ইস্ক মোবারাক - Golpo Bazar

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৭ || labiba oyahid writter

ইস্ক মোবারাক

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৭
লাবিবা ওয়াহিদ

ইশরা কিছু না ভেবেই ডাইরেক্ট সাদাফের ফোন থেকে অনির নাম্বার ব্লকলিস্টে
ফেলে ফোন আগের জায়গায় রেখে দেয়। হঠাৎ কারো কাশি শুনতে পায়, ইশরা
এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারেনা। এদিক সেদিক তাকিয়ে পালানোর সুযোগ
খুঁজতে থাকে। শেষে উপায় না পেয়ে দরজার পিছে গিয়ে লুকালো। সাদাফ কিছুটা
কাশতে কাশতে রুমে ঢুকলো। ব্রেকফাস্ট করেই রুমে এসেছে। সাদাফ রুমে এসে
চুপচাপ কাবার্ড থেকে নিজের স্যুট বের করে বেডে রাখে। তারপর নিজের গায়ের
টিশার্ট খুলে ফেলে।

এই দৃশ্য দেখে ইশরা চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ চেপে ধরে কারণ একটু শব্দ
করলেই সাদাফ তাকে ধরে ফেলবে৷ সাদাফের জিম করা বডি দেখে ইশরা হা হয়ে
রয় কারণ সে এরকম বডি টিভিতেই দেখেছে বাস্তবে কখনো কল্পনাও করেনি।
সাদাফ খালি গায়ে কি যেনো একটা খুঁজে তারপর আবার সাদা শার্ট টা হাতে নিয়ে
তড়িঘড়ি করে পড়ে নেয় তারপর কোর্ট পড়ে। হঠাৎ ইশরার হাঁচি আসতে শুরু
করে কিন্তু ইশরা নিজেকে সামলে রেখেছে কারণ হাচির শব্দ পেলে সব শেষ!
ইশরার এমন ঝামেলার কারণে ইশরা মনে মনে নিজেকেই বকছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

– ধুর ধুর এই হাঁচি গুলা তো মহা শত্রু আমার। কামে আইয়ে না আকামেই এসে
হাজির হয়। এখন হাঁচি দিলে যে এই খবিশ টার হাতে ধরা পড়ে যাবো। হে আল্লাহ
হেল্প মি!
অনেক চেষ্টা করেও হাঁচি থামাতে পারলো না হাচি এবং ইশরার যুদ্ধে হাঁচিরই জয়
হলো। ইশরা হাঁচি দিয়েছে তবে খুবই আস্তে। এতেই সাদাফের কান পর্যন্ত পৌঁছে
গেলো। ইশরার তো মন চাচ্ছে নিজের নাকে বই দিয়ে বারি দিতে। কথায় আছে না
‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়’ ইশরারও একই দশা। সাদাফ কোনো
কিছুর আওয়াজ পেতেই পিছে ঘুরে দাঁড়ায়।

– কে? কে ওখানে?
ইশরা ভয়ে গুটুশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে তগাকে মুখে হাত দিয়ে আর মনে মনে যত সূরা
মুখস্থ আছে সব একে একে পড়েই চলেছে। সাদাফ এক পা এক পা করে দরজার
দিকে আসলো। বাইরে এসে দেখে কেউই নেই। সাদাফ মনের ভুল ভেবে যেই
রুমের দিকে তাকালো ওমনি দেখে কেউ দরজার পিছে মাথা নিয়ে নেয়৷ ইশরা
তখনই একটু উঁকি দিয়ে দেখতে নিয়েছিলো আদৌ সাদাফ গিয়েছে কিনা কিন্তু
সেগুড়ে বালি উলটা ধরা খেয়েছে। সাদাফ রাগি দৃষ্টিতে সেদিকে এক পা এক পা
করে এগোতে থাকলো। ইশরা তো ভয়ে ঘেমে একাকার আজ ধরা খেলে যে সে
শেষ!

.

– জান!
– বলো বেইবি।
– আমায় কবে বিয়ে করবা? আর কতো তোমার জন্য অপেক্ষা করবো
বলোতো।(মুখটা গোমড়া করে বলে অনি)
– সাদাফ তো আছেই।
– এই আমাদের মাঝে ওই বলদটাকে কেন টানো বলো তো?
– তো কি করবো তুমি তো সারাদিন ওকে নিয়েই পড়ে থাকো আমার দিকে কি
তাকানোর সময় থাকে?

