ইস্ক মোবারাক - Golpo Bazar

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১০ || motivational story

ইস্ক মোবারাক

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১০
লাবিবা ওয়াহিদ

– বাইরের দেশে পাঠিয়ে ভেবেছিলাম সাদাফ ওই মেয়েকে ভুলে যাবে কিন্তু আমাদের ভাবনা ভুল প্রমাণিত ওই মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতো। এভাবেই সময় পার হয় কয়েকবছর পর সাদাফ দেশে ফিরে তাও আগের মতো তার মুখে হাসিটা ছিলো না সে একজন কঠিন মানুষ! প্রয়োজনের বেশি কথা বলে না। এক নিমিষেই আমার ছেলেটা অনেক টা বদলে গেছে।

ভেবেই রেহেক দীর্ঘশ্বাস নেয়। ইশরা বুঝতে পারলো সবটা। ইশরা নিজেও বেশ রাগে ফুসছে কিন্তু তার কারণ ইশরা ঠাহর করতে পারলো না। তার এই রাগ কি জন্য? অনিকে নিয়ে নাকি সাদাফের সাথে অনি মেশামেশি নাকি রেহেকের সাথে সাদাফের দুর্ব্যবহার। কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে দুজন তারপর হুট করে রেহেক ইশরার হাতে হাত রেখে বলে,”তোর লাছে একটা অনুরোধ আছে রাখবি?”
– এভাবে বলো না মামনি! অনুরোধ না বলো ‘আদেশ করছি’।

– সে যাইহোক! আমি চাই তুই ওই অনির বিষয়ে সকল ইনফরমেশন জোগার কর। আমি জানি তুই অনেক ভালো প্রুভ জোগার করতে পারিস দয়া করে আমায় ফিরিয়ে দিস না। ওই অভিশাপ টাকে আমার সাদাফের জীবন থেকে সারাজীবনের জন্য সরিয়ে দে। আমার কথা রাখবি না মা?(ছলছল চোখে)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

ইশরা করুণ দৃষ্টিতে রেহেকের ছলছল করা চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইশরার তার মামনির জন্য মায়া হলো এখন তার অজান্তে কোনো এক কারণে তার মনের কোনো এক কোণায় বলছে যেনো সে এই কাজের ভার নেয়। প্রায় কিছুক্ষণ ভেবে ইশরা ঠান্ডা কন্ঠে উত্তর দেয়,”আমি কিছুদিন সময় চাই মামনি।”
রেহেক যেনো আশার আলো দেখতে পেলো। সে মুভকি হেসে বলে,”ঠিক আছে তুই যত সময় নেওয়ার নে কিন্তু আমার সাদাফকে ফিরিয়ে দে মা।”
ইশরা উত্তরে মুচকি হাসলো তারপর আরও কিছুক্ষণ রেহেকের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

ফাযি পড়ার টেবিলে বসে কলম কামড়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে আর ভাবছে নিলয়ের কথা। আজ যখন ইশরা আর ফাযি কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলো ওমনি সামনে ইশরার নজর যায় যে কিছু সিনিয়র ছেলেমেয়েরা জুনিয়র দের র‍্যাগিং করছে। ফাযি প্রথমে নিলয়কে দেখতে না পেলেও একটা মেয়ের থেকে ব্যাগ নেয়ার সময় ফাযি নিলয়কে দেখে এবং সেখানেই থমকে দাঁড়ায়। ইশরা ওদের র‍্যাগিং দেখে রেগে ফায়ার হয়ে গেছিলো তাই ফাযিকে রেখেই সে নিলয়কে চড় মারতে গেছিলো তার আগেই নিলয়ের মেয়ে ফ্রেন্ড রা ইশরাকে ধরে ফেলে।

সবটা ভেবে ফাযি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে কখনোই আশা করেনি নিলয় এমন স্বভাবের হবে। এমন সময়ই লিভিং রুম থেকে চেঁচামেঁচি শুনতে পায় ফাযি। সে মুখ থেকে কলম বের করে পিছে ফিরে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ধীরপায়ে রুম থেকে বের হয় এবং লিভিং রুমের দিকে গিয়ে একটা উঁকি দেয়। উঁকি দিয়ে নিলয়কে দেখে বিষম খেলো! চটজলদি ফিরে আসছিলো ওমনি ফাযির মা সামনে এসে দাঁড়ায়।

.

