কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস - Romantic Golpo

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ২

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ২
Rawnaf Anan Tahiyat

‘ স্যার এটা কি করে সম্ভব? আমাদের মধ্যে তো তেমন কিছু হয়নি কখনও আর আপনার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল হয়েছে। আপনি আবার টেস্ট করুন শ্রেয়ার।’
‘ তুমি কি বলতে চাইছো তামিম? আমার এতো দিনের ডাক্তারির অভিজ্ঞতা সব ভুল, আমি ও তেমন টা ভেবে বারবার চেক করেছি কিন্তু রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বারবার।’

তামিম এবার চুপ করে গেল পুরোপুরি।বসা থেকে উঠে ধীরে ধীরে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো। পিছন থেকে ড. সারোয়ার হোসেন স্যার কিছু বলছেন কিন্তু তার কান সেটা আর শুনতে পেলো না। পার্কিং লটে এসে গাড়িটা নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।

পর্ব গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকাল আটটার দিকে রোজ ভিলার সামনে নাজিম সাহেবের গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নেমে এলো, এরপর নাজিম সাহেব। মেয়েটা নাজিম সাহেবের বোনের মেয়ে রাহিয়া রহমান রাওনাফ।ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছে।যখনই শুনেছে মামা প্রিয়ার বিয়ে দিচ্ছেন তখনই চলে আসতো কিন্তু একটা এক্সাম থাকায় আসতে পারে নি।আর রাতে মামার কাছে এসব শোনার পর মামার সাথেই চলে এসেছে।রোজ ভিলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রাওনাফ, অদ্ভুত সুন্দর লাগছে বাসা টাকে।ধীর শান্ত পায়ে হেঁটে বাসায় ঢুকলো রাওনাফ। বাসায় ঢুকে আশপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে মালিয়া কে ডাকতে শুরু করলো ,,

‘ মালিয়া আপা,ও মালিয়া আপা। কোথায় গো তুমি?’
কিচেনে প্রিয়ার জন্য স্যুপ বানাচ্ছিল মালিয়া এমন সময় রাওনাফের ডাকে তড়িঘড়ি করে বসার রুমে এলো।
‘ রাওনাফ আফা আপনে আইছেন?আপনে আইছেন ভালোই হইছে গো আফা। জানেন পিয়া আফামনি এহনোও ঘরের দরজা খুলে নাইকা, আমার কথাও শুনে না।এহন আপনের কথা শুনবো আফায়।’

রাওনাফ প্রতি উত্তরে মুচকি হাসলো। নাজিম সাহেব ওর লাগেজ টা নিয়ে এসে মালিয়া কে দিয়ে বললেন প্রিয়ার রুমে নিয়ে যেতে।আজ থেকে রাওনাফ প্রিয়ার সাথেই থাকবে তাহলে মেয়েটা আর কষ্ট পাবে না।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কাধাক্কির পর প্রিয়া টলতে টলতে উঠে এসে দরজা খুলল। সারারাত ধরে কিছু না খাওয়ার কারণে শরীর টা একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে তার তার উপর ভালো ঘুম হয়নি। দরজা খুলে একটা বিকট শব্দে চিৎকার করতে যাবে তখনই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো প্রিয়া। চোখে ভুল দেখছে নাকি সে?এই মানুষ টা এই সময়ে এই বাসায় এটা কি করে সম্ভব?

‘যেখানে পা রেখেছো সেখানেই দাঁড়াও তামিম,আর এক পা ও যেন বাসার ভেতরে না পরে তোমার।’
বাসায় ঢুকতেই বাঁধা পেল তামিম। সামনে তাকিয়ে দেখে বাবা মা ফুপি বাবার বন্ধুরা সহ বাসার আর সবাই বসে আছে ওদের বাসাতেই। বাবার চোখে মুখে যেন আগুন ঝরছে ।

‘ কেন? কি এমন করেছি আমি যে বাসায় ঢুকতে পারবো না।যদি প্রিয়াকে বিয়ের কথা বলো তাহলে বলবো আমি বে/চে থাকতে ওকে বিয়ে করব না।ওর মতো একটা পিচ্চি মেয়ে কে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় এটা আমি তোমাকে আগেও বলেছি আর এখনো ও বলছি । আমি শ্রে…..’

‘শাট আপ ইডিয়ট।আর একবার ও যেন তোমার মুখে ওই মেয়ের নাম টা না শুনি আমরা কেউই অন্তত এই বাসায়।প্রিয়া তো কোন ছাড়, তোমার সাথে তো এখন বাসার কাজের মেয়ে রোজিনার বিয়ে দিতে ও আমার বিবেকে বাঁধবে।’
তামিমের কথা শুনেই তেতে উঠলেন আইরিন সুলতানা বেগম। পাশেই ফ্রোরে বসে রোজিনা কি যেন কাজ করছিল, আইরিন বেগমের কথা শুনে একটু লজ্জা পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি করে গায়ের ওড়না টা ঠিক করে একটু লাজুক লাজুক মুখ করে তামিমের দিকে তাকালো।

