ইস্ক মোবারাক - Golpo Bazar

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১১ || romantic diary

ইস্ক মোবারাক

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১২
লাবিবা ওয়াহিদ

– I don’t Believe it I know you’re lying to me.(চিৎকার করে)
– আমি না এই ভিডিও সত্য বলছে আমি যা বলছি সব প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই বলছি!!
– অনি কখনোই এমন করতে পারে না আমি জানি তুমি ইচ্ছা করে এমন করতাসো এই ভিডিও টা ফেক!
– যদি ফেকই হয় তাহলে সাইবার ক্রাইমকে ভিডিও টা দিয়ে দিন তারাই না হয় সত্য মিথ্যা ধরে দেবে।

– আমি কাচা কাজ করি না ওকে আমি আগেই ওদের দিয়ে দিসি ওয়েট, কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ফোন দিবে যদি মিথ্যা হয় আই সোয়ার তোমাকে আমি যে কি করবো তা তুমি ভেবেই পাবা না মাইন্ড ইট!!(চিল্লিয়ে)
– ওকে দেখা যাক কি হয়।
বলতে না বলতেই সাইবার থেকে সাদাফের ফোনে কল এলো। সাদাফ তাড়াহুড়ো করে ফোনটা রিসিভ করলো এবং বললো,”হ্যাঁ হ্যালো বলুন আপনারা কি জানতে পেরেছেন?”

– স্যার পিক এবং ভিডিও সবগুলোই রিয়েল এখানে কোনোরকম এডিটিং করা হয়নি।
ছেলেটার কথা শুনে সাদাফের হাত থেকে ধপ করে ফোনটা পড়ে গেলো। শেষে কিনা এতোটা প্রতারণা হলো তার সাথে। ইশরা সাদাফের দিকে তাকিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে। তারপর সেই খাম টা সাদাফের সামনে এগিয়ে দেয় এবং বলে,”খুলে দেখুন।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

সাদাফ করুণ দৃষ্টিতে ইশরার দিকে তাকিয়ে খাম টা হাতে নিলো। খাম টা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো মেডিকেল রিপোর্ট আছে এটায়। সাদাফ চটজলদি খাম থেকে মেডিকেল রিপোর্ট গুলা বের করে খুলে দেখে! সেগুলো দেখে সাদাফের পায়ের নিচের মাটি যেনো সরে গেলো। প্র‍্যাগনেন্সি রিপোর্ট তাও একটা নয় দুইটা নয় তিন- তিনটা!! সাদাফ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “এ…এগুলাও কি অঅঅঅ….”

– হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন মিস অনি কাওসার এবং তম্ময় লিয়াকতের বেইবি! তিনবার এবোরশন করানোর মতো ডিগ্রি অর্জন করেছেন আপনার সেই সো কল্ড ভালোবাসা যার জন্য আপনি আপনার পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন। এখন বুঝলেন তো বাবা মায়ের চেয়ে আপন কেউ নেই।

সাদাফ ধপ করে বসে পড়ে এবং হাটুতে মুখ গুজে বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। ইশরা মুহূর্তেই মুখ গম্ভীর করে ফেলে। তারপর এক পা এক পা করে সাদাফের সামনে এসে বসে এবং সাদাফের কাধে হাত রেখে বলে,” এভাবে ভেঙ্গে পড়বেন না! যে আপনাকে ব্যবহার করে তাকেও আপনি নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরান! যে আপনার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছে তাকে শিক্ষা দিন। কাঁদলে কিছুই হবে না।”

– আমি কালই ওকে প্রপোজ করবো!
নিলয়ের কথা শুনে তার বন্ধুরা সব একসাথে বিষম খেলো! তার মাঝে নিলা বলে,”প্রপোজ করবি মানে কাকে? মাথা ঠিক আছে তোর?”
– আমি ঠিকই আছি এখন তোরা আইডিয়া দে কিভাবে প্রপোজ করা যায় সেটা নিয়ে!
– আগে তো বল কাকে প্রপোজ করবি?
– ইশরা!

‘ইশরা’ নামটা শুনে সকলেই অবাক হয়ে নিলয়ের দকে তাকালো।
– দোস্ত যে কিনা তোকে থাপ্পড় মারতে চাইছিলো তাকেই তুই প্রপোজ করবি লাইক সিরিয়াসলি?
– হয়তো তাই তাকে ভালোবেসেছি! নইলে কখনো দেখেছিস কেউ সাহস নিয়ে আমায় মারতে এসেছে? এই মেয়েটা সত্যিই অনেক আলাদা! দেখতে যেমন অপরূপ তেমনই তার সাহসীকতা, কথার ঝাঁঝ! আই থিংক তাকে মানাতে আমার কিছুটা কষ্ট হবে বাট আই উইল মেনেজ হার!

