ইস্ক মোবারাক - Golpo Bazar

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৩ || Romantic golpo

ইস্ক মোবারাক

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৩
লাবিবা ওয়াহিদ

সেদিনের পর কিয়ারার অবস্থা আরও কয়েকগুণ খারাপ হয়ে যায় এবং সে প্রায়
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সেদিন কিয়ারা শেষবারের মতো নিজের মেয়েকে বুকের
সাথে আগলে রাখে। ইশরা তার মায়ের এতো কষ্ট দেখে কেঁদেই চলেছিলো। কিয়ারা
বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে রিত্তিককে বলে,”আহ আহ আহমি এইহ এইহ কয়েক খ
দিন অহনেক ভেবেছি যে আমি চলে গেলে আমার মেয়েহ মেয়েহ টা একা হহ হহ
হয়ে যাবে। তাই তুমি প্লিজ আমি চলে যাওয়ার পর আরেকটা বিয়ে করে নিওহহ।”

– না আমি কখনোই বিয়ে করবো না, তোমায় ছাড়া আমি মূল্যহীন। দয়া করে
এভাবে অকালে চলে যেয়ো কি করে বাচবো তোমায় ছাড়া?(কাঁদতে কাঁদতে)
– বাহ বাহ বাচতেহ যে তোহ তোমায় হহ হবেই আমার মেয়েটার ভবিষ্যৎ যেহ
তোহ তোহ মার হা….
আর বলতে পারলো না ততক্ষণে কিয়ারা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।

সেদিনের পর প্রায় ১বছর রেহেক রিত্তিকদের সাথে ছিলো এরপর আফজালের
অফিসের কাজে ফেমিলি সহ ডুবাই শিফট হতে হয়। সেই থেকে ইশরাকে তার
মায়ের সবচেয়ে বিশ্বাসী এক খালা লালন পালন করে। রিত্তিককে সবাই অনেক
জোর করেছিলো দ্বিতীয় বিয়ের জন্য এবং কিয়ারার কথাও সে রাখেনি। জীবনে
একজনকে ভালোবেসেছে সেই একজনের জায়গায় কখনোই অন্যকাউকে বসাতে পারবে না সে আর রইলো ইশরার কথা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

যদি বিয়েও করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সৎ মা হয়ে নির্যাতন করে। তাই
রিত্তিক আগে থেকে কোনোরকম রিস্ক নিতে চায়নি। সে একা লালনপালন করবে
তবুও মেয়ের উপর কোনোরকম নির্যাতন সে সহ্য করবে না তাই সে আর বিয়ে করেননি সারাটাজীবন তার কিয়ারার স্মৃতি নিয়েই বেচে আছেন। সত্যিই ভালোবাসা
কতোটা অদ্ভুত তাইনা?
সবটা ভেবে রিত্তিক নিজের চোখদুটো মুছলো।

রেহেক কাবার্ডের একটা ড্রয়ার খুলে ছবির এলভাম নিলো তারপর সেখান থেকে
একটা ছবি বের করে সেটায় হাত বুলিয়ে চুপচাপ চোখের জল ফেলতে লাগে।
– কেন রে বোন? কেন নিষ্ঠুরের মতো এভাবে চলে গেলি বল তো? জানিস আমরা
কতো কষ্টে আছি। তোর মতো একটা ছোট বোন পেয়ে সত্যিই নিজেকে খুব
ভাগ্যবতী ভাবতাম সেই তুই ই আমাদের একা করে দিলি। তোর মেয়ে টা এখন যে
১৮ বছর বয়সী। তোর মেয়েটা পুরোই তোর কপি হয়েছে যেনো দ্বিতীয় কিয়ারা!

তোর দেওয়া কথার খেয়ানত কি করে করবো বোন? আমি যে আর পারছি না।
বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে রেহেক ইসলাম। আফজাল রেহেককে বুকে টেনে নিলো
এবং শান্তনা সুরে বলে,
– এভাবে কেঁদো না রেহেক এতে কিয়ারা কষ্ট পাবে। আর কতো বছর এভাবে
কাঁদবে বলোতো? এই জীবন নামক শব্দটা যে বড্ড কঠিন। চিন্তা করিও না আল্লাহ
ভরসা। আর ভাগ্যে যা ছিলো তাই হচ্ছে আর যা থাকবে তাই হবে এতে তো
আমাদের কোনো হাত নেই।
আফজালের কথায় রেহেক নিজেকে সামলে কিচেনের দিকে চলে গেলো।

.

