ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৮
লাবিবা ওয়াহিদ
সাদাফ ফুল স্প্রিড দিয়ে ড্রাইভ করছে। চোখে মুখে তার রাগ স্পট! বারবার তার
কানে মেয়েটার বলা কথা গুলোই কানে ভাসছে। মেয়েটি বলেছে অনি বারে আছে
কোনো এক ছেলের সাথে। এর আগেও অনেকে তাকে বলেছে বুঝিয়েছে অনি
ভালো নয় বারে ছেলেদের সাথে রাত কাটায়। সাদাফ কিছু ভাবতে নিলেই বারবার
মনে পড়ে যায় অনির সেই মায়াবী মুখ টা! কি করে করবে সে এরকম? তাই
সাদাফ কখনো এসবে কান দেয়নি আর অনিও বলেছে তাকে যে মানুষ কারো
ভালো দেখতে পারেনা তারা অন্যের সাথে আরেকজনের ভুল বুঝাবুঝি বেশ ভালো
করেই করিয়ে দিতে পারে।
কিন্তু মেয়েটার কথায় সাদাফের মিথ্যা মনে হলো না। মেয়েটা এড্রেসও দিয়েছে
তাই সাদাফ সেখানেই যাচ্ছে। অনি যদি সত্যিই খারাপ হয়ে থাকে সাদাফের সাথে
প্রতারণার করে থাকে তাহলে সে কিছুতেই অনিকে ছাড়বে না। তার জন্য সে
সাদাফ বাবা মাকে দূরে রেখেছে তার ক্ষতি যেনো না করতে পারে দেখে। য
দ আজ কোনোরকম নেগেটিভ কিছু চোখে পড়ে সাদাফ যে কি করবে সে
নিজেই জানেনা।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
ভাবতে ভাবতেই ওয়েস্টার্ন বারে এসে হাজির হয় সাদাফ। গাড়ি থেকে নেমে সোজা
ভেতরে ঢুকে সাদাফ। সাদাফ এই ড্রিংকস এর গন্ধ একদমই সহ্য করতে পারেনা
তাই কখনো সে বারে আসে না কিন্তু আজ সে বাধ্য হয়েছে আসতে। চারপাশে
অতিরিক্ত মানুষ সাথে এতো বিয়ারের গন্ধ যার জন্য সাদাফ মুখ মাস্ক পড়ে অনিকে
খুজতে শুরু করে। সাদাফ হঠাৎ এক ওয়েটার কে দেখতে পায় এবং তাকে দাড়
করিয়ে অনির ছবি দেখিয়ে বলে,”এনাকে দেখেছেন কখনো?”
ওয়েটার সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি কে আর ওনার কথা জেনে
আপনার কাজ কি?”
– আমি যা জানতে চেয়েছি বললে বলুন নয়তো সামনে থেকে যান ডিসগাস্টিং!
(ধমকের সুরে)
ওয়েটার টা ভয়ে সেখান থেকে চলে যায়। ভাগ্যবশত এই ওয়েটার টা ছিলো অনির
লোক তাই তার কেউ খোঁজ করছে দেখে তাড়াতাড়ি অনিকে কল করে সবটা
জানিয়ে দিলো। অনি সবটা শুনে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলে,”ওয়াট!!
লোকটা দেখতে কেমন?”
– চেহারা দেখিনি তবে….(মনে করার চেষ্টা করতে করতে) ওহ তবে হ্যাঁ লোকটার
চোখে গোল ফ্রেমের চশমা ছিলো।
অনি চট করে কল কেটে দিলো। গোল ফ্রেমের চশমা তো একমাত্র সাদাফই পড়ে
তার মানে কি সাদাফ অনির ব্যাপার টা জেনে গেলো?
অনি আর দেরি না করে সাদাফকে কয়েকবার কল দিলো কিন্তু বারবার “বিজি”
বলছে। অনেকবার ট্রাই করেও সাদাফকে কলে পেলো না। এর মানে কি তার
বিপদ ঘনিয়ে আসছে?
.
ইশরা গাল ফুলিয়ে সামনে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু তাকে কিছুই
করতে পারছে না তার কারণ ইশরাকে কয়েকটা মেয়ে পেছন থেকে ধরে আছে যার
জন্য ইশরা তাদের থেকে নিজেকে ছাড়াতেও পারছে না। সামনে থাকা ছেলেটার
মুখে শয়তানি হাসি।
– কি তখন তো খুব আমায় চড় মারতে আসছিলে এখন তোমার গায়ের জোর কি
সব হাওয়ায় উড়ে গেলো?
