ইস্ক মোবারাক - Golpo Bazar

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৯ || emotional story

ইস্ক মোবারাক

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৯
লাবিবা ওয়াহিদ

রেহেক এবং ইশরা কথা বলছিলো এমন সময়ই অনি তাদের বাড়িতে “সাদাফ, সাদাফ” করে চেঁচাতে চেঁচাতে আসে। আচমকা কোনো মেয়ের কমঠে সাদাফ ডাক শুনে ইশরা পিছে ফিরে তাকায়। অনিকে দেখে চিনতে ইশরার কষ্ট হলো না কারণ আজ সকালেই এই মেয়ের ছবি দেখেছে ইশরা। তবে এমন ঢং করে কথা বলাটা ইশরার সহ্য হলো না সে উঠে দাঁড়ায় আর অনির দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। রেহেক অনিকে দেখে মুহূর্তে রেগে গেলো এবং সে বসা ছেড়ে উঠে তেড়ে গিয়ে অনির সামনে দাঁড়ালো। অনি রেহেককে দেখেও না দেখার ভান করে আগের মতোই সাদাফ সাদাফ করছে।

– এই মেয়ে তুমি আমাদের বাড়িতে কোন সাহসে পা রেখেছো?
– কেন আমি আমার হবু শশুড় বাড়িতে আসতেই পারি এতে সাহস বুঝি থাকবে না স্ট্রেঞ্জ!
রেহেক চরম রেগে বলে,”তুমি আমার ছেলের বউ কখনো হতে পারবে না মাইন্ড ইট! তোমার হাল যে করবো সেটা তুমি স্বপ্নেও ভেবে পাবে না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

অনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে দুই হাতে হাত গুজে কিছু অহংকারের সাথে রেহেকের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলালো এবং বলে,”বুড়ি তো কম হননি তবুও এতো তেজ কেন দেখাচ্ছেন আমার সাথে? আপনার মানা না মানাতে কিছু যায় আসে না। আপনি কিছুদিন পরে এমনেই ওই বৃদ্ধাশ্রমের ভাগিদার হবেন তাই আপনাকে নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না! আর যদি বেশি তেজ দেখানোর চেষ্টা করেছেন তো সাদাফকে বলে আপনাকে আর ওই শশুড় মশাইকে বৃদ্ধাশ্র…”

অনি আর কিছু বলতে পারে না এর আগেই ইশরা এসে অনি কে খুব জোরে গালে চড় লাগিয়ে দেয়। উপস্থিত সবাই অবাক শুধুমাত্র রেহেক বাদে। রেহেক মুখ টিপে হাসছে কারণ সে এটাই চেয়েছিলো। অনি গালে হাত দিয়ে ইশরার দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই ইশরা অপর গালে আরো জোরে চড় লাগিয়ে দেয় ফলে অনি তাল সামলাতে না পেরে অনি ফ্লোরে ভড়কে পরলো। আশেপাশে যত সার্ভেন্ট ছিলো সবাই ফিসফিস করে বলছে,”একদম ঠিক হয়েছে, বেশ হয়েছে!”

সার্ভেন্ট দের কথা গুলো ইশরা এবং অনির কানে এসেও পৌঁছায়। অনি রেগে কিছুটা হুংকার করে বলে,”স্টপ ইট! তোদের সাহস কি করে হয় আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছিস তোদের তো আমি পরে দেখে নিবো আর এইযে(ইশরার দিকে ফিরে) হাউ ডেয়ার ইউ? কোন সাহসে তুমি আমাকে চড় মেরেছো থার্ড ক্লাস মেয়ে একটা তোমার যে আমি কি হাল করবো তুমি ভেবেই পাবে না।”

.

– তুই কোন সাহসে মামনির বাড়িতে এসে তাকেই অপমান করছিস সামান্য জ্ঞানবুদ্ধি কি তোর নেই? নিজেকে কি রানী ভিক্টোরিয়া মনে করিস নাকি শাহজাহানের মমতাজ? টাকা নিয়ে দেমাগ দেখাচ্ছিস এই বাড়িতে? তোর চেয়েও হাজারগুণ সম্পদ টাকা পয়সা তাদের আছে আর বৃদ্ধাশ্রম হাহ!(তাচ্ছিল্যের সুরে) নিজে এতিম খানায় যা না বুঝ কেমন লাগে।
– মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ!

