ইস্ক মোবারাক - Golpo Bazar

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১৪ || popular story list

ইস্ক মোবারাক

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১৪
লাবিবা ওয়াহিদ

ইশরা নরম বেড দেখে আর লোভ সামলাতে পারে না। প্রপচুর ক্লান্ত থাকায় শরীর যেনো কাজ করছে না তাই উপায় না পেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। সাদাফকে কি করে শিক্ষা দিবে সেটা না হয় ঘুমিয়ে ঘুমিয়েউ ভাববে!
ভাবতে ভাবতেই ইশরা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।

সকাল ৬ঃ০৮ মিনিট,
সাদাফের রুমের দরজা কেউ জোরে জোরে ধাক্কাচ্ছে এদিকে সাদাফ ঘুম। সাদাফ শব্দে কিছুটা বিরক্ত হলো। ধাক্কানো যেনো ক্রমে বাড়তেই থাকে। সাদাফ বিরক্তি নিয়ে লাফ দিয়ে উঠলো। এতোই শব্দ হচ্ছে যে সাদাফের মাথা ধরে গেলো। পরে নিজের ঘুমের ঘোর কাটিয়ে চোখে চশমাটা পড়ে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে দেখে ইশরা দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইশরাকে দেখে সাদাফের রাগ যেনো ৭ম আসমানে উঠে গেলো। রেগে হুংকার ছেড়ে বলে,
– সকাল সকাল কি কাহীনি শুরু করসো তুমি এভাবে ঘুম ভাঙ্গানোর মানে কি ইডিয়েট!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন

– রাতে আমাকে মশার কামড় খাইয়েছেন তাই আপনার স্বাধের ঘুম নষ্ট করলাম। ছি ছি লজ্জা করে না আপনার বউকে বেলকনিতে ফেলে নিজে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে!!
– বউ মাই ফুট! তোমাকে তো আরামেই শুতে দিয়েছিলাম তুমিই তো আমার রাগ বাড়িয়ে দিয়েছো তাই তো বেলকনিতে ফেলে….
বলেই সাদাফ বেলকনিতে ফিরলো আবার ইশরার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকালো। সাদাফ অবাক হয়ে বললো,”এই আমি না তোমাকে বেলকনিতে বন্ধ করে রেখেছিলাম তুমি এখানে আসলে কি করে?”
– উড়ে উড়ে আসছি আপনার কোনো সমস্যা?

– এই মেয়ে তোমাকে প্রশ্ন করলে সবসময় কথা পেচাও কেনযা বলসি তার উত্তর দাও!
– আপনাকে উত্তর দিতে বাধ্য নই ওকে?
সাদাফ রেগে চোখমুখ লাল করে ইশরার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,”বলতে বাধ্য তুমি!”
ইশরা হাত ঘুরিয়ে সাদাফের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,”আপনার এই তেজ আমার সামনে চলবে না।”

বলে সাদাফকে ধাক্কা দিয়ে সাদাফের আলমিরার এক পাট খুলে সেটা থেকে একটা ড্রেস বাইর করে সাদাফের ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। সাদাফ আর কিছু না ভেবে বিরক্তি নিয়ে নিচে চলে গেলো কফির ব্যবস্থা করতে। এমনেই খুব সকালে সাদাফের ঘুম ভেঙেছে এখন গরম গরম কফি না পেলে সারাদিন মাথা ব্যথা ঘাড়ে চেপে বসবে! ইশরা বেশ আরামসেই ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরোলো। যেই ইশরা বেরোলো ওমনি সাদাফ কফি নিয়ে ঘরে ঢুকলো। সাদাফের হাতে কফি দেখে ইশরা চট করে সাদাফের হাত থেকে কফিটা নিয়ে বলে,”ওরে আমার আদরের জামাই টা। বিয়ের পরেরদিনই ঠিক বুঝে গেলো তার বউয়ের কফির প্রয়োজন ছিলো যাক আপনার এই শুভ কাজটার জন্য কালকের রাতের সকল গুনাহ আমি ক্ষমা করে দিলাম।”

বলেই ইতিমধ্যে ইশরা কফিতে কয়েক চুমুক দিয়ে দিলো। সবটা যেনো সাদাফের মাথার উপর দিয়ে গেলো। সে আগের মতোই আগের জায়গাতে দাঁড়িয়ে হা করে ইশরার কার্যকলাপ দেখছে। শেষে আরও রেগে বলে,”ওয়াট দ্যা হ্যাল!! এই কফিটা আমার ছিলো সেটা আমার থেকে কেড়ে নিয়ে খাওয়ার সাহস কি করে হলো? এতো কষ্ট করে কফিটা বানালাম এখন কি আমি না খেয়ে থাকবো?”

