ইস্ক মোবারাক পার্ট ১৩
লাবিবা ওয়াহিদ
রাত প্রায় একটা বাজে এখনো সাদাফের আসার খবর নেই। প্রায় ঘন্টাখানেক আগে ইশরাকে সাদাফের ঘরে রেখে চলে গিয়েছে এবং যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলো সাদাফকে পাঠিয়ে দিবে কিন্তু এখনো খবর নেই। এদিকে ইশরার ঘুমে অবস্থা খারাপ। প্রমাণ জোগার করতে করতে সে এতোটাই ক্লান্ত একটু যে ঘুমাবে তারও উপায় নেই! তবে ইশরার চিন্তা আরেক জায়গায়, সাদাফ কি তাকে মেনে নিবে? হয়তো না তবে ইশরা অপেক্ষা করবে সাদাফের জন্য, আল্লাহর উপর তার ভরসা আছে। কি সবার ডাউট হচ্ছে ইশরা সাদাফকে কেন চাচ্ছে ভেবে?
উম… ঠিকই ধরেছেন আপনাদের ইশরা সাদাফের প্রেমে পড়েছে। ইশরা প্রায় ঘুমিয়ে যাবে এমন সময় দরজা খোলার শব্দ পায়। সাথে সাথেই ইশরার হার্টবিট দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে। এটা কেমন অনুভূতি? সাদাফ চুপচাপ বেডের কাছে এগিয়ে এসে দেখে ইশরা এখনো জেগে। সাদাফ ভেবেছিলো ইশরা ঘুমিয়ে গেলেই আসবে আর এখন পর্যন্ত হয়তো ঘুমিয়ে গেছে তাই সে এসেছে। এখন তো সব সে গুড়ে বালি! ইশরাকে জেগে থাকতে দেখে সাদাফ কিছু না বলে চুপচাপ বেড থেকে বালিশ টা নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। ইশরা অবাক হয়ে সাদাফের কান্ড দেখলো আর সাথে সাথে রেগে জ্বলে উঠলো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
-(শালা তোর জন্য না ঘুমিয়ে আমি বসে আছি আর তুই কিনা আমার সাথে কোনোরকম কথা না বলে আমার সামনে দিয়ে ড্যাং ড্যাং করে সোফায় গিয়ে শুলি দাঁড়া তোর ঘুমের ব্যান্ড বাঁশি বাজাচ্ছি হারামির নানা শশুড়!)
বলেই শাড়িটা ধরে বেড থেকে নামলো আর লাইট টা অন করে দিলো। সাদাফ চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলো হঠাৎ চোখে আলো পড়তেই সে ভ্রু কুচকালো তারপর পিটিপিট করে চোখ খুললো। চোখ মেলে দেখে কোনো এক ভয়ংকরী তার সামনে দাঁড়িয়ে! সাদাফ লাফ দিয়ে উঠে বসে আর চশমাটা চোখে পড়ে দেখে ইশরা রেগে বোম হয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে! সাদাফ কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,”কি হলো এভাবে লাইট জ্বালিয়ে খাম্বার মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
– তো কি আপনার পূজা করতাম?(রেগে)
– পূজা কেন করবা রাত হইসে যাও ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও!
এবার ইশরার রাগ চরম পর্যায়ে উঠে গেলো। ইশরা সাদাফের কলার ধরে টেনেটুনে বিছানায় ফেললো আর নিজে সাদাফের উপরে বসে পড়লো। সাদাফের তো নাজেহাল অবস্থা। সে কিছুটা রেগে বলে,”এই মেয়ে এগুলা কোন ধরণের অসভ্যতামি? মাঝ রাতে কি ভূতে ধরসে তোমাকে নামো উপর থেকে! ঝামেলা করলে এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব!!”
– ওই টিকটিকির ল্যাজ তুই চুপ কর!! বিয়ে করছিস কি ফ্যাশন শো করতে?ঘন্টার পর ঘন্টা বউকে বসিয়ে রেখে নিযে তো খুব হাওয়া লাগিয়ে বেড়াইসিস!
– এই মেয়ে এটা কেমন ব্যবহার?
– চুপ!! তুই যেমন ব্যবহারও তেমনই হবে! আমার কথার মাঝে যদি আবার বা হাত ঢুকাইছিস তো তোর বাম হাত ভেঙ্গে কুচিকুচি করে কেটে লবণ মরিচ দিয়ে খাওয়াবো।
– এই তুমি কি মানুষ খাও নাকি?
– দরকার হলে খাবো আপনার কোনো সমস্যা?
– রাক্ষসী সরো সামনে থেকে!!
– তুই তো আস্ত একটা ইন্দুর! এতোদিন ধরে এক মাইয়ায় তোরে ফুটবলের মতো খেললো আর তুই কিছুই বুঝলি না, শালা বলদ!
– এতে আমার কি দোষ?
– সব দোষ তোরই। ওই মেয়ের জন্য আমারে বিয়ে করসোস ভালো কথা তাই বলে এই না যে যখন প্রয়োজন হবে নিবি আর যখন প্রয়োজন শেষ তখন ডাস্টবিনে ফেলে দিবি! আমি কোনো ময়লা না যে আমারে ডাস্টবিনে ফেলে দিবি সো আমার থেকে দূরে থাকলে তোরে আসমানে লাথি দিয়ে পাঠায় দিমু!!