– মাইন্ড ইউর ওন ল্যাঙ্গুয়েজ! সম্মান তাকেই দেয়া উচিত যে অপরকে সম্মান করে কিন্তু তোরে সম্মান দিয়ে কথা বলতে গেলে সম্মানকে অপমান করা হয়। কালনাগিনী! এই বাড়ি থেকে বের হ নইলে সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে বাধ্য করবো!
– তুই কে বে যে আমাকে এই বাড়ি থেকে বের করবি তোকে তো আমি দেখে নিবো। তুই জানিসও না তুই কি অন্যায় টা করেছিস!!
– আমি কে সেটা তোকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করছি না আর কি বললি আমায় দেখে নিবি? তো দেখ না এখনই দেখ আমি তো তোর সামনেই দাঁড়িয়ে! বাই দ্যা ওয়ে গার্ডস!!

ইশরার ডাকে গার্ড রা দৌড়ে আসে এবং একজন বলে,”জ্বি ম্যাম?”
– এই বস্তির মেয়ে এই বাড়িতে কি করছে? কি করে তোমরা একে ভেতরে ঢুকতে দিয়েছো? জলদি একে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করো এন্ড আর কখনো যেনো একে বাড়ির আশেপাশে না দেখি গট ইট!
– ওকে ম্যাম।

.

ইশরার কথায় গার্ডরা অনিকে টেনে হিচড়ে বাসা থেকে বের করছে। অনি যেই ভালো ইশরাকে দেখতে যাবে ওমনি ইশরা অন্যদিকে ফিরে যায় যার ফলে ইশরার চেহারাও ভালোভাবে সে দেখতে পারেনি। তর্কে তর্কে ঠিকমতো খেয়াল করেনি ইশরাকে। কিন্তু ইশরার একেকটা কথা সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে রাখবে আর ইশরাকে সে কিছুতেই ছাড়বে না। গার্ডরা অনিকে নিয়ে চলে যেতেই রেহেক শব্দ করে হেসে দিলো। এতে ইশরা অবাক না হয়ে পারলো না। কিছুক্ষণ আগে কেউ তাকে এতো অপমান করে গেলো কই রেগে থাকবে তা না করে হাসছে অদ্ভুত তো! ইশরা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,” তুমি এভাবে হাসছো কেন মামনি?”
– না হেসে কি করে পারি বল যা শিক্ষা দিয়েছিস না মেয়েটাকে! একদম সঠিক কথা বলেছিস এর এসবই প্রাপ্য।

– তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু এ মেয়ে কে? বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে তাই বলে তোমায় অপমান করলো কিসের এতো অধিকার এই বাড়ির মানুষদের প্রতি কিসের এতো দেমাগ এর?
রেহেক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”বলবো আজ তোকে সব বলবো।”

নিলয় কিছুক্ষণ পর কি কি ভাবছে আর বারবার আনমনেই হাসছে। নিলয়ের এমন হাসি তার বন্ধুরা ভালোভাবে খেয়াল করলো। নিলা(নিলয়ের ফ্রেন্ড)জিজ্ঞেস করলো,”কি রে তুই এভাবে হাসছিস কেন দোস্ত?”

.

নিলার কথা নিলয়ের কান অবধি পৌঁছালো না সে এখনো কোনো এক ঘোরের মাঝে আবদ্ধ হয়ে আছে। পরে রিয়াজ নিলয়ের কাধে হাত দিয়ে ঝাকিয়ে বলে,”কি রে হারামি কানে কি কথা যায়না তোর!”
এতোক্ষণে নিলয়ের ধ্যান ভাঙে। তারপর এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে,”কি কিছু বলেছিলি তোরা?”
– আজিব তোহ! আমি এতোক্ষণ কি বললাম কানে যায়নাই তোর কথা?
– কোন ভাবনায় বিভোর ছিলি তুই দোস্ত?(মারিয়া)
– ককই ও কিছু না বাদ দে। চল ক্যাম্পাসে যাই।

এমন সময়ই নিলয়ের কল আসে। ফোনের স্ক্রিনে স্পষ্ট “রুসান ভাইয়া” লেখা। তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে নিলয়। ওপার থেকে কিছু বলতেই নিলয় বলে,”ঠিক আছে আমি আসছি বাই।”
বলেই ফোন কেটে দেয় নিলয় এবং সবাইকে কাজ আছে বলে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।

– আজ হঠাৎ ডাকলি যে?
– তুই তো বিজি পার্সোন না ডাকলে তোর ছায়ারও হুদিশ থাকে না।
– আরে না কি যে বলিস মিটিং থেকে ডাইরেক্ট তোর কাছেই আসলাম বল কি বলবি?
– কেন কিছু বলা ছাড়া তোকে ডাকতে পারিনা?
– আমি কিন্তু সেটা একবারের জন্যেও মিন করিনি।
– সে যাইহোক অনেক দিন দেখা হয়নি তাই ডাকলাম তা তোর কি অবস্থা।
– আমার আর অবস্থা সবসময় তো এই অফিস মিটিং ক্লায়েন্ট নিয়েই পড়ে থাকতে হয়।

.

