয়
যে আরেকজন নতুন সদস্য তাদের মাঝে আসবে এই ভেবে সবাই বেশ আনন্দিত
ছিলো। এতো আনন্দের ভিরে কেন যেনো কিয়ারা অন্ধকার দেখতে পারছে আর
সে এটাও বেশ বুঝেছে যে এটা নতুন সদস্যের লক্ষণ নয়। কিন্তু সবার এতো এতো
আনন্দ দেখে কিয়ারা কিছুই বলতে পারেনি। দিনে দিনে কিয়ারার অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

.

যখন সবাই বুঝতে পারলো তাড়াতাড়ি তাকে হসপিটালে এডমিট করানো হয়।
সকল টেস্ট করানোর পর রিপোর্টে আসে যে কিয়ারার স্টমাক ক্যান্সার (পাকস্থলি
ক্যান্সার)হয়েছে এবং কিয়ারার অবস্থা খুব গুরতর বেশিদিন বাঁচবে না। সেদিন
রিত্তিকের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। নিজের প্রিয়তমার মৃত্যু হবে শুনলে
কেই বা নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে? রিত্তিক ছলছল চোখে ইশরার দিকে
তাকায়। ইশরা রিত্তিকের কোর্ট টা ধরে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে আর এদিক
ওদিক তাকাচ্ছে।

রিত্তিলের নিজের থেকেও বেশি কষ্ট লাগছে তার ছোট্ট মেয়েটার জন্য। ইশরা
ছোট্ট মেয়েটা কি করে কাটাবে নিজের মাকে ছাড়া। ইশরার দিকে কিছুক্ষণ
তাকিয়ে রিত্তিক চোখ মুছলো তারপর কিয়ারার কেবিনের দিকে যেতে থাকে।
এতোক্ষণ রেহেক এবং আলফাজ রিত্তিকের পিছেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রিত্তিক
চুপচাপ কিয়ারার কেবিনে গিয়ে দেখে কিয়ারা চোখ বন্ধ করে আছে। কারো
উপস্থিতি টের পেতেই সে চোখ মেলে তাকায়। রিত্তিক কে দেখে কিয়ারা মুচকি
হাসলো এবং বললো,”রিপোর্ট এ কি এসেছে আমি আর বাচবো না?”

.

কিয়ারার কথা শুনে রিত্তিকের ভেতর টা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। কি বলবে নিজেই
বুঝে উঠতে পারছে না পরে নিজেকে সামলে বলে,”দেখো কিয়ারা আজেবাজে
কথা একদম বলবে না বলে দিলাম। তোমার কিচ্ছু হবে না আমি তোমায় বাইরের
দেশে নিয়ে যাবো ইন শা আল্লাহ তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।”
কিয়ারা মৃদু হেসে বলে,”রিপোর্টে কি এসেছে আমায় বলবে না?”

রিত্তিক চুপ হয়ে গেলো এবং মাথা নিচু করে বলে,”স্টমাক ক্যান্সার!”
বলেই চোখের জল ফেলতে লাগে। কিয়ারা যেনো স্পষ্ট নিজের মৃত্যু দেখতে
পারছে। তাই কিয়ারা রিত্তিককে বললো সবাইকে আনতে। রিত্তিক কিয়ারার কথামতো সকলকে ডেকে আনে। কিয়ারা সবার দিকে একবার চোখ বুলালো
সাথে নিজের ছোট্ট মেয়েটার দিকে। ভাবলেই তার বুক ফেটে যাচ্ছে যে তার ছোট্ট
মেয়েটার সাথে খেলা করতে পারবে না, নিজের কোলে ঘুম পারাতে পারবে না,
নিজ হাতে স্কুলের ইউনিফর্ম পরিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতে পারবে না, চাইলেও তার
ছোট্ট হাত ধরে ঘুরতে পারবে না।

.

কতো কতো স্বপ্ন ছিলো তার সেই ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে কিন্তু আল্লাহ তার সকল
স্বপ্নই অপূর্ণ রাখলো।
ভেবেই কিয়ারার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। তারপর নিরবতা
ভেঙে কিয়ারা রেহেককে বলে,”আপু!”
– বলো বোন।
– আমার মেয়েটার যত্ন করবেন। এখন সে আপনাদের দায়িত্ব। যখন বড় হবে
আপনার ছেলের সাথে ওকে বিয়ে দিবেন কথা দিন আমায়।
– এসব কি বলছো তুমি বোন তোমার কিচ্ছু হবে না আল্লাহ ভরসা।
কিয়ারা একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলে,”আল্লাহর ইচ্ছেতে সব হচ্ছে আর তার
ইচ্ছেতেই তো আমি না ফেরার দেশে…

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০১

রিত্তিক সাহেব কিয়ারাকে থামিয়ে বলে,”বললাম না তোমার কিছু হবে না কেন
বারবার একই কথা বলে যাচ্ছো? আজই আমি দেখবো কোথায় ভালো ট্রিটমেন্ট
হয় সেসব জায়গায় খোঁজ নিয়ে আমি তোমায় সেখানে নিয়ে ভালো ট্রিটমেন্ট
করাবো।”
– ক্যান্সারের ভালো ট্রিটমেন্ট পাবা না তুমি শুধু কেন নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে
অন্যদেশে যাবো বলতে পারো? আর আমি নার্সের থেকে শুনেছি ক্যান্সার টা
ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর আল্লাহর যেখানে অনিচ্ছা সেখানে পৃথিবীর
কোনো ডাক্তারই আমায় বাচাতে পারবে না তাই রেহাই দাও আমায়। আমি চাইনা
আমার আপনজনদের থেকে দূরে গিয়ে ইন্তেকাল করি। আমার কথা রাখো
প্লিজ!!

রিত্তিক আর কিছু বলতে পারলো না। রিত্তিক চুপ হয়ে গেলে কিয়ারা রেহেকের
দিকে তাকায় উত্তরের আশায়। রেহেক কেঁদে কেঁদে কিয়ারার গালে হাত রেখে
বলে,”আমি তোমার মেয়েকে বউ হিসেবে নয় নিজের মেয়ে হিসেবে নিবো
ইন শা আল্লাহ।”কিয়ারা শত কষ্টের মাঝেও একটা মিষ্টি হাসি দেয়।

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.