– আপনি প্র‍্যাগনেন্ট!
– এবোরশনের ব্যবস্থা করুন।
– হ্যাঁ তম্ময় ঠিক বলেছে এবোরশন করান।
ডাক্তার মেয়েটার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। এই নিয়ে ২ বারের মতো এবোরশন
করিয়েছে কি করে পারে একজন মেয়ে হয়ে নিজের সন্তানকে নিজের হাতে
মেরে ফেলতে। এইসব মেয়েদের পাপের শাস্তি তাদের বাচ্চাদের উপর গিয়ে পড়ে।
এক এক করে নিষ্পাপ বাচ্চাদের তারা নিজের হাতে খুন করছে আল্লাহ কি এতো
পাপ সইবে? ডাক্তার মেহের শান্ত সরে মেয়েটাকে বলে,”দেখুন মিস অনিয়া
আপনি এতোটা নরপশু কি করে হচ্ছেন? এর আগেও আপনি ২ বার এবোরশন
করিয়েছেন। আপনি মা হচ্ছেন সেটা নিয়ে কি সামান্য ফিলিং কাজ করে না
আপনার মাঝে?”

– ফিলিংস দিয়ে কি করবো? আমার চাই শুধু টাকা! এই বাচ্চা টাচ্চা আমার কি
কাজে লাগবে উলটা আমার বিপদ ডেকে আনবে! নেভার আমি কখনোই নিজের
বিপদ ডেকে আনতে চাইনা। এখন আপনি এবোরশন করাবেন না আমি
অন্যদিকে যাবো?
ডাক্তার মেহের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আজকাল এসব মানুষের প্রতি তার ঘৃণা
দ্বিগুণ হারে বেড়েই চলেছে। মাঝে মাঝে তো তার মন চায় এই ডাক্তারি ছেড়ে দিতে
কিন্তু সে পারেনা। এসব অনুভূতিহীন মানুষ কখনো মা হওয়ার স্বাদ বুঝবে না তারা
তো চিনে শুধু তাদের নিজেদের স্বার্থ!

– বেইবি একদম চিন্তা করিও না আমি তোমার সাথে আছি।
– লাভ ইউ বেইবি!
– লাভ ইউ টু। আচ্ছা শুনো।
– হুম বলো।
– সাদাফ কি কিছু জানে?
– নাহ আমি রেডি হয়ে হসপিটালের দিকেই আসছিলাম তখনই বাসায় চলে আসে।
অনেক কষ্টে বিদায় করেছি।
– আর টাকার বিষয়টা?
– আরেহ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি নুপুর কিনবো বলে।
– বাহ এভাবেই নিবা বুঝলা কিন্তু…
– কি?

.

– আমার চিন্তা হচ্ছে তুমি কি ওকে ভালোবা…
অনি নাক ছিটকে বলে,”ছিহ কি বলছো তুমি ওকে ভালোবাসবো তাও আমি? আমি
ওকে নয় ওর টাকাকে ভালোবাসি। কলেজ লাইফে বেশ কষ্ট হয়েছে একে পটাতে।
সেই থেকে আজ ৬ বছর হতে চললো টাকাই নিচ্ছি শুধু।
– বাহ বেশ ভালো লাভ ইউ বেইবি।
– লাভ ইউ টু সুইটহার্ট!

সাদাফ বাসায় ঢুকেই ডাইনিং টেবিলে খেয়াল করলো নুডুলস। তার এমনিতেও বেশ
খুদা পেয়েছে তাই সে রুমের দিকে না যেয়ে ডাইনিং সাইডে গিয়ে একটা চেয়ার
টেনে বসে বসলো। একটা চামচ নিয়ে গড়গড় করে কয়েক চামচ নুডুলস খেয়ে
নিলো। কিছুক্ষণ পর সাদাফের চোখ রসোগোল্লার মতো হয়ে গেলো এবং জোরে
চিল্লিয়ে উঠলো, “ঝাল, ঝাল” করে। সাদাফের চিল্লানোতে রেহেক, ইশরা সাথে
আরও কিছু সার্ভেন্ট এসে হাজির। ইশরা সাদাফের দিকে না তাকিয়ে নুডুলসের
প্লেটে তাকিয়ে বলে,”হায় হায়!