ইশরা কফি পুরোটা কফি শাবাড় করে সাদাফের হাতে খালি কাপ টা ধরিয়ে দিয়ে বলে,”আবার নিজে বানিয়ে খেয়ে নেন কথা দিচ্ছি আর ভাগ বসাতে আসবো না!”
বলেই ইশরা বিছানা ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সাদাফের তো মন চাচ্ছে কফির মগের সাথে ইশরাকেও আছাড় মারতে। যেই হুংকারের সুরে কিছু বলতে নিবে ওমনি কাজের মেয়ে শ্রাবণী এসে বলে,”ভাইজান আফনের লেইগা কফি লইয়া আইসি খাইয়া লন।”

সাদাফ কিছু না বলে ট্রে থেকে কফির খালি মগ টা রেখে কফিটা নিলো। শ্রাবণী কিছুটা উঁকি দিয়ে দেখে ইশরা বিছানা গোছাচ্ছে। বিষয়টা দেখতেই পাশের একটা টেবিলে ট্রে টা রেখে সাদাফের পাশ কেটে এক প্রকার ছুটে গেলো ইশরার কাছে গেলো এবং ইশরার হাত থেকে বালিশটা নেয়ার বৃথা চেষ্টা করে বললো, “আরে আফামনি করেন কি আমারে দেন আফনের কাম করন লাগতো না। খালাম্মায় জানলে মোরে আস্ত রাখবে না।”

– কিছু হবে না শ্রাবণী আমি সামলে নিবো তুমি যাও।
– না আফনি নতুন বউ হন আফনারে দিয়া কাম করাইন্না ডা বহুত খারাপ দেহায় আফামনি।
– ও কাজ করতে চাইছে ওকে কাজ করতে দে শ্রাবণী তোকে ওর বিষয়ে নাক গলাতে হবে না। নিজের কাজ নিজে গিয়ে কর।
সাদাফের ধমক শুনে শ্রাবণী সুরসুর করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো৷ ইশরা একটা ভেংচি কেটে আবার কাজে মনোযোগ দিলো।

– ভাই শুন আমার ছেলে যে এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে।
– কিসের কান্ড আপা? তুই কিসব যাতা বলছিস?
– আরে যা-তা কই বলছি আরে কালই সাদাফ কাউকে না জানিয়ে তোর মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছি।
– আলহামদুলিল্লাহ সকাল সকাল কি সুন্দর খুশির সংবাদ শুনালি রে বুবু!
– বলছি কি আর স্বাধে রে ভাই! আমি যে কি খুশি হয়ে বলে বোঝাতে পারবো না।
– আমিও তো কখনো ভাবতে পারিনি দুজন দুজনের মাঝে এতোটা মিল থাকবে। সে যাইহোক আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

– হ্যাঁ রে ভাই একদম ঠিক বলেছিস! আচ্ছা শুন আসল কথায় আসি। যেহেতু বিয়ে হয়েই গেছে সেহেতু আর কোনো ঝামেলা নেই আমি চাইছি আমাদের এখানেই ওদের রিসিপশনের ব্যবস্থা করবো এবং সকলকে জানিয়ে দিবো ওরা স্বামী- স্ত্রী।
– ঠিক আছে তোদের বাসাতেই করা যাবে। ঢাকাতে এমনিতেও আমাদের অনেক আত্নীয় আছে তাদের জন্য বেশ সুবিধাই হবে রিশিপশনে আসাটা।
– হ্যাঁ পরে তোকে সব কিছু জানাচ্ছি এখন রাখি আল্লাহ হাফেজ ভালো থাকিস।
– আল্লাহ হাফেজ।

বলেই রিত্তিক সাহেব ফোন কাটলো এবং কিয়ারার ছবির দিকে তাকিয়ে একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে ভাবে,”তোমার কথা পূর্ণ হয়েছে কিয়ারা তোমার কথা আমরা রাখতে পেরেছি।”
ভেবেই চশমাটা কিছুটা খুলে হাত দিয়ে চোখ মুছে।

ব্রেকফাস্ট এর সময় সাদাফ ইশরা একসাথে নিচে নামে। আফজাল ইশতার এবং রেহেক ইসলাম দুজনকে একসাথে দেখে বেশ খুশি। তারা ঠিক কতোটা খুশি সেটা কাউকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। খুব সাচ্ছন্দ্যেই একসাথে ব্রেকফাস্ট করলো। সাদাফের আগের রূপ ফিরে পেয়ে যেনো আফজাল এবং রেহেকের মনে শান্তি ফিরে এলো। তাদের পরিবারটা যেনো এখন পূর্ণ পূর্ণ লাগছে।

সাদাফ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোর্ট পড়ছিলো এমন সময় ইশরা কোমড়ে দুহাত দিয়ে কিছুটা রেগে বললো,” এইযে মিস্টার চাশমিশ এতো যে স্টাইল করে আমায় লেট করিয়ে দিচ্ছেন আমাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবেন না?”
সাদাফ স্বাভাবিকভাবেই নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে,”নিজের পা নাই তোমার নিজে যাও আমাকে বলো কেন?”
– আমার পা আছে কিন্তু আমাকে নিয়ে যাবে কে? আপক্নার ঘাড়ে থাকা পেত্নি?
– তুমি কি ৫ বছরের বাচ্চা যে তোমার হাত ধরে নিয়ে যাবো?
– আপনিই নিয়ে যাবেন ব্যাস! হাত ধরেই নিয়ে যাবেন হুম!

