ইস্ক মোবারাক - Golpo Bazar

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৪ || sad love story

ইস্ক মোবারাক

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৪
লাবিবা ওয়াহিদ

– মা ও মা তুমি কেন আমার পাশে নেই? সেই ছোট থেকে চুপচাপ সহ্য করছি
সবটা। জানো যখন স্কুলে যেতাম তখন সবাই নিজেদের মায়ের হাত ধরে স্কুলে
আসতো। নিজের মাকে নিয়ে অনেক গল্প করতো, মাদারস ডে তে এটা সেটা
গিফট করতো। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতাম কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না।
অনেকেই হাসি ঠাট্টা করতো তাদের মা আছে আমার নেই দেখে। সত্যিই কি
এতোই অভাগী আমি মা? আমার যে আর ভালো লাগে না মা তোমাকে ছাড়া।
খুব কষ্ট হয় যে আমার মা খুব কষ্ট হয়। প্লিজ ফিরে আসো না আমার কাছে!

কথাগুলো ইশরা এতোক্ষণ আকাশের তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো। চোখে
অশ্রুর লিলাখেলা। মা ছাড়া জীবন কতো কষ্টের সেটা হয়তো তারাই জানে যাদের
মা নেই যেমনটা ইশরার! তার মায়ের কথা ভেবে ভেবেই কতো রাত্রি পার করেছে
কতো রাত তার মায়ের ছবি বুকে আগলে রেখে কেঁদেছে। কতো রাত নামাজের
সেজদায় তার মায়ের জন্য দোয়া করেছে হিসেব নেই। হঠাৎ দরজায় কেউ নক
করলো। ইশরা চোখ ভালোমতো মুছে পিছে তাকালো। দেখলো রেহেক ইসলাম দাঁড়িয়ে দরজার সামনে। ইশরা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে রেহেকের সামনে আসলো
এবং বললো,”আরে মামনি তুমি এখানে এই সময়ে?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

– হুম এভাবে অন্ধকার করে কেন রেখেছিস হুম?
– চাঁদের আলো আসছিলো তাই জোৎস্না বিলাস করছিলাম।
রেহেক ইসলাম এতোক্ষণ পর ইশরার চোখের দিকে তাকালো। হালকা আলোয়
বেশ বোঝা যাচ্ছে ইশরার চোখ ফুলে আছে সাথে লাল টকটকেও হয়ে আছে।
রেহেক ইসলাম বেশ বুঝলো এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে কেঁদেছে কিন্তু কোনোরকম প্রশ্ন
করলেন না। উনি এসেছেন ইশরাকে সঙ্গ দিতে। এতোদিন একা ছিলো এখন
কোনোরকম একাকিত্ব রেহেক মেনে নিবে না। রেহেক প্রসঙ্গ বদলে বলে,”ওহ
যাইহোক আজ তুই আমার কোলে মাথা রাখবি আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো
এবং এতো এতো গল্প করবো।”

রেহেকের কথায় ইশরার কষ্ট যেনো নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো ওবং আনন্দিত
সরে বলে উঠলো,”সত্যিইইই মামনি?”
– হ্যাঁ ৭ সত্যি।(হেসে)
– এটা তুমি শিখলে কি করে এটা তো আমার ডায়লগ?(ভ্রু কুচকে)
রেহেক ইসলাম হেসে বলে,”এটা তোর মায়ের ডায়লগ সেই থেকেই শিখেছি!”
ইশরা হেসে দিলো। ইশরা রেহেকের কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে আছে আর
রেহেক অতি যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রেহেক ইশরাকে বেশ করে
পর্যবেক্ষণ করছে। দেখতে মাহ শা আল্লাহ ইশরার সুন্দর্য নজর কাড়ার মতো প্রায়
কিয়ারার প্রতিচ্ছবি ইশরা! রেহেক বলে উঠে,”তুই কি ঘুমিয়ে গেছিস মা?”

.

