ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৫
লাবিবা ওয়াহিদ
– প্লিজ এভাবে রাগ করে থেকো না আই সয়ার কাল ফোন অন্য রুমে রেখে
ঘুমিয়েছিলাম বিলিভ করো। আচ্ছা সরি এত্তোগুলা সরি।
অনি যাই বলছে না কেন সাদাফের রাগ ভাঙছেই না।
– তুমি জানো না রাতে কল করে কথা বলবো তো কেন অন্যরুমে ফোন রেখে
ঘুমিয়েছো তুমি? এই পর্যন্ত প্রায় ২৫ বার কল দিয়েছি। ইউ রিয়েলি নো দ্যাট
কতোটা টেন্স এ ছিলাম?
– আচ্ছা বাবা বললাম তো আমার ঘাট হয়েছে এন্ড সো সরি। এখন কি কান ধরবো?
ওকে দেখো ধরেছি কান আর হবেনা প্লিজ প্লিজ প্লিইইইইজ!!
সাদাফের রাগ অনেক কষ্টে ভাঙ্গালো অনি। সত্যি বলতে কাল এবোরশন করানোর
পর অনিকে কিছু মেডিসিন দেয়া হয়েছিলো যার কারণে সে ঘুমিয়েই ছিলো আর
অনির ফোন ছিলো তম্ময়ের কাছে। তম্ময়ও ঘুমিয়ে পড়ে আর অনির ফোনও
সাইলেন্ট ছিলো তাই সেও বুঝতে পারেনি।
ইশরা ভার্সিটি ঘুরে ঘুরে দেখছে বেশ ভালো লাগছে তার এই পরিবেশ। ক্লাসরুমের
কথা বলায় সে ক্লাসরুম দেখতে গেলো। ক্লাসে বেশ কিছু মেয়ে ছেলে বসে আছে,
বলা যায় একে সব সাথে বন্ধুত্ব করছে। ইশরা খেয়াল করে কর্ণারে একটা মেয়ে
চুপচাপ বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশরার কেন জানিনা মনে হলো তার
সাথে তার ফ্রেন্ডশিপ করা উচিত। তাই সে মেয়েটার পাশে গিয়ে বসে এবং
বলে,”হাই!”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
মেয়েটি ইশরার দিকে তাকালো। ইশরা মুচকি হেসে তক্র দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশরাকে দেখলে যে কারোরই ফ্রেন্ডশিপ করতে মন চাইবে ওই মেয়েটারও তার
ব্যতিক্রম নয়। মেয়েটিও মুচকি হেসে জবাব দিলো,”হ্যালো!”
– একা একা বসে আছো যে?
– কেউ ফ্রেন্ডশিপ করতে আসেনি তাই।
– ওহ! ওকে ডোন্ট বি স্যাড কেন উই ফ্রেন্ডস?
মেয়েটি হেসে বলে,”এখনো তো আমরা একে অপরকে চিনিনা তো?”
– চেনা না চেনায় কিছু জায় আসে?
– নাহ তা নয় তবুও…
– বুঝলাম তুমি ভয় পাচ্ছো।
– আরে না না তা নয়!
– তো?
– আমার আপু বলে অচেনাদের সাথে কথা বলবে না।
– ওহ তাই? আচ্ছা আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি, আমি হুমাইরা ইশরা!
ঢাকার ****** তে থাকি বাড়ি নং ****। এবার তোমার টা বলে ফেলো।
– আমি ফাযিহা ফারজানা!
– ওয়াও তোমার নামটা আমার বেশ লেগেছে। আজ থেকে তোমায় ফাযি ডাকবো
ডিল!
ফাযি হেসে বলে,”সবাই এই নামেই ডাকে।”
– বাহ তাহলে তো বেশ ভালো।
এরপর দুজন আরও কিছুক্ষণ বকরবকর করলো এবং দুজনেই অনেক ক্লোজ হিয়ে
গেলো।
.
– এই ওষুধ গুলো টাইম মেইনটেইন করে খাওয়াবেন ইন শা আল্লাহ সেলাইয়ের
ব্যথাটা দ্রুত সেরে যাবে।
– ধন্যবাদ ডাক্তার কিন্তু…
– জ্বি?