– কি রে এভাবে কাশছিস কেন? দাড়া পানি এনে দিচ্ছি।
বলেই চটজলদি ফাযির মা চলে গেলো। ফাযির কাশি যেনো এখনো থামছে না। ফাযির মা তাড়াতাড়ি করে হাতে এক গ্লাস পানি নিয়ে ফাযিকে ধরিয়ে দিলো। ফাযি ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে নিলো ওমনি ফাযির মা পথ আটকায়।
– আরে যাচ্ছিস কই লিভিং রুমে যা রুসান নিলয় এসেছে গিয়ে দেখা কর।
– ইয়ে মানে আসলে আম্মু আমার পড়া আছে।
– দেখা করেই পড়তে বস গিয়ে আয়!

– ননননা! তুমি যাও পরেও দেখা করতে পারবো এখন গিয়ে কাজ নেই।
বলেই কোনোরকমে ফাযি পালিয়ে আসলো তার মায়ের কাছ থেকে। ফাযি পারবে না নিলয়ের সামনে গিয়ে দাড়াতে। নইলে যে আজকের কথা সবাই জেনে যাবে।

– কি গো মা ফাযি কই?
– আর বলিস না তোর বোনের নাকি কি পড়া আছে তাই আসলো না।
– মাত্রই তো ভর্তি হলো তাহলে এতো কিসের পড়ার চাপ?
– আমি কি করে জানি বাবা, এতো করে আসতে বললাম চলে গেলো। যাক বাদ দেও ওর কথা তোমরা আড্ডা দাও আমি নাস্তার ব্যবস্থা করি।
বলেই ফাযির মা চলে গেলো। উনি যেতেই রুসান মেহেরকে বলে,”কিগো আমার শালিকার কি কোনো ভ্রমে পাইসে?”
– ধুর বাদ দাও তো এই মেয়ের কথা। এই মেয়ের মাথায় কখন কি ভূত চাপে আল্লাহ ভালো জানে।

.

– তাহলে ওঝা দিয়ে ঝাড়িয়ে নেন ভাবি!
নিলয়ের কথায় সবাই একসাথে হেসে দিলো। হাসার পর নিলয় চুপ থাকলো। নিলয় এতোক্ষণ মেহেরের বোনকে দেখতে চেয়েছিলো কিন্তু যেহেতু সে আসলো না নিলয়ের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
– যাইহোক নিলয়ে দেবরজি আপনার খবর কি?
-আমার খবর মানে?(ভ্যাবাচেকা খেয়ে)
– ওরে বাবা আমার কথায় কি কিছু বুঝতে পারছো না নাকি না বোঝার ভান ধরে আছো?

– ভাবি সিরিয়াসলি আমি আপনার কথায় কিছুই বুঝতে পারছি না।
মেহের রুসানের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে,”আপনার গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছি অবুঝ সাহেব।”
নিলয় এতোক্ষণ এ বুঝলো তারপর জিবহায় একটা কামড় দিয়ে বলে,”কিসব বলছেন ভাবি আমি এখনো পিউর আছি।”
– ওহ তাই? আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আগেই জুটিয়ে ফেলেছেন।
– আরে নাহ ভাবি কিযে বলেন না!
এভাবেই ৩জন আড্ডা দিতে থাকে।

দিন যতো এগোচ্ছে ইশরা ততোই সাদাফের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ইশরা বুঝতে পারে না কেন এমন আলাদা ফিলিংস কাজ করে সাদাফের প্রতি। আগে ইশরা যেমন টা সাদাফের উপর রাগ দেখাতো সেই জায়গায় ইশরা সাদাফকে দেখলেই তার মাথা হ্যাং হয়ে যায়।
সেদিন বিকালে,,,

.

