ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৬
লাবিবা ওয়াহিদ
ইশরা সাদাফের রে গিয়ে দেখে সাদাফ পুরো রুম এলোমেলো করে রেখেছে।
ইশরার তো মনে হচ্ছে এখন সে সাদাফের রুমে নয় কোনো এক বস্তিতে এসেছে
যেখানে জামাকাপড়ের ছড়াছড়ি মানুষ হাটতে পারে না। ইশরা কিছু না বলে
হালকা কাশলো। ইশরার এমন কাশিতে সাদাফ পিছে ফিরে, ইশরা সাদাফের পিছে
দাঁড়িয়ে। ইশরাকে দেখে যেনো সাদাফের রাগ দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো যা ইশরা
সাদাফের চোখ মুখ দেখে বেশ বুঝতে পারছে। ইশরা একটা শুকনো ঢোক গিলে
বলে,”ডেকেছিলেন?”
– ওয়াট দ্যা হেল! এই মেয়ে তুমি আমার রুমে কিছু কি করছো? আমি কি তোমাকে
ডেকেছি যে এখানে আসছো? নাকি আবার কোনো না কোনো কান্ড ঘটাতে
এসেছো? তোমায় বলসি না আমার সামনে আসবা না তবুও কেন তুমি আমার পিছে
পিছে ঘুরো? মম ডেড তোমায় মাথায় তুলে নাচছে দেখে ভেবেছো যা ইচ্ছে
করবে?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
– এই এক সেকেন্ড আমি কিন্তু এখনো কিছু করিওনি বলিও নি তাহলে আপনি
কেন মূর্খের মতো চেঁচাচ্ছেন? আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি যে আমায়
দেখলেই আপনার মাথায় আগুন ধরে যায়?
– তুমি মানেই আমার এক বস্তা রাগ। এখন এটা আগে বলো এখানে তুমি কেন
এসেছো?
– মামনি পাঠিয়েছে।
– মামনি মিনস….মম ওহ! আমি তো মমকে ডেকেছি তোমাকে নয় তাহলে তুমি
কেন এসেছো ডেম ইট!(কিছুটা জোরে ধমক দিয়ে)
সাদাফের ধমক খেয়ে ইশরা কিছু ভয় পেলো তবুও প্রকাশ করলো না। কাপা কাপা
গলায় কিছুটা সাহস নিয়ে বলে,”মামনি ফুপার রুমে….”
-(বলতে না দিয়ে) জাস্ট শাট আপ! তোমার কাছে আমি কৈফিয়ত চাইনি। আমি
১০০% শিওর তুমি কোনো না কোনো মতলবেই এসেছো।
এবার ইশরার মাথায় দাগ চড়ে বসে। বলে কি এই ছেলে মাত্রই জানতে চাইলো
কেন আসলাম এখন বলতে গেলেও কৈফিয়ত চায়মা আজিব পোলা তোহ!
– এই আপনিই তো কৈফিয়ত চাইলেন এখন নিজেই আমাকে ধমকাচ্ছেন? সমস্যা
থাকলে বলুন নইলে এইখানে বইসা মরেন আমার এতো আজাইরা সময় নাই যে
এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকবো যত্তোসব।
– এই মেয়ে তুমি আমাকে তেজ দেখাচ্ছো?
.
– আমার নাম ইশরা! আরেকবার এই মেয়ে এই মেয়ে করলে আপনার
চোখের ওই চশমায় ইটের কণা ফেলে ফুটো করবো বলে দিলাম!(চোখ গরম করে)
– তোমার মতো গুন্ডী মেয়েরা তো পারো শুধু থ্রেড দিতে।(রেগে)
– হ্যাঁ আর আপনি তো আপনার কোলে বসাইয়া আমারে আদর করেন!
– মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ! মাতগা কি ঠিক আছে তোমার?
ইশরা এতোক্ষণে বুঝতে পারলো সে কি বলেছে। ইশ!! লজ্জায় ইশরার মাথা কাটা যাচ্ছে রাগের মাথায় কি না কি বলে ফেললো! ইশরা প্রসঙ্গ বদলে বলে,”আপনি এক নাম্বারের গুন্ডা!”
– তুমি গুন্ডি!
– গুন্ডা!
– গুন্ডি!
– চাশমিশ, কানা, বয়ড়া!!
– আমার চোখ একদম টানবে না।
– কেন কেন আপনি আমার পরিবারকে টানলে আমি কেন আপনার কানামির
কথা বলবো না?
– ওয়াট? কানামি কি জিনিস?
– ওরে লাদে শিশু আইসে থাক যেহেতু বুঝেন নাই আর বোঝার চেষ্টাও করার
দরকার নাই আমি গেলাম হুদ্দাই আমার সাড়ে ৪মিনিট নষ্ট করসেন আলতু ফালতু
বকবক কইরা।
– তোমাকে বলিনাই এখানে আসতে ওকে তাই দোষ তোমার!