– আরে ধুর কিসব বলো আমি কি ইচ্ছা করে ওকে সময় দেই নাকি এ তো যখন
তখন আমার বাসায় এসে বসে থাকে যেতেও বলতে পারিনা আবার সহ্যও করতে
পারিনা। তবে তার থেকে মোটা অংকের টাকা আবার হাতাবো তারপর দুজন মিলে
আলাদা হয়ে খুব দূরে চলে যাবো।
তম্ময় অনির শেষের কথা শুনে আনন্দিত হয়ে বলে,”কবে?”

– সময় আসুক তবে আগে বিয়ে করো আমায়।
– আরে কেন বুঝতে চাইছো না এখনো আমি চাকরী পাইনাই। চাকরী না করলে
তোমাকে কি খাওয়াবো বলো তো? তোনার রোজকার যা চাহিদা!
– আর তুমি যে প্রতিবার নিজের চাহিদা মিটিয়ে নাও তার বেলায়? কখনো কি
তোমায় কিছু বলেছি?
অনির অভিমানী সুর শুনে তম্ময়ের হাতে থাকা ড্রিংকস টা অনিকে খাইয়ে
বলে,”ওইটা ভালোবাসা বাবুই”

.

– হ্যাঁ এইটা তোমার কাছে ভালোবাসা আর জানো ওই সাদাফ কখনো আমাকে টাচ
করেও দেখেনাই তো সেটা কে কি বলবা তুমি?
– ধুর বাদ দাও তো।(অনির কিছুটা কাছে এসে) লেটস এঞ্জয় বেইবি।
এরপর অনিকে নিয়ে বারে থাকা একটা রুমে চলে গেলো তম্ময়। এতোক্ষণ ওরা
বারে দাঁড়িয়ে ড্রিংকস করছিলো এবং দুজনেই মাতাল অবস্থায়।

ফাযি ভার্সিটির গেইটের সামনে পায়চারি করছে আর বারবার ঘড়ির দিকে বিরক্তির
চোখে তাকাচ্ছে। কাল এতোবার করে ইশরাকে বললো যেনো একটু তাড়াতাড়ি
আসে তা না প্রথম দিনেই লেট!? না জানি পরে কি করবে। কিছুক্ষণ আগেই ফাযি
কে মেহের ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে নিজে হসপিটালে চলে যায়। ফাযি বিরক্ত হয়ে
এবার ফোন নেয় ইশরাকে ফোন দেওয়ার জন্য। যেই ডায়াল করবে ওমনি দূরে
তাকিয়ে দেখতে পায় একটা মেয়ে এক হাতে ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে এদিকে আসছে।

ফাযি একটু পর্যবেক্ষণ করে দেখলো এটা আর কেউ না ইশরা। তখনই ফাযির
মাথায় রাগ চড়ে গেলো। ইশরার জন্য কতোক্ষণই না অপেক্ষা করলো সে। ইশরা
দৌড়ে ফাযির সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর দুই হাত হাটুতে রেখে কিছুটা নিচের
ঝুকে হাপাতে থাকে। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেই ফাযিকে কিছু বলতে যাবে
ওমনি ফাযি গাল ফুলিয়ে গেটের ভেতর ঢুকে গেলো। ইশরা পেছন থেকে
বলে,”আরে আরে ফাযি দাঁড়া কই যাচ্ছিস আমায় একা ফেলে আজিব মেয়ে
তো আমাকে এক্সপ্লেনও তো করতে দিবি নাকি?”

.

কে শুনে কার কথা ফাযি চলেই গেছে। ইশরা কোমড়ে হাত দিয়ে সেখানে
দাঁড়িয়েই ফাযির যাওয়ার কথা ভাবতে থাকে। হঠাৎ পেছন থেকে খুব জোরে
গাড়ির হর্ন শুনতে পায়। ইশরা দুই কানে হাত দিয়ে বলে,
” ওহ মাগো কে রে?(বলেই পিছে ফিরে)আজিব তো সামান্য কমনসেন্স বলতে কি
কিছু নেই আপনাদের এটা ভার্সিটি আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে যে হর্ন দিতে
নেই তা কি জানেন না নাকি প্রশাসন থেকে নোটিশ বোর্ড এনে আপনাদের
ট্রাফিক রুলস দেখাতে হবে হ্যাঁ?”