বলেই ছেলেটা হাসতে থাকে সাথে তার বন্ধুরাও। তার বন্ধুদের মাঝে একজন বলে
ওঠে, “বিড়াল হয়ে খেঁজুর পারতে গিয়েছিলো অথচ এটা ভুলে গেভহে খেঁজুর
গাছে ওঠা এতো ইজি না।”
এবার ইশরা হুংকারের সুরে বলে,”বিড়াল হয়ে খেঁজুর না হাত হয়ে খেঁজুর গাছের
রস খেতে গেছিলাম!”
ইশরাকে ধরা একটা মেয়ে বলে উঠে,”তার মানে তুমি স্বীকার করছো তুমি হাতি!”
আবারও সবাই হেহে করে হাসছে যেনো ইশরা সার্কাস করছে আর তারা হেসেই
চলেছে। ইশরার তো গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। দূর থেকে ফাযি সবটা দেখছে কিন্তু
কিছুই করতে পারছে না তার কারণ ওই নিলয় আর তার বন্ধুরা ফাযিকে দূরে
পাঠিয়ে দিয়েছে যদি কোনোরকম ইশরার কাছে ঘেষার চেষ্টা করে তাহলে তাকে
ময়লার ডাস্টবিনে ফেলে আসবে। হ্যাঁ ইশরার সামনে থাকা ছেলেটি আর কেউ না
নিলয় রুসানের ছোট ভাই যাকে নিয়ে ফাযির হাজারো স্বপ্ন ছিলো।
.
তবে নিলয় যে এমন গুন্ডামি করে বেড়ায় তা ফাযির একদমই বোধগম্য হয়নি। ইশরা রেগে বক্লে,”এতোই যদি সমস্যা তাহলে আমাকে এভাবে লোক লাগিয়ে ধরে
রেখেছেন কেন? সাহস থাকলে আমাকে ছাড়তে বলেন হাহ! নিজেরা ভীতু আবার
আমাকে নিয়ে মস্করা করে!”
নিলয়ের এক বন্ধু বলে,”তুমি তো মিস ঝামেলা তোমাকে ছাড়ার প্রশ্নই আসে না।
– ওওওও আচ্ছা তাই বুঝি? তাহলে স্বীকার করলেন তো আপনারা ভীতু?
বলেই ইশরা হেহে করে হাসতে শুরু করে। নিলয় যেনো মুহূর্তেই থমকে যায়
ইশরার এতো সুন্দর হাসি দেখে। নিলয় এতোক্ষণ নিশাকে খেয়াল না করলেও এখন
বেশ ভালোভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করছে। ইশরার হাসিটা যেনো নিলয়ের বুকে
গিয়ে লাগছে।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাই কেমন আছিস?
– এইতো বোন আছি কোনোরকম তুই কেমন আছিস আর আমার মেয়েটা কই
ফোন ধরছে না।
– ওহ ইশরা তো ভার্সিটিতে গেছে এখনো ফেরেনি। হয়তো ক্লাসে আছে তাই রিসিভ
করতে পারেনি।
– ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম সে যাক গে, সাদাফ কেমন আছে আর দুলাভাই?
– হ্যাঁ রে সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
– ওহ যাক! তা দুলাভাই কোথায় ফোন ধরিয়ে দে কথা বলি কতোদিন কথা হয়না।
– উনি একটু অফিস গেছে রে ভাই আজ কি নাকি কাজ আছে।
.
– ওহ তা ইশরার আর সাদাফের কি খবর? দুজন দুজনকে চিনেছে তো?
রিত্তিকের কথায় মুহূর্তেই রেহেকের মন খারাপ হয়ে গেলো। কি জবাব দিবে সে তার ভাই কে? কি করে বলবে সাদাফ অন্য কাউকে ভালোবাসে ইশরাকে সহ্য করতে পারে না। নাহ কোনোকিছুই বলা সম্ভব নয়।
– কি বোন কোথায় হারিয়ে গেলি?
রেহেকের ধ্যান ভাঙতেই বলে,”হ্যাঁ বল কিছু বলেছিলি?”
– হ্যাঁ তা ওরা দুজন দুজনকে চিনেছে তো সেটাই জিজ্ঞেস করলাম?
– হ্যাঁ জেনেছে চিনেছে ভালোই।(মিথ্যা বললো)
– তাহলে শুভ কাজের দেরি কিসের?