এতো স্বাদ করে নুডুলস টা বানালাম রিলেক্সে খাবো বলে আর আপনি আমার
খাবারের ১২ টা বাজিয়ে দিলেন?”(রেগে চিল্লিয়ে)
সাদাফ চটজলদি ফ্রিজ থেকে কিছু সন্দেশ বের করে কয়েকটা মুখে পুড়ে নিলো
তারপর কিছুটা ঝাল কম লাগতেই সাদাফ রক্তচক্ষু নিয়ে ইশরার দিকে তাকালো
এবং রেগে বললো,”এই মেয়ে এতো ঝাল দিসো কেন তুমি? তোমার জন্যে তো আমার অবস্থার ১২টা বেজে যাচ্ছিলো।”

.

– সেই ১২টা বাজুক বা ১৫টা বাজুক আপনি পারমিশন ছাড়া গিলতে গেছেন কেন?
আপনাকে কি আমি বলসি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন যত্তোসব! আপনার জন্য
আমার নুডুলস খাওয়া আর হলো না।(মুখ গোমড়া করে)
– মুখ সামলে কথা বলো। পারমিশন নিতে আমার বয়েই গেছিলো। আমার বাড়ির
ডাইনিং টেবিলে খাবার রাখা ছিলো তাই আমি খেয়েছি তুমি তোমার খাবার সরিয়ে
রাখতে পারলে না? তোমার জন্য আমার অবস্থা নাজেহাল হয়েছে আর তোমাকে
তো….

– ব্যাস!!! অনেক ঝগড়া করেছিস দুজনে। সাদাফ নিজের রুমে যা একটু স্বস্তি দে
যা বলছি।
– কি করে যাবো এই মেয়ে তো আমার রুমে দখল দিয়ে রেখেছে।
– রুম আগের মতোই আছে এখন তুই এখান থেকে যা!
সাদাফ কিছু না বলে ইশরার দিকে চোখ গরম করে তাকালো। ইশরা নিজের
জিবহা বের করে ভেঙালো। সাদাফ আরও রেগে হনহন করে চলে গেলো
উপরে নিজের রুমের দিকে।

ইশরা মুখ গোমড়া করে নুডুলস এর বাটির দিকে তাকিয়ে রেহেককে
বলে,”তোমার ছেলে পঁচা আমার নুডুলস খেয়েছে এএএএএএএ আমার খুদা
পেয়েছে।”
– কাঁদিস না মা আমি এক সার্ভেন্টকে পাঠিয়েছি নুডুলস রাধতে। আগের মতোই
স্পাইসি করে রেধে দিবে।
রেহেকের কথায় ইশরার ঠোটে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো।

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০২

– পেয়েছে টা কি ওই মেয়ে অলয়েজ অপমান করিয়েই ছাড়ে। কে ওই মেয়ে যার
জন্য আম্মা,ডেড এমন রুডলি বিহেভ করেই যাচ্ছে স্ট্রেঞ্জ! এরে তো আচ্ছা শিক্ষা
দিতে হবে নইলে বেশি বেশি বাড়বে।
বলেই সাদাফ ওয়াশরুমে ঢুকলো। একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলো। রুমে এসে
দেখে টিটেবিলের উপর কিছু প্লেট দিয়ে ঢেকে রাখা। সাদাফের ঘাড়ে থাকা
তোয়ালটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে প্লেট উঠালো এবং দেখলো খাবারে কয়েক
আইটেম সাথে মিষ্টান্ন! একটা ছোট চিরকুটে লেখা,”আমার বাবাজানের জন্য।”

সাদাফের বুঝতে বাকি রইলো না এগুলো কে পাঠিয়েছে। হ্যাঁ তার মা রেহেক
পাঠিয়েছে। যতোই সাদাফের উপর রাগ করে থাকুক না কেন দিনশেষে ঠিকই তার
যত্ন করে। সাদাফ বেশি দেরি না করে সোফায় বসে সবটা খেয়ে নিলো। ইশরা
দরজার সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ সাদাফের খাওয়া দেখলো। সাদাফের খাওয়া
শেষে ইশরাকে সাদাফ দেখার আগেই ইশরা চলে গেলো নিজের রুমে।

সাদাফ খাওয়া শেষ করে নিজের টিস্যু দিয়ে নিজের মুখ মুছে তারপর ল্যাপটপ
নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে পড়লো অফিসের কাজ করার জন্য। কাজ করতে
করতে রাত প্রায় ১০টা বেজে গেলো। সাদাফ ল্যাপটপ রেখে রুমে এসে অনিকে
ফোন দিলো কিন্তু রিসিভ করলো না। একবার না ধরাতে বারবার কল করতে লাগে
কিন্তু তবুও অপরপাশ থেকে কেউই ফোন তুলছে না। শেষে সাদাফ রেগে বিছানায়
ছুড়ে মারে আর নিজে বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ে।

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.