ইশরার এতো কথার কোনো জবাব আসে না আবারও জোরে জোরে হর্ন দিতে শুরু
করে। ইশরা আবার কানে হাত দেয় এবং রেগে ফায়ার! ইশরা আশেপাশে কোনো
একটা ইট খুঁজে নিজের হাতে নেয় তারপর পূর্বের চেয়ে আরও জোরে চিল্লিয়ে
বলে,”আপনি যেই হোন না কেন আরেকবার হর্ন বাজাইসেন তো এই ইট আপনার
মাথা বরাবর ফিক্কা মারবো।” চোখ গরম করে।

ইশরার কথায় ড্রাইভিং সিটে থাকা ছেলেটি জানালা দিয়ে নিজের মাথা বের করে
এবং বলে,”ইউ স্টুপিড এখান থেকে সরো রাস্তার মাঝে এসে দাঁড়িয়েছো কেন
রাস্তা কি তোমার বাবার??”
– এই দেখেন একদম বাবা নিয়ে কথা বলতে আসবেন না। আপনিই তো কখন
থেকে মাথা খারাপ করার মতো হর্ন দিয়েই যাচ্ছিলেন।
– হইসে এখন সরো নইলে তোমার উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাবো বেয়াদব মেয়ে!

.

– বাসায় বেয়াদব বলেন আবার এখানেও বলেন মামার বাড়ির পেয়ারা পাইসেন?(রাস্তা থেকে সরে ইটটা ফেলে ডাইরেক্ট সাদাফের ড্রাইভিং সাইটে।)
– তোমার সাথে বকর বকর করার মতো সময় আমার নেই বাই।
বলেই গাড়ি নিয়ে সাদাফ ভেতরে চলে গেলো ভার্সিটির। ইশরা তো রাগে ফুসছে
তারপর আর সেখানে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ভার্সিটির ভেতরে চলে গেলো আর
ফাযিকে খুঁজতে শুরু করে। খুজতে গিয়ে হঠাৎ আজ সকালের কথা মনে পড়ে
যায় ইশরার। আজ একটুর জন্য সাদাফের হাত থেকে বেচে গিয়েছিলো ইশরা।

যেই সাদাফ দরজার পিছে চেক করতে গেছিলো ওমনি তার ফোনে কল আসে।
সেই ফোন রিসিভ করে যখন কথা বলছিলো সেই ফাঁকে ইশরা রুম থেকে চটপট
বেরিয়ে পড়েছিলো নইলে কতোই না কেলেঙ্কারি হতো আল্লাহই ভালো জানে।
ইশরা অনেক খুঁজে ফাযিকে ক্লাসে পেলো। ইশরা ফাযির কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ
তাকে বোঝালো তাতে একদমই ফাযি গলেনা।
– প্লিইইজ ইয়ায়ার বুঝ! সত্যিই জ্যাম ছিলো। এই ঢাকারশহর সম্পর্কে তো
জানিসই, যা জ্যাম মাগো পরে আর থাকতে না পেরে রিক্সা থেকে নেমে দৌড়ে
এখানে আসছি।

তাও ফাযি কিছু বলছে না নাক ফুলিয়ে আছে। ইশরা আর পেরে আরও রাগাতে
বলে,”জানিস আজ তোর জন্য একটা কালো বাদর দেখেছিলাম।”
এবার ফাযি ইশরার দিকে ফিরে ভ্রু কুচকে বলে,” আমার জন্য মানে?”
– ওই তোকে তার সাথে বিয়ে দেবো বলে।(দুস্টুমি সুরে)
– তবেরে…করাচ্ছি তোকে বিয়ে!
– নো বিয়ে তুই করবি আমি কেন করবো?

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৬

– না সাদাফ আজ অনি আসেনি।
– কেন তা কি জানতে পারেন?
– না তা সঠিক বলতে পারছি না।
– ওকে থ্যাংকস ম্যাম।
বলেই সাদাফ টিচারস রুম থেকে বেরিয়ে গেলো এবং ভাবতে থাকে অনি কেন
ভার্সিটি আসেনি? ভেবেই অনিকে সাদাফ ফোন দেয় কিন্তু কল ঢুকছে না। কয়েকবার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দেয়। ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় খেয়াল করলো
একটা মেয়ে তাকে আড়চোখে দেখছে সেই টিচারসরুম থেকেই। এখানেও যে
মেয়েটা সাদাফের পিছে পিছে আসবে সাদাফ বুঝেনি। তবুও সে পাত্তা না দিয়ে যেই
বেরিয়ে যেতে নিবে ওমনি মেয়েটা সাদাফের সামনে এসে দাঁড়ায়। সাদাফ নিজের
চোখে থাকা চশমাটা একবার ঠিক করে বলে,”আপনি আমার পথ আটকাচ্ছেন
কোন সাহসে? ডু ইউ নো হু আই এম?”

মেয়েটি সাদাফকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলে,”আপনি কি অনিকে খুজতে
এসেছেন?”
– হুম আর কিছু?
– আমি জানি অনি কোথায় আছে।

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.