ইস্ক মোবারাক পার্ট ১২
লাবিবা ওয়াহিদ
– তুমি মজা নিচ্ছো আমার সাথে? এই মেয়েটাকে বিয়ে করবে তাও তুমি? হাহহ!! আই কান্ট বিলিভ ইট! আমি জানি তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে বি….
– এনাফ মিস অনিয়া! আপনি আমার লাইফের এখন কেউই না! আর কি বললেন আপনাকে তাও বিয়ে হাহ!! আরে তুই তো আমার কি তুই কাউকেই ডিজার্ব করিস না! যে মেয়ে নিজের বাচ্চাদের মারতে পারে সে অন্যান্য মানুষকেও নিমিষেই মারতে পারে!
সাদাফের কথায় অনি ভরকে গেলো! সে এটা কোনোদিনও ভাবেনি সাদাফ এগুলো জেনে যাবে খুব গোপনের প্ল্যান এভাবে ভেস্তে যাবে অনির কল্পনার বাইরে ছিলো। এখন কোনোরকম নিজেকে সামলে বলে,”দেদেদেখো সাসাসাদাফ তুতুতুমি এসব কি বলছো আমি তো শুধু তোমার তাইনা বলো তুমি কেকেকেন? আমি বিশ্বাস করিনা আমার সাদাফ কাউকে বিয়ে করবে না ইটস ইমপসিবল বলো সাদাফ!”
– এই মেয়ে তোর লজ্জা শরম নাই নিজের ফিয়োন্সির সামনে এগুলা বলিস? আমি বিয়ে করেছি! বিলিভ হয় না তাইনা? ওকে ওয়েট আমি এখনই তোকে প্রুভ দিচ্ছি!
বলেই সাদাফ তার পিএ সাহেল কে কল দেয়। তারপর কিসব বলে কল কেটে দেয়! কল কেটে সাদাফ অনির দিকে তাকায় এবং বলে,”কিছুক্ষণের মধ্যে তোমার প্রুভ আসছে।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
সাদাফের কথামতো কিছুক্ষণের মাঝেই সাদাফের পিএ সাহেল এসে হাজির হয় হাতে কিছু ফাইল নিয়ে। সাহেল সাদাফের হাতে ফাইলগুলো দিলো। সাদাফ একটা পেজ বের করে অনির হাতে দিলো। অনি সেটা দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে! কাগজ গুলো রেজিস্টি পেপার আর সেটায় স্পষ্ট সাদাফ এবং ইশরার সাইন!
সাদাফ অনির হাত থেকে সেই ফাইল টা কেড়ে নিয়ে আরেকটা ফাইল ধরিয়ে দিলো। সেটায় আছে ইশরা আর সাদাফের ইসলামিক রীতিতে বিয়ের প্রমাণ! অনি যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
সাদাফ আবারো কেড়ে নেয় তারপর ফাইল গুলো সাহেল কে দিয়ে বলে আনমনে বলে,”আজ তোমায় আমি কিছু বলবো না তার একটা কারণ আল্লাহ আপনার কর্মকান্ডের জন্য তোমার বিচার ঠিকই করবে তাই সবটা তার উপরেই ছেড়ে দিলাম আমি। এখন থেকে কখনোই তুমি আমার সামনে আসবে না! যদি একবার আসো সেদিনই হবে তোমার জীবনের শেষ দিন কথা টা মাথায় ঢুকিয়ে নিও!”
বলেই ইশরার হাত ধরে ইশরাকে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগে এমন সময়ই আবার থেমে যায় তারপর আবার পিছু ফিরে বলে,”আরেকটা কথা তোমার একাউন্টে আমি যতো টাকা দিয়েছি সবটাই ফিরিয়ে নিয়েছি।”
টাকার কথা শুনে অনি অবাক হয়ে চিল্লিয়ে বলে,”ওয়ায়ায়াট!!! আমার টাকা তোমার একাউন্টে নিয়ে যাওয়ার মানে কি?”(চোখ গরম করে)
– ভুল বললে! টাকাগুলো তোমার না আমার। টাকাগুলো তোমাকে না দিয়ে ভিখারীকে দিলেও দোয়া পেতাম তাদের! কিন্তু তোমার মতো ফ্রট…. কি বলবো! যাইহোক যা খরচ করেছো তা কোনো একদিন দিয়ে দিও আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই সাদাফ চলে গেলো আর অনি বেকুবের মতো সেখানেই দাড়িয়ে! সাদাফ টাকা ফিরিয়ে নিয়েছে মানে এখন তার একাউন্টে এক টাকাও নেই! তাহলে কি করে চলবে বাচবে সে? এ কোন মহা মুশকিলে পড়লো অনি?