– ছিহ! এসব কোন ধরণের কথা স্টুপিড? আমি তোমার থেকে কতো বড় জানো আর তুমি আমাকেই লাথি মারার প্ল্যান করো? আগে কিছু বলতাম না কারণ তখন তুমি আমি আলাদা ছিলাম কোনো সম্পর্ক ছিলো না আমাদের মাঝে বাট এখন আমি চাইলেই তোমাকে যা ইচ্ছা করতে পারি!
বলেই সাদাফ ইশরাকে নিজের উপর থেকে উঠিয়ে কোলে তুলে নিয়ে সোফায় ধপ করে ফেলে দিলো। ইশরা কোমড়ে হাত দিয়ে, “ও আল্লাহ গো বাচাও আমায় গোওওও আমার কোমড় টা গেলো গোওওও এই কুফাটার উপর ঠাডা ফেলাও গোওঅঅঅঅ”
– ঠাডা আমার উপর না তোমার উপর পড়বে গুড নাইট!
বলেই সাদাফ ফুল টুল সরিয়ে বিছানায় বেডশিটের ভেতর ঢুকে যায়। ইশরা রেগে বোম হয়ে সোফা থেকে উঠে সাদাফের বেডশিট টানতে শুরু করে!
– এই বিলাই শশুড় উঠ বলছি এভাবে আমাকে রেখে নিজে আরামসে ঘুমাবি তা আমি কোনোদিন হতে দিবো না! এএএএহ আমার কোমড় ভেঙ্গে তিনি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে এতো ইজি না ওকে? উঠেন নইলে আপনার মাথায় পচা ডিম ফাটাবো!!(চিল্লিয়ে)
সাদাফ বিরক্ত হয়ে বসে বেডশিটের অপর পাশ টানতে টানতে বলে,”আমার সাথে মজা নিতে গেলে তোমাকে বারান্দায় ফেলে এসে দরজা লক করে দিবো।”
– আপনার থ্রেড দিয়া বালু কামাই হবে না তাই যা বলতাসি তাই করেন আমি বেডে ঘুমাবো আর আপনি ঘুম পাড়িয়ে দিবেন ব্যাস!!
– এএএএএএহ মামার বাড়ির আবদার পাইসো যে তোমার মতো মিনমিন্না শয়তানকে আমি ঘুম পাড়াবো?
– মামা বাড়ির না শশুড় বাড়ির আবদার!
সাদাফ নিজের রাগ কান্ট্রোল করতে না পেরে ইশরাকে পাজাকোলে করে বেলকনিতে বসিয়ে দিয়ে দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দেয় এবং বলে,”দেখি এবার তুমি আমায় কেমনে জ্বালাও।”
ইশরা রাগে ফুসছে! এদিকে সাদাফ লাইট নিভিয়ে আরামের একটা ঘুম দিলো। ইশরার সাথে ধস্তাধস্তি করে সাদাফ ক্লান্ত! সাদাফ আরামে ঘুমোচ্ছে আর ইশরা মশার কামড় খাচ্ছে।
ইস্ক মোবারাক পার্ট ১২
– উফফফ কি মশা রে মনে হইতাসে একেকটায় সিগারেটের মতো টান দিয়া ১-২ কেজি করে আমার রক্ত খাইতাসে। আরে মশা ভাইয়া রা আমার আজকে যে আমার বাসর রাত আজকের দিন টা ছাড় দে আর আমি তো এতো পুষ্টিকর খাবার খাইনা তাই আমার রক্তও টক! তবুও আমারে ছাড় ভাইরা আমার! আমারে না খাইয়া ওই খাটাশটার রক্ত খা অনেক স্বাদ পাবি। ওই খাটাশে তোদের মতোই বয়ড়া, বলদা, কানা ব্লা ব্লা ব্লা! আমি এই ল্যাজ কাটা বলদের নামে প্রশাসনে মামলা দিমু এএএএএএ আমার বাসররাতেই মশার খাবার বানিয়ে দিসে আর নিজে নাক ১০০ ডিগ্রি টেনে ঘুমাচ্ছে। নাহ এর ঘুমের ১২টা আমি বাজাবোই আমাকে চিনে না আমিও মিসেস ইশরা ইশতার এতো সহজে হারার পাত্রী আমি নই! কিন্তু এই বেলকনি থেকে কি করে রুমে যাবো?
ভাবতে ভাবতেই ইশরার পাশের বেলকনির দিকে খেয়াল যায়। হ্যাঁ ইশরার বেলকনি টপটাকে হবে নইলে সারারাত এই বেলকনিতেই কাটাতে হবে। কিন্তু এই ভারি শাড়ি, গয়না পড়ে কি করে বেলকনি টপকাবো? এই গয়না গুলো খুলে নেই।
ভেবেই ইশরা একেক করে সব গয়না খুলে ফেলে। শেষে ইশরা সফল হলো বেলকনি টপকে নিজের বেলকনিতে যেতে।