– ওওও আচ্ছা তা তোর গার্লফ্রেন্ড কেমন আছে কি যেনো নাম ভুলে গেছি।
– অনি।
– হুম মনে পড়েছে তার কি অবস্থা তুমি তো মাম্মা ওরে পেয়ে ভুলেই গেছো।
– আরে না ভাই। ওর সাথে তোদের তুলনা হয় বল।
– তা ঠিক তবে কলেজ লাইফে যা লাফালাফি করতি আমার এখনো মনে আছে।
সাদাফ হাসলো। রুসানের তো অনি মেয়েটাকে একদম সহ্য হয়না সে যে কেমন ঢলাঢলি টাইপ ছিলো সেটা রুসান বেশ ভালোই জানে কিন্তু অনেক বোঝানোর পরেও সাদাফকে বিশ্বাস করাতে সফল হয়নি। অনি মেয়েটা এতো চালাক একটা মেয়ে যে কাউকেই কথার জ্বালে ফাসিয়ে দেয় সাদাফের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

সাদাফ আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে কিমতু সে সক্ষম হচ্ছে না। কিছুক্ষণের মাঝেই নিলয় চলে আসে। তারপর তিনজন মিলে অনেক ঘুরাঘুরি আড্ডা দেয়। কথার ছলেই রুসান নিলয়কে বলে,”মেহেরের বোন কে কিন্তু তোর ভার্সিটিতেই ভর্তি করেছে ওর খেয়াল রাখবি যেনো কোনো সমস্যায় না পড়ে আর পড়লেও ওকে সবসময় হেল্প করবি।”

নিলয় ভ্যাবাচেকা খেলো রুসানের কথায়। সে আগেও শুনেছে বলে মনে হয়না তার ভাবির ছোট বোন আছে। আর না তাকে দেখেছে। কিন্তু তার ভাইকে এখন কিছু বললে ঝামেলা হতে পারে তাই সে এসব প্রসঙ্গ না বলেই বলে,”ঠিক আছে খেয়াল রাখবো!”
– আচ্ছা চল আমরা মেহেরের বাসা থেকে ঘুরে আসি কি বলিস?
– আমি যাবো না আমার বাসায় যেতে হবে আর্জেন্ট!
– হ্যাঁ তোর তো সারাবছরই এই ওই কাজ! তোর যাওয়া লাগবেও না আমি আর নিলয় যাবো কি বলিস?(নিলয়ের দিকে ফিরে)
– চল প্রব্লেম কি?

ইস্ক মোবারাক পার্ট ০৮

– যখন সাদাফ এইচএসসি দিবে তখন হঠাৎ আমার কাছে এসে বললো সে নাকি এক মেয়েকে ভালোবাসে। আমি ছেলের কথায় আতকে উঠলেও পরে তার হাসিমুখ দেখে থেমে যাই। আমি মেয়েটাকে দেখাতে বললে সে মেয়েটাকে দেখিয়ে বলে,”আম্মা ওই সেই মেয়ে নাম অনি”

ছেলের খুশিতে আমি বলি,”একদিন মেয়েটার সাথে দেখা করবো এবং তাও কাউকে না জানিয়েই আমি কলেজে যাই মেয়েটিকে দেখতে। কলেজে ঘুরছিলাম হঠাৎ এক ছেলের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ হতে দেখি এই অনিকে। সকল ধরণের খোঁজ নিয়ে দেখি মেয়েটা চরিত্রহীন! বাড়িতে এসে সাদাফকে এতো করে বোঝালাম সে একবারের জন্যেও আমার কথা কানে নেয়নি শেষে তোর ফুপাকেও সব বিষয়ে বলি। তারপর সে নিজে ডিটেইলস বের করবে বলেছে এবং সেও একটাই শব্দ বলেছে তা হলো “চরিত্রহীন!”

এই নিয়ে বাসায় সবসময় ঝামেলা লেগেই থাকতো। সেই থেকে আমার ছেলেটা বদলে যায়। সে ভাবতে শুরু করে আমরা অনির নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছি। ভাবতে শুরু করে বলতে ভুল হবে ভাবাতে বাধ্য করে ওই অনি! ওই মেয়ের জন্য আমাদের ছেলেকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেই।
বলেই রেহেক ইসলাম থামলো। ইশরা উত্তেজিত হয়ে বলে,” তারপর!!”
রেহেক ইসলাম আবার বলতে শুরু করে,

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.