রেহেক ইসলাম মাথায় হাত দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে সোফায় বসে আছে আর তার সামনে সাদাফ। ইশরা উপরে গেছে ফ্রেশ হতে।রেহেক সাদাফের মুখে বিয়ের কথা শুনে কিছুক্ষণ শকড হলো! তারপর বলে,”এসব কি করে হলো সাদাফ?”
সাদাফ আমতা আমতা করে বলে,”ইয়ে মানে আম্মা আমি আসলে ওই এমনিই বিয়ে কককরে ফেলেছি।”
রেহেক হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে না। নিজের একমাত্র ছেলে কই জানিয়ে বিয়ে করবে তা না একেবারে পালিয়ে বিয়ে সারলো আর রেহেক ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না। এতো আফসোস রাখে কই!
– বিয়ে করবি ভালো কথা আমায় জানিয়ে করলে কি হতো? আমি কি বিয়ে করতে বারণ করতাম?
– আম্মা! বললাম তো সব তাড়াহুড়োয় হয়ে গেছে!
– কি এতো তাড়াহুড়া হ্যাঁ? আমাকে বা তোর বাবাকে বললে তো সবই হয়ে যেতো! আমরা তো আগে থেকেই…
বলেই রেহেক চুপ মেরে গেলো আর ভাবতে লাগে কি বলতে নিচ্ছিলো সে। রেহেককে থেমে যেতে দেখে সআদাফ ভ্রু কুচকে তাকালো এবং বললো,”থেমে গেলে কেন? কি বলতে নিয়েছিলে শেষ করো! তোমরা আগে থেকে কি?”
– না মানে…. ইশরার মা শেষবারের মতো বলেছিলো যেনো তোর সাথেই ইশরাকে বিয়ে দেই সে থেকেই আমরা দুইপরিবার মিলে তোদের বিয়ে ঠিক করেছিলাম!
সাদাফ অবাক হয়ে বলে,”তুমি আমায় আগে কখনো বলোনি কেন?”
রেহেক মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে,”বলার সুযোগ দিয়েছিলি কবে সারাক্ষণ তো ওই কারেক্টারলেস টাকে নিয়ে বসেছিলি।”
অনির কথায় সাদাফের মুহূর্তেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো। সে অনুতপ্ত তার ব্যবহারের জন্য। সত্যিই তো ওই মেয়ের জন্য তো অনেকবারই সে বাবা মায়ের অবাধ্য হয়েছে! কিন্তু তারই বা দোষ কিসের সে যে শুধু ভালোবেসে ছিলো! ভালোবাসাটা কি ভুল নাকি ভুল মানুষকে ভালোবাসা ভুল! নাহ কাউকে ভালোবাসাটা ভুল নয়! ভুল মানুষকে ভালোবাসা ভুল এবং অন্যায়ও বটে। এসবই ভাবছিলো তারপর রেহেকের পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে রেহেকের কোলে মাথা রাখলো সাদাফ।
– সরি আম্মা আমাকে ক্ষমা করে দেও সত্যিই আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। জানো আম্মা আমি কখনো ভাবিনি অনিকে ভালোবেসে মারাত্মক ভাবে ঠকে যাবো। মেয়েটার অভিনয়ের তারিফ করতে হয় এমন অভিনয় করতো বারবার তোমাদের ভুল বুঝতাম। ভুল বোঝার কারণ কি জানো আম্মা? মেয়েটা এতিম, ওর মা বাবা নেই যেমন টা আমার আছে।
তাই আমি ওর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু ও এতোটা খারাপ হবে কখনো ভাবিনি! ইশরা যখন আজ আমায় সত্যিটা খুলে বললো তখনই আমি ওকে নিয়ে চলে যাই কাজী অফিসে এবং জোর করে ওকে বিয়ে করি অনিকে শিক্ষা দেয়ার জন্য! অনেকটা জেদের বসেই বিয়েটা করে ফেলেছি এখন নিজেকে বেশ অপরাধী ফিল হচ্ছে আম্মা! মেয়েটার কোনোরকম ইচ্ছা অনিচ্ছা না জেনেই আমি হুট করে বিয়ে করে ফেকেছি আদৌ কি সে আমায় ক্ষমা করতে পারবে?