– ওর ডিটেইলে কিছু জেনেছিস? আই মিন তার ফেমিলি স্ট্যাটাস!?
– আমি কি ওর ফেমিলিকে বিয়ে করবো না কি ওর স্ট্যাটাস কে? কেন এইসব কথা তুলে মুড সুইং করছিস বলতো?
– ওকে ব্রো রিলেক্স এন্ড সরি!
– বাট আমরা তো এটা ভেবে অবাক হচ্ছি তুমি তলে তলে এতোদূর এগিয়েছো!
নিলয় হাসলো এবং বলে,”এখনো এক সুতো পরিমাণও এগোয়নি ‘এতোদূর’ কোথা থেকে আসলো?”

– ইয়ে মানে ওই একই মনের ভিতরে এতোকিছু ঢুকিয়ে রাখসো আমরা তো ভাবিইনাই!
– বাট আমার ডাউট ছিলো! প্রায়ই ওরে অন্যমনস্ক দেখতাম।
– একদম ঠিক আমরা সবাই দেখতাম।
নিলয় এবারও উত্তরে শুধু হাসলো।

– রুসান!
– হ্যাঁ বলো।
– সাদাফ কে?
মেহেরের এমন প্রশ্নে মেহের হচকচিয়ে উঠে। তারপর মেহেরের দিকে ফিরে বলে,”আরে চিনো না তুমি? ওইতো আমার বেস্টফ্রেন্ড সাদাফ ইশতার।”
– ওওহ। তোমার ফ্রেন্ড এত্তো বোকা আগে জানতাম না।
– মানে?
– তোমার সো কল্ড ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড যে এতোদিন এবোরশন করেছিলো তা তো আমার থেকেই!

রুসান কোল্ড ড্রিংকস খাচ্ছিলো মেহেরের কথায় স্পব ফেলে দিয়ে রসোগোল্লার মতো চোখ বড় বড় করে বলে,”মামামামানে সেই মেয়েটা অঅঅঅনি!!!!”
মেহের মাথা নাড়ালো। রুসান যেনো আকাশ থেকে পড়লো! এই মেয়ে এতোটা নিচ রুসানের জানা ছিলো না। শেষে কিনা টাকার জন্য নিজের বাচ্চাদের এভাবে মারলো আর সাদাফকে…. নাহ রুসান আর ভাবতে পারছে না। ওই নিচ মেয়ের কথা মনে করে রুসানের বমি পাচ্ছে ঘৃণায়!! রুসান কোনো কিছু না ভেবে কোথাও যেতে নিলো ওমনি মেহের আটকে বললো,”এই কই যাচ্ছো তুমি?”
– সাদাফকে সবটা জানাতে! যে করেই হোক সবটা জানাতে হবে নইলে সমস্যা হবে।

– তোমার বন্ধু এমন কেন যে কিনা কোনোরকম খবর না নিয়ে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে!
– আরে এই মেয়েটাই নষ্টের গোড়া! ওকে আমরাও কম বুঝাইনি! ওই মেয়ে কানের সামনে এমন ঘ্যান ঘ্যান করসে কি বলবো…!!
– সে যাইহোক এখন আর যাওয়া লাগবে না।
– কেন?
– ফাযির এক ফ্রেন্ড আমার কাছে এসে সব ইনফরমেশন নিয়ে গেছে আই থিংক ওই মেয়েটাই সব জানাবে।

– ওহ আই সি! মেয়েটাকে তো তাহলে থ্যাংকস জানানো উচিত বাট মেয়েটা কে? সাদাফের সাথে ওই মেয়ের কি সম্পর্ক?
– আমি জানিনা তবে মেয়েটার আচরণ বেশ ভদ্র স্বভাবের ছিলো।
– আমার জানামতে সাদাফের কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড নেই এন্ড অনি ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে মিশেও না তাহলে? এ কোথা থেকে উদয় হলো?

অনি আর তম্ময় এক সরু রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো ওমনি অনিদের সামনে একটা ওয়াইট কার এসে খুব জোরে ব্রেক কসলো বলা যায় অনিদের পথ আটকালো। অনি কিছু টা ভয় পায় হুট করে কোনো গাড়ি সামনে আসায়। তম্ময় চোখ রাঙিয়ে বলে,”ওই হারামি ড্রাইভার চোখে কি দেখিস না এমনে কেউ সামনে এসে দাড়ায়? কু** বাচ্চা বের হো!!”