– আমাগো তো এতো পয়সা নাই রে মা।(করুণ সুরে)
মেহেরের সামনে থাকা দরিদ্র লোকটার জন্য বেশ কষ্ট লাগছে৷ মানুষটা রিক্সা
চালিয়ে নিজের পরিবারের ভরনপোষণ করে। দুইদিন হলো তার স্ত্রীর বাচ্চা হলো।
সেখানেই সব খরচ চলে গেছে এখন ওষুধ কিনতে সে হিমশিম খাচ্ছে। এতো বড়
হসপিটালে এসেছে যেনো সুচিকিৎসা পায়। মেহের তাকে কিছু বলতে যাবে ওমনি
পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,”ভাইয়া আপনার খরচ আমি নিচ্ছি।”
লোকটা পিছে তাকালো আর মেহের লোকটার পিছে। রুসান দাঁড়িয়ে হাতে কিছু
ফল নিয়ে। মেহের রুসানকে দেখে মুচকি হাসি দেয়। লোকটি অবাক হয়ে
রুসানকে বলে,”কি কও তুমি ভাই? ছে ছে আমি কেন তোমারে দিয়া খরচ উঠামু?”
– উনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া। সুস্থতা আগে তারপর খরচের চিন্তা। ও আপনার স্ত্রীর
মেডিসিনের খরচ দিবে আর আমি সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।
মেহেরের কথায় লোকটা যেনো কেঁদে দিচ্ছে এমন অবস্থা। ভাঙা গলায়
বলে,”সত্যি তোমরা অনেক ভালো আল্লাহ তোমাগো কল্যাণ করুক।”
.
তারপর রুসান লোকটাকে মেডিসিন কিনে দিয়ে আবার মেহেরের কাছে আসলো।
মেহের পেশেন্ট দেখা শেষ করে রুসানের দিকে মুচকি হেসে তাকালো এবং
বললো,”কি মি,স্লিপিং কিং আজ হঠাৎ এই সকাল সকাল এখানে।”
– কেন আসতে পারিনা?
– না তা নয় আপনাকে তো ফোন দিয়েও আনা যায়না আর আজ সশরীরে হাজির!
বাহ অবাক করা বিষয়।
– কালকের কথা টা ভুলে গেছো?(বলেই টেবিলে দুই হাত রেখে মেহেরের দিকে
ঝুকে গেলো।)
মেহেরও কিছুটা সামনে এসে টেবিলে কনুই রেখে দুই গালে হাত দিয়ে
বলে,”কোনটা?”
– ওইযে ঘুমের চেয়েও তোমায় বেশি ভালোবাসি!(নেশার্ত কন্ঠে)
মেহের রুসানের এমন নেশার্ত কন্ঠ শুনে গলা পরিষ্কার করে বলে,”এটা
হসপিটাল!”
রুসানের ধ্যান ভাঙে। তারপর স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে বলে,”কেন হসপিটাল তো
কি হয়েছে?”
– হসপিটালে এতো আসা ঠিক না বুঝলেন? আর আপনার কি পুকুরে ডুবেছে?
– আজ তেমন কাজ নেই তাই চলে এসেছি।
– ওহ ভালো যাইহোক আমি গেলাম।
বলেই এপ্রোন টা ঠিক করে উঠে দাড়ালো। রুসান উত্তেজিত হয়ে বলে কই
যাচ্ছো?”
.
– যারা কেবিনে শিফট তাদের তো চেকআপ করতে হবে।
– তুমি ছাড়া কি হসপিটালে আর কোনো ডাক্তার নেই? সারাদিন শুধু এই পেশেন্ট
নিয়েই পড়ে থাকো।
মেহের হাতে একটা রিপোর্ট নিতে নিতে রুসানের দিকে তাকায় এবং
বলে,”ডাক্তারদের দায়িত্বই এটা।”
– আল্লাহ এই দায়িত্বের জন্য বিয়ের পর না জানি আমায় বউ থেকেও বউ হারা হয়ে
থাকতে হবে। হায় আমার পোড়া কপাল! কোনো একদিন কোনো মহাপুরুষ
ঠিকই বলেছিলো,”ডাক্তারদের বিয়ে করতে নেই।”
রুসানের এমন সব ডায়লগে মেহের হাসতে হাসতে পেট ধরে ফেললো। তারপর
হাসি থামিয়ে বলে,”এটা কোন মহাপুরুষ এর উক্তি?”