– না মামনি বলো।
– ভার্সিটির এডমিশনের কোনো খবর পেয়েছিস?
– না ফুপার থেকে জিজ্ঞেস করা হয়নি তুমি কিছু জানলে বলো।
– হুম কাল ফুপার সাথে ভার্সিটি যাবি সকল ফর্মালিটি কমপ্লিট করে ভার্সিটির
ক্লাসরুম দেখে বুঝে তারপর চলে আসবি।
– ঠিক আছে মামনি।
– হুম এখন ঘুমা।
– তুমি ঘুমাবে না সারারাত কি এভাবে বসে থাকবে?
– তোকে এতো চিন্তা করতে হবে না ঘুমা তুই।

ইশরা আর কথা না বাড়িয়ে চোখ বুজে ফেলে এবং কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমের দেশে
পাড়ি দেয়। রেহেক ইশরাকে কিছুক্ষণ দেখে কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বালিশে
শুইয়ে দেয় এবং বেডশিট টা গায়ে জড়িয়ে দেয়।

মেহের ব্রিজের উপর চুপচাপ দাঁড়িয়ে আকাশের হাজারো তারাগুলোর দিকে
তাকিয়ে আছে। হয়তো সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে! কিছুক্ষণের মাঝে একটা
ছেলে দৌড়ে মেহেরের পাশে এসে দাঁড়ালো আর দুই হাটুতে হাত রেখে কিছুক্ষণ
হাঁপাতে লাগলো। মেহের স্বাভাবিক দৃষ্টিতে একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবার
আকাশের তারা গোণায় মনোযোগী হলো। আসলেই কি এতো তারা গোণা সম্ভব?

একটা গুণতে গিয়ে আরেকটা তারা চলে আসবে। যেকোনো গণকই হার মানবে
তাদের গণনা করতে গিয়ে। আসলে মানুষের জীবন টাও এমন। নিখুঁত যতোই
খুঁজতে যাবে ততোই খুত বেরিয়ে আসবে যেমনটা তার পাশে থাকা ছেলেটা। ছেলেটা কিছুটা উত্তেজিত কন্ঠে বলে,”সরি সরি সরি সরি সরি লেট হওয়ার জন্য।
– একবার বললেই যথেষ্ট এতোবার সরি বলো কেন তুমি?

.

– ওইযে লেট আসলে আমি…
– ঘুমিয়ে ছিলে তাইতো?(বলতে না দিয়ে)
– ওই একটু আর কি।(মাথা চুলকাতে চুলকাতে)
– রুসান তুমি এতো ঘুম পাগল কি করে হলে বলতে পারো? যখনই সময় পাও
তখনই ঘুমাও এটা কি ঠিক বলো?
– জানিনাহ তবে ঘুমাতে ভালোবাসি।(হেসে)
মেহের রুসানের দিকে ফিরে বলে,”আর আমাকে?”
– ঘুমের চেয়েও বেশি ভালোবাসি তোমায়।

মেহের একটা শুকনো হাসি দিলো তারপর চোখ ফিরিয়ে নিলো। রুসান ব্রিজের
রেলিং ঘেষে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার মেহেরের দিকে তাকালো।
– এই সময় ডাকার কারণ? মন খারাপ?
মেহের মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বোঝালো।
– কেন কি হয়েছে আমার শালিকটার!
– আজ আবার ওই মেয়ে এসেছিলো এবোরশন করাতে রুসান! মানুষ কি করে
পারে ফুলের মতো নিষ্পাপ শিশুগুলোর প্রাণ নিতে?

নিমিষেই রুসানের মন খারাপ হয়ে গেলো। রুসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
বলে,”তুমি ওইসব কেসে নিজেকে জড়াও কেন?”
– আমার কি করার আছে বলো আমায় এই ডিপার্টমেন্টেই দেওয়া হয়েছে কারো
এবোরশন অথবা বেবি প্রসব! আমি যে চাইলেও এগুলো ছাড়তে পারবো না। যদি
তাদের কিছু বলি তারা তো বলবে ডাক্তার হয়েছো সহ্য করতেই হবে আইন তো
আমাদের হাতে নেই, যার যার বাচ্চা যার যার অধিকার।” সত্যি রুসান আমি টায়ার্ড
হয়ে গেছি এসব দেখতে দেখতে! সবচেয়ে রাগ লাগছে ওই মেয়ের প্রতি। কি করে
পারলো নিজের ৩ ৩টা বাচ্চা এবোরশন করাতে? এতোই যদি সমস্যা হয় এরা
অবৈর্ধ সম্পর্কে জড়ায় কেন? কেন নিজেদের পাপের শাস্তি ওইসব ফুলের ন্যায়
প্রাণ গুলো পাবে?