– না না এখন না ভাই ইশরা মাত্র ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে ওরও তো সময় দরকার তাইনা তুই চিন্তা করিস না আল্লাহ যদি চান সব ইনশাআল্লাহ সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে।
– তাই যেনো হয় বোন। জানিস তো মেয়েটাকে নিয়ে অনেক চিন্তা হয় রে, মনের মধ্যে অজানা ভয় হয় যদি বিয়েটা না হয় তখন?
রিত্তিকের কথায় রেহেকের বুক কেঁপে উঠে। সে আর পারবে না মিথ্যা বলতে তাই কাজের বাহানায় তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে কল কেটে ধপ করে বিছানায় বসে রইলো। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উপরের দিকে তাকিয়ে আনমনে ভাবতে থাকে,”হে মাবুদ আমি কি আমার বোনটার ওয়াদার খেয়ানত করছি? তুমি ওদের মিলিয়ে দেও মাবুদ এবং আমার ছেলেটাকেও ওই মেয়ের হাত থেকে রক্ষা করো ওই মেয়ে যে আমার ছেলের যোগ্য নয়। আর ইশরা?
এসবই ভাবছিলো হঠাৎই রেহেকের মাথায় একটা প্ল্যান আসে। সে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে।
.
ইশরা মুখ গোমড়া করে রাস্তার পাশে দিয়ে হেটে চলেছে রাস্তায় একটা রিকশাও পায়নি তাই বাধ্য হয়ে হাটছে। ওই নিলয় তখনই তাকে ছেড়ে দিয়েছে আর ইশরা হনহন করে সেখান থেকে চলে এসেছে কোনোরকম ঝামেলা না করে। সত্যি বলতে তার একদমই মুড ছিলো কোনোরকম ঝামেলায় জড়ানোর। রাস্তা দিয়ে হাটছিলো হঠাৎ করে কিছুটা দূরে ইশরা খেয়াল করে কিছু পথশিশুদের সাথে একটা লোক হাসাহাসি করছে তাদের সাথে খাচ্ছে। ইশরা কিছুটা সামনে এসে দেখে যুবকটা আর কেউ নয় সাদাফ!
ইশরা হা হয়ে সব দেখছে টপ বিজন্যাসমেন কিনা তাদের সাথে খেলছে লাইক সিরিয়াসলি? ইশরা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না যেনো কোনো স্বপ্ন দেখছে আর এখনই তার ঘুম ভেঙে যাবে। কিছুদিন আগে এই লোকটাই তাকে ক্ষেত এটা সেটা বলেছে আর সেই নাকি…এসব আকাশ পাতাল ভাবছিলো ইশরা তারপর নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে এবং মুগ্ধ নয়নে সবটা দেখতে থাকে। অনেকক্ষণ দেখেছে আজ সাদাফকে অন্যরকম ভালোলাগছে আজ তার সাদাফকে।
এতোদিন সাদাফের সাথে রাগ দেখালেও এখন যেনো ইশরার মনের মধ্যে ঝেকে বসেছে সাদাফ। বসবেই না কেন? সাদাফের মতোই যে কোনো এক রাজপুত্রের অপেক্ষায় থাকতো সে সবসময় হয়তো আজ পেয়েও গেছে।
ইশ!! ইশরা এগুলো তুই কি ভাবছিস সাদাফকে নিয়ে এতো ফিলিংস কেন কাজ করছে? নো ইশরা রিলেক্স তার সাথে তোর কোনো রকম সম্পর্ক নেই তাই কারো মায়ায় না পড়াই ব্যাটার!! হ্যাঁ এটাই!
ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৭
ভেবেই ইশরা আর সাদাফের দিকে না তাকিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো।
বাসায় এসেও কোনোরকম ভাবে সাদাফের ভূত ইশরার ঘাড় থেকে নামছে না। যতোই চাচ্ছে ভুলতে ততোই যেনো সাদাফকে নিজের অজান্তেই মনে করছে আবার মিটমিটিয়ে হাসছে তাও আনমনে। রেহেক ইশরার এই আচরণ খেয়াল করলো। রেহেক ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে ইশরা আবার কোনো ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়নি তো? ভাবতেই রেহেক যেনো শিউরে উঠে।
– তুই কি কাউকে পছন্দ করিস ইশরু?
রেহেকের মুখে এমন কিছু শুনে ইশরা চমকে উঠলো এবং চোখ মেলে রেহেকের দিকে তাকায়। লিভিং রুমে ইশরা রেহেকের কোলে গুটিশুটি হয়ে চোখ বুজে ছিলো এমন হঠাৎ প্রশ্ন করবে ইশরার ভাবনার বাহিতে ছিলো।