– আরে বললামই তো মহাপুরুষ! আর নাম তো আমি নিজেই জানিনা।
– আমার কি মনে হয় জানো?
– কি?
– তোমার সেই সো কোল্ড মহাপুরুষ এর বউ ডাক্তার ছিলো তাই এই উক্তি দিয়েছে।
– আহা মনের মতো কথা বললা! যাইহোক এই কষ্ট তুমি বুঝবা না।(মুখ গোমড়া
করে)
মেহের হেসে বলে,”হয়েছে আমার এতো বোঝা লাগবে না আমি যাই?”
.
বলেই মেহের পাশ কেটে চলে গেলো আর রুসান পিছে পিছে। বকর বকর করে
মেহেরকে কিছুক্ষণ পরপরই হাসিয়ে তুলেছে। তাদের দুজনকে দেখে অনেক
পেশেন্ট রা আনন্দিত বোধ করছে। তারাতো ধরেই নিয়ে দুজনে বিবাহিত এবং সুখী
দম্পতি!
ইশরা লিভিং রুমে বসে বসে সারাদিনের গল্প শোনাচ্ছে রেহেককে। আর রেহেক
গালে হাত দিয়ে মনোযোগ দিয়ে ইশরার হাসিখুশি কথা শুনছে। এমন সময়ই
সাদাফ ফোনে চেঁচাতে চেঁচাতে বাড়িতে ঢুকে এবং সোজা নিজের রুমের দিকে
চলে যায়। সাদাফকে দেখতেই ইশরার মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খেলো। আর দেরি
না করে সে রেহেককে প্রশ্ন করলো,”আচ্ছা মামনি তোমার কি এই একটাই
ছেলে?”
– হুম কেন তুই জানিস না?
– না আমি তেমন কিছুই জানতাম না আর ছোট বেলায় যখন আসতাম তোমাদের
বাসায় আর কাউকেই তো দেখতাম না তাই।
– ওহ বুঝলাম। আসলে সাদাফকে আমরা সাথে রাখতাম না হোস্টেলে রেখেই
পড়াতাম। তারপর যখন এইচএসসি দেয় তখনই ওকে লন্ডনে পাঠায় তোর ফুপা।
তারপর নিজের স্টাডি কমপ্লিট করেই বাংলাদেশে এসেছে এবং বিজন্যাসের হাল
ধরেছে।
ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৪
– ওওও আচ্ছা কিন্তু তোমার ছেলে এমন বজ্জাত কি করে হলো বলো তো?
রেহেক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,”আগে আমার ছেলে এমন ছিলো না। সে বেশ ভালো
এবং শান্তশিষ্ট ছিলো কিন্তু ওই এক মেয়ে…
– কোন মেয়ে আর কি হলো?
রেহেক আরও কিছু বলতে যাবে ওমনি সাদাফের উপর থেকে ডাক পড়ে। রেহেক
একবার উপরে তাকায় আবার এক সার্ভেন্ট এসে রেহেককে বলে,”ম্যাডাম বড়
স্যার আপনাকে ডাকছে কি এক জরুরি ফাইল পাচ্ছে না।”
রেহেক এখন দোটানায় পড়ে গেলো। শেষে উপায় না পেয়ে ইশরাকে বললো,”ইশু
তুই যা তো উপরে এবং দেখ গিয়ে সাদাফের কি লাগবে। আর আমি গিয়ে দেখি
তোর ফুপার কি লাগবে।”
– কিইইইই তুমি কি বলছো এসব কখনোই না। ওই লোককে না আমার সহ্য হয়
আর না সে আমাকে সহ্য করতে পারে।
– প্লিজ যা না এমন করিস কেন? সমস্যায় পড়েছি বলেই তো তোকে বলছি। লক্ষ্যি
মেয়ে আমার আমার কথাটা রাখ প্লিজ!!
– আচ্ছা যাচ্ছি মামনি এখন তুমি প্লিজ আর মিনতি করিও না আমি যাচ্ছি।
বলেই ইশরা বিসমিল্লাহ বলে সামনে এগোতে থাকলো।