‘ আহ থামো ভাবী।ওকে নিয়ে কিছু বলছো কেন?ও তো তুলসী পাতার মতো পবিত্র একটা মেয়ে,কত সুন্দর ম্যাচিউর দেখেছো? নাহলে কি আর বিয়ের আগেই সন্তানসম্ভবা হয়ে যেতে পারে বলো?’
এতোক্ষণ ঝিম ধরে বসে সবার কথা শুনছিলেন সোবহান চৌধুরী আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। হুংকার দিয়ে উঠলেন তিনি। উনার ছেলে এমন চরিত্রের হবে সেটা উনি ভাবতেও পারেননি।

‘ তামিম তুমি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাও, আর কখনো এমুখো হবে না আশা করছি। তোমার মতো একটা নোংরা চরিত্রের ছেলে কে আমি আমার ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে পারবো না। সবার সামনে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেছে আমার, কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না তোমার জন্য।’
‘ বাবা কি করেছি আমি? শুধু প্রিয়া কে বিয়ে করতে চাইই নি এটাই তো আর কিছু…..’

‘ কি করেছো তুমি হ্যা? বিয়ের আগেই একটা মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছো আর বলছো কি করেছো? লজ্জা করলো না তোমার একজন ডাক্তার হয়ে একাজ করতে?মানছি তুমি শ্রেয়া কে খুব ভালোবাসো, নাহয় ওকে লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলতে সেটাও মানা যেতো কিন্তু এটা কি করলে তুমি? নিজের সম্মানের কথা না ভাবো অন্তত আমার সম্মান টা ভাবতে তামিম?

রাগে সারা শরীর কাঁপতে কাঁপতে লাগলো সোবহান চৌধুরীর। তামিম বাবার কথা শুনে একেবারে চুপ করে গেল। সবাই তার উপর কেন এত রেগে আছে এবার সেটা পুরো পরিষ্কার হয়ে গেছে। সবাই ভাবছে শ্রেয়ার বাচ্চাটা হয়তোবা তামিমের ই তাই এতো কথা,আর এসবের আড়ালে প্রিয়ার ব্যাপারটা একেবারে ধামাচাপা পড়ে আছে এটা ভেবেই স্বস্তি বোধ করলো তামিম। একটু পাশ ঘুরে তাকাতেই দেখে রোজিনা ওর দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসি হাসছে আর লজ্জা পাচ্ছে।ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রইল তামিম, মায়ের কথাটা কি এই মেয়েটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে নাকি যে এভাবে লজ্জা পাচ্ছে?

‘ বেরিয়ে যাও তামিম । তোমার মুখদর্শন করতে চাই না আমি।’
কথা না বাড়িয়ে তামিম চুপচাপ বাসা থেকে বেরিয়ে চলে এলো। এখন মুখ খোলা মানে বিপদ ডেকে আনা হবে নিজের।বাসা থেকে বের হয়ে এসে গাড়ি নিয়ে এলোমেলো ভাবে ড্রাইভ করতে শুরু করলো। এতোক্ষণ নিজেকে সামলে রেখেছিল খুব কষ্ট করে কিন্তু আর পারলো না।বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে এখন।শ্রেয়া এমনটা কি করে করতে পারলো তার সাথে?সে তো শ্রেয়া কে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে, ওকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেও পারেনি তাহলে কেন? চোখ মুছে ড্রাইভ করতে লাগলো তামিম।

‘ আপাই তুমি?’
বলেই রাওনাফ কে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়া। জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো হঠাৎ করেই।রাওনাফের সাথে মালিয়া দাঁড়িয়ে ছিল, ওকে ইশারা করে খাবার নিয়ে আসতে বললো প্রিয়ার জন্য ।রাওনাফের হাত ধরে ওকে টেনে রুমে নিয়ে এলো প্রিয়া। পৃথিবীতে বাবার পরে যদি ও কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে সেটা রাওনাফ।বেডে বসিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো প্রিয়া, বসে থাকতে পারলো না শরীরের দুর্বলতার জন্য।রাওনাফ আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,

‘ কি হয়েছে প্রিয়ু? তুই নাকি রাতে কিছু খাসনি মালিয়ার কাছে শুনলাম।আর এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে যাচ্ছিলি কেন তুই, বিয়ের বয়স হয়েছে কি তোর হ্যা?’
‘ বাবাই তো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল আপাই।জানো আমি না তোমাকে খুব মিস করেছি কাল থেকে। তুমি থাকলে শ্রেয়া আপাই আমার থেকে আমার বর কে নিয়ে নিতে পারতো না।আপাই, আমি কি দেখতে খুব কুৎসিত?’

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ১

প্রিয়ার হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গেল রাওনাফ, কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না।প্রিয়া বাস্তবিক ই খুব কু’ৎ’সি’ত চেহারার মেয়ে। গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণ বর্ণের, হঠাৎ করেই কেউ প্রিয়া কে দেখলে বলতে পারবে না যে এই মেয়েটা এতো ধনী বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে। কিন্তু রাওনাফের কাছে প্রিয়ার চেহারা টা খুব মিষ্টি লাগে,বাজে দেখতে হলেও সে যখন হাসে তখন মনে হয় যেন ওর চোখে সমুদ্র খেলে চলেছে। অদ্ভুত এক মানবী প্রিয়া..………

কলঙ্কিত প্রেমের উপন্যাস পর্ব ৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.