বলতে বলতেই সাদাফ বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। রেহেকের সাদাফের কান্না দেখে নিজেও কেঁদে দেয় এবং পরম যত্নে সাদাফের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়! উপর থেকে সবটাই দেখছে ইশরা। তার মন যেনো ভরে যাচ্ছে মা ছেলেকে একসাথে দেখে! রেহেক নিজেকে সামলে বলে,”ধুর বোকা ছেলে তোকে তো কবেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি জানতাম আমার ছেলে নিজের অজান্তেই ভুল পথে যাচ্ছে তাইতো তোকে সে পথ থেকে ফিরিয়ে আনলাম।
তবে ইশরাকে বিয়ে করে রুই ভুল করিসনি! তোর জন্য ইশরাই পারফেক্ট একজন মানুষ যা এতোদিন তোর নজরে পড়েনি। যাইহোক ওই মেয়ের জন্য চোখের পানি ফেলাটা বেমামান সাদাফ ওই মেয়ের জন্য যেনো তোকে আর কোনোদিন কাঁদতে না দেখি।”
– আমি অনির জন্য কাঁদছিনা আম্মা আমার তোমাদের প্রতি করা প্রত্যেকটা ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত!
– হয়েছে থাক আর কিছু বলা লাগবে না এখন যা উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। তবে নিজের রুমে না আমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হ সার্ভেন্টকে দিয়ে তোয়াল আর পোশাক পাঠিয়ে দিবো!
ইস্ক মোবারাক পার্ট ১১
সাদাফ মাথা তুলে রেহেকের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার রুমে কেন?”
– বারে ছেলে বিয়ে করেছে তার প্রথম রাতের জন্য ঘর সাজাতে হবে না? সে যাইহোক আমি যা বললাম তা করতে তুই বাধ্য যা তাড়াতাড়ি!!
মায়ের কথা ফেলতে না পেরে সাদাফ চোখ মুছে রেহেকের ঘরে চলে গেলো। রেহেকও চোখ মুছে সার্ভেন্ট কে দিয়ে একটা পাঞ্জাবি পাজামা পাঠিয়ে দেয় রেহেকের রুমে। সাদাফ চলে যেতেই ইশরা নিজের রুমে চলে আসে আর ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে চোখ বুজে! রেহেক ইশরার রুমে এসে দেখে ইশরা শুয়ে আছে।
– ইশরু মা ঘুমিয়ে পড়েছিস?
ইশরা চোখ মেলে তাড়াতাড়ি উঠে বসে এবং বলে,”না মামনি এমনি চোখ বুজে ছিলাম!”
– ওহ আচ্ছা শুন এই শাড়টা পড়ে নে।
ইশরা এতোক্ষণে খেয়াল করে রেহেকের হাতে একটা শপিং ব্যাগ। ইশরা জিজ্ঞেস করে,”হঠাৎ শাড়ি কেন মামনি?”
– বিয়ে করেছিস শাড়ি পড়বি না? নে ধর শাড়িটা পড়ে সাথে ম্যাচিং কিছু গয়নাগাটি আছে সেগুলোও পড়ে নিস।
রেহেকের আনন্দ দেখে ইশরা আর না করতে পারেনা তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই হ্যাঁ বলে দিলো!