– আপনার ষাড়ের মতো চেঁচানির জন্যই আসতে বাধ্য হইসি সো দোষ আমার নয়
আপনার!
এই শুরু হলো কিছুক্ষণ লাগালাগি।
– উফফফ দেখেছো আবার ঝগড়া লেগেছে দুইটা।
– দেখছি না শুনছি।
– এই মজা করবা না তো সেই একই হলো। এতো প্ল্যান করলাম সব ভেস্তে গেলো।
ওই অনিকে খুন্তি দিয়ে পেটানো উচিত কেন আমার ছেলের লাইফে আসলো, ওর
জন্য আমার ছেলেটার লাইফ হেল হচ্ছে সাথে ইশরারও। একটা চাক্ষুষ প্রমাণ যদি
পেতাম না ওই মেয়েকে বেশ করে শিক্ষা দিয়ে দিতাম।
– এসব আমাকে বলছো কেন তোমার ছেলেকে গিয়ে বলো। আর তোমার ছেলে
কোন ধোঁয়া তুলসি পাতা হ্যাঁ? তোমার ছেলেই তো ওই মেয়েকে মাথায় নিয়ে নাচে
ধেই ধেই করে।
.
– ধুর বাদ দাও। আমি ওই মেয়ের পিছে লোক লাগাবো আর ওর কুকির্তীর সকল
খবর এবং প্রমাণ দিবে।
– তোমার এমন কোন লোক আছে যে তোমার জন্য প্রমাণ খুঁজে বের করবে?
– আরেএএ বাইরে থেকে খোঁজা লাগবে নাকি? প্রমাণ কালেক্টের জন্য তো
আমাদের ঘরেই মানুষ আছে।
– মানেহ? এই তোমার মাথা কি গেছে? কিসব আবোলতাবোল বকছো?
– আবোলতাবোল কেন হবে? যা সত্যি তাই তো বলছি নাকি।
– ধুর ফাজলামো ছাড়ো তো।
– এই এই তোমার কি মনে হয় আমি এই অসময়ে ফাজলামো করবো? এখন
আমার ফাজলামোর বয়স না ভুলে যাচ্ছো?
– আচ্ছা ওকে মানলাম এখন তুমি বলো সেই মহামানুষ টি কে যে তোমায় হেল্প
করবে?
– ইশরা!(শয়তানি হাসি দিয়ে)
– কিহ!!!(চিল্লিয়ে)
রেহেকের ঠোঁটে শয়তানি হাসি কিন্তু এই হাসির পেছনের রহস্যটা আলফাজ
বুঝতে পারছে না।
– দি।
মেহের কিছু রিপোর্ট চেক করছি নিজের রুমে বসে বসে তখনই ফাযি এসে
হাজির। মেহেরের ছোট বোনই ফাযি। ফাযি পা টিপে টিপে মেহেরের পাশে বসে
এবং ডাকে। মেহের ফাযির দিকে তাকিয়ে আবার রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে
বলে,”বল কি বলবি?”
– আচ্ছা নিলয় ভাইয়া কি আমাদের ভার্সিটিরই?
মেহের রিপোর্ট গুলোর থেকে চোখ সরিয়ে ফাযির দিকে তাকায়। তারপর ভ্রু
কুচকে বলে,”কেন সেটা জেনে তুই কি করবি?”
ফাযি কিছুটা টাস্কি খেয়ে বলে,”ইয়ে মানে তেতেমন কিছু না শুশুনেছি উনি
ভার্সিটিতে পড়ে কিন্তু কোন ভার্সিটিতে তা জানিনা এই আর কি।”
.
– নিলয়কে দিয়ে তুই কি করবি?
– আরেহ এমনি জিজ্ঞেস কি করতে পারিনা নাকি?
মেহের ফাযির থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে একটা ফাইল চেক করতে করতেই
বলে,”তোর ভার্সিটিতেই নিলয় পড়ে। আর তোকে ওই ভার্সিটিতে ভর্তি করতে তো
তোর রুসান ভাইয়াই বলেছে। যেহেতু নিলয়ও সেই ভার্সিটিতে আছে তাই সে
আমায় কিছু ধারণা দিয়েছে আমিও রাজি হই।”
মেহেরের কথায় ফাযির চোখদুটো চিকচিক করে উঠে তারপর মেহেরকে শক্ত
করে জড়িয়ে ধরে বলে,”থ্যাংকিউউউউ দিইইই তুই আমার বেস্ট দি
উম্মায়ায়ায়ায়ায়াহ!”
