ইস্ক মোবারাক
লাবিবা ওয়াহিদ
“সূচনা পর্ব”
– এই মেয়ে কে তুমি এইটা আমার রুম তুমি আমার রুমে এসে দখল করেছো
কেন?(রেগে চিল্লিয়ে)
– এইটা আমার রুম ওকে?আমার রুমে আপনি নিজে এসে দখলদারি করার
চেষ্টায় আছেন আই নো। কি ভেবেছেন আপনি যা বলবেন আমি বিশ্বাস করে
নিবো? এন্ড হু আর ইউ? আমার বাড়িতে আমার রুমে এসে ডিগডিগির মতো
ম্যা ম্যা করছেন?
– মাইন্ড ইউর লেঙ্গুয়েজ! কবের দিনে কে এই বাড়ি তোমার নামে রেজিস্ট্রি করে
দিয়েছে যে না বুঝে চিল্লাচ্ছো?
– আপনার ওই ইংলিশে পটরপটর করা থামান তো। আর আমার বাড়ি হতে কি
রেজিস্ট্রি করতে হবে নাকি আজিব তোহ।।
– ওহ গড প্লিজ হেল্প মি এই লুজার মেয়েটা এতো ঝগড়া কি করে করে তার উপর
আমার রুমে দাঁড়িয়ে?
– কি বললেন আপনিইই আমি লুজার? আপনি লুজার আপনার ১৪ গুষ্টি লুজার!
সাহস তো কম নয় আপনার! আর তখন থেকে তো বলেই যাচ্ছেন আপনার রুম
আপনার রুম? বললাম না এইটা আমার রুম কানে কি কথা ঢুকে না বয়ড়ার নানা!!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গুপ এ জয়েন হউন
সাদাফের রাগ এমনেই ছিলো এখন ইশরার কথায় মাথায় রক্ত উঠে গেলো। হাত
দুটো মুঠো করে ভয়ংকর রাগি দৃষ্টিতে ইশরার দিকে চেয়ে আছে সে। অবাধ্য মানুষ
সাদাফের একদমই পছন্দ নয় তার উপর যদি কেউ বেয়াদবি করে তাহলে তো
কোনো কথাই নেই। এক ফরেইন ক্লায়েটের সাথে মিটিং এর জন্য বাসা থেকে সেই ভোরে বেরিয়েছে। মিটিং সহ সকল ফর্মালিটি কমপ্লিট করে বেশ টায়ার্ড
হয়ে যায় তাই ডাইরেক্ট বাসায় চলে আসে আরামের এক ঘুম দিবে বলে। রুমে
এসে দেখে ইশরা রুমে অলরেডি নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে সাদাফের বেডে হাত
পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। তা দেখেই তো সাদাফ সেভাবে বলেছে।
সাদাফ আর সহ্য করতে না পেরে মম মম করে চিল্লাতে লাগে। ইশরার
কোনোরকম হেলদোল নেই সে উল্টা রেগে বলে,”এই এই আপনি ষাড়ের মতো
ম্যা ম্যা করে মিনিমাম ম্যাক্সিমাম শুরু করসেন কেন?”
– এই মেয়ে মিনিমাম ম্যাক্সিমাম মানে কি হ্যাঁ?(রেগে চিল্লিয়ে)
– তো কি বলবো মম মাম যা শুরু করসেন আপনি।
– জাস্ট শাট আপ স্টুপিড।(ধমক দিয়ে)
ধমক খেয়ে ইশরা চুপ হয়ে গেলো কারণ সাদাফের চেহারা রাগে লাল হয়ে গেছে।
ইশরা আর একটু টু শব্দও করলো না।
.
– হ্যাঁ গো ভাইকে তো খুব বড় মুখ করে বললাম ইশরাকে ভালো রাখবো কিন্তু
তোমার ছেলে মানবে তো?