.

মেহের এগুলো বলতে বলতে কেঁদেই দিয়েছে। রুসান মেহেরকে বুকে টেনে
নিলো। মেহের কেঁদেই চলেছে আর রুসান তাকে শান্ত দিয়ে চলেছে।
– রিলেক্স মেহের! মনে রেখো উপরে একজন আছেন সঠিক বিচার করতে। তিনি
সব দেখেন শুনেন বুঝেন!সবাই অন্যায় সহ্য করলেও তিনি কখনোই করবেন
না।অন্যায়ের শাস্তি তিনিই দিবেন, তার উপর ভরসা রাখো।

মেহের নিজেকে সামলে নিলো। আরও কিছুক্ষণ দুজন সেখানে সময় কাটিয়ে
রুসান মেহেরকে তার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজেও চলে যায়। মেহের রুসানের
বাগদত্তা! ১ মাস হলো এনগেজমেন্ট হয়েছে তাই যখন ইচ্ছা দেখা করে এতে
করে পরিবার থেকে কোনোরকম ঝামেলা হয়না।

– ইশশশশশশশ!! বড্ড দেরি হয়ে গেলো উঠে এখন যেতে যদি দেরি হয়ে যায় নাহ
দেরি হলে চলবে না ঝটপট করতে হবে।
বলেই ইশরা ব্যাগে জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে নিচের দিকে দিলো এক দৌড়। নিচে
এসে দেখে সবাই তার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে। ইশরা আস্তে আস্তে
এগিয়ে এসে বলে,”মামনি আমার তো ভার্সিটির জন্য দেরি হয়ে গেছে খেতে পারবো না।”

আফজাল ইশতার কিছু বলতে নিবে তার আগেই সাদাফ টেবিলে জোরেসোরে বারি
দিয়ে রেহেককে কড়া গলায় বলে,”ওয়াট দ্যা হেল মম? কেন এই মেয়ের জন্য
আমার না খেয়ে থাকতে হচ্ছে? এই মেয়ে কে যে যার জন্য তোমাদের এতো দরদ
হচ্ছে। আমাকে খেতে দিবা নাকি আমি বেরিয়ে যাবো!এইসব ড্রামা আমার জাস্ট
সহ্য হচ্ছে না।”

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৩

সাদাফের এমন কথায় সবাই তেলে বেগুনে জ্বলে গেলো বিশেষ করে ইশরা। রেহেক কিছু বলতে যেয়েও আলফাজ ইশতার থামিয়ে দিলো আর চুপচাপ ইশারা
করলো ইশরার দিকে। রেহেক ইশরার দিকে তাকিয়ে যা বুঝলো তার ছেলেকে
এখন বেশ ভালো ডোজ দিবে।
– হেই মিস্টার চাশমিশ! আপনাকে আমি বলসি না আমার নাম ইশরা আপনি
বারবার সেই এই মেয়ে এই মেয়ে করে কান খাচ্ছেন! বলি আপনি কি কানার
সাথে বয়ড়াও?(রেগে)

– Mind Your Language!(চোখ গরম করে)
– Mind Your Own Language Mr.Cashmish!
– আমার বাড়িতে আমাকেই ঝাড়ি দিচ্ছো? হাউ ডেয়ার ইউ?? তোমার সাহস কি
করে হয় বাইরের একটা মেয়ে হয়ে এখানে চোখ গরম করে কথা বলার!(রেগে
চিল্লিয়ে)
– আমি এই বাড়িরই একজন ওকে? আর সাহস আপনার কি করে হয় নিজের বাবা
মায়ের ব্যবহার কে ড্রামা বলছেন? হাউ ডেয়ার ইউ! নিজে খাবেন তো খাবেন না
হলে বেরিয়ে যাবেন। এখানে আপনাকে কেউ আটকাচ্ছে না যত্তোসব আজাইরা

– ইউউউউ…..
– ইউ ক্যান লিভ নাও মি.চাশমিশ!
সাদাফ চোখের চশমাটা হাত দিয়ে ঠিক করে ইশরার দিকে চোখ গরম করে
তাকালো তারপর হনহন করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো কিছু না খেয়েই! রেহেক
আর আলফাজ একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় তার কারণ তারা জানে এখন তাদের ওই
ত্যাড়া ছেলেটা এখন কোথায় যাবে।

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.