বলেই মেহেরকে ছেড়ে আর একমুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে দৌড়ে নিজের রুমে
চলে যায়। সবকিছু এতোই জলদি জলদি হলো যে সবটাই মেহেরের মাথার উপর
দিয়ে গেলো।
ফাযি নিজের রুমের দরজা লক করে বেডে শুয়ে ফোন টিপতে থাকে। ফেসবুকে
ঢুকে রুসানের আইডিতে গিয়ে একটা ছবি বের করলো। ছবিটায় রুসান আর নিলয়
দাঁড়িয়ে। রুসান সেল্ফি তুলেছে নিলয়ের সাথে। নিলয় রুসানের ছোট ভাই। যেদিন
এই ছবিতে নিলয়কে দেখেছে সেদিনই প্রায় মনে জায়গা দিয়ে ফেলে নিলয়কে।
তারপর মেহেরের থেকে অনেক কষ্টে তার সম্পর্কে জানে কিন্তু সাহস করে কথা
বলেনি। এনগেজমেন্ট এর দিনই সামনাসামনি দেখেছে নিলয়কে ফাযি তবে নিলয়
ফাযিকে খেয়াল করেনি। ফাযি দিন রাত পার করেছে নিলয়কে ভেবে।
.
অপেক্ষা করছে কালকের জন্য কখন তাকে দ্বিতীয়বারের মতো সামনাসামনি
দেখবে।ফাযির তাকে দেখার পিপাসা যে অতিই দীর্ঘ! এমন সময়ই চোখ গেলো
ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট অপশনে। ফাযি সেখানে ঢুকে দেখে “হুমাইরা ইশরা” নামে একটা
ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এসেছে। বায়োডাটা আর ছবি দেখে বুঝতে বাকি রইলো না এই
আইডি কার। তাড়াতাড়ি এক্সেপ্ট করে ইশরাকে মেসেজ দিলো।
– হাই।
– এতোক্ষণ লাগে রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করতে?
– সরি! বায়োডাটা দেখতে গিয়ে লেট হয়ে গেলো।
– ও আচ্ছা বুঝলাম তা কি করছিস?
– কিছু না মাত্র শুলাম তুই?
– আর বলিস না এক আজারার সাথে ঝগড়া করতে করতে আমি শেষ!
– মানে? কার সাথে আবার ঝগড়া করিস?
– পরে তোকে বলবো তা এতো রাতে অনলাইন কি করছিস? জিজু টিজু আছে
নাকি আবার?
ইশরার কথায় ফাযি কিছুটা লজ্জা পেলো। তারপর নিজেকে সামলে টাইপ
করে,”আরে ধুর! কি যে বলিস না এখন কি এসবের সময় আছে নাকি?”
– বুঝি বুঝি চান্দু যাইহোক কাল কখন আসবি?
– তাড়াতাড়িই যাবো তুইও তাড়াতাড়ি চলে আসিস একসাথে ক্লাসে যাবো কেমন?
– ওকে তাহলে কালই দেখা হচ্ছে এখন ভিষণ ঘুম পাচ্ছে আল্লাহ হাফেজ।
– আল্লাহ হাফেজ।
ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৫
– শালা বজ্জাত হনুমান চাশমিশ! কানা হইয়া আমার পিছে সারাক্ষণ লাগতে আসে।
এর প্রব্লেম কি ভাই? কাল সন্ধ্যায় এতো লাগা লাগলো আবার আজকে সকালেও?
তাও সামান্য একটা ফুল ছেড়ার জন্য? আজিব লোক তো। বাগানে এতো এতো
গোলাপ ফুল একটা ছেড়াই যায় এই বলে এতো ঝাড়ি দিবে। বুঝেছি এরে মরিচ
ম্যাক্স প্রো দিতে হবে নইলে এর শিক্ষা হবে না কিন্তু কি করা যায়? এগুলো ভেবেই
বেলকনিতে পায়চারি করছিলো ইশরা তারপর হঠাৎ তার চোখ গেলো সাদাফের
বেলকনি থেকে। বেলকনি দুটো কাছাকাছি হওয়ায় খুব সহজেই এক বেলকনি
থেকে আরেক বেলকনি টপকে যাওয়া যায়। কিন্তু ইশরা সেটা ভাবছে না।
সে বেলকনির কাছাকাছি গিয়ে নিজের বেলকনির রেলিং ধরে পা উচু করে উঁকি
ঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো সাদাফ ঘরে আছে কিনা। নাহ নেই সে। ইশরা এই
ফাঁকে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে সাদাফের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো।
আবার কয়েকবার উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখলো সাদাফ আসলেই আছে কিনা। যখন
দেখলো নেই তাড়াতাড়ি করে সাদাফের রুমে ঢুকে পড়লো আর কি করা যায়
ভাবতে থাকে। এমন সময়ই ইশরা ফোন বাজার শব্দ শুনে। শব্দ টা বালিশের নিচে
থেকে আসায় ইশরা বালিশ উঠিয়ে দেখে সাদাফের ফোন।
ফোন টা হাতে নিতে নিতেই কল কেটে যায়। আবার ফোন আসতেই দেখে
নিকনেম “My Lovebird” আর ছবিতে একটা সুন্দর মেয়ের ছবি। ইশরার
বুঝতে বাকি রইলো না এটাই সাদাফের গার্লফ্রেন্ড। ইশিরার ঠোঁটে শয়তানি হাসি!