– আমিও এই বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত রেহেক। এমনি মা হারা ইশরা। সারাদিন
বাড়িতে একা থাকে, তোমার ভাইও তাকে তেমন সময় দিতে পারেনা দেখে আমি
তুমি বলে কয়ে এখানে নিয়ে আসলাম ভালো ভার্সিটিতে পড়াবো বলে।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আলফাজ ইশতার। রেহেক ইসলাম আবার বলে
উঠে,”তাকে তো অন্য এক বিষয়ে কথা দিয়েছি সেই কথার খেয়ানত করলে যে
বড় গুনাহগার হয়ে যাবো গো।”
– তোমার ছেলে যে কেন মূর্খের মতো ওই অনি নামক ঘূর্ণিঝড় টাকে পছন্দ
করলো! মাঝে মাঝে তো মনে হয় সাদাফকে ত্যয করে দেই কিন্তু পারিনা। নিজের রক্তকে কি করে ফেলে দেই।
দুজনের মুখেই গভীর চিন্তা ফুটে উঠেছে। কথা দিয়েও কথার খেয়ানত করা যে
বড়ই যন্ত্রণাদায়ক। এমন সময়ই দুজন উপর থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে
পেলো। আলফাজ এবং রেহেক দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে উপরে সাদাফের রুমের দিকে ফুটলো। রুমে এসে দেখে সাদাফ দাঁড়িয়ে ইশরাকে ধমকাচ্ছে আর ইশরা রুমের এক কোণায় চুপচাপ রাগি দৃষ্টিতে সাদাফের দিকে
তাকিয়ে।
সাদাফ ইশরাকে বকছে দেখে আলফাজ ইশতার রেগে বলে,”ওয়াট দ্যা
হেল সাদাফ!! তুমি মেয়েটাকে এভাবে ধমকাচ্ছো কেন? তোমার সাহস
কি করে হয় ওকে বকাবকি করার।”
ইশরা আলফাজ ইশতার আর রেহেক ইসলামকে দেখে যেনো আকাশের চাঁদ
হাতে পেলো। তাদের দেখে ইশরার চেহারায় এক আনন্দের ঝলকানি ফুটে
উঠেছে।
.
– মম ডেড দেখো এই মেয়ে কোথা থেকে এসে আমার রুম দখল করে বসে আছে
আমি কিছু বলতে নিতেই আমাকে উলটা পালটা যা মুখ দিয়ে এসেছে বলেই গেছে।
এর কি পারিবারিক শিক্ষায় প্রব্লেম নাকি যে অপরিচিতদের সাথে এভাবে বেয়াদবি
করে? দেখতেও কেমন ক্ষেত লাগছে এরে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করো তো ডিসগাস্টিং!!
রেহেক ইসলাম প্রচন্ড রেগে গিয়ে সাদাফের গালে কষে এক থাপ্পড় দিলো। ইশরা
সেখানে চুপচাপ দারুণ সব দেখছে আর মনে মনে বলছে,”ঠিক হয়েছে একদম
ব্যাটা বুঝ এখন থাপ্পড়ের জ্বালা। আমার পরিবারকে টানছিস তুই তোকে তো আমি
পরে দেখে নিবো শালা চাশমিশ হনুমান!!”
সাদাফ গালে হাত দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইদানীং সে বেশ চড় খাচ্ছে তাই
সে এখন অভ্যস্ত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই ফেটে যাচ্ছে। রেহেক ইসলাম রেগে চিৎকার করে বলে,
– ছিহ সাদাফ ছিহ তোমাকে আমি এই মানুষ করেছি? কার সাথে কি করে কথা
বলতে হয় জানোনা? তুমি আজ অন্যের পরিবারের শিক্ষা নিয়ে কটু কথা বলছো
কিন্তু তুমি আগে নিজেকে দেখো তুমি নিজে কি শিক্ষা নিয়েছো। সবকিছুর একটা
সীমা থাকে সাদাফ আর তুমি বরাবরই তা পার করে এসেছো। মেয়েটা হয়তো ভুল
করে তোমার রুমে এসেছে এতে করে আমাকে বা তোমার ডেড কে ডাকতে
পারতে এসব কেন বললে তুমি? ওই একটা মেয়ে তোমাকে শয়তানে রূপান্তরিত
করে রেখেছে। ঘেন্না লাগে তোমাকে নিজের ছেলে ভাবতে ছিহ এমন বেয়াদবকে
নিজের পেটে ধরেছি।
.
– আম্মা আপনি আমায় যা ইচ্ছা বলেন আমি কিছু বলবো না কিন্তু আমার অনিকে
কিছু বলবেন না খবরদার নইলে এই বাড়িতে আমি আগুন লাগিয়ে দিবো!(রেগে)
-ওই কালনাগিনী কে যা ইচ্ছা বলবো আমাদের উপর কোনো কথা বলবি না তুই!
(চোখ রাঙিয়ে) সত্যি বলছি তুই আগে অনেক ভালো ছিলি কিন্তু ওই কালনাগিনী
যবে থেকে তোর জীবনে এসেছে তবে থেকেই তুই এক ভয়ংকরে পরিণত
হয়েছিস।
– কেন তোমরা বারবার অনিকে এসব বলো কি জানো তোমরা ওর ব্যাপারে?