– সত্যি বেইবি একে উচিত শিক্ষা দাও তো আরেকটু হলে তো আমার জান টাই বেরিয়ে যেতো উফফ!!
– নো টেনশন জান আমি দেখছি বিষয়টা!
ওদের কথোপকথনের মাঝেই দুইজনকেই অবাক করে দিয়ে সাদাফ ড্রাইভিং সিট থেকে বের হলো তারপর স্টাইল করে অনি আর তম্ময়ের দিকে তাকালো। সাদাফকে দেখে অনি সাথে সাথে তম্ময়ের হাত ছেড়ে দুকদম পিছিয়ে গেলো।

তম্ময়ও ভয়ে কিছুটা ঢোক গিললো আর অনি সে তো ভয়ে পুরোই শেষ! চারপাশে এতো ঠান্ডা বাতাস তবুও অনি ঘেমে একাকার। সাদাফের বুক টা ছিড়ে যাচ্ছে অনিকে অন্য ছেলের সাথে দেখে। কিন্তু সে নিজেকে শক্ত করলো এবং রহস্যময়ী একটা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে, “হাউ আর ইউ মিস অনি?”

অনি এখনো ভয়ে কাঁপছে! তার গলা শুকিয়ে আসছে ভয়ে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে তবুও কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। সাদাফ হেসে তম্ময়ের দিকে ফিরে এবং দুই পকেটে হাত রেখে ত্ময়ের উদ্দেশ্যে বলে, “এইযে তোমার সো কল্ড গার্লফ্রেন্ড তো ঘেমে একাকার! নিজের রুমাল টা দিয়ে তাকে হেল্প করো আহারে বেচারি কি পরিমাণে ঘামছে!”

তম্ময় এক চুল পরিমাণও নড়লো না। সে তো ভয়ে পুরোই শেষ! এতোটাই ভয় পেয়েছে যেনো কথা বলতেই ভুলে গেছে। অনি নিজেকে সামনে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “সাসাসাসাদাফ তুতুতুতুতুমি এএএএখানে?”
(হাসার চেষ্টা করে)

সাদাফ একটা টেডি স্মাইল দিয়ে তম্ময়ের দিকে তাকায় তারপর অনির দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,”কেন আমি কি আসতে পারিনা?(অনির দিকে কিছু টা এগিয়ে) এই রাস্তা কি তোমার বাবার না তোমার সো কল্ড বয়ফ্রেন্ডের?”
সাদাফ কথাগুলো বেশ শান্ত ভাবেই বলছে তবুও যেনো সাদাফের কথাগুলো অনির গায়ে কাটার মতো বিধছে! অনিকে চুপ থাকতে দেখে সাদাফ আবার বলে,

“কি হলো কি কেন? কি ভেবেছিলে তোমাকে এই থার্ড ক্লাস ছেলের সাথে দেখে রিয়েক্ট করবো, কেঁদে এই রোড ভাসাবো, সিনক্রিয়েট করবো?হাহহ!!(তাচ্ছিল্যের সুরে) লাইক সিরিয়াসলি? তোমার মতো ক্যারেক্টারলেসের জন্য এই ব্যস্ত শহরে ঢোল পিটিয়ে বলবো এই মেয়ে বিশ্বাসঘাতক(অনির দিকে আঙুল তুলে) এই মেয়ে ভালোবাসা নিয়ে খেলতে জানে! কি তাই তো?(চিল্লিয়ে)

সাদাফের এমন চিৎকার শুনে অনির আত্মা কেঁপে উঠলো। সাদাফ নিজেকে সংগত করে আবার হেসে বলে,”যাইহোক আমার এসব বলার কোনোরকম সখ বা ইচ্ছা নেই। শুধু একটা সারপ্রাইজ দিতে এসেছি!”
– সাসাসাসারপ্রাইজ মানে?

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১০

সাদাফ একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে নিজের গাড়ির দিকে গেলো। তারপর ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দিকে ইশারা করে এবং দরজা খুলে দেয়। অনি দূর থেকে বুঝে উঠতে পারছে না সেখানে কে আছে! সাদাফ মুচকি হেসে সেদিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, হাত বাড়াতেই একটা নরম হাত সাদাফের হাতে হাত রেখে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো।

ব্যক্তি টি মেয়ে তাও বধুসাজে! যেই অনিদের দিকে ফিরে অনি অবাক চোখে তাকায়। মেয়েটি আর কেউ নয় সেদিন অনিকে যে অপমান করেছে মানে ইশরা তাদের দিকে আসছে। ইশরা শান্ত দৃষ্টিতে সামনে তাকালো। তার এই দৃষ্টিতে না আছে ক্ষোভ না আছে কোনো কষ্ট! সাদাফ ইশরার হাত ধরে অনির সামনে এসে দাঁড়ায় এবং ইশরার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,”মিট মাই ওয়াইফ! শিজ মিসেস সাদাফ ইশতার!”

সাদাফের কথায় অনির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আর তম্ময় অবাক হয়ে ইশরার দিকে তাকালো। ইশরা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে!

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.