ইশরা আনমনে পার্কে হাটছিলো ওমনি দূরে খেয়াল করলো একটা মেয়ে আরেকটা ছেলে একসাথে খুবই ক্লোজ ভাবে বসা। ইশরার পেছন সাইড টা কেমন চেনা চেনা লাগলো তাই সে কিছুটা এগিয়ে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায় এবং দেখার চেষ্টা করে। প্রায় কিছুক্ষণ পরই মেয়েটার চাঁদমুখ খানা ইশরা দেখতে পায়। হ্যাঁ মেয়েটি আর কেউ নয় অনি। অনি তম্ময়ের সাথে বসে আছে। ইশরা অনির সাথে অন্য ছেলেকে দেখে চমকে উঠে।

– এইটা সেই মেয়ে না যে ওইদিন বাড়িতে এসে তুফান চালিয়ে গেলো? মামনি ঠিকই বলেছিলো এই মেয়ে আস্তা কেরেক্টারলেস!! ওই সাদাফটাও কানে চোখে তুলা দিয়ে রাখে নাকি ভাই? গার্লফ্রেন্ড অন্য পোলাগো লগে সময় কাটায় সেটাকি হেয়ার(তার) চোখে পড়ে না? এই না কতো নামকরা বিজন্যাসমেন? এই মেয়ের পিছে লোম লাগাতে পারে আজিব তোহ! হায়রে অন্ধ ভালোবাসা!! কিন্তু এরে যে এতো সহজে আমি ছাড়বো না। এই মেয়েকে আমি সাদাফের জীবন থেকে জম্মের মতো সরিয়ে দিবো আর এমন একটা ঝাল দিবো না জীবনেও একূলে তাকাবে না হু! আমিও ইশরা মিস গিরিগিটী! কিন্তু কি করা যায়? চোখের সামনে এতো বড় প্রমাণ হাতছাড়া করলে যে চলে না….

এসবই ভাবছিলো ইশরা হাতে নখ দাঁত দিয়ে কাটতে কাটতে। হঠাৎ ইশরার কাধে থাকা ব্যাগের দিকে নজর গেলো। তার মাথায় চট করে একটা বুদ্ধি আসে এবং চটজলদি সে ফোন টা বের করে ভিডিও করতে থাকে। অনি আর তম্ময়ের এতো ঘনিষ্ঠতা ইশরার নিতে পারলো না তাই সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলে। তার নিজেরই লজ্জা লাগছে যে তার মতো একটা মেয়ে নিজের লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে পাব্লিক প্লেসে উলটা পালটা কাজ করে বেড়াচ্ছে।

ইস্ক মোবারাক পার্ট ৯

অনি এবং তম্ময় আরও কিছুক্ষণ সেখানে থেকে তারপর চলে গেলো। অনিরা চলে যেতেই ইশরার রেকর্ডিং শেষ করলো এবং সাদাফকে পাঠাতে নিলেই সে ঝামেলায় পড়লো। ঝামেলা টা হলো, সাদাফকে যে দিবে সাদাফের নাম্বার টাই তো ইশরার কাছে নেই তাহলে সে কি করে দিবে? ইশরা কিছু না ভেবে চট করে রেহেককে কল লাগালো। রেহেক ফোন রিসিভ করে বলে,”হ্যাঁ বল।”
– তোমার ছেলের নাম্বার টা দেও তো।

রেহেক খুশি মনেই কোনোরকম ভাবনা চিন্তা না করে সাথে সাথে সাদাফের নাম্বার টা মেসেজ করে নিলো। রেহেক ধরে নিলো ইশরা এবং সাদাফ একে অপরের সাথে হয়তো মানানসই হবে।

ইশরা নাম্বার টা পেয়েই সাথে সাথে ফোনে সেভ করলো কিন্তু সে আরেক ঝামেলায় পড়লো সাদাফের নাম্বার কি নাম দিয়ে সেভ করা যায়? ভেবেই “চাশমিশ বলদ” নাম দিয়েই সেভ করলো এবং ভিডিও টা সাদাফকে পাঠিয়ে দিলো। ইশরা মুচকি মুচকি হেসে ভাবে,”এবার তো চাশমিশ ব্যাটায় হেব্বি বড় ছ্যাঁকা খাবে তারপর….”
ভেবেই ইশরা খলিল খিল হেসে দিলো।

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.