ভালোবাসাটা কি ভুল? কেন মেনে নিচ্ছো না অনিকে। অনির মতো মেয়ে লাখে
একটা! ও সত্যিই অনেক ভালো বিলিভ মি!! আর এই মেয়ে…(ইশরার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে) এই মেয়ের মতো বেয়াদব না।।
– এই এই আপনার সমস্যা কি কখন থেকে আমার নামে উলটা পালটা বলেই
যাচ্ছেন! চড় খেয়ে কি আপনার শিক্ষা হয়নি নাকি? এখনো সেই ভ্যাড়ার মতো
ভ্যা ভ্যা করছেন!
– এই মেয়ে তুমি…
– ইশরা! আমার নাম ইশরা তাই এই মেয়ে এই মেয়ে বলা বন্ধ করুন।
সাদাফের মন চাচ্ছে ইশরাকে মেরে নদীতে ফেলে আসতে। বাবা মায়ের কাছে
এতো অপমানিত হলো শুধুমাত্র ইশরার জন্য। তাকে সাদাফ ছাড়বে না।
ভেবেই ওই মুহূর্তেই সাদাফ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রেহেক এতোক্ষণ হাসি
থামিয়ে রাখলেও সাদাফ চলে যাওয়ার পর আর পারলো না। হু হা করে হেসে
দিলো। রেহেকের এখন পরিবর্তন দেখে ইশরা হা করে তাকিয়ে রয় এবং
বলে,”কিগো মামনি এই না তুমি ভিষণ রেগে ছিলে এখন আবার হাসো কি করে?”
.
– মেয়ের কথা শুনো। বলি তোর মতো দুস্টু মেয়ের জন্য কি রেগে থাকা যায় বল?
তাই না হেসে থাকতেই পারলাম না।
– হিহি বুঝো না দুনিয়াতে আমিই একমাত্র ওয়ান এন্ড অনলি ওয়ান পিস! আমি সব
পারি হুম।
– হুম আসলেই মামনি তুমি ওয়ান পিস নইলে যেই ছেলেকে তোমার মামনি
কখনো নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারেনি সেখানে তুমি এক পলকেই খাইয়ে দিলে?
বলেই আলফাজ সাহেব হেসে রেহেকের দিকে তাকালো সাথে রেহেকও!
– আচ্ছা ওইটা কি সত্যিই তোমাদের ছেলে না একে ব্রিজের নিচে থেকে তুলে
এনেছো।
রেহেক হেসে দিয়ে বলে,”কেন এমন মনে হচ্ছে?”
– তোমরা কতো সুন্দর করে কথা বলো আর ওই চাশমিশ টার কেমন নিমপাতার
মতো কথাবার্তা!
আলফাজ ইশতার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,”সময়ের সাথে সব পরিবর্তন হয়ে গেছে রে
মা।”
– আচ্ছা বাদ দেও সেসব এখন এই রুম ছেড়ে পাশের রুমে চল। এইটা তোর রুম
নয় ভুল করে চলে এসেছিস?
– না মামনি ভুল করে নয় নিজে থেকে এসেছি।
– নিজে থেকে মানে?
.
– রুম টা বেশ পছন্দ হয়েছে আমার আর রুমেও যেহেতু কাউকে দেখলাম না
ভাবলাম এই রুমেই নাহয় থাকবো কিন্তু তা আর হলো কই?(মুখ গোমড়া করে)
– মন খারাপ করিস না মা তোর ফুপাকে দিয়ে এর চেয়েও বেস্ট একটা রুম তোকে
দিবো।
– সত্যি।(উত্তেজিত হয়ে)
– হ্যাঁ সত্যি আমি এর চেয়েও ভালো ডিজাইন করে দিবো।
– অওওও লাভ ইউ তোমাদের তোমরা এত্তোগুলা ভালো।
বলেই আলফাজ ইশতার আর রেহেক ইসলামকে জড়িয়ে ধরে। রেহেক হেসে
বলে,”হয়েছে হয়েছে এখন নিজের সব জিনিসপত্র নিয়ে পাশের রুমে চলে আয়
সব গুছিয়ে নিচে চলে আসিস খাবার দিবোনে।”
বলেই রেহেক ইসলাম চলে গেলো এবং তার পিছে আলফাজ ইশতার।