– দেখো তোমার সাথে ফালতু বকবক করার মতো সময় আমার একদমই নেই তাই চুপচাপ নিজে একা যাও এতোদিন তো ঠিকই একা গেছো আজ এতো জেদ ধরতে আসছো কেন আজিব মেয়ে তোহ!
– এতোদিন জামাই ছিলো না তাই একাই গেছিলাম। এখন জামাই থেকেও কেন বিধবাদের মতো একলা চলবো? আপনি কি মরে ভূত হয়ে গেসেন?
– দুনিয়ায় তুমি একলাই কি বিয়ে করে বসে আছো আর কেউ একলা আসা যাওয়া করে না? এতো ভিমরতি করলে কার কাছে ধোলাই খাও সেটা আল্লাহ ভালো জানে।

– মার খাওয়ার আগে আপনাকে সামনে রেখে বলমু এইটা আমার জামাই তাই এরে মেরে আমার শোধ তুলে নাও তাহলেই কাম তামাম!!
এবার সাদাফ রেগে চোখমুখ লাল করে ইশরার দিকে ফিরে কিছু বলতে নেয়ার আগেই ইশরা থামিয়ে দেয় এবং কাধে ব্যাগ নিয়ে সাদাফের ফোন মানিব্যাগ রুমাল সাদাফের হাতে দিয়ে বলে,”এবার আপনি রেডি চলেন তাড়াতাড়ি আমাকে ড্রপ করে দিবেন।”
– তোমার সাথে যাওয়ার সময় আমার নাই আমার ইমপর্টেন্ট মিটিং আছে।
– বউয়ের থেকে ইম্পর্টেন্ট আর কিছু নাই।

বলেই সাদাফের টাই টেনে ইশরার সাথে নিচে নামালো। লিভিংরুমে রেহেক ইসলাম সোফায় বসে চা খাচ্ছিলো আর আফজাল ইশতার পত্রিকা পড়ছিলো এমন সময় শিড়ি থেকে চেঁচামেঁচি শুনে দুজনই শিড়ির দিকে তাকালো। সাদাফের টাই ধরে টানা দেখে রেহেক আফজাল উভয়ই মুখ টিপে হাসছে। নিচে নামতেই সাদাফ ইশরার নিজেকে নিজের টাই ছাড়িয়ে টাই টাকে ঠিক করে বলে,”আম্মা এই কি মেয়ে আমার ঘাড়ে চাপলো বলোতো? এর জ্বালায় আমি এক মিনিটও শান্তি মতো টিকতে পারছি না উফফ!!”

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১৩

– মামনি তোমার ছেলেকে বোঝাও তো। কতো করে বললাম আমাকে নিয়ে চলুন ভার্সিটিতে সে কি বলে জানো বলে তার নাকি মিটিং ব্লা ব্লা ব্লা! আচ্ছা তোমরাই বলো বউয়ের থেকে ইম্পর্টেন্ট কোনো মিটিং দুনিয়ায় আছে?
ইশরার এমন কথায় রেহেক আর আফজাল এবার শব্দ করে হেসে দিলো। ইশরা যে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে কিসব বলেই চলেছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না এদকে সাদাফের অবস্থা খারাপ।
– আম্মা আমার সত্যিই ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে আর সেটাতে আমাকে এটেন্ড করতেই হবে।

– সেটা তোমার চিন্তা করতে হবে না আমি গিয়ে সব ম্যানেজ করে নিচ্ছি তুমি ইশরাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসো।
– হ্যাঁ তোর বাবা ঠিক বলেছে সাদাফ তাই কোনো কথা না ইশরাকে ভার্সিটি দিয়ে আয়। বিয়ে যখন করেছিস রেস্পন্সিবলিটি পালন কর!
সাদাফ সম্মতি জানিয়ে নিজেকেই বকতে বকতে গাড়ির দিকে গেলো আর ইশরা রেহেকের দিকে একটা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে সেও চলে গেলো হাসিমুখে। ইশরার কান্ডে রেহেক না হেসে পারলো না।

ইস্ক মোবারাক পার্ট ১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.